কাগজ প্রতিবেদক : করোনা মহামারির কারণে গত তিন বছর ধরে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা হয়নি। নতুন শিক্ষাক্রমেও এই পরীক্ষা নেয়ার কথা বলা নেই। এমন অবস্থায় সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে এই দুই পাবলিক পরীক্ষা বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত পাঠানো সারসংক্ষেপ প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। গতকাল সোমবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উপসচিব আক্তারউননেছা শিউলী স্বাক্ষরিত অফিস আদেশ থেকে এ তথ্য জানা যায়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আদেশ থেকে জানা গেছে, জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা অনুযায়ী জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা রাখা হয়নি। তাই ২০২২,২০২৩ এবং পরবর্তীতে জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা বাদ দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে। ওই আদেশে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী এই প্রস্তাব অনুমোদন করেছেন।
জানতে চাইলে আক্তারউননেছা শিউলী বলেন, জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা- ২০২১ এ জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা রাখা হয়নি। তাই এ দুটি পাবলিক পরীক্ষা বাদ দেয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। তিনি তা অনুমোদন করেছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, নতুন শিক্ষাক্রমে জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা রাখা হয়নি। আর চলতি বছর থেকে শুরু হয়েছে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম। আগামী বছর দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে তা শুরু হবে। এরপর ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে চালু হবে। উচ্চ মাধ্যমিকের একাদশ শ্রেণিতে ২০২৬ সালে এবং দ্বাদশ শ্রেণিতে ২০২৭ সালে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। এছাড়া নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী মূল্যায়নে বড় ধরনের পরির্বতন আসবে। এর মধ্যে প্রাথমিকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা হবে না। পুরো মূল্যায়ন হবে বিদ্যালয়ে ধারাবাহিকভাবে শিখন কার্যক্রমের মাধ্যমে। আর মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা প্রথম পাবলিক পরীক্ষায় বসবে দশম শ্রেণিতে। এরপর একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে দুটি পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। দুই পরীক্ষার ফল যোগ করে উচ্চ মাধ্যমিকের ফল ঘোষণা করা হবে।
এর আগে, ২০০৯ সালে হঠাৎ করেই জাতীয়ভাবে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা নেয়া শুরু করে সরকার। প্রথমে শুধু সাধারণ ধারার শিক্ষায় এটি সীমাবদ্ধ ছিল। পরে মাদ্রাসার ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী (পঞ্চম শ্রেণির সমমান) পরীক্ষাও চালু করা হয়। এরপর ২০১০ সালে জেএসসি পরীক্ষা শুরু হয়। এসব পরীক্ষা নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা আছে। সাধারণত প্রতি বছরের নভেম্বরে জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা হতো। কিন্তু করোনার সংক্রমণের কারণে ২০২০ সালের মার্চে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। টানা প্রায় ১৮ মাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। এ জন্য গত তিন বছর এ পরীক্ষাগুলো হয়নি।
এদিকে, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষাও গত তিন বছর ধরে আর হচ্ছে না। কিন্তু বিদায়ী বছরের শেষ পর্যায়ে আকস্মিকভাবেই পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা চালু করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে সমালোচনাও হয়েছে।