×

প্রবাস

ভালোবাসার মধ্যে রয়েছে শুধু ভালোবাসা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ অক্টোবর ২০২৩, ০৯:৩২ পিএম

ভালোবাসার মধ্যে রয়েছে শুধু ভালোবাসা
ভালোবাসার মধ্যে রয়েছে শুধু ভালোবাসা   মনে মনে কাউকে ভালোবাসার নাম প্রেম। গোপনে কাউকে ভালোবাসার নাম প্রেম। আবার গোপনে একে অপরকে ভালোবাসার নামও প্রেম। কাউকে ভালোবাসি কিন্তু বলার হিম্মত নেই। কাউকে ভালোবাসি কিন্তু প্রকাশ করতে লজ্জা লাগে। কাউকে ভালোবাসি এবং সেটা প্রকাশ করি। আমি ভালোবাসি কিন্তু সে ভালোবাসে না। এমন একটি সময় যখন জীবনে এসেছে কী করেছি জানেন? গোপনে চিঠি লিখেছি। চিঠি পেলো কিনা অনেক সময় সেটাও জানা যায়নি। ভালোবাসা কী আসলে? ভালোবাসা বেদনা, যাতনা, সাধনা। ভালোবাসা হতে পারে আনমনে, হতে পারে দুটি মনের বাসনা-সাধনা। ভালোবাসা হতে পারে, না পাবার বেদনা। ভালোবাসার মধ্যে রয়েছে শুধু ভালোবাসা। তাহলে কেন এসিড মারা হয় কাউকে না পেলে? কেন খুন করা হয় কেউ প্রেমে সাড়া না দিলে? আবার ভালোবাসা কেনই বা ঘৃণায় পরিণত হয়? আসলে ভালোবাসা কী? হতে পারে এমন কিছু। Do you feel my heart beating? Do you understand? Do you feel the same? আমি তোমাকে ভালোবাসি। এ সহজ কথাটি আমরা যত সহজে বলতে পারি বা বলতে শিখেছি বাস্তবে তা প্রমাণ করতে হয়তো সারা জীবন লেগে যেতে পারে তার প্রতিফলন ঘটাতে। ভালোবাসা কী? কেন ভালোবাসি? কখন ভালোবাসা ঘৃণায় পরিণত হয়? এবং কেন হয়?স্বার্থ, সম্পর্ক, কারণ বা উদ্দেশ্য ছাড়া আছে কি ভালোবাসা বা ঘৃণা? বিনা স্বার্থে ভালোবাসার কথা শুনেছি অনেকবার কিন্তু এখনও দেখিনি তার জ্বলন্ত উদাহরণ। আছে নাকি কারো কাছে এমনটি উদাহরণ? আমি ভালোবাসার খোঁজে পৃথিবীর একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে তবুও সেই স্বার্থহীন ভালোবাসা কারে বলে তা জানতে বা দেখতে পারিনি আজও। পরোপকার করাকে আমি ভালোবাসার মধ্যে ধরিনি। দুটি প্রাণের সাধনা এবং দুটি মন যখন কাছাকাছি, হৃৎস্পন্দন যখন দ্রুতগতিতে চলতে থাকে ভালোবাসা বা প্রেম এসেছে জীবনে ভাবতে পারি। এমনটি ঘটতে পারে যখন নারীর স্পর্শে নরের সমন্বয় ঘটে। দেনা-পাওনা ছাড়া ভালোবাসার স্বীকৃতি আছে কি? মা-বাবার ভালোবাসা সন্তানের প্রতি এটাও কি দেনা-পাওনা? নাকি নিঃস্বার্থ ভালোবাসা? সন্তানের প্রতি বাবা-মার ভালোবাসা তাদের দায়িত্ব এবং কর্তব্য। শিক্ষার্থীর ওপর রয়েছে শিক্ষকের প্রীতি ও স্নেহ। বন্ধুর প্রতি রয়েছে বন্ধুর বন্ধুত্ব। বন্ধুত্ব কী? কিভাবে বন্ধুত্বের সৃষ্টি হয়? কখন বলতে পারি বন্ধুকে