রোহিঙ্গাদের তো ধাক্কা দিয়ে পাঠাতে পারবো না
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৩ জানুয়ারি ২০২০, ১১:১৩ পিএম
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন রাবাব ফাতিমা। ছবি: নিহার সিদ্দিকী
জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাবাব ফাতিমা রোহিঙ্গাদের ফেরৎ পাঠানো প্রসঙ্গে বলেছেন, আমরা তো কাউকে ধাক্কা দিয়ে পাঠাতে পারবো না। রাতারাতি এ সমস্যা সমাধানে আমাদের হাতে কোনো ম্যাজিক্যাল সল্যুউশন নেই। সমস্যা মিয়ানমার তৈরি করেছে এর সমাধানের পথ তাদেরই খুঁজে বের করতে হবে।
নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় বুধবার (২২ জানুয়ারি) রাতে জাতিসংঘ স্থায়ী মিশনে এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন রাবাব ফাতিমা। তিনি আরও বলেন, মানবিক কারণে আমরা বর্ডার খুলে দিয়েছিলাম। এতে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছিলো। এখন যদি আমরা তাদের জোর করে বের করে দিতে যাই তাহলে আমাদের যে গুডউইল তৈরি হয়েছিলো তা এক মিনিটের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের এই স্থায়ী প্রতিনিধি বলেন, তবে আমরা বিভিন্ন ফোরামে প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। এ ইস্যুতে অন্তত একটা একাউন্টিবিলিটি তৈরি করতে পেরেছি। তাছাড়া তাদের পেছনে যে খরচ হচ্ছে তা তো জাতিসংঘের একাধিক সংস্থাসহ বিভিন্ন মানবিক সহায়তা সংগঠনগুলো তা দেখছে। তবে রোহিঙ্গাদের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি, নিরাপত্তা, পরিবেশ যে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে তা অকপটে স্বীকার করে তিনি বলেছেন, আমাদের ওপর ভরসা রাখুন।
প্রতি বছরের মতো এবারো নতুন বছর ২০২০-কে স্বাগত জানিয়ে নিউইয়র্কের সাংবাদিকদের সঙ্গে শুভেচ্ছা ও মতবিনিময় অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে এবং বিচক্ষণ কূটনৈতিক প্রজ্ঞায় জাতিসংঘের সঙ্গে বাংলাদেশ অত্যন্ত ঘনিষ্ট সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে। এই সম্পর্ক উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বাংলাদেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর আরও সাফল্যের সঙ্গে জাতিসংঘে তুলে ধরতে স্থায়ী মিশন নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
রাবাব ফাতিমার বক্তব্যে উঠে আসে ৭৪তম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অংশগ্রহণ, রোহিঙ্গা ইস্যু, শান্তিরক্ষা কার্যক্রম, জাতিসংঘ নেতৃবৃন্দকে বাংলাদেশ বিষয়ে সচেতন রাখা, বিভিন্ন রেজুলেশনে সহযোগী ও সমন্বয়কের ভূমিকা পালন, নির্বাচনে বিজয়, শান্তির সংস্কৃতি রেজ্যুলেশন গ্রহণ, জাতিসংঘের তহলবিল ও বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ, নিরাপত্তা পরিষদে সম্পৃক্ততা, একাত্তরের গণহত্যার আন্তর্জাতিকীকরণ, জাতিসংঘে প্রথমবারের মতো শোক দিবস পালন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন, গ্রুপ অব ফ্রেন্ডস্ প্লাটফর্মকে এগিয়ে নেয়া ও কোমল কূটনীতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ২০১৯ সালে জাতিসংঘে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ ও সফলতার বিভিন্ন দিক।
এসব অংশগ্রহণ ও অর্জিত সাফল্যের বিষয়গুলো সহজভাবে সারা বছর প্রবাসী বাঙালিসহ দেশের জনগণের মাঝে সংবাদের মাধ্যমে উপস্থাপনের জন্য সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানান স্থায়ী প্রতিনিধি।
যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতিসংঘে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী অর্থাৎ মুজিববর্ষ উদযাপনের বিভিন্ন পরিকল্পনাসহ ২০২০-এ জাতিসংঘে বাংলাদেশের যে সকল বিষয় বিশেষভাবে গুরুত্ব পাবে এবং যেসকল চ্যালেঞ্জ রয়েছে সে সম্পর্কে আলোকপাত করেন রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা।
রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে সাংবাদিকদের একাধিক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা বলেন, এ সমস্যার সমাধানে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে। এই চাপ যাতে অব্যাহত থাকে সে লক্ষ্যে কাজ করছে বাংলাদেশ। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, হেগের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের রুলিংয়ের ওপর নির্ভর করবে বাংলাদেশের পরবর্তী পদক্ষেপ। তবে জাতিসংঘে বিশ্বের বহু সেদস্য দেশ তাদের এজেন্ডাতে রোহিঙ্গা ইস্যুকে প্রধান্য দিয়ে কাজ করছে।
বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা করার ব্যাপারে কতটুকু অগ্রগতি হয়েছে এ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে রাবাব ফাতিমা বলেন, বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন এ লক্ষে কাজ করছে। তবে ইউনেসকোতে একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে অন্তর্ভূক্ত হওয়ায় এই প্রচেষ্টা অনেকখানি এগিয়েছে।
বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের প্রথম সচিব (প্রেস) নূর এলাহি মিনার সঞ্চালনায় এ অনুষ্ঠানে উপস্থায়ী প্রতিনিধি তারেক মো. আরিফুল ইসলামসহ মিশনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।