×

খেলা

ইউরোপ সেরার মুকুট ম্যানসিটির

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ জুন ২০২৩, ১২:১৮ পিএম

ইউরোপ সেরার মুকুট ম্যানসিটির

উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে গতকাল রাতে রদ্রির একমাত্র গোলে ইন্টার মিলানকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো শিরোপা ঘরে তুলেছে ম্যানচেস্টার সিটি। একই সঙ্গে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কিংবদন্তি কোচ স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের ট্রেবল জয়ের রেকর্ডে ভাগ বসিয়েছেন সিটিজেনদের কোচ পেপ গার্দিওলা। প্রথমবারের মতো শিরোপা জিতে এখানেই থেমে যেতে চান না তিনি।

ইস্তানবুলে গতকাল ম্যাচের শুরু থেকেই তুমুল লড়াই করে ম্যানসিটি ও ইন্টার। ইউরোপ সেরার এই লড়াইয়ে প্রথমার্ধে গোল করতে পারেনি কোনো দল। তবে দ্বিতীয়ার্ধে খেলার গতি বাড়িয়ে গোল আদায় করে নেয় সিটিজেনরা। ম্যাচের ৬৮ মিনিটে স্প্যানিশ মিডফিল্ডার রদ্রির পা থেকে আসে সেই কাক্সিক্ষত গোল।

তার একমাত্র গোলেই চ্যাম্পিয়ন্স লিগের খরা কাটায় পেপ গার্দিওলার শিষ্যরা। একটা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেই থামতে চান না ম্যানসিটি কোচ। ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমাদের আর মাত্র ১৩টা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ লাগবে, মাত্র ১৩, সুতরাং রিয়াল মাদ্রিদ সাবধান, আমরা আসছি। একটু যদি গাছাড়া দাও, আমরা তোমাদের ধরে ফেলব।’

কথাটা হয়তো মজা করেই বলেছেন। তবে একবার যেহেতু চ্যাম্পিয়ন্স লিগে জেতার স্বাদ সিটি পেয়েছে, এটাকে অভ্যাস বানিয়ে ফেলা এখন আর এত কঠিন হবে না। নিজেদের প্রথম চ্যাম্পিয়ন্স লিগসহ প্রিমিয়ার লিগের ষষ্ঠ দল হিসেবে ইউরোপা ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছে ম্যানসিটি। এর আগে চেলসি, অ্যাস্টন ভিলা, ম্যানইউ, লিভারপুল ও নটিংহ্যাম ফরেস্টের ওই কীর্তি আছে। চলতি মৌসুমে ম্যানসিটি আগেই প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা ও এফএ কাপ ঘরে তোলে। যে কারণে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেই প্রিমিয়ার লিগের দ্বিতীয় দল হিসেবে ট্রেবল ঘরে তোলে তারা। এর আগে তাদের নগর প্রতিদ্ব›দ্বী ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ১৯৯৮-১৯৯৯ মৌসুমে স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের কোচিংয়ে ট্রেবল জিতেছিল। এটা গার্দিওলার ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ট্রেবল জয়। এর আগে স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনার হয়ে ২০০৮-০৯ মৌসুমে ট্রেবল জিতেছিলেন তিনি। ম্যাচ শেষে বিটি স্পোর্টকে গার্দিওলা বলেন, ‘এই জয়টা বেশ কঠিন ছিল। আমার ছেলেরা দুর্দান্ত খেলেছে। বিরতির সময় আমি তাদের ধৈর্য ধরার কথা বলেছি।

এখানে ভাগ্যের সহায়তারও প্রয়োজন হয়। এডারসন হয়তো কোনোটা মিস করতে পারত, যে কারণে ম্যাচটি ড্র হয়ে যেত। কিন্তু দিন শেষে পুরো ম্যাচটি তারার মাঝে রচিত হয়ে গেছে এবং পুরোটাই আমাদের পক্ষেই থেকে যাবে। বিশ্বকাপের পর দলটি একধাপ এগিয়ে গেছে এবং এতে আমরা সবাই শিরোপার ব্যপারে আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। এখন শুধু এই আনন্দ উপভোগ করতে চাই। হোটেলে ফিরে গিয়ে পরিবার ও বন্ধুদের নিয়ে জয় উৎসব করতে চাই। ম্যানচেস্টারে সোমবার প্যারেড আছে। ট্রেবল জয় সত্যিই বেশ কঠিন ছিল। স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের পাশে থাকতে পেরে আমি সত্যিই সম্মানিত বোধ করছি। সকালে আমি ফোনে ফার্গুসনের কাছ থেকে বার্তা পেয়েছি, যা আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। তার সঙ্গে থাকতে পারাটা সৌভাগ্যের। একটি শিরোপা জিতে আমরা হারিয়ে যেতে চাই না। এ কারণে আগামী মৌসুমের জন্য আরো কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। এখানে এমন অনেক দল আছে, যারা একটি বা দুটি শিরোপা জিতে হারিয়ে গেছে। কিন্তু আমরা তেমন হতে চাই না। একই সঙ্গে আমি আরো বলতে চাই এটা সিটির জন্য অনেক বড় স্বস্তির বিষয়। এখানকার সবাই এই ট্রফিটির জন্য মুখিয়ে ছিল। এখন তারা আর আমাকে জিজ্ঞেস করবে না সিটি কি কোনো দিন চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জিততে পারবে না!’