সত্যিকারে বন্ধু? বেশ সহজে আমরা বন্ধু হই আবার সেই বন্ধুকে খুব সহজেই ঘৃণা করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধাবোধ করিনা। বন্ধু রয়েছে শত প্রকার যেমন ফেসবুকের বন্ধু, বিদেশি ও দেশি বন্ধু, রাস্তায় চলাকালীন বা জার্নিতে দেখা বন্ধু, স্কুলে পড়াকালীন বা খেলাধুলার মাঠে বন্ধু, কাজের বন্ধু, হতে পারে অনেক রকমের বন্ধু। মানবজাতির চরিত্রের একটি বিশেষ দিক রয়েছে তা হলো নিজের সুযোগ সুবিধাগুলোর দিকটা। যখন আমরা ব্যক্তিকেন্দ্রিক এবং নিজের স্বার্থকে উদ্ধার করতে কারো সঙ্গে বন্ধুত্ব করি, আর যদি সফল না হই, তখন হিংসাত্মক আচরণ করতে দ্বিধাবোধ করিনা। মানুষ হতে হলে একটি জিনিস জীবনে শেখা দরকার তা হলো ‘অ্যাগ্রি টু ডিজঅ্যাগ্রি’। পৃথিবীর সব মানুষ একইভাবে ভাবে না। তাই মনে করি আমাদের ভিন্নতা বা 'অ্যাগ্রি টু ডিজঅ্যাগ্রি’ও জীবন চলার পথ নিদর্শনের একটি চাবিকাঠি। স্ত্রীর প্রতি স্বামীর ভালোবাসা বা স্বামীর প্রতি স্ত্রীর ভালোবাসা এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যদি সেই ভালোবাসা ঘৃণায় পরিণত হয়, সেটাকে সমাজে বলা হয় অস্বাভাবিক। এই স্বাভাবিক এবং অস্বাভাবিক ঘটনায়ই প্রকৃত পক্ষে ‘জীবন’। আমরা আমাদের ধ্যানে, জ্ঞানে ও কর্মে মানব জীবন পাবার সন্ধানে। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমাদের ধ্যানে, জ্ঞানে ও কর্মে দানবেরও প্রভাব পড়ে দৈনন্দিন জীবনে। যার কারণে আমরা মাঝে মধ্যে দানবের মতো আচরণ করে থাকি। মানবের মাঝে দানবের সমন্বয় যখন ঘটে, হোক না সে হাজারও কাছের বা ভালোবাসার মানুষ, তাকে ভুলে যাওয়া ছাড়া অন্য কোনো উপায় থাকে না। মানুষ যেমন ব্যাংকে টাকা রাখে সুদে-মূলে লাভবান হবার জন্য তেমনি সে ভালোবাসা, প্রেম, প্রীতি বা বন্ধুত্ব করে বিনিময়ে কিছু পাবার জন্য। যদি সেই পাওয়াটা মনঃপুত না হয় ঠিক তখন সেই একই মানব হয়ে যায় দানব। অনেক শুনেছি, পরিবার থেকে শুরু করে বন্ধু-বান্ধবের থেকে। এত ভালোবাসি তোমাকে, জীবন দিয়ে দিবো। কিন্তু স্বার্থের ব্যাঘাতে দূরে ফেলে চলে গেছে বিপদের মুহূর্তটি আসার সঙ্গে সঙ্গে এমনটিও দেখেছি। মুখের কথা আর তাকে কাজে পরিণত করা এক নয়। পাঠক হঠাৎ আজ কেন এসব কথা? এ তো তেমন কোনো নতুন কথা নয়। না নতুন কথা নয় ঠিকই তবে আজ এসব কথার সাথে তুলে ধরবো ১৯৭৫ সালের কথা। একটি ভালোবাসার ফুল ঝরে যাবার কথা। আমার জীবনের একটি স্বরণীয় ঘটনার কথা যা হবে অনেকের জন্য নতুন কথা। বাবার চাকরি তখন ঢাকা মালিবাগ এসবি অফিসে। তিনি নিরাপত্তা গার্ড (সিকিউরিটি