টেন মিনিট স্কুল ছাড়াও আরেকটি বরাদ্দ বাতিল করেছিল পলক
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২০ আগস্ট ২০২৪, ০৭:৫৮ পিএম
জুনাইদ আহমেদ পলক
কোটা বিরোধী আন্দোলনের সমর্থনে ফেসবুকে পোস্ট দেয়ার অপরাধে আয়মান সাদিকের টেন মিনিট স্কুলের ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ বাতিল করেছিলেন সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। একই অভিযোগে উইমেন এন্ড ই-কমার্সের সিগনেচার ট্রেইনিং প্রোগ্রাম ‘অন্ট্রাপ্রেনরশীপ মাস্টারক্লাস’-এর বরাদ্দ বাতিল করেছিলেন তিনি। তবে এতদিন বিষয়টি সামনে আসেনি।
গত ১৬ জুলাই ফেসবুকে এক পোস্টে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, টেন মিনিট স্কুল-এর জন্য ৫ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেডের পক্ষ থেকে বাতিল করা হলো। এই বরাদ্দ বাতিলের কারণ ব্যাখ্যা করে পলক সাংবাদিকদের বলেছিলেন, কেউ যদি বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু নিয়ে বিতর্ক তোলে, এসব আদর্শের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়, সেখানে সরকার ব্যবস্থা নেবেই।
জানা গেছে, ওইদিন আয়মান সাদিক দুটি ফেসবুক পোস্ট দিয়েছিলেন। সেখানে একটিতে লেখা ছিল- ‘রক্তাক্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়! আমার ক্যাম্পাসে রক্ত কেন? প্রতিবাদ জানাই।’ আর অন্যটিতে লেখা ছিল- ‘কোটা সংস্কার চাই।’ এরপরেই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের আওতাধীন ভেঞ্চার ক্যাপিটাল প্রতিষ্ঠান স্টার্টআপ বাংলাদেশ তার বরাদ্দ বাতিল করে দেয়।
এদিকে একই অভিযোগে উইমেন এন্ড ই-কমার্স (উই) এর একটি সিগনেচার ট্রেইনিং প্রোগ্রাম ‘অন্ট্রাপ্রেনরশীপ মাস্টারক্লাস’-এর বরাদ্দও বাতিল করেছিলেন জুনাইদ আহমেদ পলক। উই-এর সকল উদ্যোক্তাদের জন্য সর্বপ্রথম “অন্ট্রাপ্রেনরশীপ মাস্টারক্লাস সিরিজ ১.০”, ট্রেইনিং কার্যক্রম শুরু করেছিল। জুলাই ২০২০ থেকে জুন ২০২১ এক বছরব্যাপী এই কার্যক্রম উই তাদের সকল উদ্যোক্তাদের জন্য আয়োজন করে যেখানে পৃথিবীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও নামকরা ট্রেইনার থেকে ১২ জন বিদেশী ট্রেইনার অনলাইনের মাধ্যমে এই ট্রেইনিং দিয়েছেন। যেখানে সাত হাজার উদ্যোক্তা ট্রেইনিংপ্রাপ্ত হন।
আরো পড়ুন- রিমান্ডে পলকের ক্রাইম পার্টনারদের মুখোশ উন্মোচন
উই ২ বছরে দুইটি অন্ট্রাপ্রেনরশীপ মাস্টারক্লাস সিরিজ করতে সক্ষম হয়েছে। পরবর্তীতে জুলাই ২০২১ থেকে জুলাই ২০২২ সালে “অন্ট্রাপ্রেনরশীপ মাস্টারক্লাস সিরিজ ২.০”, শুরু হয়। যেখানে বেসিক ও অ্যাডভান্স সিরিজ চালু করা হয়। যার মাধ্যমে আট হাজার উদ্যোক্তা ট্রেইনিংপ্রাপ্ত হন। এর অনলাইন অংশ থেকে প্রায় ৭ লাখ মানুষ উপকৃত হয়। এই ক্লাসের বিশেষত্বই ছিল বিদেশি ট্রেইনার একটি টপিকের উপরে দুই ঘণ্টা ক্লাস নিবেন। পরবর্তী দুই ঘণ্টায় দেশি ট্রেইনার সেই ক্লাসটি বাংলাতে ট্রান্সলেট করে পড়াতেন। এভাবে দুইটি সিরিজ শেষ হয়।
উদ্যোক্তাদের আরো সুফল বয়ে আনার জন্য এবং অন্যান্য উদ্যোক্তারাও যেন বিনামূল্যে এই সুযোগ পায় সেই লক্ষ্যে ২০২৩ সালে আইসিটি ডিভিশনে এই মাস্টারক্লাসটির জন্য আবেদন করা হয়। তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী আইডিয়া প্রোজেক্টে রেফার করে দেন। সেখানে ১৮ মাসের ক্লাস এবং ৬ মাসের মেন্টরিংয়ের পরিকল্পনা তৈরি করে আইডিয়া প্রজেক্টে জমা দেয়া হয়।
