চলতি বছর ১৪ অক্টোবর থেকে ৯ নভেম্বর ২২ দিন ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে সারাদেশের ৩৬ জেলায় জাল ফেলা, মা ইলিশ শিকার, ক্রয়-বিক্রয়, পরিবহন, মজুত ও বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৯ জেলার নদ-নদী ও এর মোহনায় ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরা ও বরফ কল বন্ধ থাকবে। বাকি ১৭ জেলায় শুধু ইলিশ ধরা বন্ধ রাখা হয়েছে। ইলিশ সংরক্ষণের আওতায় ইলিশ প্রজননক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত মনপুরা, ঢালচর, বালিরচর, মৌলভীরচর পয়েন্ট ছাড়াও চট্টগ্রাম, ভোলা, লক্ষীপুর, নোয়াখালী, চাঁদপুর, পটুয়াখালী ও বরগুনা মিলিয়ে প্রায় ৭ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকায় ইলিশ ধরা নিষিদ্ধে আইন জারি থাকে। ইলিশের ডিম পাড়ার মৌসুম পেরিয়ে যাওয়ার পরও ছোট ইলিশ বেড়ে ওঠার কিছু সময় অবশিষ্ট রয়ে যায়। তাই বেশি সময় ধরে জাটকা মাছ ধরা বন্ধ থাকলে ইলিশ দ্রুত বেড়ে ওঠার সুযোগ পায়। মা ইলিশ রক্ষা করা গেলে ওরা ডিম পাড়ার সুযোগ পায় এবং এই ডিম নিষিক্ত হয়ে জাটকার জন্ম হয়, যা পরবর্তী সময়ে বড় ইলিশে রূপ নেয়। একটা মা ইলিশ চার থেকে পাঁচ লাখ ডিম ছাড়ে। পরিসংখ্যানে জানা যায়, শুধু ২০১৯ সালে কমপক্ষে ৭ লাখ ৪০ হাজার কেজি ইলিশের ডিম ছাড়া হয়েছে। গবেষণা বলছে, ডিমের অর্ধেক যদি নিষিক্ত হয় এবং তার মধ্যে ১০ শতাংশ যদি বেঁচে থাকে তবে ৩৭ হাজার কোটি পোনা ইলিশ পাওয়া যায়।
২০০৮ সালে প্রথম আশ্বিনের পূর্ণিমার আগে ও পরে মিলিয়ে ১১ দিনের ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়। তখন লক্ষ করা যায়, শুধু পূর্ণিমায় নয়, এই সময়ের অমাবস্যাতেও ইলিশ ডিম ছাড়ে। পরবর্তীকালে পূর্ণিমা ও অমাবস্যা মিলিয়ে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা জারি হতে থাকে। ২০১৪-১৫ সাল থেকেই ইলিশের উৎপাদন ক্রমেই বাড়তে থাকে। ২০১৯ সালে ৫ লাখ ৩৩ হাজার টন উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ইলিশ উৎপাদিত হওয়ার নজির রয়েছে। ইলিশ মাছ ডিম ছাড়ার পর জাটকা বড় হয়ে আবার সাগবে ফিরে যায়। পরে সেগুলো বড় হলে ডিম ছাড়ার জন্য আবার নদীতে চলে আসে। ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকাকালীন জাটকা ও মা ইলিশ নিধন পুরোপুরি বন্ধ থাকে না। পদ্মা-মেঘনা নদীর বিভিন্ন স্থানে আইন উপেক্ষা করে এক শ্রেণির জেলে কখনো প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে অথবা আঁতাত করে জাল ফেলে মা ইলিশ শিকার করে। এ ব্যাপারে জেলেদের বারবার সচেতন করে তোলা হলেও জাটকা ধরা বন্ধ হয় না। দরিদ্র মৎস্যজীবীদের দণ্ড দিয়ে মাছ ধরা বন্ধ করাও কঠিন। ইলিশ ধরা নিষিদ্ধকালীন যেহেতু জেলেরা বেকার হয়ে পড়ে, তাই পেটের দায়ে অনেক সময় জেলেরা মা ইলিশ শিকারে বাধ্য হয়। আপৎকালীন সময়ে দক্ষিণাঞ্চলের মোট ২ লাখ ৮২ হাজার গরিব বেকার ও প্রান্তিক জেলে পরিবারকে প্রতি মাসে ২০ কেজি হারে চাল সহায়তা দেয়া হচ্ছে। গত বছর ইলিশের উৎপাদন ৩ লাখ ৪১ হাজার টন উৎপাদন হলেও এবার ৩ লাখ ৬০ হাজার টনে উন্নীত করায় তৎপর রয়েছে।
ইলিশের প্রজননকালে মা মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মৎস্য অধিদপ্তর। কিন্তু জেলেদের মাঝে ত্রাণ বিতরণের দায়িত্ব ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের। এই দুই মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে জেলেদের স্বার্থ রক্ষায় কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধিদের সক্রিয় ভ‚মিকা রাখতে হবে। জাটকা নিধনের নেতিবাচক দিকগুলো ভোক্তাদের বৃহৎ পরিসরে ছড়িয়ে দিয়ে ইলিশসম্পদ রক্ষায় সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। ইলিশ আহরণকারী, ব্যবসায়ী ও ভোক্তার সংযমী ভ‚মিকা জাটকাও মা ইলিশ নিধন বন্ধে সহায়ক হবে। বাংলাদেশের বর্তমান নদ-নদীর পানি প্রবাহ, জলজ পরিবেশ ও আবহাওয়ার পরিবর্তিত পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে জাটকা ও মা ইলিশ নিধন বন্ধ করতে পারলে আগামীতে ইলিশ উৎপাদনে আশাব্যাঞ্জক ফল মিলবে।
মালিবাগ, ঢাকা।
[email protected]
© ভোরের কাগজ 2002 – 2020
প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী । মুদ্রাকর: তারিক সুজাত
কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, তৃতীয় তলা, ৭০ শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, (নিউ সার্কুলার রোড, মালিবাগ), ঢাকা-১২১৭ ।
ফফোন: ৯৩৬০২৮৫, ৮৩৩১০৭৪ ফ্যাক্স: ৯৩৬২৭৩৪, সার্কুলেশন ও বিজ্ঞাপন : ৮৩৩১৮০৬ । ইমেইল: [email protected]