×

প্রবাস

জাতি হিসেবে আমাদের মন-মানসিকতার উন্নতি হবে কবে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০২৩, ০৬:৫১ পিএম

জাতি হিসেবে আমাদের মন-মানসিকতার উন্নতি হবে কবে
প্রত্যেক জাতির একটি নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে। বৈশিষ্ট্য তৈরি হয় নানাভাবে। ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য তৈরি হয় বেশিরভাগ সময় অনুপ্রেরণার মধ্য দিয়ে। মানবজাতির মধ্যে সব সময় কেউ না কেউ কোনো না কোনোভাবে বিরাট কিছু হয়। গায়ক, নায়ক, কবি, শিল্পী, বৈজ্ঞানিক, রাজনীতিবিদ, সাধক, গুরু, নবী, রাসূল ইত্যাদি। আমরা সাধারণ মানুষ চেষ্টা করি তাদেরকে অনুসরণ করতে। ভালো মানুষের পাশাপাশি দুষ্ট মানুষেরও জন্ম হয় নানাভাবে, কেউ মনেপ্রাণে তাদের অনুসরণ না করলেও তাদের মতো খারাপ বা আরও খারাপ হয়ে থাকি। যদিও আমরা সবসময় ভালো থেকে আরও ভালো হতে চাই। এটাই স্বাভাবিক এবং এটাই হবার কথা কিন্তু না সেটা সব সময় বা সবক্ষেত্রে হয় না। আমরা ভালো-মন্দ সম্পর্কে জানার পরও খারাপ দিকটার দিকে আকৃষ্ট হয়ে থাকি। কী কী সম্ভাব্য কারণ এর পেছনে জড়িত? আমরা বাঙালি জাতি হিসেবে আমাদের চরিত্রের নানা রূপ রয়েছে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো। তবে যে জিনিসগুলো আমাকে বেশি কষ্ট দেয় সেগুলো হলো, জাতি হিসেবে আমাদের মন-মানসিকতার তেমন উন্নতি হয়নি। এ বিষয়ে আমার মতামত এবং বিশ্লেষণ নিম্নরূপ- বাঙালি জাতির অতীত কেমন ছিল, শতভাগ বলতে পারবো না। তবে তারা অতিথিপরায়ণ ছিল বলা যেতে পারে, তা না হলে ব্রিটিশদের জায়গা দিতো বলে মনে হয় না। সময়ের সাথে বাঙালি জাতি হারাতে শুরু করে ব্যক্তিত্ব সঙ্গে নৈতিকতা। পরে ব্রিটিশের চামচা হয়ে যায়। ব্রিটিশ চলে গেলেও চামচামি রয়ে গেছে বাঙালির মাঝে, সাথে যোগ হয়েছে তেল মারার প্রবণতা আর সৃষ্টি করতে শিখেছে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ যা আজ জাতির স্বভাবে পরিণত হয়েছে। বাঙালির বৈশিষ্ট্য তেলা মাথায় তেল দেওয়া, পাম্প পট্টি মারা, সমাজে বৈষম্য এবং ভেদাভেদ তৈরি করা। অর্থ বা শিক্ষার দাপট দেখানো, সমাজে যারা অল্প পয়সার বিনিময়ে বা কম শিক্ষার যোগ্যতায় কাজ করে, তাদেরকে মানুষ মনে না করা। এ কাজ করতে এক দল মানুষের বিবেকে বাঁধা দেয়না। কারণ এরা শুধু নিজেদেরকেই এলিট বলে দাবি করে। বাসার কাজের লোকের সাথে বসে খেতে এদের বিবেকে বাঁধা লাগে ইত্যাদি। এ ধরণের মন-মানসিকতায় গড়ে উঠার পেছনে যে জিনিসটা বেশি দায়ী তা হলো অতীতে বাঙালি জাতি নিজেরাই ব্রিটিশদের পায়চারা করা থেকে শুরু করে গোলামি করতো। অর্থে এরা ধনী হলেও মন-মানসিকতা সেই নিচুই রয়ে গেছে। কয়েকটি উদাহরণ দিই। ধরা যাক, পথে কারো সাথে কথা কাটাকাটি বা ঝগড়া লেগেছে, তাহলে ওরা কী বলবে? আমারে চেনোস আমি কে? আমার চৌদ্দপুরুষ কী করে ইত্যাদি। এখনো একজন চাষির ছেলের সঙ্গে যদি কোনো সচিবের মেয়ের প্রেম হয় বা পরে বিয়ে হয় বাংলাদেশ নিশ্চয়ই সেটা গিনেস রেকর্ড বুকে তুলে ধরতে চেষ্টা করবে। অথচ সুইডেনের রাজকন্যার বিয়ে হয়েছে তার ব্যক্তিগত ফিটনেস ট্রেইনারের সঙ্গে। বাঙালি জাতির জন্য যারা রাষ্ট্রের সেবা দিবে বলে কর্মে ঢুকেছে, তারাই জাতিকে বাড়ির চাকর বানিয়ে শাসন-শোষণ করে দেশ পরিচালনা করছে। আবার যে জনগণের ভোটে মন্ত্রী, এমপি হয় সেই জনগণকেই তারা মানুষ বলে মনে করে না। যারা সম্মানিত হতে সাহায্য করলো, তাদেরকেই এরা অসম্মান করে! এর নাম বাংলাদেশ। এই মানসিকতা যতদিন জাতির মন থেকে বিলীন না হবে ততদিন বাংলাদেশকে সোনার বাংলা করা সম্ভব হবে না। আমার কাছে অবাক লাগে, যে দেশে ৮৫% মানুষ ইসলামি জীবন ব্যবস্থায় বিশ্বাসী, যার মূলমন্ত্র হলো মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ থাকবে না, কিন্তু কী অবস্থা আমাদের? দেশে সত্যিকারে ইসলামের বেস্ট প্র্যাকটিস আছে