Print

Bhorer Kagoj

মানহীন ক্লিনিক বন্ধে স্বাস্থ্য বিভাগ ‘এবার কঠোর’

প্রকাশিত হয়েছে: মে ২৮, ২০২২ , ৮:২৭ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: মে ২৮, ২০২২, ৮:২৮ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক

অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে সরকার মাঝে মধ্যেই জোরেশোরে মাঠে নামার ঘোষণা দেয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকও বেশ কয়েকবারই বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকের সেবার নির্দিষ্ট মানদণ্ড নির্ধারণের পর মানহীন ক্লিনিক বন্ধ করে দেয়া হবে বলে সতর্ক করেন। কিন্তু এখনো দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য অনিবন্ধিত হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারই বলে দেয় এই ঘোষণা বা নির্দেশনা কতটা কার্যকর হয়েছে। যদিও স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, এটি তাদের চলমান কার্যক্রমের অংশ। এরই ধারাবাহিকতায় ২৬ মে সারাদেশের সব অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বন্ধ করার নির্দেশ দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। জানানো হয় এই সময়ের পর নিবন্ধনহীন কোনো হাসপাতাল, ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালু থাকলে আইনিব্যবস্থা নেয়া হবে। বেঁধে দেয়া ৭২ ঘণ্টা শেষ হচ্ছে আজ শনিবার। স্বাস্থ্য বিভাগের এই নির্দেশনা কতটা কার্যকরী হবে তা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে এবার তারা কঠোর অবস্থানেই আছে।

এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির ভোরের কাগজকে বলেন, এবারের বার্তাটি যে আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে ভিন্ন তা আশা করি অনেকের কাছেই স্পষ্ট হয়েছে। এর আগে সময় বেঁধে দেয়া হয়নি। আমরা এবার কিন্তু তাদের ৭২ ঘণ্টা সময় দিয়েছি। আমাদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখে নিশ্চয়ই বোঝা যাচ্ছে এটি ‘নন কম্প্রোমাইজ’ (আপসহীন)। বেঁধে দেয়া নির্ধারিত সময় আজ শনিবার শেষ হচ্ছে। আজ আমরা আবারো বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালের মনিটরিং এবং সুপারভিশন নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠকে বসব। কাজের অগ্রগতি কতটা হয়েছে সে বিষয়টি জানার পরেই পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর কতটি হাসপাতাল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে আমরা চিহ্নিত করতে পেরেছি, কতটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পেরেছি বা বন্ধ করতে পেরেছে- এই বিষয়গুলো আগামীকাল রবিবার আমরা সাংবাদিকদের জানাব।

জানা যায়, ২০১৮ সালের নভেম্বর থেকে অনলাইন পদ্ধতিতে বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নিবন্ধন প্রক্রিয়া চালু হয়। নিয়ম অনুযায়ী সব বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার তাদের প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন অনলাইনে বাধ্যতামূলক। কোনো একটি শর্ত পূরণ না করতে পারলে অনলাইনে নিবন্ধন হয় না। আর তাই নবায়নও হয় না।

