Print

Bhorer Kagoj

মুগ্ধতা ছড়াল ৩ মিনিটের চলচ্চিত্র

প্রকাশিত হয়েছে: জুন ৩, ২০২২ , ১১:১০ অপরাহ্ণ | আপডেট: জুন ৩, ২০২২, ১১:১৯ অপরাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক

১৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১। ইরতাজ উদ্দীন সাহেব বঙ্কিমের ‘বিষবৃক্ষ’ পড়ছিলেন। এমন সময় দরজায় শব্দ। ছিটকিনি খুলতেই তিনি দেখলেন মাঝবয়সী কাল গোঁফওয়ালা গড়নের একজন, নাম সালাউদ্দিন। ইরতাজ উদ্দিন সাহেবের বয়স হয়েছে। তাই চিনতে পারছিলেন না। তবে এতটুকু বুঝতে পেরেছেন ছেলেটি তার ছাত্র ছিল। ইরতাজ উদ্দীন সাহেব করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিটা ছেড়ে দিয়েছেন। যুদ্ধের সময় পাকিস্তানের সঙ্গে আপোষ করে ঐখানে চাকরি করা যায় না। দমটা বন্ধ হয়ে আসছিল। কাজেই দেশ মাতৃকার টানে তিনি দেশে ফিরে এসেছেন।

একজন পাকিস্তানি মিলিটারি সালাউদ্দিনকে পাঠিয়েছে। তিনি ইরতাজ উদ্দিনের সঙ্গে দেখা করতে চান। একটু অবাক ইরতাজ উদ্দিন। একটু হাসিমুখে সালাউদ্দিন বলল- ‘সমস্যা নেই স্যার, আসলে হয়েছে কি স্যার, সেও আমার মতই করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিল।’ পরের দিন ১৪ই ডিসেম্বর ১৯৭১, সালাউদ্দিন ইরতাজ উদ্দিন সাহেবকে নিয়ে পুরনো জমিদার বাড়ির পেছনের বাগান বাড়িতে যায়। সেখানে গ্রামের আলবদর বাহিনীর প্রধান জহিরুল চৌধুরী চোখ বাধা অবস্থায় থাকা ইরতাজ সাহেবকে ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ বলতে বলে। কিন্তু হাসতে হাসতে ইরতাজ উদ্দীন সাহেব বলেন, জয় বাংলা।

এমনই শ্বাসরুদ্ধকর এবং হৃদয়স্পর্শী ঘটনাটি মাত্র ৩ মিনিটে চিত্রায়িত করেছেন তরুণ চলচ্চিত্রকার মো. মুক্তাদির করিম কুয়াশা তার ‘নিরাসক্তি’ শিরোনামের চলচ্চিত্রে।

এমন ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ের উপর নির্মিত ৩ মিনিটের ৬৪টি চলচ্চিত্র প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যায় দর্শকের মুগ্ধতা আদায় করে নিল ৬৪ জন তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতা।

শুক্রবার (৩ জুন) বিকেলে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে শিল্পকলা একাডেমি আয়োজন করে ‘৩ মিনিটের চলচ্চিত্র প্রতিযোগিতা ও উৎসব ২০২২’।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে উৎসবটির উদ্বোধন করলেন সংস্কৃতি সচিব মো. আবুল মনসুর। একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ শর্ট ফিল্ম ফোরামের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল হাসান। আরো উপস্থিত ছিলেন উৎসবের জুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও চলচ্চিত্র নির্মাতা মানজারে হাসীন মুরাদ এবং চলচ্চিত্র অভিনেতা ফেরদৌস আহমেদ।

সন্ধ্যায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে প্রতিযোগীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে. এম. খালিদ। স্বাগত বক্তব্য দেন একাডেমির সচিব মো. আছাদুজ্জামান।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি কে এম খালিদ বলেন, শিল্প সংস্কৃতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি মাধ্যম চলচ্চিত্র। এর সঙ্গে ওতোপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকে সংস্কৃতির নানা উপাদান এবং একটি দেশের সংস্কৃতির নানা বিষয় প্রতিনিধিত্ব করে চলচ্চিত্র। শিল্পকলার শক্তিশালী বিনোদন মাধ্যম এবং শিক্ষার অন্যতম সেরা উপকরণ হিসেবে খ্যাতি রয়েছে চলচ্চিত্রের। ছবির সঙ্গে ভিজ্যুয়াল দৃশ্যের সম্বয় থাকায় সাধারন মানুষ সহজেই তাতে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে। অন্য কোনো শিল্প মাধ্যম সাধারনের সঙ্গে এতোটা যোগাযোগ স্থাপনে সক্ষম নয়।

মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়নে বর্তমানে নানামুখি উদ্যোগ নিয়েছেন। চলচ্চিত্রকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে, বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র নির্মাণে নানাভাবে সহযোগীতা করা হচ্ছে।

