×

খেলা

সাফে জামালদের কঠিন পরীক্ষা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ জুন ২০২৩, ১০:১০ পিএম

সাফে জামালদের কঠিন পরীক্ষা

প্রধান কোচ হ্যাভিয়ের কাবরেরার সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া

দক্ষিণ এশিয়ার বিশ্বকাপ খ্যাত সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ মাঠে গড়াবে আগামী ২১ জুন। সাফে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের অনেক সফলতার গল্প সম্প্রতি শোনা গেলেও পুরুষ ফুটবল দলের সফলতা বর্তমানে শুধুই ইতিহাস। ২০০৩ সালের পর থেকে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা একবারো শিরোপা নিয়ে ঘরে ফিরতে পারেনি। এবার ২০ বছর পর পুরো প্রস্তুতি নিয়ে সাফকে সামনে রেখে বেঙ্গালুরুতে অবস্থান করছে জামাল ভূঁইয়ার দল। পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি থাকলেও তাদের সামনে অপেক্ষা করছে কঠিন পরীক্ষা। গ্রুপপর্বেই হ্যাভিয়ের কাবরেরার শিষ্যদের লড়তে হবে লেবানন, মালদ্বীপ ও ভুটানের মতো দলকে।

সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ড্র অনুষ্ঠিত হয় গত ১৭ মে। ড্রয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ গ্রুপ ‘বি’-তে পড়েছে যেখানে রয়েছে ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে ৯৯তম স্থানে থাকা দল লেবাননও। গ্রুপপর্বে বাংলাদেশের অন্য দুই প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে মালদ্বীপ আছে ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ের ১৫৪তম স্থানে এবং ভুটান আছে ১৮৫তম স্থানে। সব দলের বিপরীতে লাল-সবুজের অবস্থান ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ের ১৯২তম স্থানে। তাই এবারের সাফের গ্রুপপর্বে বাংলাদেশ যে র‌্যাঙ্কিং হিসেবে সবচেয়ে দুর্বল দল তা অস্বীকারের কোনো জায়গাই নেই।

বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ হবে আগামী ২২ জুন শক্তিশালী লেবাননের বিপক্ষে। ব্যাঙ্গালুরুতে ম্যাচটি শুরু হবে স্থানীয় সময় বিকাল সাড়ে ৩টায় (বাংলাদেশ সময় বিকাল ৪টা)। বাংলাদেশের গ্রুপপর্বে অন্য দুই ম্যাচ যথাক্রমে ২৫ ও ২৮ জুন। ২৫ জুন মালদ্বীপের বিপক্ষে ম্যাচটিও বিকালে। ২৮ জুন গ্রুপের শেষ ম্যাচটি ভুটানের বিপক্ষে বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায়। প্রথম দুই ম্যাচে প্রাপ্ত পয়েন্টের ওপরই নির্ভর করবে টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের স্থায়ীত্ব। ১ জুলাই একই দিন দুটি সেমিফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে। ৪ জুলাই হবে ফাইনাল। সেমিফাইনাল ও ফাইনালের সময় এখনো নির্ধারিত হয়নি।

শক্তিশালী দল লেবাননের বিপক্ষে জয় ও পরাজয় দুই রকমের অভিজ্ঞতাই রয়েছে বাংলাদেশের। ২০১১ সালে লেবাননের বিপক্ষে ব্রাজিল বিশ্বকাপের বাছাইয়ে বৈরুতে ৪-০ গোলে হেরে গেলেও ঢাকায় জিতেছিল ২-০ ব্যবধানে।

দক্ষিণ এশিয়ার এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশ সর্বশেষ শিরোপার দেখা পেয়েছিল ২০০৩ সালে। এর দুই বছর পর ২০০৫ সালে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা সর্বশেষ ফাইনাল পর্যন্ত উঠতে পেরেছিল। সাফের সেই আসরে বাংলাদেশ ভারতে বিপক্ষে পরাজিত হয়ে রানার্স আপ হয়। ২০০৯ সালের পর থেকে আর তারা নিজেদের সেমিফাইনাল পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারেনি।

