প্রবাসের কবিতা: আমি মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি
অমিয় দাশ
প্রকাশ: ০৪ আগস্ট ২০২৪, ১১:০১ পিএম
প্রবাসের কবিতা যুক্তরাষ্ট্র থেকে লিখেছেন অমিয় দাশ
শুনেছি আমার মায়ের কাছে।
মাকে অনেকবার জিজ্ঞেস করেছি,
অনেকবার।
জিজ্ঞেস করতেই মায়ের চোখ
ছলছল করে উঠেছে প্রতিবার।
আঁচলে মুখ মুছার ভান করে
চোখ মুছে, মা গিয়েছে সরে
কাজের ব্যস্ততার ভান করে।
শুধু একবার উত্তর পেয়েছিলাম।
মা বলেছিল, শরণার্থী হয়েছিলাম
ভিটেমাটি, প্রকৃতি
সবুজ বন-জঙ্গল, নদী
পোষা গরু-বাছুর
সব ছেড়ে-ছুড়ে।
মুক্তিযুদ্ধ করেছিল ওরা
বীর সন্তানেরা
স্বাধীনতার জন্যে, অধিকারের জন্য,
একটা শান্তিময় দেশের জন্য,
যার নাম হবে বাংলাদেশ।
মা আরও বলেছিল,
যখন ফিরে এলাম
স্বাধীনতা পেয়ে, যা পেলাম
শুধু ইট-কাঠের ধ্বংসস্তূপ করা ভিটে,
আর আশেপাশের গাছে
আগুনের আঁচ লাগা কালি,
আধপোড়া ঝলসানো গাছ।
পোষা প্রাণীগুলো আর ফিরে আসেনি
হারিয়ে গিয়েছে দিগন্তে।
তখন আমার মনে হল,
আমি স্বাধীন দেশে বড় হবো,
জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছুবো,
মায়ের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়বো,
তুলে ধরবো বাংলার সংস্কৃতি,
পৃথিবীর কাছে।
আজ বিদেশ বিভূঁইয়ে, দূর পরবাসে বসে
প্রশ্ন আসে মনে, আমার জীবনের লক্ষ্য কি পূরণ হয়েছে?
ধারণ করতে পেরেছি কি মায়ের স্বপ্নকে?
কি জানি?
আমি মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি।
মাঝে মাঝে মনে হয়, আমার মায়ের সাথে
বাংলাদেশের গণতন্ত্র ফুঁপিয়ে কাঁদছে
সংখ্যাগরিষ্ঠের স্বৈরতন্ত্রে।
তবুও শান্তি পাই এই দেখে যে,
আমি একা নই।
আমার মত গণতন্ত্র-বিরহী অনেক হৃদয়
কাঁদছে ঘরে, অফিসে, রাজপথে, গ্রামের রাস্তায়।
সবার সুরে আমারও উচ্চারণ করতে ইচ্ছে হয়,
বাংলাদেশ, বড্ড বেশি ভালোবাসি তোমায়।
লেখক: অমিয় দাশ, ফার্মাসিস্ট, ওষুধ প্রস্ততকারক, বোকা রেটন, ফ্লোরিডা, যুক্তরাষ্ট্র। Email: [email protected]