×

খেলা

তামিম মুশফিকের আড্ডা-আলাপন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ মে ২০২০, ০৮:৪৭ পিএম

তামিম মুশফিকের আড্ডা-আলাপন

তামিম মুশফিকের আড্ডা

বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে থমকে আছে গোটা বিশ্ব। স্থগিত রয়েছে বিশ্বের ক্রীড়াঙ্গনও। বাংলাদেশের গত মার্চ মাস থেকে চলছে লকডাউন আর সেই সঙ্গে স্থবির জনজীবন। তাই তো সতীর্থদের সঙ্গেও দেখা মিলছে না টাইগার ক্রিকেটারদের। আর তাইতো নিজেদের মধ্যে আড্ডা দেয়ার জন্য তারা বেছে নিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে। ২মে (শনিবার) রাতে বাংলাদেশের অভিজ্ঞ দুই ক্রিকেটার তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিম ইন্সটাগ্রামের লাইভে আড্ডা দিয়েছেন। দু'বন্ধুর সেই আড্ডা-আলাপনে উঠে আসা অজানা সব তথ্য ভোরের কাগজ পাঠকদের জন্য...

শুরুতেই করোনাকালে তামিমের কার্যক্রমের প্রশংসা করেন মুশফিক। মাশরাফির কথা তুলে তিনি তামিমকে বলেন, ‘তোকে (তামিম) স্যালুট। তুই যেভাবে মানুষের পাশে এগিয়ে এসেছিস। মাশরাফি ভাই সম্প্রতি একটা মন্তব্য করেছে, অনেক মানুষকেই আল্লাহ তৌফিক দেয়, কিন্তু মন বা কলিজা দেয় না। তোর মতো বড় কলিজাওয়ালা মানুষ কমই আছে। তুই আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবি। আমি সেই দিক থেকে চেষ্টা করছি, কীভাবে কি করা যায়।’ মুশফিকের প্রশংসা শেষ হতে না হতে পাল্টা তাকেই প্রশংসা বৃষ্টিতে ভাসান বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক, ‘আমি জানি ওই ব্যাটটা তোর কত প্রিয়। এটা কেবল তোর জন্য নয়, বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে এটা একটা আইকনিক ব্যাট হয়ে থাকবে। কারণ বাংলাদেশের হয়ে প্রথম ডাবল করা কোনো ব্যাটসম্যানের ব্যাট। প্রথম হিসেবে সব সময় মুশফিকুর রহিমই থাকবে, আর ওই ব্যাটটাই থাকবে। কীভাবে নিলাম করছিস, কখন হবে সেটা যদি জানাতি, আমি চেষ্টা করতাম।’

নিলামে মুশফিক সামর্থ্যবান সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। এই সপ্তাহের মধ্যে নিলামের কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানিয়েছেন এই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান, ‘আমার কাছে এটা একটি স্পেশাল ব্যাট। খুব শিগগিরই অনলাইনে নিলামে তোলা হবে একটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। কাজ গুছিয়ে আনা হচ্ছে। আমি অনুরোধ করবো, আমার জন্য নয়, অসহায় মানুষদের সহায়তার জন্য যত বেশি সম্ভব মূল্যে যেন সামর্থ্যবানরা ব্যাটটি কিনে নেয়। তাহলে মানুষের উপকার বেশি হবে। এটা আমার ব্যাট ভেবে কেনার দরকার নেই। যেই কিনবে টাকাটা গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজে ব্যবহার করা হবে।’

মুশফিকের কথা শেষ হতেই তামিম নিজের ইচ্ছের কথা বলা শুরু করেন এভাবে, ‘ইনশাআল্লাহ আমারও নজর থাকবে নিলামের দিকে। আমিও আশা করি তোর ব্যাটটা কিনে নিতে পারব।’ তামিমকে থামিয়ে দিয়ে মুশফিক এরপর বললেন, ‘দোস্ত তুই কিনে নে না আমার ব্যাটটা।’ হাসিমুখে তামিম জানালেন নিজের চাওয়ার কথা, ‘সত্যি কথা আমি তোর ব্যাটটা কিনতে চাই। আমার সামর্থ্যের মধ্যে যদি থাকে, অবশ্যই তোর ব্যাটটা আমি কিনে নেবো। দেখা যাক। ’

বাংলাদেশ জাতীয় দলের পঞ্চপান্ডবের অন্যতম দুজন সদস্য মুশফিক ও তামিম সেই অনূর্ধ্ব-১৫ বয়সভিত্তিক দল থেকে একসঙ্গে খেলছেন। ফলে খুব কাছ থেকেই নিজেদের দেখেছেন। একটা সময় এই মুশফিকুর রহিম ছিলেন পেস বোলার! বোলিং অ্যাকশনও ছিল ইংলিশ পেসার স্টিভ হার্মিসনের মতো। মুশফিকের পেস বোলিং প্রসঙ্গ প্রথমে তোলেন তামিম-ই। ‘অনেকেই জানে না, তুই নাকি হার্মিসনের স্টাইলে পেস বোলিং করতি?’ মুশফিক হেসে জবাব দেন, ‘হ্যাঁ, পেস বোলিং করতাম।’