আসন্ন সাফকে সামনে রেখে দীর্ঘদিন যাবত কোচ কাবরেরার অধীনে অনুশীলন ক্যাম্প করার পর কম্বোডিয়ায় প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে গিয়েছিল বাংলাদেশ। সেই সফরটা অবশ্য সফলতার সঙ্গেই শেষ করেছে জামাল ভূঁইয়ার দল। সেখানে তারা প্রথমে গত ১২ জুন কম্বোডিয়া লিগের ক্লাব টিভি আর্মির বিপক্ষে ১-০ গোলে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে। বাংলাদেশ দলের হয়ে একমাত্র গোলটি করেছিলেন সোহেল রানা। বাংলাদেশ দল দেশের মাটিতে থাকাকালে দীর্ঘদিনের প্রস্তুতি ক্যাম্পে অংশগ্রহণ করে। সেখানে জামাল ভূঁইয়াদের রক্ষণভাগের দিকে বিশেষ নজর দিতে বলেছিলেন হেড কোচ কাবরেরা। বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচের ছকে ছিল গোল না হজম করে গোল করার প্রক্রিয়া। সেই ক্যাম্পের পর টিভি আর্মির বিপক্ষেই প্রথমবার মাঠে নামে বাংলাদেশ ফুটবল দল। তাই সেই ম্যাচটি ছিল একরকম পরীক্ষার মতোই। ম্যাচটা জামাল ভূঁইয়া ও তার সতীর্থরা সফলতার সঙ্গে পার করে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। তাদের সেই জয়ের কারণে আসন্ন সাফে বাংলাদেশ সফলতা পাবে সেই আশাই করছে লাল-সবুজের ভক্তরা।

সাফের আগে বাংলাদেশ দলের সর্বশেষ ম্যাচ ছিল গত ১৫ জুন কম্বোডিয়ার বিপক্ষে। কম্বোডিয়া সেদিন ঘরের মাঠে টানা তৃতীয়বার বাংলাদেশের বিপক্ষে পরাজিত হয়। সেই ম্যাচেও বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়রা অনুসরণ করেন কাবরেরার ছক। তারা গোল না হজম করে গোল করার লক্ষ্য নিয়ে খেলায় ১-০ গোলের জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের হয়ে একমাত্র গোলটি করেছিলেন মজিবুর রহমান জনি। সেই ম্যাচে কম্বোডিয়াও ছেড়ে কথা বলেনি। স্বাগতিক দলটি সমানে সমানে লড়াই করলেও ভালো ফিনিশিংয়ের অভাবে তাদের স্কোরবোর্ডে কোনো গোল যুক্ত হয়নি। কম্বোডিয়া ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের চেয়ে ১৬ ধাপ এগিয়ে আছে। তার মানে এই দাঁড়ায় যে, বাংলাদেশ দল চেষ্টা করলেই তাদের চেয়ে র‌্যাঙ্কিংয়ের উপরে থাকা দলকে হারাতে সক্ষম। আর আসন্ন সাফে শক্তিশালী দলগুলোকে টেক্কা দিয়ে নিজেদের সেমিফাইনাল এবং ফাইনাল পর্যন্ত টেনে নেয়ার ক্ষেত্রে এটাই জামালদের মূল অনুপ্রেরণা।