ভালো খেলেও হেরে যাওয়া মেনে নিতে পারছেন না ইন্টার মিলান কোচ সিমোনে ইনজাগি। ম্যাচ শেষে তিনি বলেন, ‘আমাদের অনুশোচনা আছে। কারণ খেলাধুলায় পরাজয় হচ্ছে সবচেয়ে খারাপ বিষয়। কিন্তু আমি ছেলেদের অভিনন্দন জানাতে চাই। তারা হতাশ হলেও যেভাবে খেলেছে তাতে সবার গর্বিত হওয়া উচিত। এই হার আমাদের প্রাপ্য ছিল না। বিশ্বের শীর্ষ একটি ক্লাবের বিপক্ষে আমরা খেলেছি। আমরা তাদের সঙ্গে সমানভাবে লড়াই করেছি। দিন শেষে যদিও হতাশ হতে হয়েছে। শেষ তিন মাসে তারা প্রমাণ করেছে এই ধরনের প্রতিযোগিতায় কীভাবে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতে হয়।’

এই ম্যাচে জয়ের নায়ক ছিলেন স্প্যানিশ মিডফিল্ডার রদ্রি। তার গোলেই প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ও ট্রেবল জয়ের কীর্তি গড়ে সিটিজেনরা। ২০২১ সালের ফাইনালে চেলসির কাছে ১-০ গোলে হেরে গেলেও এবার আর ভুল করেনি তারা। ম্যাচ শেষে রদ্রি বলেন, ‘এখানে যত মানুষ আছে, তারা সবাই অপেক্ষা করে ছিল। আমি জানি না, তাদের অপেক্ষাটা ঠিক কত বছরের। এটা তাদের প্রাপ্য। গত বছর আমরা খুব কাছাকাছি গিয়েছিলাম। আমি সবাইকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। এটা সহজ ছিল না। কী দুর্দান্ত একটি দলের বিপক্ষেই না আমরা খেলেছি! তারা ভালোভাবে রক্ষণ সামলেছে আর প্রতিআক্রমণ করেছে। আমরা নিজেদের সর্বস্ব উজাড় করে দিয়েছি।’

গুরু-শিষ্যের কীর্তি উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের এবারের আসরে ইন্টার মিলানকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় ম্যানচেস্টার সিটি। পুরো আসরেই আধিপত্য দেখায় পেপ গার্দিওলার দল। যেখানে এই কোচের সঙ্গে ইউরোপসেরা তার শিষ্যরা। এবারের ফাইনালে ম্যাচসেরা হন গার্দিওলার শিষ্য রদ্রি। ফাইনালের একমাত্র গোলটি আসে তার পা থেকেই। অপরদিকে এবারের আসরের সর্বোচ্চ গোলদাতা আর্লিং হলান্ডও গার্দিওলার শিষ্য। আর সর্বোচ্চ অ্যাসিস্ট করেছেন কেভিন ডি ব্রুইনা। তিনিও গার্দিওলার শিষ্য। সব মিলিয়ে এবারের মৌসুমে ইউরোপের রাজত্ব করেছে গার্দিওলা ও তার শিষ্যরা।

গার্দিওলার অধীনে শেষ ছয় বছরে ইংলিশ ফুটবলে একক আধিপত্য বিস্তার করেছে সিটি। পাঁচবার লিগ শিরোপা জয় করলেও সিটিকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতাতে পারেননি তিনি। তবে এবারের মৌসুমে সিটিজেনদের আর হতাশ করেননি এই কোচ। এবারে মৌসুমে আর্সেনালকে টপকে প্রিমিয়ার লিগ, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে হারিয়ে এফএ কাপ জয়ের পর ইন্টার মিলানকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা ঘরে তোলেন তিনি। স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের পর প্রিমিয়ার লিগের দ্বিতীয় কোচ হিসেবে জয় করেন ট্রেবল। এছাড়া প্রথম কোচ হিসেবে দুটি ক্লাবে ট্রেবল জিতলেন তিনি। ২০০৯ সালে বার্সেলোনার হয়ে এই কীর্তি গড়েছিলেন।

অপরদিকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে এবারের আসরে ম্যচসেরা হন ম্যানচেস্টার সিটির স্প্যানিশ ডিফেন্সিফ মিডফিল্ডার রদ্রি। যা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে ম্যানচেস্টার সিটির খেলোয়াড়ের প্রথম গোল। এর আগে ২০২১ সালে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে উঠেছিল ম্যানসিটি। যেখানে চেলসির বিপক্ষে ১-০ গোলে হেরে যায় তারা।

সেই বছরেও সিটির স্কোয়াডে ছিলেন রদ্রি। তবে সুযোগ পাননি সেরা একাদশে। এবার সুযোগ পেয়েই নিজেকে প্রমাণ করেন রদ্রি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা ম্যানচেস্টার সিটির ফরোয়ার্ড আর্লিং হলান্ড। সব মিলেয়ে ১১ ম্যাচে ১২ গোল করেন তিনি। সেমিফাইনাল ও ফাইনালে নিজেকে সেভাবে মেলে ধরতে না পারলেও দলকে এতদূর নিয়ে আসার পেছনে বড় ভূমিকা রাখেন তিনি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৮টি গোল করেন লিভারপুলের মো. সালাহ। এর আগে প্রিমিয়ার লিগে সিটিকে চ্যাম্পিয়ন করতে হলান্ড করেন ৩৬টি গোল। যা প্রিমিয়ার লিগের এক আসরে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড।

ম্যাচসেরা, সর্বোচ্চ গোলতার পাশাপাশি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের এবারের আসরে সর্বোচ্চ অ্যাসিস্ট করেছেন ম্যানসিটির তারকা মিডফিল্ডার কেভিন ডি ব্রুইনা। এই মৌসুমে ২ গোলের সঙ্গে সর্বোচ্চ ৭টি অ্যাসিস্ট করেছেন তিনি। আর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬টি অ্যাসিস্ট করেন রিয়াল মাদ্রিদের ভিনিসিয়াস জুনিয়র।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগে গত ২৫ বছরের রোল অব অনার সাল চ্যাম্পিয়ন রানার্সআপ ২০২২-২৩ ম্যানচেস্টার সিটি ইন্টার মিলান ২০২১-২২ রিয়াল মাদ্রিদ লিভারপুল ২০২০-২১ চেলসি ম্যানচেস্টার সিটি ২০১৯-২০ বায়ার্ন মিউনিখ পিএসজি ২০১৮-১৯ লিভারপুল টটেনহ্যাম ২০১৭-১৮ রিয়াল মাদ্রিদ লিভারপুল ২০১৬-১৭ রিয়াল মাদ্রিদ জুভেন্টাস ২০১৫-১৬ রিয়াল মাদ্রিদ আতলেতিকো মাদ্রিদ ২০১৪-১৫ বার্সেলোনা জুভেন্টাস ২০১৩-১৪ রিয়াল মাদ্রিদ আতলেতিকো মাদ্রিদ ২০১২-১৩ বায়ার্ন মিউনিখ বরুশিয়া ডর্টমুন্ড ২০১১-১২ চেলসি বায়ার্ন মিউনিখ ২০১০-১১ বার্সেলোনা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ২০০৯-১০ ইন্টার মিলান বায়ার্ন মিউনিখ ২০০৮-০৯ বার্সেলোনা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ২০০৭-০৮ ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড চেলসি ২০০৬-০৭ এসি মিলান লিভারপুল ২০০৫-০৬ বার্সেলোনা আর্সেনাল ২০০৪-০৫ লিভারপুল এসি মিলান ২০০৩-০৪ এফসি পোর্তো এস মোনাকো ২০০২-০৩ এসি মিলান জুভেন্টাস ২০০১-০২ রিয়াল মাদ্রিদ ব্যায়ার ল্যাভারকুসেন ২০০০-০১ বায়ার্ন মিউনিখ ভ্যালেন্সিয়া ১৯৯৯-২০০০ রিয়াল মাদ্রিদ ভ্যালেন্সিয়া ১৯৯৮-৯৯ ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড বায়ার্ন মিউনিখ

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App