×

তথ্যপ্রযুক্তি

হাইপারলোকাল ডেলিভারি মডেল ও বাংলাদেশের ই-কমার্স

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ আগস্ট ২০২৩, ০৪:০৩ পিএম

হাইপারলোকাল ডেলিভারি মডেল ও বাংলাদেশের ই-কমার্স
এক দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে ই-কমার্স চালু আছে। এই সময়ের ব্যাপ্তি খুব বেশি নয়। তারপরেও এই সময়ের মাঝে ই-কমার্স বাংলাদেশে যতটা বড় হতে পারতো, ততটা বড় হয়ে উঠতে পারেনি। এর পেছনের গল্প খুঁজলে অনেক বিষয়ই উঠে আসবে আমি জানি, কিন্তু আমার কাছে এর পেছনে একটি বড় কারণ মনে হয় ডেলিভারি সিস্টেমের জটিলতা। এই ব্যাপারে কথা বলতে হলে পুরো ডেলিভারি ব্যবস্থার পেছনের কথা দিয়ে শুরু করতে হবে। ডেলিভারি সিস্টেমের মধ্যে সবচেয়ে প্রচলিত দুইটি সিস্টেম হলো লাস্ট-মাইল ডেলিভারি মডেল এবং হাইপারলোকাল ডেলিভারি মডেল। লাস্ট-মেইল ডেলিভারি মডেলের ক্ষেত্রে একটি সেন্ট্রাল ওয়্যারহাউজ থেকে পণ্য পৌঁছে যায় গ্রাহকের হাতে। বাংলাদেশেও বেশিরভাগ ই-কমার্স এই মডেলের উপর নির্ভর করেই গড়ে উঠেছে। কিন্তু এই মডেলের কারণে ই-কমার্স অনেক ক্ষেত্রেই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ই-কমার্সের সাপ্লাই চেইন দেশের সব প্রান্তের জন্য সমান সক্ষমতায় কাজ করতে পারে না। আবার যেসব গ্রাহক দূরবর্তী এলাকায় বসে অর্ডার করছে, তারাও অনেক সময় এই দূরত্বের কথা ভেবে ই-কমার্সের মাধ্যমে অর্ডার করতে অনীহাবোধ করেন। কারণ আফটার-সেলস সার্ভিস বা প্রোডাক্ট রিটার্ন করতে ঝক্কি পোহানোতে কেউই রাজি নয়। আর দূর থেকে প্রোডাক্ট ডেলিভারিতে সময় বেশি লাগে এবং পরিবহনে অনেক সময় পণ্যের ক্ষতিও হয়। যা গ্রাহক এবং উদ্যোক্তা দুজনের জন্যই অপ্রীতিকর। সেক্ষেত্রে আমি মনে করি হাইপারলোকাল ডেলিভারি মডেল বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আরও উপযোগী একটি ডেলিভারি মডেল। এই মডেলের মূল বিষয়টি হল গ্রাহকের অর্ডার করা পণ্য সেন্ট্রাল ওয়্যারহাউজের বদলে এলাকাভিত্তিক সাপ্লায়ার বা মার্চেন্টের কাছ থেকে ডেলিভারি দেওয়া। অনেক ধরণের পণ্যের জন্য এটি অবশ্যই কার্যকর হবে। পাশাপাশি ই-কমার্সের সাপ্লাই চেইনের ডিসেন্ট্রালাইজেশন ই-কমার্সকে নতুন মাত্রা দিতে পারে। ধরুন আপনি খুলনায় বসে অর্ডার দিতে চাচ্ছেন আপনার পছন্দের একটি হেডফোন। স্বাভাবিকভাবেই আপনার ধারণা হবে, একমাত্র ঢাকাতেই এর সাপ্লাই আছে, ঢাকা থেকেই আপনার পণ্য ডেলিভারি হবে। কিন্তু আপনি হয়তো জানেন না, খুলনাতেই একজন সাপ্লায়ারের কাছে সব নতুন মডেলের গ্যাজেট পাওয়া যায়, তাও আবার সুলভ মূল্যেই। এখন কোনো ই-কমার্স যদি হাইপারলোকাল ডেলিভারি মডেল ফলো করে তাদের অপারেশন চালায়, সেখানে আপনি সেই খুলনার সাপ্লায়ারের কাছ থেকেই খুব কম সময়ে আপনার পছন্দের পণ্য পেয়ে যাচ্ছেন। পাশাপাশি কোন আফটার সেলস সার্ভিস দরকার পড়লে আপনাকে খুব বেশি ঝামেলাও করতে হবে না। গ্রাহক আর উদ্যোক্তার মাঝে মেলবন্ধন সৃষ্টি করার মাঝেই কিন্তু ই-কমার্সের সৌন্দর্য। আর হাইপারলোকাল ডেলিভারি মডেল এই কাজটিই আরো দারুণভাবে করতে পারে। তবে সব পণ্য ক্ষেত্রে এই মডেল হয়তো কাজ করবে না। নতুন এই মডেল প্রয়োগ করতেও কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। এজন্য প্রয়োজন সাপ্লাইচেইন নিয়ে এবং প্রোডাক্ট সোর্সিং নিয়ে আরও বেশি রিসার্চ, আরও বেশি কাজ করা। যেহেতু ডিসেন্ট্রালাইজেশনের বিষয়টি এখানে মুখ্য, সেজন্য যথাযথ পার্টনারশিপ নিয়ে কাজ করা দরকার এবং ডেলিভারিম্যানদের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করাও জরুরি। সামনেই আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ দেখবো এবং স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট সিটিজেনদের জন্য আমাদেরকে ই-কমার্স মডেলকেও ঢেলে সাজাতে হবে। তাই বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটের সাথে মিলিয়ে ই-কমার্সকে কাজ করার জন্য আমাদের সবাইকে কাজ করতে হবে এখন থেকেই। লেখক: রিপন মিয়া, প্রধান নির্বাহী, কিউকম আরও পড়তে পারেন: ই-কমার্সে সোশ্যাল মিডিয়া নির্ভরতা কমাতে হবে

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App