ব্রাঞ্চ) হিসেবে কর্মরত। ১৯৭৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বড় ভাই চলে গেলেন স্কলারশিপে পোল্যান্ডে পড়াশোনা করতে। ১৯৭৫ সালের প্রথমদিকে মেঝোভাই যোগ দিলেন সশস্ত্র বাহিনীতে। বাড়িতে মা আমাদের নিয়ে আছেন। আমার হঠাৎ জন্ডিস হয়েছে, বয়স ১৩-১৪ হবে আরকি! মা আমাকে ঢাকাতে বাবার কাছে পাঠিয়েছেন চিকিৎসার জন্য। ১৯৭৫ সালের ১২ অগাস্ট সন্ধ্যায় পৌঁছেছি বাবার কাছে। সকালে বাবার ডিউটি ধানমন্ডির ৩২ নং বাড়িতে এবং পুরো সপ্তাহে বাবার ডিউটি সেখানে। রাতের খাবার খেতে বাবা বললেন কাল বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে আমার ডিউটি আছে তা তুমি বই নিয়ে আমার সাথে যাবে। বসার রুমে একটু পড়াশোনা করবে সময় পার হয়ে যাবে। পরে ডিউটি শেষে আমাদের এসবি অফিসের ডাক্তারের কাছে তোমাকে নিয়ে যাবো। বেশ অসুস্থ তবুও বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে যাবো, তাঁকে দেখতে পারবো কাছ থেকে। সে এক না দেখা, না চেনা, না জানা, মনের গভীরে, মনের অজান্তে ভালোবাসা। জাতির পিতাকে দেখতে পাবো। গাড়িতে করে রওনা দিয়েছি বাবার সাথে সাত সকালে। ধানমন্ডির বাড়ির চারিপাশে নানা ধরণের লোকে ঘেরা। বাবার কলিগদের সঙ্গে পরিচয় পর্ব শেষ। ঘণ্টা খানেক হয়ে গেছে। হঠাৎ বাড়ি থেকে বের হয়ে বাইরে গাড়ির দিকে আসতে নানা ধরণের লোকের ভিড়ে। এত ভিড়ের মাঝে নজর পড়েছে আমার দিকে তাঁর, কারণ সবাই তো চাকরিরত বয়স্ক লোক সেখানে। ছেলেটি কে? ও আমার ছেলে, এসেছে চিকিৎসার জন্য গ্রাম থেকে, বাবা উত্তর দিলেন। ওহ, কী হয়েছে? জন্ডিস। তা তুমি ছুটি নিয়ে ওর চিকিৎসার ব্যবস্থা কর। বলে বঙ্গবন্ধু চলে গেলেন অফিসে। আমি মনের রাজ্যে একা একা ভাবছি যুদ্ধের সময়ের কথা, হরতালের কথা। স্লোগানের কথা। বঙ্গবন্ধুর কথা। সময় পার হয়ে গেছে কখন কিছুই মনে নেই, বাবার ডিউটি শেষে চলে এলাম মালিবাগে, ডাক্তার দেখানো হলো। ওষুধ নিয়ে এলাম বাবার রুমে এবং এসে বিশ্রাম। বাবা অফিসে এসে ছুটি নিয়েছেন। পরের দিন সকালে বাবা-ছেলের একটু ঘোরাঘুরি। শরীরটা বেশ খারাপ, ঘুরতে ভালো লাগছে না তাই ফিরে এলাম মালিবাগে। রাতে একটু খেয়ে ঘুমিয়ে গেছি। বাবা নামাজ শেষ করে কখন ঘুমিয়েছেন জানি না। খুব সকালেই আজানের ধ্বনি শুনতে পেলাম। ঘুম থেকে উঠেছি, বাবা বেশ অস্থির এবং কান্নাকাটি করছেন। ভাবছি কী ব্যাপার গ্রামের বাড়িতে কিছু হয়েছে কি? মা একা ছোট ভাই-বোন নিয়ে বাড়িতে। না। সেদিন রাতে চক্রান্তপূর্ণভাবে সপরিবারে হত্যার একটি ঘটনা ঘটে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি দল শেখ মুজিবের বাসভবনে গিয়ে একটি অভ্যুত্থান সংঘটিত করে তাঁকে হত্যা করে। পরে খন্দকার মোশতাক আহমেদকে রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত করা হয়। সেদিন কান্নার রোল বয়েছিল বাবার চোখে, আমার চোখে। ভালোবাসার কান্না। জানি না আমি ঢাকাতে না এলে কী হতো আমার বাবার? আর কী হতো আমাদের? কারণ আমরাও হয়তো সেদিন বাবা হারা হতাম! “What is lotted, cannot be blotted”. মনে হয় বাবার ভালোবাসা আরো বড় আকারে গড়ে উঠেছিল জাতির পিতার পরিবারের প্রতি শুধু সেদিনের ছোট্ট একটি প্রশ্নে "ছেলেটি কে"? এ ঘটনার পরে বাবা আর বেশিদিন চাকরি করেননি। পৃথিবীতে হাজারও প্রমাণ রয়েছে মীর জাফর থেকে শুরু করে মোশতাক আহমেদের মতো লোকের। যারা গড়ে উঠেছে ভালোবাসা এবং বন্ধুত্বের ছায়াতে, শেষে তারাই অমানুষ হয়েছে বন্ধুত্বের সুযোগ ও ভালবাসা পাবার পরে। শুনেছি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একটি চলচ্চিত্র তৈরি হয়েছে- 'মুজিব একটি জাতির রূপকার'। ছবিটি মুক্তি পেয়েছে, হতে পারে সে কারণেই ঘটনাটি লেখায় এসেছে। নতুন প্রজন্মের অনেকে জানবে বাংলার ইতিহাস, বুঝবে বাংলাকে, বাংলাদেশকে। আমি যা আমার ছোটবেলায় দেখেছি নতুন প্রজন্ম তা পর্দায় দেখবে, হয়তো তাদেরও দেশের প্রতি নতুন করে অন্যরকম ভালোবাসা জাগবে। বাংলাদেশের মানুষের মাইন্ডসেট এবং নৈতিকতার পরিবর্তন হোক সেটা আমি মনে প্রাণে আশা করি তাই সুইডেনের একটি ট্রু লাভ-এর ওপর বাস্তব আরো একটি ঘটনা শেয়ার করবো যা নিশ্চয় সবার ভালো লাগবে। প্রশ্ন আসতেই পারে মাইন্ডসেট এবং নৈতিকতার ওপর আলোচনা করতে ‘ট্রু লাভ’ ঢুকানোর কারণ কী? কারণ জাতির নৈতিকতা তার ভালোবাসার প্রতিচ্ছবি। ঘটনাটি নতুন নয়, আমি জানতাম অনেক আগেই কিন্তু আজ মনে হলো বিষয়টি শেয়ার করি। সত্যিকারার্থে রাজনীতি, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার এসব নিয়ে লিখতে লিখতে অনেক সুন্দর সুন্দর ঘটনার কথা লেখা হয়নি। তবে কথায় বলে ‘নেভার ঠ্যু লেট’ তো আসুন জানি একটি ভালোবাসার নিদর্শন। সততা এবং ভালোবাসার মাধ্যমে কীভাবে অর্থনৈতিকভাবে বাস্তব পরিপূর্ণতা লাভ করা যায়, সুইডেনে চলছে এর ওপর বেস্ট প্রাকটিস। সঠিক নৈতিকতার চর্চার মতো ভালোবাসার ওপরও সুন্দর চর্চার দরকার। আমার মতে ভালোবাসার বেস্ট প্রাকটিস পৃথিবীর অন্য কোথাও সুন্দর ভাবে না হলেও সুইডেনে যে হচ্ছে, এটা আমি বলতে পারি। একটি চমৎকার উদাহরণ তুলে ধরি সুইডেনের প্রিন্সেস ভিক্টোরিয়ার ভালোবাসা দিয়ে। সুইডেনের বর্তমান