Print

Bhorer Kagoj

ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিলের সমন্বয় নিয়ে সংশয়

প্রকাশিত হয়েছে: জুন ১৭, ২০২০ , ১০:৫৭ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: জুন ১৭, ২০২০, ২:১৪ অপরাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক

লাইন কাটার ঘোষণায় আতঙ্ক

করোনা ভাইরাসের বিপর্যয়ের মধ্যে অস্বাভাবিক বিদ্যুৎ বিল নিয়ে চরম আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন গ্রাহকরা। এছাড়া সময়মতো বিল না পাওয়া এবং দীর্ঘ সাধারণ ছুটিতে ব্যাংক লেনদেন সীমিত থাকায় রাজধানীসহ সারাদেশের বিদ্যুৎ গ্রাহকদের অনেকেই গত দুই-তিন মাসের বিল পরিশোধ করতে পারেননি। অস্বাভাবিক বিদ্যুৎ বিল সমন্বয় করা হবে বলে বিদ্যুৎ বিভাগ আশ্বস্ত করায় অনেকেই সমন্বয় করা বিলের অপেক্ষায় ছিলেন। এই অবস্থায় ৩০ জুনের মধ্যে বকেয়া সব বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ না করলে লাইন কাটার ঘোষণা দিয়েছেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। গত সপ্তাহে তার এই ঘোষণার পর আরো বেশি আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন গ্রাহকরা। মিটার রিডিং ছাড়া শুধু অনুমান করে বিদ্যুৎ বিল দেয়া যায় কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। সর্বোপরি ভূতুড়ে বিদ্যুৎ বিল আদৌ সমন্বয় করা হবে কিনা- তা নিয়েও সন্দেহ দেখা দিয়েছে বিদ্যুৎ বিতরণকারী সব প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদের মধ্যে।

রাজধানীর পশ্চিম রামপুরা এলাকার বাসিন্দা জিদনী জানান, তার বাসায় মাত্র তিনজন মানুষ। ছোট্ট ফ্ল্যাটের বাসায় স্বাভাবিক সময়ে প্রতি মাসে বিদ্যুৎ বিল আসত ৮০০ টাকা। বেশি গরমের সময় এক হাজার টাকায় দাঁড়াত। কিন্তু করোনাকালে তার বাসায় এক মাসেই বিল এসেছে দুই হাজার ৫০০ টাকা। পশ্চিম ধানমন্ডি এলাকার একটি বহুতল ভবনে ৪৮ জন গ্রাহক রয়েছেন। লিফটসহ সবকিছু মিলিয়ে প্রতি মাসে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকার কাছাকাছি বিল আসত। কিন্তু গত মার্চ ও এপ্রিল মাসে এই ভবনে দেড় লাখ টাকারও বেশি বিদ্যুৎ বিল এসেছে। মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দা আহসান কবীর জানান, স্বাভাবিক সময়ে প্রতি মাসে দেড় হাজার টাকার মতো বিদ্যুৎ বিল আসে। কিন্তু করোনারমাসগুলোতে তা ডাবল হয়ে গেছে। এই বাড়তি বিল আদৌ সমন্বয় হবে কিনা- তা নিয়ে তিনি সন্দিহান।
মগবাজারের শাসছুল আমিন জানান, তার বাসায়ও এবার স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে দ্বিগুণ বিল এসেছে। সবসময় বিকাশের মাধ্যমে বিল পরিশোধ করলেও এবার ঝামেলায় পড়েছেন। তিনি ভাবছেন, অনলাইনে বিল দেয়ার পর যদি তা আদৌ সমন্বয় করা না হয়- তাহলে কী হবে? করোনা আতঙ্কের মধ্যে তো বারবার বিদ্যুৎ অফিসে যাওয়াও সম্ভব না।
গত তিন মাসে রাজধানীসহ সারাদেশের সব বিদ্যুৎ বিতরণকারী কোম্পানির বিরুদ্ধে এধরনের ভ‚তুড়ে বিদ্যুৎ বিল দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। অনুসন্ধানে অধিকাংশ অভিযোগের সত্যতাও মিলেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনা সংক্রমণ বাড়ার পর বিদ্যুৎ অফিসের মিটার রিডাররা মিটার দেখতে আসেননি। অথচ মাস শেষে ঠিকই ভূতুড়ে বিল তৈরি করে পাঠিয়েছেন। এছাড়া সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর ব্যাংকগুলো একরকম বন্ধই ছিল। টাকা জমা-তোলা ছাড়া আর কোনো কাজ হয়নি। ওই সময় অনেকে বিল দিতে গেলেও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তা নেয়নি। এ কারণেও অনেকেই বিল দিতে পারেননি। করোনা সংক্রমণের ভয়েও অনেকে লম্বা লাইন ধরে ব্যাংকে বিল দিতে যাননি। আবার অনেক গ্রাহক বিদ্যুৎ বিভাগের বিল সমন্বয়ের ঘোষণার পর নতুন বিলের জন্য অপেক্ষা করছেন।
অন্যদিকে বিতরণ কোম্পানিগুলো অনেক গ্রাহকের কাছে প্রিন্ট করা বিলের পরিবর্তে মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিল পাঠিয়েছে। এই এসএমএস নিয়ে ব্যাংকে গিয়েও বিল পরিশোধ করতে পারেননি গ্রাহকরা। কারণ ব্যাংক এসএমএস বিল নিতে রাজি হয়নি। তাছাড়া ডিজিটাল মাধ্যমে অভ্যস্ত না হওয়ায় অনেক গ্রাহক মোবাইল অ্যাপস ব্যবহার করে বিল দিতে পারেননি। এরমধ্যে বাড়তি বিল নিয়ে দুশ্চিন্তা থাকলেও জুন পর্যন্ত জরিমানা ছাড়া বকেয়া বিল পরিশোধের সুযোগ থাকায় তারা মোটামুটি স্বস্তিতে ছিলেন। কিন্তু গত সপ্তাহে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর ঘোষণায় সেই স্বস্তি উবে গিয়ে জেঁকে বসেছে আতঙ্ক- লাইন কেটে দিলে এই গরমে থাকবেন কী করে? কেননা, প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, ভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি থেকে বাঁচতেই তিন মাসের সুবিধা দেয়া হয়েছিল। যা শেষ হচ্ছে ৩০ জুন। এর মধ্যে যদি কেউ বিল না দেয় তাহলে লাইন কেটে দেবে বিতরণ কোম্পানিগুলো।

