দিনাজপুরের মধ্যপাড়ায় দেশের একমাত্র পাথরের খনিতে বিদ্যমান কূপের চেয়ে আরো বেশি পাথর তোলা যাবে এমন কূপ খননের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে; যা আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে বাঁচাবে বড় অঙ্কের বিদেশি মুদ্রা।
দীর্ঘ সময় ধরে লোকসানের পর সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মুনাফায় ফেরা এ খনি নিয়ে যে কারণে নতুন করে আশাও সৃষ্টি হয়েছে।
বর্তমানে সেখান থেকে দৈনিক পাঁচ হাজার থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার টন পাথর উত্তোলন করা যাচ্ছে। আরেকটি কূপ খনন করা গেলে দৈনিক উত্তোলনের পরিমাণ ১৬ হাজার টন ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার মধ্যপাড়া গ্রামে এক দশমিক ২০ বর্গ কিলোমিটার জায়গাজুড়ে পাথরের এই খনি। ১৭ কোটি ৪০ লাখ টন মজুদের এই খনি থেকে পাথর তোলা শুরু হয় ২০০৭ সালে। এই খনি থেকে মোট ৭ কোটি ৩০ লাখ টন পাথর উত্তোলনের সম্ভাবনার বিষয়টি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রথম এক যুগ টানা লোকসান দিয়ে আসার পর গত চার অর্থবছর ধরে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পাশাপাশি মুনাফাও করছে খনি পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়া মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি। বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে যৌথভাবে সেখান থেকে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে।
প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ গত ১০ মার্চ খনি এলাকা পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি গত ২০২১-২০২২ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি পাথর উত্তোলনের জন্য সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে মোট ৯ লাখ ৬৩ হাজার টন পাথর উত্তোলন হয়েছে।
বার্ষিক উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে যা ১২০ শতাংশ বেশি জানিয়ে মধ্যপাড়া কঠিন শিলা প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু দাউদ মুহম্মদ ফরিদুজ্জামান বলেন, শুধু ওই অর্থবছর নয়, এর আগের ২০২০-২১ অর্থবছরেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি পাথর উত্তোলন করা গেছে। কোনো কোনো দিন সাধারণ সক্ষমতার চেয়ে বেশি পাথর উত্তোলিত হয়েছে।
দীর্ঘদিন লোকসানে থাকা এ খনি গত চার-পাঁচ অর্থবছর ধরে মুনাফা করছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। মধ্যপাড়া কঠিন শিলা প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, আগে মাত্র এক শিফটে পাথর উত্তোলন চললেও এখন দিনরাত পাথর তোলার কাজ চলছে সেখানে। এতে স্থানীয় কর্মসংস্থানের পরিমাণ বেড়েছে।
পরিদর্শনকালে দেশের একমাত্র এই গ্রানাইট খনি থেকে পাথর উত্তোলন বাড়ানোর পরিকল্পনা নেয়ার কথা জানিয়ে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, আরেকটি কূপ খননের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। নতুন করে ফিল্ড তৈরি করা হবে। এখন কেবলমাত্র অনুমোদনের অপেক্ষায় আছি।
তিনি বলেন, এখন দৈনিক চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার টন পাথর উত্তোলন করা যাচ্ছে। এটা ছাড়াও দৈনিক প্রায় ১১ হাজার টন পাথর উত্তোলনের একটা সম্ভাবনা আমরা পেয়েছি। তাহলে দৈনিক গড়ে ১৬ হাজার টন পাথর উত্তোলন করা যাবে।
দেশে বছরে এক কোটি ৯০ লাখ টন পাথরের চাহিদা রয়েছে। এর বেশিরভাগই আমদানি করে আনতে হচ্ছে।
দেশি গ্রানাইট পাথর খুবই উন্নত মানের জানিয়ে নসরুল হামিদ বলেন, প্রায় ২৫ হাজার পিএসআই চাপ ধারণ ক্ষমতার সক্ষমতা আছে এই পাথরের। এর উৎপাদন দ্বিগুণ করা গেলে অনেকখানি বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করা যাবে।
কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ৯ লাখ ৬৩ হাজার টন পাথর তোলা হয়েছে। আর বিক্রি হয়েছে ১০ লাখ ৯৬ হাজার টন। এতে রাজস্ব আয় হয়েছে ২৫৩ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। ওই অর্থবছরে কর পরবর্তী মুনাফা হয়েছে ১৮ কোটি ২৬ লাখ টাকা। এর আগের তিন অর্থবছরেও গড়ে বার্ষিক ৯ লাখ টন করে পাথর উত্তোলন করা হয়েছিল।
অথচ ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে এ খনি থেকে মাত্র এক লাখ ৫৩ হাজার টন ও পরের বছর ৫৬ হাজার টন তোলা হয়। পাথর তোলায় বড় অগ্রগতি শুরু হয় এর পরের ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে; মোট উত্তোলন করা হয় সাত লাখ ৫৯ হাজার টন।
© ভোরের কাগজ 2002 – 2020
প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী । মুদ্রাকর: তারিক সুজাত
কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, তৃতীয় তলা, ৭০ শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, (নিউ সার্কুলার রোড, মালিবাগ), ঢাকা-১২১৭ ।
ফফোন: ৯৩৬০২৮৫, ৮৩৩১০৭৪ ফ্যাক্স: ৯৩৬২৭৩৪, সার্কুলেশন ও বিজ্ঞাপন : ৮৩৩১৮০৬ । ইমেইল: [email protected]