×

খেলা

সাবেকদের ভাবনায় বাংলাদেশ-আফগান সিরিজের উইকেট

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১২:১৩ এএম

সাবেকদের ভাবনায় বাংলাদেশ-আফগান সিরিজের উইকেট

জাতীয় দলের সাবেক তিন ক্রিকেটার রাজিন সালেহ, অলক কাপালি ও মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান।

নতুন বছরে টাইগাররা নিউজিল্যান্ডের মাটিতে কিউইদের টেস্টে হারিয়ে বিশ্ববাসীকে চমকে দিয়েছে। এবার ঘরের মাঠে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৩ ম্যাচের ওয়ানডে এবং ২ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে অংশ নেবে। পরিসংখ্যানে ওয়ানডে আফগানদের বিপক্ষে এগিয়ে টাইগাররা। অন্যদিকে টি-টোয়েন্টিতে এগিয়ে মুজিব-রশিদরা। বাংলাদেশ-আফগানিস্তান সিরিজ যে বেশ জমপেশ হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বাংলাদেশের আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিতে নির্ধারিত সময়ের এক সপ্তাহ আগেই ঢাকায় আসবে আফগানরা।

গত ৩ ফেব্রুয়ারি সফরের আনুষ্ঠানিক সূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। চট্টগ্রাম ও ঢাকায় হবে সিরিজের সব ম্যাচ।

সিরিজ দুটি খেলতে আফগানিস্তান ক্রিকেট দল ঢাকায় পা রাখবে ১২ ফেব্রুয়ারি। ঢাকায় নেমেই সেখান থেকে তারা সরাসরি চলে যাবে সিলেটে। সেখানে জৈব সুরক্ষা বলয়ে চলবে তাদের প্রস্তুতি ক্যাম্প। কিন্তু সিলেটে সিরিজের কোনো ম্যাচ আয়োজন করছে না বিসিবি। প্রাথমিকভাবে ধরে নেয়া হয়েছিল চট্টগ্রাম ও সিলেটে হবে আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিন ওয়ানডে ও দুই ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ। কিন্তু বিসিএলের ওয়ানডে পর্বে সিলেটের উইকেটে তেমন রান না হওয়ায় বাদ দেয়া হয় এই ভেন্যু। যে কারণে সিলেটের বদলে ঢাকায় দুই ম্যাচ আনার ব্যাপারে অনানুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নেয় বিসিবি। সে অনুযায়ী সিলেটে প্রস্তুতি ক্যাম্প শেষ করে আফগানরা যাবে চট্টগ্রামে।

বাংলাদেশ-আফগানিস্তান সিরিজের উইকেট নিয়ে নানা কথা চাউর হচ্ছে। গত বছরের আগস্ট-সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সফরে এসেছিল অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড। ওই দুই সিরিজে স্লো উইকেট বানিয়ে ঘরের মাঠে ফায়দা লুটেছিল টাইগাররা। ঘরের মাঠে যাদের বিপক্ষে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল সিরিজ জিতেছে তারাই গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলেছে। ফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শিরোপা জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া। ঘরের মাঠে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ জিতেছিল ৪-১ ব্যবধানে। ঘরের মাঠে দাপট দেখানো টাইগাররা বিশ্বকাপে জাতিকে হতাশ করেছিল। বিশ্বকাপের উইকেট ছিল স্পোর্টিং।

আসন্ন আফগানিস্তান সিরিজ কেমন উইকেটে হলে ভালো হয় তা নিয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় ভোরের কাগজের সঙ্গে কথা বলেছেন জাতীয় দলের সাবেক তিন ক্রিকেটার রাজিন সালেহ, অলক কাপালি এবং মো. জিয়াউর রহমান। টেস্টে বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম হ্যাটট্রিক করা অলক কাপালি ভোরের কাগজকে বলেন, স্পিন বিভাগে আফগানরা টাইগারদের চেয়ে শক্তিতে বেশ এগিয়ে। তাদের মুজিব উর রহমান, নবী এবং রশিদ ঘূর্ণিতে বেশ পারদর্শী। বিশ্বজুড়ে তাদের খ্যাতি রয়েছে। যে কোনো দলের ব্যাটিং বিভাগের জন্য আতঙ্ক তারা। স্লো উইকেটে এরা ফায়দা লুটতে পারেন। আমি মনে করি আসন্ন সিরিজে পেস সহায়ক উইকেট বানালে আফগানরা ফায়দা লুটতে পারবে না। আমাদের বিশ্বমানের বেশ কয়েকজন পেসার রয়েছেন। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে স্বাগতিকদের হারের স্বাদ দিয়েছি পেসারদের সহায়তায়। তাই গ্রিন উইকেট তৈরি করা উচিত।

জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ওয়ানডে সিরিজের তিনটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে ২৩, ২৫ এবং ২৮ ফেব্রুয়ারি। এরপর সেখান থেকে ঢাকা ফিরে ৩ এবং ৫ ফেব্রুয়ারি মিরপুরের শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে টি-টোয়েন্টি সিরিজ।

বাংলাদেশ-আফগানিস্তান সিরিজ সম্পর্কে জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক রাজিন সালেহ শুক্রবার ভোরের কাগজকে বলেন, শক্তি এবং অভিজ্ঞতায় টাইগাররা এগিয়ে। ঘরের মাঠে আফগানিস্তানকে হারাতে হলে আমাদের স্পোর্টিং উইকেট বানাতে হবে। স্লো উইকেট বানিয়ে আমরা যেন ফাঁদে না পড়ে যাই সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। স্পোর্টিং উইকেট হলে আফগানরা টাইগারদের কাছে পাত্তাই পাবে না। আমাদের ব্যাটিং লাইনআপ ওদের থেকে অনেক ভালো। পেস আক্রমণে আমরা আফগানদের থেকে এগিয়ে। মোদ্দা কথা স্পোর্টিং উইকেট হলে আমি মনে করি লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতে ফুরফুরে মেজাজে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে গিয়ে ভালো করবে।

ফেব্রুয়ারিতে আফগানদের জিম্বাবুয়ে সফর করার কথা ছিল। কিন্তু ক্রিকেটের ব্যস্ত সূচিতে ডিআরএস না পাওয়ায় দ্বিতীয়বারের মতো পিছিয়ে যায় সফরটি। যে আফগানদের ১৯ অথবা ২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় আসার কথা ছিল। জিম্বাবুয়ে সফর না হওয়ায় টাইগারদের বিপক্ষে ভালো ফলাফল করতে ১২ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় আসছে তারা।

চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে প্রথম ওয়ানডে অনুষ্ঠিত হবে ২৩ ফেব্রুয়ারি, দ্বিতীয় ওয়ানডে ২৫ ফেব্রুয়ারি এবং তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে হবে ২৮ ফেব্রুয়ারির। ওয়ানডে ম্যাচগুলো শুরু হবে বেলা ১১টা থেকে। বাংলাদেশ-আফগানিস্তানের এই ওয়ানডে সিরিজটি বিশ্বকাপ সুপার লিগের অন্তর্ভুক্ত। ১৫ থেকে ১৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাংলাদেশ দল ঘোষণার কথাও জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু। আইসিসি ওয়ানডে সুপার লিগে দুই দলই ভালো অবস্থানে আছে বর্তমানে। ১২ ম্যাচে ৮ জয় নিয়ে বাংলাদেশের পয়েন্ট ৮০। পয়েন্ট তালিকায় টাইগাররা রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে। অন্যদিকে আফগানিস্তানের ৬ ম্যাচে ৬টিতেই জয় পেয়ে তাদের পয়েন্ট ৬০। আফগানিস্তান রয়েছে পয়েন্ট তালিকার পাঁচ নম্বরে। ২০২৩ বিশ্বকাপে সরাসরি খেলবে আইসিসি বিশ্বকাপ সুপার লিগের পয়েন্ট তালিকার শীর্ষ আট দল। যে কারণে দুই দলেরই লক্ষ্যই সিরিজ জয়।