অস্বাভাবিক বিদ্যুৎ বিলের বিষয়টি স্বীকার করে ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির (ডিপিডিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান জানান, আমরা বিদ্যুৎ বিল নিয়ে অভিযোগ পাচ্ছি। করোনার সংক্রমণের ভয়ে বাসায় গিয়ে মিটার রিডিং নেয়া সম্ভব না হওয়ায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আগের মাসের বিল দেখে এপ্রিল মাসের গড় বিল করা হয়েছে। তবে এটা সমন্বয়ের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। গ্রাহকরা স্থানীয় বিদ্যুৎ অফিসে গিয়ে বিল ঠিক করে নিতে পারবেন। এখন ব্যাংকে না গিয়ে অনলাইনেই বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের ব্যবস্থা রয়েছে।
ডেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাওসার আমির আলি জানান, আমাদের অনেক কর্মী করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় মিটার দেখে বিল দেয়া সম্ভব হয়নি। এই কারণে আগের মাসের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বিল করা হয়েছে। এতে কারো কারো অতিরিক্ত বিল আসলেও তা সমন্বয়ের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কারো কোনো আর্থিক ক্ষতি হবে না। কেউ অতিরিক্ত বিল পরিশোধ করলেও তা পরের মাসের বিলের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে।

এদিকে রাজধানীর বাইরের বিদ্যুৎ গ্রাহকরাও ভূতুড়ে বিল নিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন। গত তিন মাস ধরে সব গ্রাহককে অস্বাভাবিক বিল ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। প্রতি মাসের বিলের সঙ্গে বাড়তি ২০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। উপরন্তু নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহও পাওয়া যাচ্ছে না। এ প্রসঙ্গে পল্লী বিদ্যুৎ বোর্ড (আরইবি), ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো), নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানির (নেসকো) কর্মকর্তারাও একই ধরনের কথা বলেছেন। তারা বলেন, বাড়ি বাড়ি গিয়ে মিটার রিডিং করতে না পারায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এটা সমন্বয়ের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

© ভোরের কাগজ 2002 – 2020

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী । মুদ্রাকর: তারিক সুজাত

কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, তৃতীয় তলা, ৭০ শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, (নিউ সার্কুলার রোড, মালিবাগ), ঢাকা-১২১৭ ।
ফফোন: ৯৩৬০২৮৫, ৮৩৩১০৭৪ ফ্যাক্স: ৯৩৬২৭৩৪, সার্কুলেশন ও বিজ্ঞাপন : ৮৩৩১৮০৬ । ইমেইল: [email protected]