×

প্রবাস

নতুন সমস্যা না বাড়িয়ে সমস্যাগুলো আগে শনাক্ত করুন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০:১০ পিএম

নতুন সমস্যা না বাড়িয়ে সমস্যাগুলো আগে শনাক্ত করুন
আমরা তোমার শান্তিপ্রিয় শান্ত ছেলে/ তবু শত্রু এলে অস্ত্র হাতে ধরতে জানি/ তোমার ভয় নেই, মা, আমরা প্রতিবাদ করতে জানি...। জীবন যুদ্ধে জয়ী হতে আমরা কিন্তু অস্ত্র হাতে নেই না, তবে বই হাতে নেই। আবার এমনও সময় জীবনে আসে বা আসতে পারে যখন আমরা বই ফেলে অস্ত্র হাতে নিতে বাধ্য হই। আমার এই লেখায় দুটো ছবি তুলে ধরেছি বোঝার সুবিধার্থে, একটি ছবি ১৯৭১ এ দেশ স্বাধীনের তাগিদে বই ছেড়ে অস্ত্র ধরেছিলাম, পরে দেশ স্বাধীন হলে অস্ত্র ছেড়ে বই ধরেছি। পৃথিবীতে এখনও অনেক দেশ রয়েছে যারা এখনও এই কাজটি করে চলছে। অনেকের ধারণা হাতে বই উঠলে অস্ত্র মাটিতে নামাতে বাধ্য সবাই, সেটা পৃথিবীর যেখানেই হোক না কেন। এটা এ যুগে সঠিক নয়। কারণ এ যুগে বাধ্যবাধকতা বলে কিছু নেই, নৈতিকতা বলেও কিছু নেই তবে ক্ষমতা ধরে রাখতে যা কিছু করা সেটা করতে অনেকে জীবন নিতে এবং দিতে প্রস্তুত। একটি রাষ্ট্রের পরিকাঠামোতে অনেক কার্যক্রম থাকে তবে দুটো গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক কাজে রাষ্ট্র বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। সে দুটো মৌলিক কাজ হলো রাষ্ট্রে বেকারত্ব দূরীকরণ এবং মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। যে দেশগুলো এর দুটোতেই ব্যর্থ তার মধ্যে বাংলাদেশ একটি। স্বাধীনতার ৫২ বছর পরও আমরা এই দুটো বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিতে পারিনি, খাতা-কলমে গুরুত্ব দিলেও তেমন ফলাফল দেখাতে পারিনি। আমরা ৫২ বছর ধরে শোকের বন্যা এবং কান্নার রোল জাতির মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছি। পুরো দেশটি এখন দুর্নীতিগ্রস্ত। শিক্ষায় দুর্নীতি, খাবারে ভেজাল, রাজনীতিতে প্রতিহিংসাপরায়ণ মনমানসিকতা এবং ক্ষমতার অপব্যবহার। এমতাবস্থায় কী করণীয় হতে পারে আমাদের জন্য? সুস্থ এবং ন্যায়বিচারের সাথে দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ পেতে দরকারে অস্ত্র হাতে নিতে হতে পারে। বহিঃশত্রুর হাত থেকে দেশকে রক্ষা করা বা স্বাধীন করার জন্য নেতৃত্ব দেওয়া আর দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যার সমাধান করা এক নয়। এটা কঠিন এবং জটিল একটা কাজ এ কাজে নেতৃত্ব দেওয়া এবং বিজয়ী হওয়া চাট্টিখানিক কথা নয়। এ ধরনের সমস্যা যেসব দেশে ছিল বা আছে, অতীত এবং বর্তমান দেখলে লক্ষণীয় যে বড় সড় গৃহযুদ্ধের মধ্য দিয়ে এর সমাধান হয়েছে। আমরা কি আদৌ প্রস্তুত তেমন একটি রেভুলেশনের জন্য যাকে বলে গণঅভ্যুত্থান (একটা দেশের ব্যাপক সংখ্যক জনগণ যখন শাসকের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে তাকে পদচ্যুত করে, সেটাই মূলত গণঅভ্যুত্থান)? এখন প্রশ্ন কীসের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান? গণতন্ত্রের নাকি স্বৈরতন্ত্রের? এক বাক্যে সবাই বলবে স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে। কিন্তু আমি মনে করি এখানেই যত ন্যাটা। আমরা সবাই গণতন্ত্রের দোহাই দিয়ে মূলত স্বৈরশাসন কায়েম করে চলছি। আমার এই যুক্তি বিশ্বাস হচ্ছে না তাই তো? তাহলে আসুন বর্তমান বিশ্বের কিছু ঘটনা তুলে ধরি প্রথমে। যেমন ধরুন সুইডেনের বর্তমান দ্বিতীয় বৃহত্তম পলিটিকাল পার্টির নেতারা সরাসরি ইসলামের বিরুদ্ধে নানা ধরনের মন্তব্যসহ পবিত্র কুরআন প্রকাশ্যে পোড়াচ্ছে, গণতন্ত্র এবং বাকস্বাধীনতার দোহাই দিয়ে, কোনো রকম বাধাবিঘ্ন ছাড়া। একটা জাতি বা ধর্মের বিশ্বাসকে দিবালোকে পোড়ানো হচ্ছে অথচ দেশটি কিছুই করছে না। কিন্তু যদি একটি দেশের পতাকা পোড়ানো হয় বা কোনো ব্যক্তিকে তার বর্ণের ভিন্নতার কারণে কটূক্তি করা হয় তবে সেটা বড় ধরণের অপরাধের সারিতে ফেলে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। একইভাবে হঠাৎ যদি একটি দেশের সঙ্গে যুদ্ধ লাগে তবে একে অপরকে খুন করা মানে বীর খেতাব অর্জন করা। কিন্তু যদি চোখের সামনে নিজের বোন বা মাকে কেউ ধর্ষণ করে এবং নিজ হাতে যদি তার প্রতিশোধ কেউ নেয় তবে সেটা হবে বড় অপরাধ এবং তার জন্য বাকি জীবন জেল হাজত এমনকি মৃত্যুদণ্ড হতে পারে। এখন আমার প্রশ্ন এ ধরনের ঘটনা কোন তন্ত্র বা কোন শাসনের মধ্যে পড়ে? পুরো পৃথিবীকে এখন যদি “আন্ডার অল ক্রিটিসিজম" বলি তাহলে কি ভুল হবে? কী মনে হয়? ধরুন মহামারি চলছে, ক্যানসার এবং কলেরা কোনটায় আক্রান্ত হতে চান? এমন একটি সংকটের মধ্যে আমরা এখন যে আমাদের পছন্দের কিছু নেই, জাতি হিসেবে আমরা দুটোতেই আক্রান্ত। এমনাবস্থায় কি করণীয় হতে পারে ভেবেছেন কি? জনগণ ভোট দিবে কিন্তু আমার প্রশ্ন কাকে দিবে, যে বর্তমান আছে তাকে নাকি যে আসবে তাকে? গণঅভ্যুত্থান করার আগে ভাবুন এবং নতুন সমস্যা না বাড়িয়ে বরং সমস্যাগুলো আগে শনাক্ত করা শিখুন, তারপর একে একে সেগুলোর সমাধান করুন। দেখবেন পরিবর্তন আসবে যে পরিবর্তন আমাদেরকে শেখাবে মানুষ এবং প্রকৃত গণতান্ত্রিক হতে, ভণ্ড হতে নয়। লেখক: রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন থেকে, [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App