যৌন হয়রানি প্রতিরোধ
২০০৯ সালে হাইকোর্ট থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সকল সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ নীতিমালা বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেয়। দেশের প্রায় অর্ধেকের বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে হাইকোর্টের নির্দেশ অনুসরণ হচ্ছে না। নিরাপত্তা ও নির্ভরতার জায়গার অভাবে ভুক্তভোগীরা যৌন হয়রানির অভিযোগ করছে না।
মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ নীতিমালা: প্রয়োগ ও প্রতিবন্ধকতা’ বিষয়ক একটি গোলটেবিল আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। সকালে ডেইলি স্টার ভবনের আজিমুর রহমান কন্ফারেন্স হলে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। ‘কম্ব্যাটিং জেন্ডার বেইজড ভায়োলেন্স’ প্রকল্পের আওতায় ইউএন ওমেন ও গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডার সহযোগিতায় আমরাই পারি জোট এই সভার আয়োজন করে।
সভায় বক্তব্য রাখেন শিক্ষাবিদ, সমাজকর্মী ও শিশু সংগঠক প্রফেসর মাহফুজা খানম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নির্যাতন সংক্রান্ত অভিযোগ কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. জেবউননেছা, বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. শাহজাহান আলী, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সহযোগী অধ্যাপক সুজন কান্তি মালী, আমরাই পারি জোটের প্রধান নির্বাহী জিনাত আরা হক, ইউএন ওমেন বাংলাদেশ এর প্রতিনিধি তসিবা কাশেম, পটুয়াখালী সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক, সেলিনা আখতার প্রমুখ।
যৌন হয়রানি মুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়তে সকলকে মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন বিবেকবান মানুষ হওয়ার আহ্বান জানান প্রফেসর মাহফুজা খানম।
অধ্যাপক ড. জেবউননেছা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিযোগ বক্সে শুধু নারীদের অভিযোগ পেয়েছি। এখনও কোনো পুরুষের অভিযোগ পাইনি। তার মানে বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় এসেও আমরা আমাদের গতানুগতিক পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা বর্জন করতে পারছি না।
জিনাত আরা হক বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশনার মাধ্যমে যৌন হয়রানি যে একটি অপরাধ তা স্বীকৃতি পেয়েছে। কিন্তু আজও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি গঠন, অভিযোগ বক্স স্থাপন সহ বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নারী বান্ধব করতে পারেনি।
সুজন কান্তি মালী বলেন, যৌন হয়রানি প্রতিরোধে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা জরুরি। নারীদেরকে নারী না ভেবে মানুষ ভাবতে হবে। পরিবার থেকে শুরু করে সবক্ষেত্রে সচেতনতা সৃষ্টি করা জরুরি।
মো. শাহজাহান আলী বলেন, যৌন হয়রানি প্রতিরোধে আমাদের যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা এসে আমাদের প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি করছে। যৌন হয়রানি মোকাবেলায় অভিভাবক, শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী সকলকে একত্রে একই প্লাটফর্মে থেকে কাজ করতে হবে।
সেলিনা আখতার বলেন, আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে অভিযোগ কমিটি সক্রিয়। কিন্তু আমরা যৌন হয়রানির কোনো অভিযোগ পাই না। কারণ শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তা ও নির্ভরতার জায়গা পাচ্ছে না। তাই যৌন হয়রানি প্রতিরোধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি পরিবারকেও পাশে থেকে সাপোর্ট দিতে হবে।
তসিবা কাশেম বলেন, পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে অভিযোগ কমিটি গঠন এবং এর কার্যকারিতার বিষয়টি মনিটিংয়ের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে ইউএন ওমেন সহযোগিতা করছে। দেশের প্রায় অর্ধেকের বেশি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে হাইকোর্টের নির্দেশ অনুসরণ হচ্ছেনা যা অত্যন্ত দুঃখজনক।
© ভোরের কাগজ 2002 – 2020
প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী । মুদ্রাকর: তারিক সুজাত
কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, তৃতীয় তলা, ৭০ শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, (নিউ সার্কুলার রোড, মালিবাগ), ঢাকা-১২১৭ ।
ফফোন: ৯৩৬০২৮৫, ৮৩৩১০৭৪ ফ্যাক্স: ৯৩৬২৭৩৪, সার্কুলেশন ও বিজ্ঞাপন : ৮৩৩১৮০৬ । ইমেইল: [email protected]