×

খেলা

ব্যালন ডি’অরের দৌড়ে ওরা তিনজন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২৩, ১০:৫০ এএম

ব্যালন ডি’অরের দৌড়ে ওরা তিনজন
ফুটবলারদের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ পুরস্কার ব্যালন ডি’অর পুরস্কার ঘোষণার দিনক্ষণ চূড়ান্ত হয়েছে। আগামী ৩০ অক্টোবর ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে ২০২২-২৩ মৌসুমের বিজয়ীর নাম ঘোষণা করবে আয়োজক ফরাসি ম্যাগাজিন ফ্রান্স ফুটবল। এখন পর্যন্ত ব্যালন ডি’অর জয়ের দৌড়ে এগিয়ে আছেন আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক লিওনেল মেসি। তাকে টেক্কা দিচ্ছেন ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে ট্রেবলজয়ী নরওয়েজিয়ান ফরোয়ার্ড আর্লিং হলান্ড। এই দৌড়ে আরো আছেন পিএসজিকে লিগ ওয়ানের শিরোপা জেতাতে বড় অবদান রাখা ফরাসি ফরোয়ার্ড কিলিয়ান এমবাপ্পে। এই তিন তারকার পাশাপাশি ব্যালন ডি’অর জয়ের দৌড়ে আছেন রিয়াল মাদ্রিদের ভিনিসিয়াস জুনিয়র, ম্যানচেস্টার সিটির কেভিন ডি ব্রুইনার মতো তারকারা। এবারের সেরা খেলোয়াড় বাছাইয়ের জন্য গত বছরের ১ আগস্ট থেকে চলতি বছরের ৩১ জুলাই পর্যন্ত পারফরম্যান্স বিবেচনায় নেয়া হবে। গত দেড় যুগ ধরে ব্যালন ডি’অর নিজেদের করে নিয়েছিলেন লিওনেল মেসি ও ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। মাঝে লুকা মদ্রিচ আর করিম বেনজেমা ছাড়া আর কেউই সেখানে ঢুকতে পারেননি। বিশেষ ট্রফিটি রেকর্ড সর্বোচ্চ সাতবার নিজের ঝুলিতে পুরেছেন মেসি। তারপরেই রয়েছেন পর্তুগিজ অধিনায়ক রোনালদো। এ দুজনের বয়স হয়ে গেছে, তারা রয়েছেন ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে। ইতোমধ্যে এ দুজন ইউরোপকে বিদায় জানিয়েছেন। এবারো ব্যালন ডি’অর জয়ের দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে আছেন মেসি। কাতার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে তৃতীয় শিরোপা এনে দেয়ায় সবচেয়ে বড় অবদান ছিল তার। পুরো টুর্নামেন্টে তিনি করেছেন ৭ গোল এবং ৩ অ্যাসিস্ট। বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার ওঠে তার হাতে। কাতার বিশ্বকাপের পর প্রীতি ম্যাচেও পেয়েছেন গোলের দেখা। সর্বশেষ জাতীয় দলের হয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মাঠে নেমেও করেন এক দুর্দান্ত গোল। এছাড়া পিএসজির হয়ে এই মৌসুমে জিতেছেন লিগ ওয়ানের শিরোপা। বিদায়ী মৌসুমে ক্লাবের হয়ে ৪১ ম্যাচে ২১টি গোলের পাশাপাশি করেছেন ২০টি অ্যাসিস্ট। ব্রাজিলের বিশ্বকাপজয়ী কিংবদন্তি রোনালদো নাজিরিওর মতেও এবারের ব্যালন ডি’অর জয়ের যোগ্য দাবিদার মেসি। সমপ্রতি গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, আমি মনে করি মেসিকে মুকুট দেয়া হবে। সে বিশ্বকাপ জিতেছে, যা অনেক বড় টুর্নামেন্ট। কাতার বিশ্বকাপে মেসি ব্যতিক্রমী ফর্মে ছিলেন। বিশ্বকাপ জিতে ব্যক্তিগত শ্রেষ্ঠত্বের দৌড়ে মেসি অনেকটা এগিয়ে থাকলেও তাকে টেক্কা দিচ্ছেন ম্যানসিটি ফরোয়ার্ড আর্লিং