পরবর্তীতে আইসিটি ডিভিশন থেকে আরইওআই পাবলিশ হয় ২০ মার্চ ২০২৪ তারিখে। নিয়ম অনুযায়ী আরইওআই সাবমিট করে ১৮ এপ্রিল এবং এটা সিলেক্ট হয়। এর প্রেক্ষিতে ১৯ মে আইডিয়া থেকে আরএফপি প্রদান করা হয়। আরএফপি এবং টেকনিক্যাল প্রপোজালে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়। ২ জুলাই তাদেরকে নেগশিয়েশন মিটিং ডাকা হয় এবং তাদের প্রস্তুতি নিতে বলা হয়।
এ বিষয়ে উই’র প্রেসিডেন্ট নাসিমা আক্তার নিশা ভোরের কাগজকে বলেন, আমরা ক্লাসের ভেনু এবং প্রতিমন্ত্রীর কনফার্মেশন অনুযায়ী ৩১ জুলাই ক্লাসের তারিখ নির্ধারণ করি। যা তার অ্যাপয়েন্টমেন্ট ডাইরি দেখলেই জানা যাবে আমার কথার সত্যতা। আমি সুইজারল্যান্ড এবং ইংল্যান্ড থেকে দুই জন প্রফেসরকে কনফার্ম করি, তাদের জন্য নন রিফান্ডেবল টিকেট কেটে ফেলি। আমি এগ্রিমেন্টের জন্য আইডিয়া প্রোজেক্টে যাই ১১ জুলাই। উনারা আমাকে জানান সময় মতো এগ্রিমেন্ট হয়ে যাবে কিন্তু আমি যেন আমার প্রস্তুতি ঠিক রাখি। স্টুডেন্ট রেজিস্ট্রেশন যেন করে রাখি। আমি সব কিছুই মোটামুটি গুছিয়ে ফেলি।
তিনি বলেন, এর মধ্যে দেশে কোটা আন্দোলন শুরু হয়ে যায়। দেশে অস্থির অবস্থা বিরাজমান। রাস্তায় ছাত্র ছাত্রীরা নেমে গেছে। মানুষ মারা যাচ্ছে। আমি ১৭ তারিখ সকালে আরিফ আর হোসেনের একটা ফেসবুক স্ট্যাটাস শেয়ার করি। যেখানে লিখা ছিল, ‘ছাত্রদের দমিয়ে রাখা যদি এতো সহজ হতো তাহলে আজ আমাদের মাতৃভাষা উর্দু হতো।’ এটা শেয়ার করার কিছুক্ষণ পর থেকেই আমার কাছে নানাজন ফোন দিয়ে বলছে, আমি কেন এমন একটা পজিশনে থেকে এই পোস্ট শেয়ার করলাম। এটা যাতে এখনই ডিলেট করে দেই। আর লেখা-লেখি করতে থাকলে আমার ক্ষতি হয়ে যাবে। আমার নারী উদ্যোক্তাদের প্ল্যাটফরম উইয়েরও সমস্যা হবে।
তিনি আরো বলেন, আমার পোস্টের স্ক্রিনশট নিয়ে ছাত্রলীগের জনৈক লিডার নিজে আরেকটা পোস্ট দেয়। যেটা দেখার পর প্রতিমন্ত্রী আমার অন্ট্রাপ্রেনরশীপ মাস্টারক্লাসের কাজটি স্থগিত করে দেয়। কিন্তু আমাকে জানানো হয়নি। আমি কারফিউয়ের ব্রেক টাইমে একদিন আইসিটি মিনিস্ট্রিতে যাই। তখনো আমাকে বলেছে এগ্রিমেন্ট হবে আরো কয়েকদিন পর। সব ঠিক হয়ে নিক। তবে আমি বুঝতে পারছিলাম যে এই কাজ নিয়ে উনারা হয়তো কিছু করবেন না বা অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ করে দিবেন। আয়মান সাদিকের টেন মিনিট স্কুলের ইনভেস্টমেন্ট ঘোষণা দিয়ে বন্ধ করেছে। আমারটা হয়তো ঘোষণা দিবে না, কিন্তু কিছু একটা হয়তো করবে।
নাসিমা আক্তার নিশা বলেন, ১ আগস্টে মন্ত্রণালয় থেকে নতুন করে আমাদের এই প্রোজেক্টের উপর রি-টেন্ডার কল করা হয়। আমাদের সকল কার্যক্রম সম্পাদন করার পরেও আমাদের কোন কিছু জানানো হয়নি বা কোন নোটিশও দেয়া হয়নি। পরবর্তীতে আমরা জানতে পারি ৫ আগস্ট ২০২৪। আমরা অবাক হইনি। কারণ আর কিই বা করতে পারেন তারা। জেনুইন কোম্পানিকে কাজ দিবে না, তাদের কথা বা মতবাদের বাইরে গেলে কাজ দিবে না, এই বৈষম্যের শিকার আমি বরাবরই হয়ে আসছি।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, গত ১২ বছর থেকে আইসিটিতে যাওয়া আসা করছি। কিন্তু কখনোই আমি কোন কাজ পাইনি। শুধু গত বছর হার পাওয়ার প্রোজেক্টের একটি অংশে একটি জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানির সঙ্গে ছোট একটি কাজ পাই। অথচ আইসিটির সহায়তা ছাড়াই আমি দুইটি মাস্টারক্লাস সম্পন্ন করি। আমরা উদ্যোক্তারা যদি সরকারি সহায়তা না পাই, তাহলে আমরা কাজ করবো কিভাবে?