রাজার অবর্তমানে ভিক্টোরিয়া রানি হবেন এবং ইতিমধ্যে তিনি নানা কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত হয়েছেন। ভিক্টোরিয়া তার ব্যক্তিগত ফিটন্যাস ট্রেইনারের প্রেমে পড়েন যৌবনের কোনো এক সময়। একজন অতি সাধারণ পরিবারের সন্তানের প্রেমে পড়া এবং বিয়ে করা, শেষে সুইডেনের ভবিষ্যত রানির স্বামী এবং সবার প্রিন্স, ভাবতেই গা শিউরে উঠার কথা। কিন্তু সুইডিশ জাতি সব কিছুর ঊর্ধ্বে ক্রাউন প্রিন্সেস ভিক্টোরিয়ার ভালোবাসার প্রাধান্য দিয়েছে, কোনো রকম জটিলতা ছাড়া। আমাদের দেশে এমনটি যে হতে পারে ভাবতেও ভয় হয়! প্রিন্স ডানিয়েল দিব্বি সব কিছু মানিয়ে, ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে, রাজ প্রাসাদে জীবন-যাপন করে চলছেন। বর্তমানে ভিক্টোরিয়া এবং ডানিয়েল দুই সন্তানের মা-বাবা। এইতো সেদিনের কথা আমার ছেলে টেনিস প্র্যাকটিস করছে হঠাৎ ডানিয়েল সেখানে হাজির, দাঁড়িয়ে মনের আনন্দে দেখছে জনাথানের খেলা। আমাকে দেখে তাঁর বুঝতে সমস্যা হয় নি যে আমি তার বাবা। জাস্ট হাই হ্যালো বিনিময় হলো কোনো রকম জটিলতা ছাড়া। এসব ঘটনার সঙ্গে যখন নিজেকে জড়িয়ে ফেলি তখন স্বাভাবিক ভাবেই বাংলাদেশের কথা মনে পড়ে এবং তখন মনে হয় কবে হবে এমনটি আমাদের দেশে! আমি মাঝে মাঝে গান গাই এবং গান শুনিও। অনেক দেশের ভাষা বুঝি না, গানের মানে বুঝি না, তারপরও যদি সে দেশের গান কখনও শুনি ভালোই লাগে। কারণ আমরা মানুষ জাতি বনফুলের মতো ছন্দে ছন্দে দুলি আনন্দে যখন হৃদয়ে ভালোবাসা দোলা দেয়। ভালোবাসা সত্যিই স্রষ্টার দেওয়া নিয়ামত যার মধ্যে রয়েছে শুধু ভালোবাসা। সব ভালো কাজের মধ্যেই রয়েছে ভালোবাসা। যে কথা বা কাজে মজা নেই, তাতে ভালোবাসাও নেই। গানে যেমন মজা আছে, দরদ আছে, ভালোবাসা আছে, তাই গানের মানে না বুঝলেও ভালো লাগে। কিন্তু চুরি করা, ধর্ষণ করা, দুর্নীতি করা, কাউকে ছোট করে কথা বলা বা অন্যায় করা এর মধ্যে মজা আছে বলে আমার মনে হয় না বা এগুলো করলে যে ভালোলাগে বা ভালোবাসা জাগে তাও না, তারপরও আমরা এসব কাজ করি। যখন কিছু করলে মনের মধ্যে ভালো না লাগে বা হৃদয়ে ভালোবাসার সৃষ্টি না হয়, তাহলে কেন সে কাজগুলো আমরা করি? হয়তো অনেকে বলবে পেটের দায়ে বা প্রয়োজনের তাগিদে অন্যায় করি! কিন্তু কিছু কিছু ভালোবাসা রয়েছে যা একান্ত হৃদয়ছোঁয়া এবং ভালোলাগা থেকে সৃষ্টি, তারপরও সে ভালোবাসা অনেক সময় বেদনাদায়কও হয়, যেমন একজন কোটিপতি বাবা-মার একমাত্র মেয়ের সঙ্গে একজন গরীবের ছেলের প্রেম। ধনীর সঙ্গে গরিবের প্রেম