কম্বোডিয়াকে হারনোর পরের দিনই বাংলাদেশ ভারতের বেঙ্গালুরুর উদ্দেশে নমপেন ছাড়ে। টুর্নামেন্ট শুরুর পাঁচ দিন আগেই গত শুক্রবার তারা বেঙ্গালুরুতে পা রাখে। তবে প্রথম দিনটা ভালো কাটেনি জামাল ভূঁইয়াদের। বিমানবন্দরে নেমেই পড়তে হয়েছে দীর্ঘসূত্রতায়। এরপর শহরে পৌঁছে হোটেল পছন্দ হয়নি জামালদের। তাই গতকাল সন্ধ্যার দিকে আবার হোটেল পরিবর্তন করতে হয়েছে। বাংলাদেশ দলের ম্যানেজার আমের খান এ প্রসঙ্গে বেঙ্গালুরু থেকে ফোনে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ঢাকা থেকে আমরা হোটেল বুক করেছি যে ছবি দেখে, সে অনুযায়ী হোটেল ছিল না। রুমগুলো ছোট। আমাদের তা পছন্দ হয়নি। হোটেলের খাওয়া-দাওয়া আর পরিবেশও আমাদের প্রত্যাশিত মানের ছিল না। ফলে বাধ্য হয়ে সকাল থেকে হোটেল খুঁজতে থাকি। সন্ধ্যার দিকে নতুন হোটেলে উঠেছি।’ আজ থেকে টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করা সব দল সাফ ও স্বাগতিক ভারতের আতিথেয়তায় থাকবে। তার আগে নিজস্ব ব্যবস্থাপনাতেই থাকতে হয়েছে বেঙ্গালুরুতে। বাংলাদেশ গতকাল বিকালে যে হোটেলে উঠেছে, সেটিতে সাফের দল ভারত ও কুয়েত উঠেছিল। তাই বাংলাদেশও এই হোটেলে থাকার আগ্রহের কথা জানিয়েছে অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশনকে।

আমের খান জানান, বেঙ্গালুরু বিমানবন্দরে নেমেই বাংলাদেশ দলকে পড়তে হয়েছে ইমিগ্রেশন পার হওয়ার দীর্ঘসূত্রতায়। সব আনুষ্ঠানিকতা সেরে বিমানবন্দর থেকে বেরোতে বেরোতে তিন-চার ঘণ্টা সময় লেগেছে। তিনি বলেন, ‘দলের সঙ্গে থাকা বিদেশিদের সবারই ভারতের ই-ভিসা। আর ই-ভিসাধারীদের অতিরিক্ত দেড় ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে ইমিগ্রেশন পার হতে। ফলে তাদের জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হয় অনেকটা সময়। এমনিতেই ফ্লাইট দেরিতে এসেছে, তার ওপর বিমানবন্দরে এত সময় লেগে যাওয়া ক্লান্তিকরই ছিল আমাদের জন্য।’ বেঙ্গালুরুতে পা রাখার পর দীর্ঘসূত্রতায় বিরক্ত হওয়ার পরও কমেনি বাংলাদেশ দলের ভোগান্তি। জামালরা রাত ২টায় ৪০ কিলোমিটার দূরের শহরে পৌঁছায়। সেখানে দেখা যায় হোটেলে রাতের খাবার নেই। তাই তাদের ফলমূল যা ছিল তা খেয়েই রাত পার করতে হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে আমের জানান, ‘খাবার এবং হোটেল কোনোটাই মনমতো না হওয়ায় বেঙ্গালুরুতে প্রথম দিনটা আমাদের ভালো কাটেনি। তাছাড়া ভ্রমণক্লান্তিতে কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়েছে বসুন্ধরা কিংসের মিডফিল্ডার সোহেল রানা। তার হালকা জ্বর এসেছে।’ গত দুই দিন বেঙ্গালুরুর নানা সংকটের মধ্যেও বিশ্রামে সময় কাটায় বাংলাদেশ দলে থাকা ২৩ খেলোয়াড়। আজ থেকে তারা সাফ ও স্বাগতিক ভারতের আতিথেয়তায় থাকার সঙ্গে শুরু করবে সাফের চূড়ান্ত অনুশীলন। চূড়ান্ত পরীক্ষা হিসেবে তারা কম্বোডিয়াকে হারিয়ে এসেছে আগেই। এবার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি শেষ করে তাদের লক্ষ্য নিজেদের শেষবারের মতো ঝালিয়ে নেয়া।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App