×

ধর্ম

লাইলাতুল বরাতে কী করবেন কী করবেন না

Icon

মাহমুদুল হক আনসারী

প্রকাশ: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৭:২৬ পিএম

লাইলাতুল বরাতে কী করবেন কী করবেন না

মহিমান্বিত রজনী লাইলাতুল বরাত

শাবান মাসের ১৪ তারিখ রাতকে পবিত্র ‘শবেবরাত’ বলা হয়। শবেবরাত কথাটি ফারসি থেকে এসেছে। ‘শব’ মানে রাত, ‘বরাত’ মানে মুক্তি। শবেবরাত অর্থ মুক্তির রাত। শবেবরাতের আরবি হলো ‘লাইলাতুল বারাআত’। হাদিস শরিফে যাকে ‘নিসফ শাবান’ বা ‘শাবান মাসের মধ্য দিবসের রজনী’ বলা হয়েছে। ভারতীয় উপমহাদেশ, পারস্যসহ পৃথিবীর অনেক দেশের ফারসি, উর্দু, বাংলা, হিন্দিসহ নানা ভাষায় যা ‘শবেবরাত’ নামেই অধিক পরিচিত।

কুরআনুল কারিমে এসেছে, ‘হা-মিম! শপথ! উজ্জ্বল কিতাবের, নিশ্চয়ই আমি তা নাজিল করেছি এক বরকতময় রাতে; নিশ্চয়ই আমি ছিলাম সতর্ককারী। যাতে সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নির্ধারিত হয়। এ নির্দেশ আমার তরফ থেকে, নিশ্চয়ই আমিই দূত পাঠিয়ে থাকি।’ (সুরা-৪৪ দুখান, আয়াত : ১-৫)। মুফাসসিরগণ বলেন, এখানে ‘লাইলাতুম মুবারাকা’ বা বরকতময় রজনী বলে শাবান মাসে পূর্ণিমা রাতকেই বোঝানো হয়েছে। (তাফসিরে মাজহারি, রুহুল মাআনি ও রুহুল বায়ান)। হজরত ইকরিমা (রা.) প্রমুখ কয়েকজন তাফসিরবিদ থেকে বর্ণিত আছে, সুরা দুখানের দ্বিতীয় আয়াতে বরকতের রাত বলে শবেবরাতকে বোঝানো হয়েছে। (মাআরিফুল কুরআন)।

হাদিস শরিফে আছে, ‘হজরত মুআজ ইবনে জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা অর্ধশাবানের রাতে মাখলুকাতের দিকে রহমতের দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ছাড়া আর সবাইকে ক্ষমা করে দেন।’ (ইবনে হিব্বান: ৫৬৬৫, ইবনে মাজাহ: ১৩৯০, রাজিন: ২০৪৮; ইবনে খুজাইমা, কিতাবুত তাওহিদ, পৃষ্ঠা : ১৩৬, মুসনাদে আহমদ, চতুর্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা : ১৭৬)।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যখন শাবানের মধ্য দিবস আসবে, তখন তোমরা রাতে নফল ইবাদত করবে ও দিনে রোজা পালন করবে। (ইবনে মাজাহ)। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ১৪ শাবান রাত যখন আসে, তখন তোমরা এ রাত ইবাদত-বন্দেগিতে কাটাও এবং দিনের বেলায় রোজা রাখ। কেননা এদিন সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার আসমানে নেমে আসেন এবং আহ্বান করেন, ‘কোনো ক্ষমাপ্রার্থী আছ কি? আমি ক্ষমা করব; কোনো রিজিক প্রার্থী আছ কি? আমি রিজিক দেব; আছ কি কোনো বিপদগ্রস্ত? আমি উদ্ধার করব।’ এভাবে ভোর পর্যন্ত আল্লাহ মানুষের বিভিন্ন প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করে আহ্বান করতে থাকেন। (ইবনে মাজাহ : ১৩৮৪)।

এছাড়া প্রতি মাসের ৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ আইয়ামেবিদের নফল রোজা তো আছেই, যা হজরত আদম (আ.) পালন করেছিলেন এবং আমাদের প্রিয় নবী (সা.) ও পালন করতেন, যা মূলত সুন্নাত। বিখ্যাত মুহাদ্দিস ফকিহ হাফিজ ইবনে রজব (রা.) বলেন, এদিনের রোজা আইয়ামেবিদের রোজার অন্তর্ভুক্ত। (লাতায়িফুল মাআরিফ, পৃষ্ঠা: ১৫১)।

এছাড়া মাসের প্রথম তারিখ, মধ্য তারিখ ও শেষ তারিখ নফল রোজা গুরুত্বপূর্ণ। শবেবরাতের রোজা এর আওতায়ও পড়ে। সওমে দাউদি পদ্ধতিতে একদিন পর একদিন রোজা পালন করলেও প্রতিটি বিজোড় তারিখ রোজা হয় এবং শবেবরাতের রোজার শামিল হয়ে যায়। সর্বোপরি রাসুল (সা.) রমজান মাসের পর রজব-শাবান মাসে বেশি নফল নামাজ ও নফল রোজা পালন করতেন, শাবান মাসে কখনো ১০টি, কখনো ১৫টি, কখনো ২০টি

কুরআন এবং হাদিসের বিশুদ্ধ বর্ণনার মাধ্যমে পবিত্র শবেবরাত সম্পর্কে ব্যাপকভাবে প্রমাণ পাওয়া যায়। সারা পৃথিবীতে মুসলিম বিশ্ব ভাবগাম্ভীর্যের সহিত পবিত্র শবেবরাত পালন করে থাকে। এ রাতে নফল ইবাদত, নামাজ, কবর জিয়ারত, কুরআন তেলাওয়াত ইত্যাদির মাধ্যমে নবী মোহাম্মদ (সা.) এর উম্মতরা মহান এ রজনী উদযাপন করেন। পবিত্র শবেবরাতের ইবাদত বন্দেগি সম্পর্কে কুরআন ও হাদিসের অকাট্য নির্ভুল দলিল থাকা সত্ত্বেও একটি মহলকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে পবিত্র শবেবরাত সম্পর্কে ইসলাম ও কুরআন হাদিসবিরোধী বক্তব্য রাখতে দেখা যায়। বলা যায়, ওই ধরনের বক্তব্য যারা রাখেন, মূলত তাদের সঙ্গে ইসলামের মৌলিক বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্ক নেই।

ইসলামের সঠিক আদর্শ প্রচার, প্রসার এবং প্রতিষ্ঠা করা সব আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের অনুসারীদের ওপর অবশ্যই কর্তব্য। সঠিকভাবে ইসলামের কর্মপন্থা ও নির্দেশনা মুসলিম সমাজে বাস্তবায়নে প্রকৃত ওলামা মাশায়েখদের এগিয়ে আসা দরকার।

লেখক: মাহমুদুল হক আনসারী, গবেষক, চট্টগ্রাম, [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App