Print

Bhorer Kagoj

ব্যাংকিং খাতে গুজব ও জবাবদিহিতা

প্রকাশিত হয়েছে: নভেম্বর ২৫, ২০২২ , ১২:৩৬ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: নভেম্বর ২৫, ২০২২, ১২:৩৬ পূর্বাহ্ণ

অনলাইন ডেস্ক

সম্প্রতি দেশের ব্যাংকিং খাত নিয়ে গুজব রটানো হচ্ছে। ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম প্রভৃতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাংকে অর্থ নেই, এমনকি দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার গুজব ছড়িয়েছে। গুজবের বড় কারণ হচ্ছে মুদ্রাস্ফীতি, তার সঙ্গে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য আকাশচুম্বীর ফলাফলে জীবনযাপনের ক্ষেত্রে একটা অনিশ্চয়তা। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ব্যাংকগুলোকে নিয়েও গুজবকারীরা তৎপর হয়ে উঠেছে। শোনা যাচ্ছে ব্যাংকে টাকা রাখা একেবারে নিরাপদ নয়, ব্যাংক আর টাকা দিতে পারবে না। কেউ কেউ ভয়ে ব্যাংক থেকে টাকাও তুলে নিচ্ছে। গুজবের মাত্রা এবং বাস্তব অবস্থা নিশ্চয়ই কিছুটা আতঙ্কিত হওয়ার মতো। সে কারণে বাংলাদেশ ব্যাংককে এ ব্যাপারে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জনগণকে আশ্বস্ত করার উদ্যোগ নিতে হয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, তেলের দাম বৃদ্ধিসহ বেশকিছু অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। যার প্রভাব পড়েছে দেশের ব্যাংকিং খাতেও। এতে সুযোগ নিচ্ছে একটি কুচক্রী মহল। নানা গুজব ছড়ানোর মাধ্যমে ওঠেপড়ে লেগেছে ব্যাংকের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতের মোট আমানত ১৪ লাখ ৮২ হাজার ৮২৯ কোটি টাকা, যা আগের মাসের চেয়ে ১১ হাজার ১৫৬ কোটি টাকা বেশি। বর্তমানে মোট তারল্যের পরিমাণ ৪ লাখ ১৫ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকা। অতিরিক্ত তারল্যের পরিমাণ ১ লাখ ৬৯ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা। ব্যাংক খাতে তারল্যের সংকট নেই। তবে ব্যাংক খাতে এক ধরনের নৈরাজ্য চলছে। করোনা ও বৈশ্বিক মন্দার নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় ব্যাংক ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তারপরও চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খেলাপি ঋণ ১ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেল কেন- এ প্রশ্নের সদুত্তর খোঁজা জরুরি। সংকট মোকাবিলায় আইএমএফের কাছে সরকারের ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় খেলাপি ঋণের নীতিতে পরিবর্তন আনার তাগিদ দিয়েছে আইএমএফ। জানা গেছে, ১১ দশমিক ৪ শতাংশ খেলাপি ঋণ নিয়ে এক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, গত ১০ বছরে দেশে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় সাড়ে চারগুণ। খেলাপি ঋণ না কমে বরং দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ার অন্যতম কারণ হলো, ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা না নেয়া। ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে বিষয়গুলোর প্রতি নজর দিতে হবে। এ খাতের এসব দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে গুজব প্রতিষ্ঠিত করছে। গুজব অনেক সময় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেও রটানো হয়। স্বার্থান্বেষী মহল নিজের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য গুজব রটিয়ে ফায়দা লোটার চেষ্টা করে। আবার মানুষের অজ্ঞতা, অন্ধবিশ্বাস, গোড়ামি ইত্যাদি গুজব ছড়াতে সহায়তা করে। যে সমাজের মানুষের মধ্যে সঠিক জিনিসটি উপলব্ধির ক্ষমতা কম সে সমাজে গুজব তত দ্রুত রটে বা ছড়ায়। বিশেষ করে গুজব বর্তমানে দেশের অর্থনীতিকে, বিশেষ করে ব্যাংকের প্রতি মানুষের যে অনাস্থা তৈরি করেছে তার একটা দ্রুত সমাধান প্রয়োজন। যেহেতু অনলাইনে এই ধরনের ঘটনা ঘটছে বেশি তাদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা দরকার। আমাদেরও সচেতন হওয়া জরুরি।

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

© ভোরের কাগজ 2002 – 2020

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী । মুদ্রাকর: তারিক সুজাত

কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, তৃতীয় তলা, ৭০ শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, (নিউ সার্কুলার রোড, মালিবাগ), ঢাকা-১২১৭ ।
ফফোন: ৯৩৬০২৮৫, ৮৩৩১০৭৪ ফ্যাক্স: ৯৩৬২৭৩৪, সার্কুলেশন ও বিজ্ঞাপন : ৮৩৩১৮০৬ । ইমেইল: [email protected]