অনুষ্ঠানের উদ্বোধক মো. আবুল মনসুর বলেন, চলচ্চিত্র একটি শক্তিশালী মাধ্যম। যার মাধ্যমে মানুষের কাছাকাছি যাওয়া যায়। যেখানে জীবনবোধ আর জীবনের গল্প গতিময় হয়ে ফুটে ওঠে। সাধারন দর্শকদের মধ্যে শৈল্পিক চেতনা সৃষ্টির মাধ্যমে সামাজিক উন্নয়নে বিরাট ভূমিকা পালন করছে। তিনি বলেন, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে এবং বিভিন্ন ক্রান্তিলগ্নে চলচ্চিত্র জাতিকে নানাভাবে উদ্দীপ্ত করেছে। তবে সামগ্রিক অর্থে প্রযুক্তির সঙ্গে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে হবে। প্রযুক্তি আমাদের সেদিকেই ধাবিত করছে।

উৎসবে শিশু বিভাগে ৩টি, যুব বিভাগে ৫টি ও উন্মুক্ত ৫টি করে তিনটি বিভাগে মোট ১৩টি পুরস্কার প্রদান করা হয়। প্রথম পুরস্কার ৫০ হাজার, দ্বিতীয় পুরস্কার ৪০ হাজার ও তৃতীয় পুরস্কার ৩০ হাজার টাকা এবং যুব ও উন্মুক্ত বিভাগে ২টি করে মোট ৪টি জুরি পুরস্কার প্রদান করা হয়। যার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ হাজার টাকা। পুরস্কার বিতরনী অনুষ্ঠানের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশন করে শিল্পীরা।

লিয়াকত আলী লাকীর ভাবনা ও পরিকল্পনায় একাডেমির নৃত্যশিল্পীরা ভুপেন হাজারিকার ‘মঙ্গল হোক এই শতকে’ শিরোনামে গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করে। স্নাতা শাহরীন পরিচালিত ও একাডেমির নৃত্যশিল্পীবৃন্দের পরিবেশনায় ‘শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা’ শিরোনামে নৃত্য পরিবেশন করা হয়। নৃত্যটির ভাবনা ও পরিকল্পনায় ছিলেন লিয়াকত আলী লাকী।

পুরস্কারপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রগুলো হলো- শিশু বিভাগে প্রথম পুরস্কার পেয়েছে সৈয়দা আবরার তোয়াহা দ্রাহার ‘হেল্প’, দ্বিতীয় পুরস্কার পেয়েছে অপরাজিতা পারিনের ‘রিক্ত’, তৃতীয় পুরস্কার পেয়েছে মো. ফারহানুর ইমতিয়াজের ‘কেউ দায়ী নয়’। যুব বিভাগে প্রথম পুরস্কার পেয়েছে সুব্রত কুমার মুন্ডার কপোতাক্ষের গান’, দ্বিতীয় পুরস্কার পেয়েছে শরিফুল আবির ‘কালাচোর’ ও তৃতীয় পুরস্কার পেয়েছে প্রাণ কৃষ্ণ বনিকের ‘এ. ফোবিয়া’। জুরি পুরস্কার পেয়েছে নাশিবা সামারাতের ‘কেইস ১৯১১৯’, কনোজ কান্তি রায়ের ‘অমৃতের পুত্র’, জগন্ময় পালের ‘রকি দ্যা সী কীড’, মো. জহুরুল ইসলাম পুলক রাজের ‘ললাট’। উন্মুক্ত বিভাগে প্রথম পুরস্কার অর্জন করেছে মনির হোসাইনের ‘হিসাব বিজ্ঞান’, দ্বিতীয় পুরস্কার পেয়েছে জায়েদ সিদ্দিকীর ‘ইন এক্সপিডিশন টু হ্যাপিনেস’, তৃতীয় পুরস্কার পেয়েছে মো. আবিদ মল্লিকের ‘গায়েব’, এছাড়া ৫টি জুরি পুরস্কার প্রদান করা হয়। প্রায় ২০০টি জমাকৃত চলচ্চিত্র থেকে বাছাইকৃত ৬৪টি চলচ্চিত্র নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় এই উৎসবের প্রতিযোগিতা।

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

© ভোরের কাগজ 2002 – 2020

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী । মুদ্রাকর: তারিক সুজাত

কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, তৃতীয় তলা, ৭০ শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, (নিউ সার্কুলার রোড, মালিবাগ), ঢাকা-১২১৭ ।
ফফোন: ৯৩৬০২৮৫, ৮৩৩১০৭৪ ফ্যাক্স: ৯৩৬২৭৩৪, সার্কুলেশন ও বিজ্ঞাপন : ৮৩৩১৮০৬ । ইমেইল: [email protected]