আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ শেষে আপাতত ছুটিতে আছে টাইগাররা। এখন তাদের সামনে দুটি মেগা ইভেন্ট। চলতি বছরের ৩০ আগস্ট পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার মাটিতে বসবে এশিয়া কাপের আসর। এরপর ৫ অক্টোবর থেকে ভারতের মাটিতে শুরু হবে ওয়ানডে বিশ্বকাপের ১৩তম আসর। এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপের প্রস্তুতি হিসেবে আগামী ২৯ জুলাই থেকে ক্যাম্প শুরু করবে টাইগাররা। তবে এই ক্যাম্পে ওয়ানডে দলের অধিনায়ক তামিম ইকবাল থাকবেন কিনা তা নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা। দীর্ঘদিন ধরে পিঠের চোটে ভুগছেন তিনি। কাটাচ্ছেন দেড় মাসের ছুটি। তবে তামিমকে পুরোপুরি ফিট হয়ে দলে ফেরার পরামর্শ দিয়েছেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। এমনকি বিশ্বকাপে জাতীয় দলের মেন্টর হওয়ার প্রসঙ্গেও কথা বলেছেন তিনি।

গতকাল ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে এক অনুষ্ঠানে তামিমকে নিয়ে কথা বলেন মাশরাফি। যদিও দেশের বাইরে অবস্থান করছেন তামিম। পরিবার নিয়ে আছেন দুবাইতে। সেখান থেকে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যাবেন। ছুটি ও চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা করবেন তামিম। এর আগে আফগানদের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ চলাকালেই হঠাৎ করে অবসরের ঘোষণা দেন তামিম। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরামর্শে সেই অবসর প্রত্যাহারও করেন।

তামিমের অবসর ও ভেঙে পড়া হতাশ করে মাশরাফিকে। গতকাল তিনি বলেন, ‘তামিমের ওপর কী গিয়েছে, তামিম ঠিক ততটা আমার সঙ্গে শেয়ার করেনি। তবে আমি সবচেয়ে বেশি হতাশ হয়েছি তামিমকে দুর্বল দেখে। ও একটা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার, ওর পক্ষেও অনেকে কথা বলেছে। সাধারণভাবে তামিম এটুকু লড়াই করতে পারবে না, তা আমার কাছে মনে হয়নি। তবে কখনো কখনো মানুষ ভেঙে পড়ে, তখন মানুষের সহায়তা প্রয়োজন হয়।’

তামিমকে ক্রিকেটে ফেরাতে বড় ভূমিকা রেখেছেন মাশরাফি। তার ফোন কলের পর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন তামিম। তাকে এবার পরামর্শও দিয়েছেন মাশরাফি। বলছেন চোট থেকে পুরোপুরি সেরে ওঠার পরই মাঠে ফেরা উচিত তামিমের। সাবেক এই অধিনায়ক আরো বলেন, ‘এখন যে জিনিসটা হচ্ছে, ওর ইনজুরি ওকে ভোগাচ্ছে। তামিম পারফর্ম করছে না, কেন করছে না? তার কারণ হচ্ছে ইনজুরি। তাহলে কী করা উচিত? ওর ইনজুরিটা ঠিক করে আসা উচিত। ওর এখন উচিত, ইনজুরি নিয়ে চিন্তা করা। ফিট হয়ে এলে আমি নিশ্চিত ও অটোমেটিক রান করবে আর আগের পরিস্থিতিতে ফিরে আসবে।’

তামিম কীভাবে অবসর নেয়ার পর আবার মাঠে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সেটা এখন সবার জানা। অবসর নেয়ার পরের দিন গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের পর সিদ্ধান্ত বদলান তামিম। প্রধানমন্ত্রীই নাকি চেয়েছিলেন তামিম বিশ্বকাপে খেলুক। সেই বিবেচনায় মাশরাফি মনে করছেন তামিম বেশ ভাগ্যবান এক ক্রিকেটার। মাশরাফি বলেন, ‘আমি এ ক্ষেত্রে বলব, তামিম খুব ভাগ্যবান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাকে ডেকেছেন, কথা বলেছেন এবং তাকে ক্রিকেটে ফিরিয়ে এনেছেন। এই সৌভাগ্য সবার হয় না।’

প্রধানমন্ত্রীর কথায় অবসর ভেঙে ফিরেছিলেন তামিম। কিন্তু গণভবনে দেখা করে প্রধানমন্ত্রীকে একটা চাওয়ার কথাও জানিয়েছিলেন বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক। আসন্ন ওয়ানডে বিশ্বকাপে মাশরাফিকে মেন্টর বা পরামর্শক হিসেবে চান তামিম। সেই আলোচনা অনেক দিন পেরিয়ে গেলেও আলোর মুখ দেখেনি এখনও। তবে যাকে নিয়ে এত আলোচনা সেই মাশরাফিও জানেন না, জাতীয় দলে মেন্টরের ভূমিকা কী? জাতীয় দলের মেন্টর হিসেবে বিশ্বকাপে থাকবেন কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মাশরাফি বলেন, ‘তামিমের মেন্টর হিসেবে চাওয়াটা ভিন্ন জিনিস। আমার কোনো মাইন্ড সেটআপ নেই। আগেও বলেছি, আমার এ রকম কোনো মাইন্ড সেটআপ নেই। আপনারা যে প্রশ্ন করছেন, এই প্রশ্নের উত্তরও নেই আমার কাছে। আমি কোনো কিছু জানি না। আমার বর্তমানে কি কাজ সেইটা শুধু জানি। কালকে যেটা কাজ আসবে, সেটা করব। পরশু দিনের কথা বলা বা কালকের চিন্তা করার এখন আমার সময় নেই।’

মাশরাফি পাল্টা প্রশ্ন রেখেই বলেন, ‘মেন্টরে কী লাভ হয় আমাকে একটু বলতে পারবেন? আমি জানি না, ও কেন চাইছে! মেন্টর জিনিসটা তো…অন্য জিনিস। মেন্টরের কাজটা কি আমি জানি না। দলের প্রয়োজন সেরকম পরিস্থিতি এলে, সেরকম হলে তখন বলা যাবে। এখন এই মুহূর্তে আমাকে প্রশ্ন করলে এর উত্তর নেই। এখানে আমি কী উত্তর দেব? যদি সেরকম কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয় ভবিষ্যতে, সেরকম কিছু হয়, তখন আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে কিছু বলা যাবে। এই মুহূর্তে আমি তো ওরকম কিছু দেখি না।’

২০১৯ বিশ্বকাপে জাতীয় দলের নেতৃত্বে ছিলেন মাশরাফি। বেশ কয়েকটি বিশ্বকাপে খেলার অভিজ্ঞতাও আছে তার। এখন দেখা যাক সামনের বিশ্বকাপে মাশরাফিকে মেন্টর হিসেবে দেখা যায় কিনা।