শতভাগ সত্য হলেও পরিবার তথা সমাজের চোখে সেটাকে সন্দেহভাজন বলা হয় শুরুতেই, অর্থের ব্যবধানের কারণে সমাজ সে ভালোবাসার মূল্যায়ন করে না, বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো সমাজে। এ ধরনের ডিসক্রিমিনেশন রয়েছে কমবেশি বিশ্বের সর্বত্র; তবে বাংলাদেশে তুলনামূলকভাবে বেশি লক্ষণীয়। যদিও কুমার বিশ্বজিতের কণ্ঠে শুনেছি- ‘বলতো ভালোবাসা কারে বলে, বলতো এ হৃদয় কেন জলে, ভালোবাসি অত শত বুঝি না’। কবে হবে এই গানের কথা সত্যিকার মনের কথা এবং কবে হবে বাংলাদেশে সুইডেনের মতো গণতান্ত্রিক নৈতিকতা! পাঠক, জীবনে অনেক অপ্রিয় বা প্রিয় ঘটনা যা ঘটে, অনেক কথাই যায় না বলা, যা শুধু হৃদয়ে থেকে যায়। আবার কিছু কথা, কিছু ব্যথা হঠাৎ তা ফিরে আসে মনের মাঝে। তাই ভালোবাসা এবং বন্ধুত্বের ওপর কিছু কথা বলতে মনে পড়ে গেল অতীতের কথা, যেমন জাতির পিতার জীবনের ইতি টেনেছিল একদল মানুষ নামের দানবেরা। ৩৮ বছর একাকী দূরপরবাস জীবন আমাকে অনেক শিক্ষা ও উপদেশ দিয়েছে। তা হলো ফ্রেন্ডলিস্টের সব বন্ধুই আসল বন্ধু না। সব ভালোবাসা ভালোবাসা না। সেখানে কিছু সুবিধাবাদী বন্ধুও থাকে। ইতিহাস থেকে শেখা "মা'র চেয়ে যদি কেউ বেশি ভালোবাসে তখন তাকে বলা হয় ডাইনি"। জীবনে চরম আঘাত পাবার আগে নিজেকে সরিয়ে নেয়া শিখতে হবে। বন্ধুর বিপদ দেখলে যখন কেউ দৌড়ে পালায় তাদের খুঁজে খুঁজে আনফ্রেন্ড করা শিখতে হবে। মনে বিশ্বাস রাখতে হবে, রিয়েল ফ্রেন্ড কখনও আনফ্রেন্ড হয় না বা হতে পারে না। আরো শিখেছি ‘বিপদের বন্ধুই প্রকৃত বন্ধু’। তাই ভালোবাসার ফ্রেম থেকে কেউ ঝরে যাবে, কেউ নতুন করে আসবে, এটাই জীবন। আমি ভালোবাসি আমার সন্তানের মাকে। আমি ভালোবাসি আমার ছেলে-মেয়েকে। আমি ভালোবাসি আমার পরিবারের অনেককে। আমি ভালোবাসি দেশকে এবং দেশের মানুষকে। আমি ভালোবাসি পৃথিবীকে এবং পৃথিবীর মানুষকে, তবে বিভিন্ন ভাবে। জীবনে বেঁচে থাকার মাঝে প্রতিদিন নিজেকে জানবো আর শিখবো- ভালোবাসা কারে বলে, তবে এটা সত্য যে ভালোবাসার মধ্যে রয়েছে শুধু ভালোবাসা। কারণ যখন দেখবেন কেউ রয়েছে দূরে আপনাকে ছেড়ে, মনে মনে কল্পনাতে সে আসছে কেন যেন বারে বারে। সে হৃদয়ের মন্দিরে আছে বসে, আপনি মনে প্রাণে ব্যথিত হবেন। প্রশ্ন করবেন মনে মনে, কেন একা ফেলে চলে গেলে, দুঃখ দিয়ে না ফেরার দেশে? এর নামও কিন্তু ভালোবাসা, কারণ ভালোবাসার মধ্যে রয়েছে শুধু ভালোবাসা। লেখক: রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন থেকে, [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App