×

খেলা

হাতিরঝিল লেকে নৌকাবাইচ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ মার্চ ২০১৯, ০৩:২৫ পিএম

হাতিরঝিল লেকে নৌকাবাইচ

তিলোত্তমা এই নগরীর বাসিন্দারা গতকাল হাতিরঝিল লেকে নৌকাবাইচ উপভোগ করার সুযোগ পান -ভোরের কাগজ

বাংলাদেশের প্রাচীন ঐতিহাসিক খেলাগুলোর মধ্যে নৌকাবাইচ অন্যতম। নৌকাবাইচ হলো নদীতে নৌকা চালনার প্রতিযোগিতা। নৌকাবাইচ শ্রমের খেলা, শক্তির খেলা, কৌশলের খেলা। এ খেলায় যারা অংশগ্রহণ করে তারা মূলত শৌখিন যুবক বা পেশাদার মাঝিমাল্লা। যারা গান-বাজনা করে তারা সারিদার। বাইচের নৌকায় সারিদারের গানের তালে তালে বাচেলদাররা দাঁড় টানে। একজন তাল হারালে সবাই তাল হারায়। এ জন্য তালে তালে দাঁড় টানতে হয়। নৌকাবাইচ যুগ যুগ ধরে গ্রামের মানুষের মধ্যে আনন্দ-উৎসাহ উদ্দীপনার সৃষ্টি করছে। গ্রামের মানুষ নয় তিলোত্তমা ঢাকার বাসিন্দাদের হৃদয়ের খোরাক মেটাতে মহান স্বাধীনতার ৪৯তম দিবসে গতকাল হাতিরঝিলের লেকে নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে বাংলাদেশ রোয়িং ফেডারেশন। গতকাল মঙ্গলবার হাতিরঝিল লেকে নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। হাতিরঝিলের লেকে স্থায়ীভাবে অনুশীলন ও টুর্নামেন্ট করার জায়গা পাচ্ছে বাংলাদেশ রোয়িং ফেডারেশনের। এমন আশ্বাসের কথাই বলেছেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। গতকাল অনুষ্ঠিত ৪৯তম স্বাধীনতা দিবস পালন করতে গিয়ে ফেডারেশনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান অতিথি এই আশ্বাস দেন। তিনি বলেন আপনারা আবেদন করেন আমি হাতিরঝিলে রোয়িং ফেডারেশনের জন্য স্থায়ীভাবে জায়গার ব্যবস্থা করে দেবে যাতে করে সারা বছর রোয়িং অনুশীলন করতে পারে। এখানে উল্লেখ্য বাংলাদেশ রোয়িং ফেডারেশন অনেক দিন ধরেই হাতিরঝিলের লেক পাওয়ার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। অবশেষে ফেডারেশন তাদের সেই কাক্সিক্ষত জায়গা পাচ্ছে। ইতিহাসবিদদের মতে খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ২০০০ বছর আগে ‘মেসোপটেমিয়ার’ লোকেরা ইউফ্রেটিস নদীতে এক ধরনের নৌকাবাইচের আয়োজন করত। এর কয়েক শতাব্দী পর মিসরের নীলনদে নৌকাবাইচের প্রবর্তন হয়। আবহমান কাল থেকে বাংলার ঐতিহ্যের অন্যতম অনুষঙ্গ নৌকাবাইচ। ভাদ্র-আশ্বিন মাসে যখন খাল-বিল, নদীনালা ভরাট ও শান্ত থাকে তখন কোনো লোকউৎসব কিংবা জাতীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে নৌকাবাইচের আয়োজন হয়। বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের নৌকা দেখা যায়। বাইচের নৌকার গঠন কিছুটা বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। এই নৌকা সরু এবং লম্বাটে হয়। লম্বায় অনেক দীর্ঘ, ঠিক তেমনই চওড়ায় খুবই সরু। কারণ সরু ও লম্বাটে হওয়ার দরুন নদীর পানি কেটে তরতরিয়ে দ্রুত চলতে সক্ষম এবং প্রতিযোগিতার উপযোগী। নৌকার সামনের গলুইটাকে খুব সুন্দর করে সাজানো হয়। তাতে কখনো ময়ূরের মুখ, কখনো রাজহাঁস বা অন্য কোনো পাখির মুখাবয়ব থাকে। নৌকাটিতে উজ্জ্বল রংয়ের কারুকাজ করে বিভিন্ন নকশা তৈরি করা হয়। গতকাল হাতিরঝিল লেকে অনুষ্ঠিত নৌকাবাইচে পুরুষ বিভাগে ১১টি এবং মহিলা বিভাগে ৫টি দল অংশ নেয়। পুরুষ বিভাগে প্রথম আলীনগর রোয়িং ক্লাব, দ্বিতীয় নিউ গাজী রোয়িং ক্লাব ও তৃতীয় হয়েছে সিলেট নৌকা সমিতি। আর মহিলা বিভাগে প্রথম টঙ্গী রোয়িং ক্লাব, দ্বিতীয় চুনকুটিয়া রোয়িং ক্লাব ও তৃতীয় হয়েছে আলীনগর রোয়িং ক্লাব। বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার তুলে দেন মাসুদ স্টিল ডিজাইনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এম মাসুদুর রহমান, ফেডারেশনের সভাপতি মোল্লা মোহাম্মদ আবু কাওসার, সহসভাপতি মোহাম্মদ মনিরুল আলম, সাধারণ সম্পাদক মো. খোরশেদ আলম, যুগ্ম সম্পাদক ইফতেখারুজ্জামান টপছি ও কোষাধ্যক্ষ সৈয়দ নাহিদুর রায়হান পড়শী। নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা দেখার জন্য লেকের দুই প্রান্তে অনেক লোকের সমাবেশ হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App