×

খেলা

দীর্ঘদিন মাঠে না নামার খেসারত দিল লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ জুলাই ২০২৩, ০৮:৫২ এএম

দীর্ঘদিন মাঠে না নামার খেসারত দিল লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা

ছবি: সংগৃহীত

কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামের গতকাল নেপালের মেয়েদের কাছে হেরে যায় বাংলাদেশের মেয়েরা। ৯০ মিনিটে কোনো দল গোল করতে না পারলে ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। যেখানে ৪-২ ব্যবধানে জিতে সিরিজ নিজেদের করে নেয় হিমালয় কন্যারা। এর আগে প্রায় দশ মাস পর মাঠে নেমে নিজেদের প্রথম ম্যাচে নেপালের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করেছিল মাহবুবুর রহমান লিটুর শিষ্যরা। দীর্ঘদিন মাঠে না নামার কারণেই এই সিরিজে হার দেখল সাবিনারা।

টাইব্রেকারে নেপাল প্রথম শট নেয়। প্রথম শটেই গোল করেন সাবিত্রা ভান্ডারী। বাংলাদেশের গোলরক্ষক রুপ্না চাকমা ঝাঁপিয়েও বলের নাগাল পাননি। বাংলাদেশের শামসুন্নাহারের প্রথম শটও গোল হয়। গোলরক্ষক রানা মাগার বলের দিকে ঝাঁপিয়েও ধরতে পারেননি। এরপর নেপালের হীরা কুমারী গোল করেন। অন্যদিকে, শিউলি আজিমের শট রানা মাগার রুখে দেন। এবার গোলরক্ষক রানা মাগার নিজেই শট নেন। সাইড পোস্টে লেগে বল বাইরে চলে যায়। মারিয়া মান্ডার শট রানা মাগার সেভ করেন। নেপালের দীপা ও বাংলাদেশের মনিকা গোল করেন। ম্যাচে টিকে থাকতে হলে পঞ্চম শট আটকে দিতে হতো বাংলাদেশের গোলরক্ষককে। তবে সেটি না পারায় শেষ পর্যন্ত ৪-২ ব্যবধানে সিরিজ জিতে নেয় নেপালের মেয়রা।

প্রথম ম্যাচের একাদশকেই গতকাল মাঠে নামান কোচ লিটু। ম্যাচের শুরু থেকেই সফরকারীদের ওপর চাপ প্রয়োগ করে খেলতে থাকে সাবিনা-সানজিদারা। ম্যাচের চতুর্থ মিনিটেই গোলের দেখা পেতে পারত তারা। তবে বাধা হয়ে দাঁড়ায় ক্রসবার। বক্সের বাইরে ফ্রি কিক পায় বাংলাদেশ। মনিকা চাকমা আলতো টোকা দেয়ার পর একটু ঝুলিয়ে শট নেন অধিনায়ক সাবিনা। গোলরক্ষক পরাস্ত হলেও ক্রসবারকে পরাস্ত করতে পারেননি তিনি। ক্রসবারে লেগে ফিরে আসে বল। এরপর বল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখে খেলতে থাকে বাংলাদেশ। ম্যাচের ৩৬ মিনিটে আবারো সুযোগ পায় তারা। নেপালের অনিকা বাসনেতের পা থেকে বল কেড়ে নিয়ে একক প্রচেষ্টায় আক্রমণে ওঠেন মারিয়া মান্ডা। একাধিক ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে ডি বক্সে গিয়ে ভারসাম্য হারান এই মিডফিল্ডার। নেপাল তেমন আক্রমণ করার সুযোগ পায়নি। তাদের সেরা ফরোয়ার্ড সাবিত্রা ভান্ডারিকে কড়া পাহারায় রাখেন আফিদা খন্দকার ও মাসুরা পারভীন। প্রথমার্ধ শেষ হয় গোলশূন্য সমতা নিয়ে।

দ্বিতীয়ার্ধে তিনটি পরিবর্তন আনেন লিটু। কৃষ্ণা রানী সরকারের জয়গায় আসেন সুমাইয়া মাতসুশিমা, তহুরা খাতুনের পরিবর্তে নামেন শাহেদা আক্তার রিপা ও সানজিদা আক্তারের বদলি হিসেবে আসেন ঋতুপর্না চাকমা। প্রথমার্ধের মতো দ্বিতীয়ার্ধেও ধীরগতি ছিল লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের খেলায়। তেমন কোন গোলের সুযোগ তৈরি করতে পারেনি তারা। ম্যাচের শেষ দিকে আক্রমণে ওঠার চেষ্টা করে নেপাল। ৮৭তম মিনিটে দিপা শাহির শটে গতি থাকলেও বলের লাইনে থাকায় সহজেই আটকান রুপনা। একটু পর গোলরক্ষক আঞ্জিলা সুবাকে তুলে অঞ্জনা রানা মাগারকে বদলি নামান নেপাল কোচ। এর একটু পরেই বাজে ম্যাচ শেষের বাশি। নির্ধারিত ৯০ মিনিট শেষ হয় গোলশূন্য সমতায়। আগেই বলা হয়েছিল দুই ম্যাচ ড্র হলে শেষ ম্যাচের ফলাফল নিষ্পত্তি হবে টাইব্রেকারে। সেখানে বাজিমাত করে নেপাল। ৪-২ ব্যবধানে জিতে সিরিজ নিজেদের করে নেয় হিমালয় কন্যারা।