এরপর মুশফিক যোগ করে বলেছেন, ‘বোলিং করতাম কারণ, তখন চেষ্টা করতাম যতদিক থেকে অবদান রাখা যায়। কিপিং সেভাবে করতাম না। একটা ম্যাচে মূল উইকেটকিপার চোটে ছিল। তখন উইকেটকিপিং করি। ওখান থেকে (উইকেট কিপিংয়ের) ভালোবাসাটা শুরু। তার আগে আমি বোলারই ছিলাম। যেটা বললি, আমার এই উচ্চতায় পেস বোলার এটা খুবই অপ্রচলিত। আমি যখন বিকেএসপিতে ভর্তি পরীক্ষা দেই, তখন স্যাররাও বলেছিলেন, ‘এই উচ্চতায় পেস বোলার, পাগল নাকি ? তুমি যেটা করছো, সেটা কর।’ মানে ব্যাটিং।’ ওই লাইভে তামিম মুশফিককে নিয়ে আরো বলেন, ‘আমাদের মধ্যে মুশফিকই সবচেয়ে বেশি পরিশ্রম করা ক্রিকেটার। আমি এতো অনুশীলন করিনা। ভালো খেলে যাওয়ার জন্য যতটা দরকার মনে করি, কেবল ততটাই। সবাই পরিশ্রমের দিক থেকে বিরাট কোহলির উদাহরণ দিয়ে থাকে। আমার মতে, আমাদের দেশের ক্রিকেটারদের জন্য মুশফিকই অনুসরণীয়। এজন্য অন্য দেশের কারো অনুসরণের দরকার নেই।’

কেন সবার চেয়ে বেশি অনুশীলন করেন তার ব্যাখ্যা দিয়ে মুশফিক বলেন, ‘আমি সবসময়ই বলি, আমার প্রতিভা সাকিব, তামিম কিংবা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের মতো নয়। তাদের পর্যায়ে যেতে হলে, তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পারফরমেন্স করতে হলে আমাকে বিশেষ কিছু করতে হবে। সেজন্য আমি বেশি পরিশ্রম করি।’

আরও অনেক অদ্ভুত সব তথ্য জানা গেছে ওই আড্ডার সুবাদে। মুশফিকুর শুরুতে ব্যাডমিন্টন শিখতে ভর্তি হতে চেয়েছিলেন বিকেএসপিতে। তখন ব্যাডমিন্টন না থাকায় পরে ক্রিকেট-ফুটবল দুটোতেই সুযোগ পান। কিন্তু বেছে নেন ক্রিকেট। শৈশবের সেই দিনগুলোর কথা মনে করে মুশফিক বলেছেন, ‘আমার আসলে ক্রিকেটের চেয়েও বেশি প্রিয় ছিল ব্যাডমিন্টন। অনেক ভালো লাগত। কিন্তু তখন বিকেএসপিতে ব্যাডমিন্টন ছিল না। আমি ক্রিকেট ও ফুটবল, দুটোতেই সুযোগ পেয়েছিলাম। পরে ক্রিকেটেই গেলাম। লারা আমার প্রিয় ছিল খুব, তার মতো ব্যাটিং করতে ইচ্ছে হতো। আমার ভাইরাও সব ক্রিকেট খেলতো। সব মিলিয়ে ক্রিকেটেই গেলাম।’

এছাড়া তামিম ইকবালের কাছে এশিয়া কাপে ব্যান্ডেজ পেঁচিয়ে খেলা শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বীরত্বগাথা সেই কাহিনী জানতে চান মুশফিক। আর জাতীয় দলের সতীর্থকে সেই গল্প শোনান তামিম। তখন ব্যাটিংয়ে নামার সময় একটা ঘোরের মধ্যে ছিলেন বলে জানান তামিম। সে সময় এতটাই ঘোরের মধ্যে ছিলেন যে ভুলে গিয়েছিলেন মুশফিকের রান সংখ্যাটা কত। তবে তামিম পেরেছিলেন। মুশফিকের ১৪৪ রানে শেষ পর্যন্ত ২৬১ রানের পুঁজি পায় বাংলাদেশ। বোলারদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে পরে লঙ্কানরা গুটিয়ে যায় মাত্র ১২৪ রানেই। এশিয়া কাপের ফাইনাল নিশ্চিত হয় বাংলাদেশের।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App