×

খেলা

‘হৃদয় রেখে গেলাম’ তিলোত্তমা ঢাকায় ‘বাজপাখি’র ১১ ঘণ্টা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৩, ০৯:০৫ এএম

‘হৃদয় রেখে গেলাম’ তিলোত্তমা ঢাকায় ‘বাজপাখি’র ১১ ঘণ্টা

ছবি: ফোকাস বাংলা

গতকালের সকালটা অন্য দিনের থেকে একটু আলাদা। আমস্টারডাম থেকে এসে সোমবার ভোরে বাংলাদেশে পা রাখেন আর্জেন্টাইন তারকা গোল রক্ষক এমিলিয়ানো মার্তিনেজ। বাংলাদেশের ভক্ত-সমর্থকরা যাকে ভালোবেসে ‘বাজপাখি’ নামে ডেকে থাকেন। বাংলাদেশে আসার আগ্রহ নিজেই প্রকাশ করেছিলেন। তার মূল সফরটি ভারতের কলকাতায়। ঢাকায় ১১ ঘণ্টা অবস্থানকালে প্রকাশ্যে কোথাও উপস্থিত হননি তিনি। ফলে তাকে ঘিরে সমর্থকদের তুমুল উন্মাদনা দেখার সুযোগ মেলেনি এমির। হোটেলবন্দি সময়, সৌজন্য সাক্ষাৎ আর কালো কাচে ঘেরা গাড়িতেই আটকে ছিল ‘বাজপাখি’র ঢাকা সফর। ভক্তদের দেয়া ভালোবাসার নামটি সম্পর্কে জেনে মুগ্ধ তিনি। তবে সংক্ষিপ্ত সফরে পাওয়া বাংলাদেশের আতিথেয়তা ছুঁয়ে গেছে তার হৃদয়। জানালেন, এদেশে ফিরতে অপেক্ষায় থাকবেন তিনি। বিদায়বেলায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইন্সটাগ্রামে বাংলাদেশ সফরের পাঁচটি ছবি পোস্ট করেছেন এমিলিয়ানো। সেখানে জানিয়েছেন এদেশের মানুষের দেয়া ভালোবাসা অনুভব করার কথা। বাজপাখি নামটি ও বাংলাদেশের প্রতি তীব্র ভালোবাসা তুলে ধরেছেন এমিলিয়ানো, ‘পরের সফরের আগ পর্যন্ত আমি আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিলেও এখানে হৃদয়ের একটি অংশ রেখে যাচ্ছি। আমি চিরকাল বাংলাদেশ বাজপাখি হিসেবে জাদুমুগ্ধ হয়ে থাকব।’

গত কোপা আমেরিকা ও বিশ্বকাপে অসাধারণ পারফর্ম করা আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্তিনেজ। নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডাম থেকে প্রায় দশ ঘণ্টা বিমান ভ্রমণ করে গতকাল সোমবার ভোরে ঢাকায় পা রাখেন এই তারকা। কয়েক হাজার মাইল পথ পাড়ি দিতে ট্রানজিটও ছিল ফ্লাইটে। সব মিলিয়ে তার ভ্রমণ ছিল ৩০ ঘণ্টার বেশি। বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে দিকে ঢাকা ত্যাগ করেছেন মার্তিনেজ। তার সঙ্গে এসেছিলেন কয়েকজন ব্যক্তিগত স্টাফও। কলকাতার ক্রীড়া সংগঠক শতদ্রু দত্তের আমন্ত্রণে ভারতীয় উপমহাদেশ সফরে আসেন মার্তিনেজের। তার বাংলাদেশ সফরের স্পন্সর ফান্ডেড নেক্সট।

বিশ্বকাপের গোল্ডেন গ্লাভস জয়ী এই গোলরক্ষক শাহজালাল বিমানবন্দরে নেমে সরাসরি চলে যান রাজধানীর একটি পাঁচতারকা হোটেলে। সেখানে কিছু সময় বিশ্রাম করে স্পন্সর প্রতিষ্ঠানের অফিসে যান। মার্তিনেজের সঙ্গে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা সময় কাটান আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ হোসেন পলক। পরে তিনি মুখোমুখি হয়েছিলেন গণমাধ্যমের। মার্তিনেজের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে উপহারসামগ্রী দেয়ার কথা জানালেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ হোসেন পলক। তারপর মার্তিনেজ সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে।

মার্তিনেজের উপহার জার্সি, প্রধানমন্ত্রী দিলেন নৌকা : বিশ্বকাপজয়ী গোলরক্ষক মার্তিনেজের ঢাকা সফর শেষ হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের মধ্য দিয়ে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের একটি ছবি নিজের ইন্সটাগ্রামেও পোস্ট করেছেন লিওনেল মেসির সতীর্থ। সেখানে তিনি লিখেছেন, এ দেশের মানুষের ভালোবাসা আর আতিথেয়তায় তিনি আপ্লুত। অদূর ভবিষ্যতে আবারো তিনি বাংলাদেশে আসতে চান। গতকাল দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এই সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রীকে আর্জেন্টিনার একটি জার্সি উপহার দেন বিশ্বকাপের গোল্ডেন গøাভসজয়ী এই খেলোয়াড়। আর মার্তিনেজকে প্রধানমন্ত্রী একটি নৌকা উপহার দেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম জানান, আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ে এই তারকা ফুটবলারের অবদানের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনি আর্জেন্টিনার জন্য গৌরব নিয়ে এসেছেন। আমি আপনার সফলতা কামনা করি। বাংলাদেশে ফুটবলের জনপ্রিয়তার তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ফুটবল সারা বিশ্বে জনপ্রিয়। বাংলাদেশিরাও ফুটবল উন্মাদ। খেলাধুলার সঙ্গে পারিবারিক বন্ধনের কথাও মার্তিনেজকে বলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। তিনি বলেন, আমার বাবা এবং দাদা ফুটবল প্রেমিক ছিলেন। ফুটবলসহ অন্যান্য খেলাধুলার প্রসারে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত মিনি স্টেডিয়াম করে দেয়াসহ সরকারের নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। এ সময় মার্তিনেজ বলেন, ফুটবলের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসা, বিশেষ করে বিপুলসংখ্যক আর্জেন্টাইন ফুটবল ভক্ত আছে জেনে আমি আনন্দিত।

