×

প্রবাস

লিসবন

ছবির চেয়েও সুন্দর যে শহর

Icon

হাফিজ আল আসাদ, পর্তুগালের লিসবন থেকে

প্রকাশ: ০৪ মার্চ ২০২৪, ০৩:১৪ পিএম

ছবির চেয়েও সুন্দর যে শহর

ছবি: হাফিজ আল আসাদ

দক্ষিণ-পশ্চিম ইউরোপের আইবেরিয়ান উপদ্বীপের আটলান্টিক উপকূলে অবস্থিত অপরূপ সৌন্দর্যের দেশ পর্তুগাল। প্রাচীন এই দেশটি একসময় ছিল ইউরোপের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। একদিকে নীল সমুদ্র আর অন্য দিকে রয়েছে সবুজ পাহাড়। ইউরোপের অন্য দেশ থেকে পর্তুগাল একবারেই ভিন্ন। এখানকার প্রকৃতি শিল্প, সংস্কৃতি ও ভ্রমণ প্রেমীদেরকে দারুণভাবে আকৃষ্ট করে। পর্তুগালে ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে শুরু হয় বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটকদের আনাগোনা। ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এখানে সবসময়ই পর্যটকদের আনাগোনা থাকে, যেটি সংখ্যার বিচারে ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি। 

ছবি: হাফিজ আল আসাদ

প্রতি বছর পর্তুগালে সারাবিশ্বের প্রায় ১৫ মিলিয়ন পর্যটক বেড়াতে আসে। সম্প্রতি পর্তুগাল ট্যুরিজমবান্ধব নীতিমালা প্রণয়নের ফলে দেশটির বেশ কয়েকটি শহর এখন বিশ্বের অন্যতম সেরা ও আকর্ষণীয় ট্যুরিস্ট ডেসটিনেশনে পরিণত হয়েছে। বিশ্বের সেরা ১০ ট্যুরিস্ট ডেসটিনেশনের অন্তত দুটি এখন পর্তুগালের দখলে। পর্তুগালে বেড়াতে আসা পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হলো রাজধানী শহর লিসবন। বৃহৎ ৭টি পাহাড়ের সমন্বয়ে টাগুস নদীর পাড়ের মনোরম প্রকৃতির শহর লিসবন। গ্রিসের এথেন্স ও ইতালির রোমের পর লিসবনই ইউরোপের তৃতীয় ঐতিহাসিক শহর।

ছবি: হাফিজ আল আসাদ

পাহাড়, নদী ও সাগর বেষ্টিত প্রাচীন এ শহরটিতে প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে রয়েছে বিশ্ব ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ কিছু নিদর্শন। পুরোনো ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিকতার মেলবন্ধনে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি লিসবন।

চলুন জেনে নেয় যাক লিসবনের তেমনেই কিছু গুরুত্বপূর্ণ ও দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে। 

ছবি: হাফিজ আল আসাদ

জেরোনিমোস মংস্টারি

এটি মূলত প্রখ্যাত পরিব্রাজক ভাস্কো দ্য গামার সমাধিস্থল। একটি বৃহৎ গির্জা বা মঠ যা বিশ্বের অন্যতম দর্শনীয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ষোড়শ শতকে নির্মিত এই সমাধিস্থল বা গির্জাটি স্থান করে নিয়েছে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে।

১৪৯৮ সালে ভাস্কো দ্য গামার ইন্ডিয়ার উদ্দেশে যাত্রাকে স্মরণ করে এটির নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল এবং এর বেশিরভাগ অর্থের জোগান এসেছিল উপমহাদেশের মসলার বাণিজ্য থেকে। লিসবন সিটি সেন্টার থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এ সমাধিটিতে জাওয়া যায় বাস অথবা ট্রামে করে। যেতে সময় লাগবে ১৫-২০ মিনিট।

কাস্তেলো দে সাও জর্জে

লিসবনের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এটি একটি রাজ প্রাসাদ। আলফামার পাশেই পাহারের পাদদেশে এটির অবস্থান। এখান থেকে লিসবন শহরকে ৩৬০ ডিগ্রিতে দেখা যায়। চাইলেই উপভোগ করা যায় টাগুস নদীর অপরূপ সৌন্দর্য। একটু দূরেই আটলান্টিক শহরের নীল জলরাশি চোখে ও মনে প্রশান্তি যোগায়। ১৯৪৭ সালের আগ পর্যন্ত এখান থেকেই অধিবাসীরা শত্রুর আক্রমণকে প্রতিহত করতো। কিন্তু এ বছরই আফনসো হেনরিকসের নেতৃত্বে দখল হয়ে যায় রাজপ্রাসাদটি। বর্তমানে একটি জাদুঘর ও প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন যে কারো মন ভালো করে দেবে। পর্যবেক্ষণ টাওয়ারটি দিয়ে দেখা যায় আটলান্টিকের নীল জলরাশির আছড়ে পড়ার দুর্লভ দৃশ্য। 

তোরে দে বেলেম

এটি তোরে দে বেলেম টাওয়ার নামে পরিচিত। এ স্থাপনাটি লিসবনের প্রাচীনতম স্থাপনাগুলোর মধ্য অন্যতম। ধারনা করা হচ্ছে ১৫১৫ সাল থেকে ১৫২১ সালের মধ্যে এটির নির্মাণ করা হয়েছে। মূলত টাগুস নদীতে সমুদগামী নৌযানের পর্যবেক্ষণের জন্য এটি নির্মাণ করা হয়েছিল। তোরে দে বেলেমকে বিশ্ব ঐতিহ্যের নিদর্শণ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে ১৯৮৩ সালে। 

ওশেনারিও ডি লিসবোয়া

লিশবন ওশেনারিয়াম হলো ইউরোপ তথা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ একুরিয়ামগুলোর মধ্যে একটি। ১৯৯৮ সালে লিসবন এক্সপোতে এটির উদ্বোধন করা হয়। সামুদ্রিক প্রাণীর অভয়ারণ্য এ একুরিয়ামটি বিশেষ করে আটলান্টিক, ভারত, প্রশান্ত ও আর্কটিক মহাসাগরের জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ। একুরিয়ামের পাশেই ইউরোপের সর্ববৃহৎ ভাস্কো দ্য গামা সেতু, যেটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১৭ কিলোমিটার, রয়েছে কেবলকারও। এছাড়া ‘ট্রাম-২৮’ এ রাউন্ড ভ্রমণের মাধ্যমে পুরোনো লিসবনের আলফামাসহ বৃহৎ ৫টি পাহাড় ভ্রম্যণ করা যায়। যাওয়া যায় সিটি সেন্টারেও।

এলিভাডর দে সান্তা জাস্তা

এটি লিসবনে অবস্থিত একটি লিফট যার নকশা করেছিলেন বিখ্যাত আইফেল টাওয়ারের নকশাবিদ আলেক্সঁদ্র গুস্তাভ এফেল। ১৯ শতকের শুরুতে নির্মিত এ লিফটি বাইক্সা জেলা থেকে লার্গো ডো কারমো পর্যন্ত ৪৫ কিলোমিটার এলাকায় যাত্রীদের পরিবহন করে। এলিভাডর দে সান্তার চূড়ায় থেকে লিসবন শহরটির মনোরম সব দৃশ্য উপভোগ করা যায়। এজন্যই সন্ধ্যায়, দর্শনার্থীরা এখানে ঘুরতে আসেন, প্রেমিক-প্রেমিকারা আসেন তাদের রোমান্টিক মুহূর্ত কাটাতে। 

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App