এজন্য আসন্ন ওয়ানডে সিরিজ দুই দলের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বিপিএলে অংশ নেয়া আফগান স্পিনার বলেছেন, বাংলাদেশে তিনটি ওয়ানডে ম্যাচেই জয় পেতে চায় তারা। সুপার লিগের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টের কথা মাথায় রেখেই বাংলাদেশের বিপক্ষে তিনটি ওয়ানডেই জিততে চায় আফগানরা। এরপর আফগানরা ঢাকায় ফিরে হোম অব ক্রিকেটে মিরপুরের শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দুটি টি-টোয়েন্টি খেলবে আফগানিস্তান। প্রথম ম্যাচটি হবে ৩ মার্চ এবং দ্বিতীয় ম্যাচটি ৫ মার্চ। ম্যাচগুলো শুরু হবে বেলা ৩টায়। সিরিজে থাকছে ডিসিশন রিভিউ সিস্টেম (ডিআরএস)। তবে মাঠে দর্শকের উপস্থিতি থাকছে কিনা, সেটি এখনো নিশ্চিত করা হয়নি বিসিবির পক্ষ থেকে।

বাংলাদেশ-আফগানিস্তান সিরিজ নিয়ে জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান শুক্রবার ভোরের কাগজকে বলেন, আফগানদের বিপক্ষে ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি সিরিজ দুটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ঘরের মাঠে টাইগাররা বরাবরই অপরাজেয়। হোম গ্রাউন্ডে লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের জয়ের রেকর্ড ভালো। এবার নবী-রশিদদের বিপক্ষে সিরিজ জিততে হলে স্পোর্টিং উইকেট তৈরি করা উচিত। স্পোর্টিং উইকেট হলে আমাদের ব্যাটার এবং বোলাররা ভালো করবে। আফগানদের অস্ত্র বলতে নবী, রশিদ এবং মুজিব। এই তিন স্পিনার। স্লো উইকেটে আফগান স্পিনাররা ভালো করে। তাই আমাদের উচিত স্পোর্টিং উইকেট তৈরি করা।

পরিসংখ্যানের দিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যায় বাংলাদেশের বিপক্ষে ৭টি ২০ ওভারের ম্যাচ খেলেছে আফগানিস্তান। এর মধ্যে তারা জিতেছে ৪ ম্যাচ আর বাংলাদেশ জিতেছে ২ ম্যাচে। এই দুইটি জয়ই এসেছে ঘরের মাঠে। অন্যদিকে একটি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়েছে মিরপুরে। আফগানরা এ নিয়ে তৃতীয়বার দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলতে বাংলাদেশ সফর করছে। সর্বশেষ ২০১৯ সালে একটি টেস্ট খেলে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বাংলাদেশকে ২২৪ রানে হারায় তারা। তার আগে ২০১৬ সালে ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলতে বাংলাদেশে এসে ২-১ ব্যবধানে হেরে যায় আফগানিস্তান।

আফগান লেগ স্পিনার মুজিব উর রহমান বিপিএল খেলতে এখন বাংলাদেশে রয়েছেন। বিপিএলের ফাইনালের পরপরই শুরু হবে আফগানিস্তান-বাংলাদেশের মর্যাদার লড়াই। তার আগে দলের লক্ষ্যের কথা জানান আফগান স্পিনার মুজিব উর রহমান। তারা জয় পেতে চায় সব ম্যাচেই। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ হোক বা আফগানিস্তান, দুইটি দলই ওয়ানডে সুপার লিগে যত বেশি সম্ভব পয়েন্ট পেতে চায়। যে কোনো দলই তিনটি ওয়ানডেই জিততে চাইবে। তারা ঠিক যেভাবে চায় আমরাও একইভাবে চাই।

বাংলাদেশের সব উইকেটই স্পিনবান্ধব। উইকেট নিয়েও তাই রোমাঞ্চিত আফগান বোলার মুজিব। স্পিন দিয়ে তারকা খ্যাতি অর্জন করেছে তার দল। বর্তমানে সীমিত ওভারের সেরা লেগা স্পিনার বলা হয় রশিদ খানকে। তিনি এখন খেলছেন পিএসএলে। এদিকে মুজিব বিপিএলে খেলে অভিজ্ঞতা অর্জন করছেন আগেই। বিপিএলে বোলিং নৈপুণ্যও দেখাচ্ছেন দারুণ। বিপিএলের পরপরই শুরু হবে সিরিজ। যে কারণে বাংলাদেশের স্পিনবান্ধব উইকেটের সুবিধা কাজে লাগাতে মুখিয়ে আছে আফগানরা। এদিকে বাংলাদেশের খেলোয়াড়রাও বিপিএল শেষে সিরিজে অংশ নেবে। যে কারণে সীমিত ওভারের দ্বিপক্ষীয় লড়াইটা জমে উঠবে বলেই আশা করা যায়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App