‘বাজপাখি’ নাম পেয়ে রোমাঞ্চিত : আর্জেন্টিনা মানেই মেসি। তবে কাতারে বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে আর্জেন্টিনার ৩৬ বছরের হাহাকার ঘুচিয়ে দেয়ায় এমিলিয়ানো মার্তিনেজের অবদানও কম নয়। ফাইনাল টাইব্রেকারে যাওয়ার আগে অতিরিক্ত সময়ের অন্তিম মুহূর্তে মার্তিনেজ ওই সেভটা না করলে তো আর আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জেতা হয় না। এর আগে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালের টাইব্রেকারের কথা মনে আছে তো! মার্তিনেজের দুই-দুইটি সেভেই স্বপ্ন পূরণের পথে আর্জেন্টিনার আরেকটি ধাপ পেরোনো। বিশ্বকাপ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও মেসির চেয়ে বেশি না হলেও সমান আলোচনায় থেকেছেন মার্তিনেজ।

ঢাকায় খুব বেশি আনুষ্ঠানিকতা মার্তিনেজকে নিয়ে ছিল না। হোটেলে বিশ্রাম নিয়ে সকাল ৯টার দিকে তিনি যান নেক্সট ভেঞ্চার্সের কার্যালয়ে। ওই অনুষ্ঠানেই মার্তিনেজ পেলেন তিনটি উপহার। মার্তিনেজের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে উপহারসামগ্রী দেয়ার কথা জানালেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ হোসেন পলক। পলক বলেন, মার্তিনেজকে বাজপাখি উপহার দিয়েছে ফান্ডেড নেক্সট। এতে সে খুবই খুশি হয়েছে। বাংলাদেশের তরুণ সমাজের আইকন হিসেবে মাশরাফিকে আমন্ত্রণ জানানো হয় ওই আয়োজনে। আর্জেন্টিনার পাঁড় ভক্ত মাশরাফি অনুষ্ঠানে যান দুই সন্তানকে সঙ্গী করে। মাশরাফির দুই সন্তানকে নিজের স্বাক্ষর সংবলিত জার্সি ও গ্লাভস উপহার দেন মার্তিনেজ। সেই সঙ্গে তোলেন সেলফিও। এদিকে মাশরাফিও তার নিজের জাতীয় দলের একটি জার্সি উপহার দেন মার্তিনেজকে। আর আয়োজক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে শুধু বাজপাখিই নয়, আর্জেন্টাইন তারকার হাতে তুলে দেয়া হয়েছে দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের স্মারকও। বঙ্গবন্ধুর বই দেয়া হয়েছে তাকে উপহার হিসেবে। দেয়া হয়েছে নদীমাতৃক দেশের প্রতীক নৌকা।

পাটের তৈরি একটি দেশীয় নৌকা দেয়া হয় তাকে। ওই অনুষ্ঠানেই মার্তিনেজকে জানানো হয়েছিল, বাংলাদেশের মানুষ তাকে বাজপাখি নামে ডাকে। সে প্রসঙ্গ ধরে মার্তিনেজ ইন্সটাগ্রামে লিখেছেন, ওই বাজপাখি নাম পেয়ে তিনি রোমাঞ্চিত।

তবে বাংলাদেশে আর্জেন্টিনাকে ঘিরে যে তুমুল উন্মাদনা, গত বিশ্বকাপের বাংলাদেশের যে আবেগের ঢেউ আছড়ে পড়েছিল আর্জেন্টিনাতেও, সেসবের সঙ্গে সরাসরি পরিচয় হলো না মার্তিনেজের। পরিচয় হলো না সমর্থকদের সঙ্গে, এমনকি সংবাদমাধ্যমের জন্যও কোনো আয়োজন ছিল না তাকে নিয়ে। আনুষ্ঠানিক কিছু কার্যক্রমের মধ্যে দিয়েই শেষ হয়েছে আর্জেন্টিনার বিশ্বজয়ী গোলরক্ষকের সংক্ষিপ্ত সফর।

তবে আবার আসার ইচ্ছে প্রকাশ করে ইন্সট্রাগ্রামে লিখেছেন, ‘নেক্সট ভেঞ্চার্স ও ফান্ডেডনেক্সটের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে বাংলাদেশে অসাধারণ একটি সফর করলাম। এখানকার মানুষ আমার হৃদয়কে বিগলিত করেছে তাদের ভালোবাসা, যতœ ও অতুলনীয় আতিথেয়তা দিয়ে। নিকট ভবিষ্যতে এই সুন্দর দেশটিতে ফিরে আসতে গভীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় থাকব।’

চেনা-অচেনা বহু মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছেন তিনি, ‘প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, পুলিশ, বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ও অগণিত আরো অনেকের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি, যাদের নামও হয়তো আমি জানি না, কিন্তু তাদের ভূমিকাও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। বাংলাদেশের সঙ্গে এখন যে বিশেষ বন্ধনে আমি যুক্ত, তা গড়ে তোলায় আপনাদের সবার অবদান আছে।’

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App