এর আগে নেপালের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়েই গত ১৩ জুলাই আন্তর্জাতিক ফুটবলে পা রেখেছিল সাবিনারা। দীর্ঘ ১০ মাস পর আন্তর্জাতিক ফুটবলে মাঠে নেমে প্রথম ম্যাচে নেপালের বিপক্ষে ড্র করেছিল সাবিনারা। গত বছর ১৯ সেপ্টেম্বর নেপালের ঘরের মাঠে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে বাংলাদেশের কাছে ৩-১ গোলে হেরেছিল নেপাল। এবার ঢাকায় বাংলাদেশকে হারিয়ে কিছুটা প্রতিশোধ নিলো তারা।

চোটের কারণে খেলতে পারেননি শামসুন্নাহার জুনিয়র। ফরোয়ার্ড কৃষ্ণা রানী সরকার ও ডিফেন্ডার মাসুরা পারভীন খেলেছেন চোট নিয়ে। এমন অগোছালো দল নিয়ে দুই ম্যাচের সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ। ম্যাচ শেষের প্রতিক্রিয়ায় কোচ লিটু তুলে ধরেন দলের বর্তমান বাস্তবতা। তিনি বলেন, ‘আমরা ১০ মাস খেলার মধ্যে ছিলাম না। আপনি শুধু পড়লেন, কিন্তু পরীক্ষা দিলেন না, তাহলে তো কোনো লাভ নেই। রেজাল্ট কী, আপনি নিজেও জানছেন না। আমার মনে হয় বিষয়টা এটাই। আমরা দশ মাস খেলার মধ্যে ছিলাম না, তবে আমি এটাকে অজুহাত হিসেবে বলব না। তাছাড়া মেয়েরা দীর্ঘদিন অনেকে একসঙ্গে নেই এবং একমাস কৃষ্ণা ও মাসুরাকে পাইনি, ওরা ইনজুরড ছিল, ফিজিও চেষ্টা করেছে যতদূর ওদের উন্নতি করা যায়। আসলে এত জোড়াতালি দিয়ে হয় না।’

‘এই টিমের প্রতি সবার প্রত্যাশা অনেক, কেন না ওরা প্রতিটি ম্যাচে ভালো করেছে (অতীতে), কিন্তু এই দলটাতে আঁখি (খাতুন) নেই, স্বপ্না নেই, ছোট শামসুন্নাহার নেই, আমি যে উপরে উঠে প্রতিপক্ষকে থ্রেড করব ওরা উপরে একা হয়ে গেছে। এই জায়গাগুলোতে যদি আমার গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় না থাকে, তাহলে তো একটু ভুগতে হবে। যদি নিয়মিত ম্যাচ খেলতে পারি, তাহলে আমাদের খেলায় উন্নতি হবে।’ -আরো যোগ করেন লিটু।

কোচের আগে অধিনায়ক সাবিনা খাতুনের কণ্ঠেও ছিল লম্বা সময় ম্যাচ খেলতে না পারার আক্ষেপ। টাইব্রেকারে নিজে আগে শট না নেয়ার ব্যাখ্যাও দেন তিনি। সাবিনা বলেন, ‘নেপাল যে আহামরি খেলেছে, তা নয়। আমাদের যে দশ মাসের গ্যাপ ছিল, আমার মনে হয় সেটার প্রভাব পড়েছে। আপনি অনুশীলন করছেন, কিন্তু প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলছেন না, সেটার একটা প্রভাব তো অবশ্যই থাকে। টাইব্রেকারে যারা আগে শট নিতে গিয়েছিল, তারা আমার থেকে ভালো। এটাই প্ল্যান ছিল। অধিনায়ক বা সেরা খেলোয়াড় যে সবসময় টাইব্রেকারে ভালো শট নয়, বিষয়টা তেমন নয়। গতকালও স্যার বলেছিলেন টাইব্রেকার নিয়ে। যারা যারা পরিকল্পনায় ছিল, তারা পেনাল্টি প্র্যাকটিসও করেছিল, কিন্তু হয়নি।’

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App