Print

Bhorer Kagoj

হাইকোর্টের আদেশে শপথ নিতে পারেননি গেজেটভুক্ত চেয়ারম্যান

প্রকাশিত হয়েছে: জানুয়ারি ৬, ২০২২ , ১১:৪৯ অপরাহ্ণ | আপডেট: জানুয়ারি ৭, ২০২২, ১২:২৩ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক

হাইকোর্টের আদেশে শপথ নিতে পারেননি কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ইউপির নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান সিরাজ মণ্ডল। ওই ইউনিয়নে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নির্বাচনী ফলাফলের বিপক্ষে হাইকোর্টে রিট করায় নির্বাচন কমিশনের গেজেটভুক্ত এই চেয়ারম্যানের শপথ স্থগিত করা হয়। এর ফলে বৃহস্পতিবার (৬ জানুয়ারি) সিরাজ মণ্ডল ছাড়া উপজেলার অপর ১৩ ইউনিয়নের নির্বাচিত চেয়ারম্যানরা কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে শপথ গ্রহণ করেন।

গত ২৮ নভেম্বর তৃতীয় ধাপে দৌলতপুর উপজেলার ১৪ ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের চারটি, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) ৯টি এবং স্বতন্ত্র হয়ে অংশ নেয়া বিএনপি একটিতে জয়লাভ করে। এদের মধ্যে রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের নির্বাচনে ফলাফলের বিপক্ষে হাইকোর্টে রিট পিটিশন করেন চেয়ারম্যান সিরাজ মণ্ডলের প্রতিদ্বন্দ্বী জাসদ মনোনীত মশাল প্রতীকের প্রার্থী আজিজুল হক। তার রিট পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৩ ডিসেম্বর হাইকোর্টের এক আদেশে নির্বাচন কমিশন থেকে গেজেটভুক্ত হওয়া চেয়ারম্যান সিরাজ মণ্ডলের শপথগ্রহণ স্থগিত করা হয়।

পিটিশনের আওতায় পড়া রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান সিরাজ মণ্ডল সাত হাজার ৯৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাসদের আজিজুল হক মশাল প্রতীকে পান ছয় হাজার ৮২৬ ভোট। তাদের ভোটের ব্যবধান দাঁড়ায় ২৬৮। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মেম্বার জানান, সেখানকার একটি ওয়ার্ডের ভোটার সংখ্যা দুই হাজার ৪০০। কিন্তু সেখানে ভোট পোলিং দেখানো হয়েছে দুই হাজার ছয় শতাধিক। ফলাফলে আপত্তি জানানো তিনটি ওয়ার্ডেই কমবেশি ঘাপলা বা অমাঞ্জস্য রয়েছে বলে তিনি জানান। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের রিটার্নিং অফিসার খন্দকার শহিদুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

রিটে রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ১, ৭ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে ভোটের ফলাফলের বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে ওই তিনটি ওয়ার্ডের ভোট পুনর্গণনার জন্য আবেদন করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশনের বিচারপতি মামুনন রহমান ও খন্দকার দেলোয়ারুজ্জামানের বেঞ্চ বিষয়টি আমলে নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে সিরাজ মণ্ডলকে গেজেটভুক্ত না করার আদেশ দেন। কিন্ত হাইকোর্টের সেই আদেশের কপি নির্বাচন কমিশনে পৌঁছাতে বিলম্ব হওয়ায় আদেশ জারির পাঁচদিনের মাথায় গত ১৮ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনের প্রকাশিত গেজেটে সিরাজ মণ্ডলের নামও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পরে হাইকোর্ট ডিভিশনের আদেশের (রিট পিটিশন নং ১১৯০৭, তারিখ ১৩/১২/২০২১) পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজ মণ্ডলের শপথ স্থগিত করেন।

এদিকে বৃহস্পতিবার বেলা ১২টায় কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে দৌলতপুর উপজেলার ১৪ ইউনিয়নের মধ্যে ১৩ ইউপি চেয়ারম্যানের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। জেলা প্রশাসক মো. সাইদুল ইসলাম নবনির্বাচিত এই চেয়ারম্যানদের শপথবাক্য পাঠ করান। অন্যদিকে শপথগ্রহণ থেকে বঞ্চিত হওয়া রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজ মণ্ডল তার নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার রেজাল্টশিট অনুযায়ী হাইকোর্টে আপিল আবেদন করেছেন বলে জানা যায়। তবে ঢাকায় অবস্থান করায় দ্বিতীয়বারের চেয়ারম্যান সিরাজ মণ্ডলের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আব্দুল জব্বারের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, একটি জরুরি কাজে বাইরে আছি এবং ব্যস্ত আছি। হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশনের আদেশে রামকৃষ্ণপুরের চেয়ারম্যান সিরাজ মণ্ডলের শপথ স্থগিত করা হয়েছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে নির্বাচন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করার কথা বলেন ইউএনও।

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা গোলাম আজম জানান, নির্বাচন কমিশন কারো আদেশ-নির্দেশের অপেক্ষায় বসে থাকে না। কমিশন তার নিজস্ব গতিতে কাজ করে। সুতরাং আদালতের আদেশের কপি কমিশনে পৌঁছাতে বিলম্বিত হওয়ায় এরই মধ্যে গেজেটের কাজ সম্পন্ন হয়ে গেছে। যদিও নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুসারে আদালতে বিচারাধীন কোনো বিষয়ে কমিশনের হস্তক্ষেপ করার সুযোগ নেই। তবে আগামি ১৮ জানুয়ারির মধ্যে চেয়ারম্যান সিরাজ মণ্ডলের পক্ষে আপিল নিষ্পত্তি হয়ে গেলে তার শপথ গ্রহণে কোনো বাধা থাকবে না। ভোট পুনর্গণনা করা হবে কিনা আদালতের আদেশে কমিশন সেটা বাস্তবায়ন করবে। এক্ষেত্রে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ করার সুযোগ নেই বলে জানান এই নির্বাচন কর্মকর্তা।

গত ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দৌলতপুর উপজেলার ১৪ ইউনিয়নেই আওয়ামী লীগের বর্তমান চেয়ারম্যানরা পুনরায় মনোনয়ন পান। পাঁচ বছরে তাদের অনেকেই নানা কারণে বিতর্কিত হয়ে পড়ায় তারা নিজ দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের কাছে পরাজিত হন। বর্তমান চেয়ারম্যানদের মধ্যে ১০ জনই ব্যাপক ভরাডুবির শিকার হন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চারজন জয়ী হলেও তাদের মধ্যে আবার একজনের (সিরাজ মণ্ডল) বিপক্ষে রিট পিটিশন করায় হাইকোর্টের আদেশে তারও শপথগ্রহণ আটকে গেল। এ ঘটনা নিয়ে পুরো উপজেলাজুড়ে আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। এর আগে গত ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের দিনে জাতীয় ও দলীয় পতাকার সঙ্গে কালো পতাকা উত্তোলন করে ব্যাপক সমালোচিত হন চেয়ারম্যান সিরাজ মণ্ডল।

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

© ভোরের কাগজ 2002 – 2020

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী । মুদ্রাকর: তারিক সুজাত

কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, তৃতীয় তলা, ৭০ শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, (নিউ সার্কুলার রোড, মালিবাগ), ঢাকা-১২১৭ ।
ফফোন: ৯৩৬০২৮৫, ৮৩৩১০৭৪ ফ্যাক্স: ৯৩৬২৭৩৪, সার্কুলেশন ও বিজ্ঞাপন : ৮৩৩১৮০৬ । ইমেইল: [email protected]