×

প্রবাস

অন্ধকার কাটছে না মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারের

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ মার্চ ২০২২, ০৮:২৭ এএম

অন্ধকার কাটছে না মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারের

প্রতীকী ছবি

সম্ভাবনা জাগিয়েও অনিশ্চয়তায় ডুবতে বসেছে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। অনেকে আশায় বুক বাঁধলেও বাংলাদেশি কর্মী যাওয়ার কোনো আভাস মিলছে না। বাংলাদেশের একটি আপত্তি আর একটি প্রস্তাব বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই দুটি বিষয়ের সমাধান করতে বাংলাদেশ যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক ডাকার অনুরোধ করলেও মালয়েশিয়া চুপ হয়ে আছে। সিন্ডিকেট করতে মালয়েশিয়া সরকারের চিঠির জবাব না দিয়ে তা এড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ সরকার। বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকরা সেখানকার দাতো আমিন নূর ও ঢাকার রুহুল আমিন স্বপনের নেতৃত্বে সিন্ডিকেট গড়ার বিরোধিতা করে বাজার সবার জন্য উন্মুক্ত করার দাবি জানিয়ে আসছেন। এর আগেও তাদের সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগ ছিল। সিন্ডিকেট নিয়ে রশি টানাটানিতে বাংলাদেশের অন্যতম বড় এ শ্রমবাজার নিয়ে ঘোর অন্ধকার যেন কাটছে না।

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে সংকটের মধ্যে ২৭ মার্চ বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমেদ এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল মালয়েশিয়া যাচ্ছেন। সফরে দুই দেশের মন্ত্রী পর্যায়ে একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এতে বন্ধ দুয়ার খুলতে পারে বলে রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকরা মনে করছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও এমন আভাস দিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমেদ ভোরের কাগজকে জানান, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি হিসেবে তারা দুজন মালয়েশিয়া যাচ্ছেন। এ সফর শ্রমবাজার সম্পর্কিত না হলেও সেখানে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলাপ হতে পারে। তিনি বলেন, কর্মী পাঠানো নিয়ে মালয়েশিয়াকে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক ডাকতে চিঠি দেয়া হলেও তারা জবাব দেয়নি।

তিনি বলেন, কম খরচে কর্মী পাঠানোই হচ্ছে সরকারের উদ্দেশ্য। সিন্ডিকেট নিয়ে যে আলোচনা হচ্ছে, এর মধ্যে আমরা নেই। এগুলো রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকদের বিষয়।

জানা গেছে, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে দেশটির পররাষ্ট্র ও মানবসম্পদমন্ত্রী বরাবর চিঠি দেয় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। চিঠিতে মূলত রিক্রুটিং এজেন্সির সংখ্যা নিয়ে মালয়েশিয়া যে প্রস্তাব দিয়েছিল, তা সমঝোতা স্মারকের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয় বলে উল্লেখ করা হয়। বিদেশি কর্মী নিয়োগে মালয়েশিয়া সরকারের কেন্দ্রীয় অনলাইন পদ্ধতির সঙ্গে বাংলাদেশের অনলাইন পদ্ধতি যুক্ত করার প্রস্তাব দেয়া হয়। আর এ দুটি ইস্যুর সমাধানে দ্রুত যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের একটি বৈঠক আয়োজন করতে মালয়েশিয়া সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ। ১৮ ফেব্রুয়ারির সেই চিঠির পর এখন পর্যন্ত কোনো জবাব দেয়নি মালয়েশিয়ার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।

এর আগে গত ১৪ জানুয়ারি মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী এম সারাভানান বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদকে একটি চিঠি দেন। সেই চিঠিতে মালয়েশিয়া প্রস্তাব দেয়, বাংলাদেশের ২৫টি রিক্রুটিং এজেন্সির সঙ্গে আরো ২৫০টি রিক্রুটিং এজেন্সি সহযোগী হিসেবে কর্মী পাঠাতে পারবে। মালয়েশিয়ার ওই প্রস্তাবে তখনই আপত্তি জানান ইমরান আহমদ। ১৮ জানুয়ারি ফিরতি চিঠিতে আপত্তির পাশাপাশি সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী স্বয়ংক্রিয় ডিজিটাল পদ্ধতিতে রিক্রুটিং এজেন্সি বাছাইয়ের প্রস্তাব দেন ইমরান আহমদ। সেই চিঠির জবাবে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী কিছু কারণ ও ব্যাখ্যাসহ আরেকটি চিঠি দেন। মালয়েশিয়ার ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট হতে পারেনি বাংলাদেশ। ফলে নিজেদের কিছু প্রস্তাবনা দিয়ে হাইকমিশনারের মাধ্যমে আবারো চিঠি দেয় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।

বাংলাদেশের এ প্রস্তাবের জবাব না দিলেও ভারত, নেপাল ও ইন্দোনেশিয়া থেকে কর্মী নিতে বেশ আগ্রহ দেখাচ্ছে মালয়েশিয়া সরকার। এরই মধ্যে ভারতের সঙ্গে প্লান্টেশন খাতে কর্মী নেয়ার সমঝোতা স্মারক সইয়ের প্রস্তুতি হিসেবে বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে। শ্রমবাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, দ্রুত বাংলাদেশ-মালয়েশিয়ার মধ্যে চলমান মতভিন্নতা দূর না হলে চাহিদা পূরণে বিকল্প দেশ থেকে কর্মী নেয়া শুরু করতে পারে মালয়েশিয়া।

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বন্ধ হওয়ার ৪০ মাস পর গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর সমঝোতা স্মারক সইয়ের মধ্য দিয়ে আবার বাংলাদেশের জন্য কর্মী পাঠানোর সুযোগ সৃষ্টি হয়। তবে চিঠি চালাচালিতেই ঝুলে আছে কর্মীদের ভাগ্য।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App