প্রতিষ্ঠানগুলোর নিবন্ধনে অনাগ্রহের কারণ কী- এ সম্পর্কে জানা যায়, লাইসেন্স নবায়নের ফি ৫ হাজার টাকার পরিবর্তে যখন ৫০ হাজার টাকা করা হলো : তখন থেকেই লাইসেন্সবিহীন হাসপাতাল ও ক্লিনিকের সংখ্যা বাড়তে থাকে। কারণ বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের মধ্যে অধিকাংশই ছোট। যাদের অনেকেই সব খরচ মিটিয়ে আয় করতে পারে না। তাদের পক্ষে ৫০ হাজার টাকা ফি দিয়ে লাইসেন্স নবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া অনলাইনে নিবন্ধন ও নবায়ন করার ক্ষেত্রে যেসব শর্ত দেয়া আছে পূরণ করতে পারে না অনেক হাসপাতাল। তথ্যগুলো নির্দিষ্ট ফরমেটে পূরণ করতে হয়। কোনো তথ্য বাদ থাকলে সফটওয়্যার তা নেয় না। এমন আরো কিছু কারিগরি ঘাটতির কারণে অনেকেই ওই ফরমেট পূরণ করতে পারে না। তাছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে আবাসিক এলাকায় বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক না রাখার যে নির্দেশনা আছে- সেটিও নবায়নের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ অনেক হাসপাতাল ও ক্লিনিক এখনো আবাসিক এলাকায় রয়ে গেছে। ফরম পূরণের ক্ষেত্রে ঠিকানার জায়গায় গিয়ে অনেকে আটকে যাচ্ছে। ফলে তারাও নিবন্ধন বা নবায়ন এড়িয়ে যাচ্ছে।

নিবন্ধন প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির বলেন, এটি হচ্ছে তাদের একটি অজুহাত। লাইসেন্স পেতে যাদের সমস্যা হবে তাদের বিড়ম্বনা বা অসুবিধার কথা বিবেচনায় নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে একটি ওয়ানস্টপ সেন্টার করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। লাইসেন্স পেতে যাদের অসুবিধা হবে তারা আমার সঙ্গে কিংবা ওয়ানস্টপ সেন্টারে যোগাযোগ করতে পারবে।

তিনি বলেন, আমাদের ১৬ হাজার বেসরকারি হাসপাতালের মধ্যে ১১ হাজারের নিবন্ধন আছে। ৩ হাজার প্রতিষ্ঠান ত্রুটিপূর্ণ কাগজপত্র দিয়ে রেখেছে। যারা ঠিকমতো কাগজপত্রই উপস্থাপন করতে পারে না, তারা কীভাবে নিবন্ধন পাবে? বাকি থাকছে আরো ২ হাজার। এই দুই হাজারের মধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠানের পরিদর্শন হয়ে গেছে, কয়েকটির পরিদর্শন ও লাইসেন্স হওয়ার পথে রয়েছে। আবেদন করার পরপরই কেউ লাইসেন্স পেয়ে যায় না। এর জন্য নির্দিষ্ট সময় ও প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যে সব প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন হবে না, তাদের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর অবস্থানে আছি। লাইসেন্স না থাকলে কাজ হবে না। ওই প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হবে। এটাই শেষ কথা।

জানা যায়, অধিদপ্তর থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স দেয়া হলেও সেটি বাতিলের ক্ষমতা মন্ত্রণালয়ের। শর্ত পূরণ না করলে অধিদপ্তর থেকে লাইসেন্স দেয়া হয় না। আর লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ করলে তাদের কারণ দর্শানোর নোটিস পাঠানো হয়। লাইসেন্স বাতিলসহ নানা শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সুপারিশ করে অধিদপ্তর। লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ করলে বা নবায়ন না করলে লাইসেন্স বাতিল করার বিধান থাকলেও অধিদপ্তর লাইসেন্স বাতিল করতে পারে না। পারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। অধিদপ্তর মৌখিক এবং লিখিতভাবে তাদের সতর্ক করতে পারে। ১৫ দিন সময় দিয়ে হাসপাতাল সাময়িক বন্ধের জন্য নোটিস দিতে পারে। মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে শাস্তি দিতে পারে।

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

© ভোরের কাগজ 2002 – 2020

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী । মুদ্রাকর: তারিক সুজাত

কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, তৃতীয় তলা, ৭০ শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, (নিউ সার্কুলার রোড, মালিবাগ), ঢাকা-১২১৭ ।
ফফোন: ৯৩৬০২৮৫, ৮৩৩১০৭৪ ফ্যাক্স: ৯৩৬২৭৩৪, সার্কুলেশন ও বিজ্ঞাপন : ৮৩৩১৮০৬ । ইমেইল: [email protected]