হলান্ড। ইতোমধ্যে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জিতেছে ম্যানচেস্টার সিটি। এর মধ্য দিয়ে মৌসুমে ট্রেবল জিতেছে সিটিজেনরা। সিটিজেনদের এই জয়ে বড় অবদান ছিল হলান্ডের। তবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনাল ও ফাইনালে নিজের ছায়া হয়ে ছিলেন তিনি। সদ্য শেষ হওয়া মৌসুমে ক্লাবের হয়ে ৫৩ ম্যাচে ৫২ গোল করেছেন হলান্ড। সব মিলিয়ে মৌসুমজুড়ে ৫৩ গোল আর ৯টি অ্যাসিস্ট আছে নরওয়েজিয়ান গোলমেশিনের। প্রিমিয়ার লিগে ভেঙেছেন এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড। এছাড়া জিতেছেন বেশ কিছু ব্যক্তিগত পুরস্কার। মেসিকে টেক্কা দিতে এ পরিসংখ্যানকে যথেষ্ট বলাই যায়। যে কারণে হলান্ডকেও ব্যালন ডি’অরের দৌড়ে এগিয়ে রাখছেন পর্তুগিজ কিংবদন্তি লুইস ফিগো। লরিয়াস পুরস্কার অনুষ্ঠানে গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘আমি মেসিকে বাছাই করব না। কারণ, সে আর চ্যাম্পিয়ন্স লিগে নেই। আমি মনে করি, যারা ভোট দেয় তাদের ওপর এই প্রতিযোগিতার দারুণ প্রভাব আছে। যদিও বাছাই করা সত্যিই অনেক কঠিন। এটা মৌসুমের বাকি সময়ের ওপর নির্ভর করছে। বিশেষ করে আমাদের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। আমি হলান্ডকেই বেছে নেব। সে এখনো প্রতিযোগিতায় আছে এবং অসাধারণ মৌসুম কাটিয়েছে।’ মেসি-হলান্ডের পাশাপাশি শুরু থেকে ব্যালন ডি’অর জয়ের দৌড়ে থাকলেও কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালে হার ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে ছিটকে যাওয়ায় অনেকটা আড়ালে চলে যান ফরাসি ফরোয়ার্ড কিলিয়ান এমবাপ্পে। সব মিলিয়ে ক্লাব ও জাতীয় দলের হয়ে মৌসুমে ৫৪ গোলের পাশাপাশি ১৪টি অ্যাসিস্ট করেছেন তিনি। এছাড়া কাতার বিশ্বকাপে দলকে ফাইনালে তুলতেও বড় অবদার রাখেন এই তারকা। ফাইনালে হ্যাটট্রিকসহ পুরো টুর্নামেন্টে করেন ৮টি গোল। জিতে নেন গোল্ডেন বুট। পিএসজির হয়ে লিগ ওয়ান জয়ের পেছনেও রয়েছে তার গুরুত্বপূর্ণ অবদান। লিগ ওয়ানের সর্বোচ্চ গোলদাতাও তিনি। ফরাসি তারকা মনে করেন, ব্যালন ডি’অরের যে মানদণ্ড, তাতে তিনিও পুরস্কারটির যোগ্য দাবিদার। ফরাসি টেলিভিশন টিএফওয়ানকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ফ্রান্স অধিনায়ক বলেন, ‘ব্যক্তিগত পুরস্কার নিয়ে কথা বলা কঠিন। কারণ এখানে নিজেকেই এগিয়ে রাখতে হয়। আর এটা সাধারণ মানুষ ভালোভাবে নেয় না। আমার কি ব্যালন ডি’অর প্রাপ্য? এই পুরস্কার পেতে কী যোগ্যতা প্রয়োজন? মানুষের নজর কাড়া, গোল করা এবং ম্যাচে প্রভাব বিস্তার করা? আমি মনে করি, সব যোগ্যতাই আমার আছে। তাই বলা যায়, ব্যালন ডি’র আমার প্রাপ্য। যদিও মানুষের ওপর নির্ভর করছে এটি, যারা ভোট দেবে। আমি আশাবাদী।’ এই তিন তারকা ছাড়া এবারো ব্যালন ডি’অরের দৌড়ে আছেন ভিনি। চলতি মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৫১ ম্যাচে ২৩ গোলের পাশাপাশি ২১টি অ্যাসিস্ট করেছেন এই রিয়াল মাদ্রিদ উইঙ্গার। তবে মেসি-হলান্ডকে টপকে ব্রাজিলিয়ান তারকার ব্যালন ডি’অর জেতা একটু কঠিনই হতে পারে। এছাড়া ম্যানসিটির হয়ে ট্রেবলজয়ী তারকা কেভিন ডি ব্রুইনাও ছিলেন দুর্দান্ত ফর্মে। এখন এই পুরস্কার কার হাতে উঠবে তা জানতে ফুটবলপ্রেমীদের অপেক্ষা করতে হবে আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত।ব্যালন ডি’অর প্রতি বছর ফরাসি এক ক্রীড়া সাময়িকী প্রদান করে। এটি ব্যক্তি পর্যায়ে ফুটবল খেলোয়াড়দের জন্য সবচেয়ে প্রাচীন পুরস্কারের একটি। পুরস্কারটি ১৯৫৬ সাল থেকে প্রদান করা হয়ে আসছে। তবে ২০১০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে বিশ্ব ফুটবল সংস্থা ফিফার সঙ্গে করা একটি চুক্তি অনুযায়ী এটিকে ‘ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলার’ পুরস্কারের সঙ্গে একীভূত করা হয়। এরপর পুরস্কারটির নাম দেয়া হয়- ফিফা ব্যালন ডি’অর। ২০১৬ সালে বিশ্ব ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থার অংশীদারিত্ব শেষ হওয়ার পর থেকে ফের এটি ব্যালন ডি’অর নামেই পরিচিত। ২০১৬ সালের পর থেকে ফিফাও নিজেদের পৃথক পুরস্কারের দিকে ফিরে যায়। ফরাসি ক্রীড়া লেখক-সাংবাদিক গাব্রিয়েল আনো এই পুরস্কারটির পরিকল্পনা করেন। পূর্ববর্তী বছরজুড়ে যে পুরুষ খেলোয়াড়টি সবচেয়ে ভাল কৃতিত্ব দেখিয়েছে বলে পরিগণিত হয়, তাকে ব্যালন ডি’অর পুরস্কারটি দেওয়া হতো। ১৯৫৬ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ফুটবল সাংবাদিকদের ভোটাভুটিতে এটি নির্ধারিত হতো। ২০০৭ সাল থেকে জাতীয় ফুটবল দলগুলোর প্রশিক্ষক ও অধিনায়ককেও ভোটাধিকার প্রদান করা হয়। আগে পুরস্কারটি শুধু ইউরোপীয় ফুটবল খেলোয়াড়দের প্রদান করা হতো এবং এটি সে সময় বর্ষসেরা ইউরোপীয় ফুটবলার পুরস্কার হিসেবে পরিচিত ছিল। ১৯৯৫ সাল থেকে ইউরোপীয় ক্লাবে সক্রিয় যে কোনো জাতীয়তার খেলোয়াড়কে এই পুরস্কারের আওতায় আনা হয়। ২০০৭ সালে সমগ্র বিশ্বের সমস্ত পেশাদার ফুটবল খেলোয়াড়কে এই পুরস্কারের আওতায় আনা হলে এটি একটি বিশ্ব পুরস্কারে পরিণত হয়। বিশ্বকাপজয়ী মহাতারকা লিওনেল মেসি এ পর্যন্ত ৭টি ব্যালন ডি’অর পেয়েছেন। তিনি প্রথমবার ২০০৯ সালে এই পুরস্কার পান। এরপর টানা চারবার এই পুরস্কার তিনি দখল করে রাখেন। ২০১৩ ও ২০১৪ সালে ব্যালন ডি’অরজয়ী খেলোয়াড় হন পর্তুগিজ মহাতারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। এরপর একবার মেসি পুরস্কারটি পাওয়ার পর রোনালদো ফের দুই বার এই পুরস্কারের মালিক হন। ২০১৮ সালে ব্যালন ডি’অর জয় করেন রিয়াল মাদ্রিদের ক্রোয়েট তারকা লুকা মদ্রিচ। ২০১৯ সালে ও ২০২১ সালে নিজের ষষ্ঠ ও সপ্তম পুরস্কার পান মেসি। ২০২০ সালে করোনা মহামারির কারণে এই পুরস্কার বাতিল করা হয়। সর্বশেষ ২০২২ সালে ব্যালন ডি’অর পান করিম বেনজেমা। ২০০৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো মোট পাঁচটি ব্যালন ডি’অর পেয়েছেন। এই পুরস্কারটি ১৯৫৬ সালে প্রথমবার পেয়েছেন ব্ল্যাকপুল ক্লাবের কিংবদন্তি স্ট্যানলি ম্যাথিউস।  

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App