Print

Bhorer Kagoj

মমতাকে সাহিত্য পুরস্কার কেন, প্রতিবাদে সরব পশ্চিমবঙ্গের লেখকরা

প্রকাশিত হয়েছে: মে ১০, ২০২২ , ১০:৩৯ অপরাহ্ণ | আপডেট: মে ১০, ২০২২, ১০:৩৯ অপরাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিশেষ সম্মান দিয়েছে বাংলা আকাদেমি। তারই প্রতিবাদে ২০১৯ সালে পাওয়া অন্নদাশঙ্কর স্মারক সম্মান ফিরিয়ে দিলেন লেখিকা এবং গবেষক রত্না রশিদ বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০০৯ সালে তিনি বাংলা আকাদেমি পুরস্কারও পেয়েছিলেন। তবে শুধু ২০১৯ সালের স্মারক সম্মানই ফিরিয়ে দেয়ার কথা জানিছেন রত্না।

পাশাপাশি, একই কারণে সাহিত্য অকাদেমির বাংলা উপদেষ্টা পরিষদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন লেখক এবং সম্পাদক অনাদিরঞ্জন বিশ্বাস। বিবৃতি প্রকাশ করে অনাদি জানিয়েছেন, কলকাতায় রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীর দিন কবিতাকে যেভাবে অসম্মান করা হয়েছে, তাতে তিনি ‘বিরক্ত’। সেই কারণেই তিনি ইস্তফা দিয়েছেন। খবর আনন্দবাজার পত্রিকার।

সোমবার বিকেলে পঁচিশে বৈশাখ উদযাপনের সরকারি মঞ্চ থেকে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী এবং পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমির সভাপতি ব্রাত্য বসু একটি বিশেষ পুরস্কারের কথা ঘোষণা করেন। তিনি জানান, শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিকদের মতামত নিয়ে এই পুরস্কার এ বছর দেয়া হবে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। প্রতি তিন বছর অন্তর ওই পুরস্কার দেয়া হবে বলেও জানিয়েছিলেন ব্রাত্য। মঞ্চে সেই সময় মমতা থাকলেও তার হয়ে ওই পুরস্কার নিতে দেখা যায় বাংলা আকাদেমির সভাপতি ব্রাত্যকেই। এরপর বিভিন্ন মহলে আলোচনার কেন্দ্রে উঠে আসে মমতার এই পুরস্কার প্রাপ্তির ঘটনা। মঙ্গলবার বিকেলে জানা যায় রত্না এবং অনাদি, দুইজনেই এই পুরস্কার প্রাপ্তির প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

মঙ্গলবার রত্না জানিয়েছেন, যেভাবে বাংলা আকাদেমি এই পুরস্কার ঘোষণা করেছে তার একটা প্রতিবাদ দরকার। তিনি বলেন, তিনি একজন মান্যগণ্য মানুষ। তিনি আমাদের সবার ভোটে জিতে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। তার কাছ থেকে পরিপক্ব সিদ্ধান্ত আশা করি। বইয়ের তো একটা স্ট্যান্ডার্ড (মান) থাকতে হবে। পুরস্কার দিলেই তিনি নিয়ে নেবেন কেন!

অন্যদিকে, আন্দামান থেকে অনাদি জানিয়েছেন, রবীন্দ্রনাথের জন্মদিনে বাংলা কবিতাকেই অসম্মান করেছে কলকাতা। তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকে রবীন্দ্রনাথকে বুকের মাঝে রেখেছি। তার কবিতা আমার কাছে দুর্মূল্য। সেই কবির জন্মদিনে যদি এমন পুরস্কার দেওয়া হয় কবিতার নাম করে, তা হলে তা সামগ্রিকভাবে কবিতাকেই অসম্মান করে। তারই প্রতিবাদে আমি সাহিত্য অকাদেমির বাংলা উপদেষ্টা পরিষদ থেকে ইস্তফা দিয়েছি।

মুসলিম বিয়ের গানসহ নানা বিষয়ে গবেষণা রয়েছে রত্নার। অজস্র প্রবন্ধ এবং গল্প লিখেছেন। তার ঝুলিতে রয়েছে তিরিশটি পুরস্কার। তার মধ্যে ২০১৯ সালে পাওয়া অন্নদাশঙ্কর স্মারক সম্মান ফিরিয়ে দিচ্ছেন তিনি। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এই পুরস্কারের গরিমা রক্ষিত হয়নি। সাহিত্য সাধনার বিষয়। আমার এই সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়।

অনাদিও বলছেন, তার এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই। তিনি বলেন, আমি বেশ কিছু দিন ধরে দেখছি, বাংলা সাহিত্য কেমন ভাবে যেন রাজনীতির কবলে পড়ে গিয়েছে। এ বছর একটি নাটকের বই সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার পেয়েছে। সাহিত্য অকাদেমি তো নাটকের বইকে পুরস্কার দেওয়ার জন্য নয়। তার জন্য তো সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি রয়েছে।

প্রসঙ্গত, অনাদি যে বইয়ের কথা বলছেন সেই ‘মীরজাফর ও অন্যান্য নাটক’-এর লেখক ব্রাত্য বসু। সেই বইকেই সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার দেওয়া হয়। ব্রাত্যের নাম না করে অনাদি বলেন, সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার যে বইকে দেওয়া হয়েছিল, সেটি প্রাথমিক তালিকায় ছিল না। পরে জুড়ে যায়। কী ভাবে, তা আমি সদস্য হয়েও জানতে পারিনি। অনাদির কথায়, যিনি সেই পুরস্কার পেয়েছিলেন, সেই লেখকই বাংলা আকাদেমির সভাপতি হিসাবে কাল কবিতার অসম্মান করেছেন।

রত্না বা অনাদি, দুইজনের কেউই নিজেদের এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবেন না বলেই জানিয়েছেন। রত্নার কথায়, সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসব বলে তো আর প্রতিবাদ জানাইনি। অন্যদিকে, অনাদি বলছেন, প্রতিবাদ তো প্রতিবাদই। এমন ধরনের অন্যায়ের প্রতিবাদ করে এসেছি। করছি। ভবিষ্যতেও করবো।

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

© ভোরের কাগজ 2002 – 2020

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী । মুদ্রাকর: তারিক সুজাত

কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, তৃতীয় তলা, ৭০ শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, (নিউ সার্কুলার রোড, মালিবাগ), ঢাকা-১২১৭ ।
ফফোন: ৯৩৬০২৮৫, ৮৩৩১০৭৪ ফ্যাক্স: ৯৩৬২৭৩৪, সার্কুলেশন ও বিজ্ঞাপন : ৮৩৩১৮০৬ । ইমেইল: [email protected]