কী? বাংলাদেশের আরও দুটো জিনিস আমাকে কষ্ট দেয়। একটা রাজনীতি অন্যটি দুর্নীতি। দুঃখের বিষয় বেশির ভাগ মানুষ দুর্নীতির সঙ্গে কম-বেশি জড়িত থাকলেও যারা বেশি ওতপ্রোতভাবে জড়িত তারা সবাই রাজনীতি করে। বলতে গেলে রাজনীতি করা মানে দুর্নীতি আর দুর্নীতি করা মানেই রাজনীতি করা। শুধু তাই না এদের কথাবার্তায় দুর্নীতি জড়িত। আমার এই অপ্রিয় সত্য কথাটি পড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রথমে সকল রাজনীতিবিদ ক্ষেপে যাবে। আমাকে গালিগালাজ করবে, কিন্তু আমি সেটা নিয়ে চিন্তিত না। আমি চিন্তিত যারা গালিগালাজ করবে তাদের নিয়ে। পুরো লেখা পড়ার পর যদি ন্যূনতম জ্ঞান তাদের মগজে থাকে তখন বুঝবে কেন আমি এত বড় একটি মন্তব্য করেছি। যদি বলি দেশের বর্তমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতির পেছনে রাজনীতিবিদের অবদান সবচেয়ে বেশি কারণ তারা দুর্নীতি করা ছাড়া আর কিছু করে বলে চোখে পড়ে না। একথা রাজনীতিবিদরা মেনে নিবে না। কারণ তারা মনে করে তাদের চরিত্র ফুলের মতো পবিত্র। কিন্তু না, সেটা সঠিক নয়। কারণ তারা ক্ষমতা দখল করেছে মূলত দুর্নীতির মধ্য দিয়ে, অর্থাৎ জনগণের ভোট চুরি করে। বহির্বিশ্বের থেকে যে ঋণ সরকার ধার করে সেটা দিয়ে যে পরিমাণ উন্নতি হবার কথা সেটা হয়নি। তবে ঋণের পরিমাণ প্রতিটি নাগরিকের ঘাড়ে চেপে বসেছে। মূলত আমরা যারা দেশের বাইরে আছি আমাদের রেমিট্যান্স, দেশের ব্যক্তি মালিকানাধীন গার্মেন্টস সেক্টর, ইউএন মিশনে নিযুক্ত বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর অর্জিত অর্থের ওপর দেশ চলমান। রাষ্ট্রের যেমন জবাবদিহিতা নেই, ঠিক তেমনি নেই কোনো গ্রহণযোগ্য 'সোর্স অফ ইনকাম'। তবে আমরা কমপক্ষে এক কোটি বাংলাদেশি যারা দেশের বাইরে রীতিমতো বিদেশি মুদ্রা কামাই করে দেশ গড়তে, দেশের নিজ নিজ পরিবারকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে দীর্ঘদিন ধরে প্রচেষ্টা করে চলছি মূলত তাদের কারণে দেশ আজ সামনের দিকে এগিয়ে চলছে। সেক্ষেত্রে সরকারের কৃতিত্ব নেবার কোনো কারণ নেই। বর্তমান দেশের রাজনীতিবিদদের জীবনবৃত্তান্ত ঘাঁটলে দেখা যাবে না কেউ কখনও দেশ স্বাধীন থেকে শুরু করে কোনো ভালো কাজ করেছে। এরা সব উড়ে এসে জুড়ে বসেছে। এদেরকে আমি দেশের আবর্জনা ছাড়া অন্যভাবে দেখিনা এখন। যেহেতু আমরা প্রকৃতপক্ষে দেশের অবকাঠামো গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলছি সেহেতু আমরা ডিমান্ড করতেই পারি জনগণের কাছে অতিসত্বর দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিবিদরা যেন আত্মসমর্পণ করে। প্রশাসন কেন রাজনীতিবিদদের গোলাম সেটাও বুঝতে পারছি না! প্রশাসন তো নিজ যোগ্যতায় অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের ব্যবস্থা করেছে তারা কেন রাজনীতিবিদদের কাছে বন্দি? রাজনীতিবিদরা তো জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়নি, কেন তাদের গোলামী করতে হবে? সময় এসেছে জনগণের সঙ্গে একত্রিত হয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিবিদদের দেশ থেকে চিরতরে বিদায় করার। বাংলাকে স্বাধীন করেছি দুর্নীতিবাজদের জন্য নয়। স্বাধীন করেছিলাম বাংলাকে সোনার বাংলা করার জন্য। আমি সেই কাজটি করতে সবাইকে অনুরোধ করছি। You can only understand my devotion if you share my passion! আমি সমস্যাগুলো তুলে ধরলাম বটে তবে আমি নিজেই সেই বাঙালি জাতির একজন। কারণ অন্যায় করে লজ্জিত না হওয়াটাও কিন্তু আরেক অন্যায়। অপ্রিয় সত্যকে তুলে ধরলাম, জানি মন খারাপ হবে। তারপরও ভুলে গেলে চলবে না, ‘অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে তব ঘৃণা যেন তারে তৃণ সম দহে’। লেখক: রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন থেকে, [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App