কাগজ প্রতিবেদক : থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপনকে কেন্দ্র করে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এড়াতে গতকাল শনিবার রাজধানী ঢাকাজুড়ে ছিল পুলিশের কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। গত বৃহস্পতিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) জারি করা নির্দেশনা প্রতিপালনে গতকাল সন্ধ্যা থেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থান নেয়। গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে পুলিশের চেকপোস্ট বসানো হয়।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার ডিএমপি ট্রাফিক বিভাগের নির্দেশনায় বলা হয়, ৩১ ডিসেম্বর রাত ৮টা থেকে ১ জানুয়ারি ভোর ৫টা পর্যন্ত গুলশান, বনানী ও বারিধারা এলাকায় যানবাহনযোগে প্রবেশের জন্য কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউ (কাকলী ক্রসিং) ও মহাখালী আমতলী ক্রসিং ব্যবহার করা যাবে।
নির্দেশনায় আরো বলা হয়, রাত ৮টা থেকে গুলশান, বনানী ও বারিধারা এলাকায় প্রবেশের ক্ষেত্রে মহাখালী এলাকা-ফিনিক্স রোড ক্রসিং, বনানী ১১ নম্বর রোড, চেয়ারম্যান বাড়ি মোড়, ঢাকা গেট, শ্যুটিং ক্লাব, বাড্ডা লিংক রোড, ডিওএইচএস বারিধারা-ইউনাইটেড হাসপাতাল ক্রসিং ও নতুন বাজার ক্রসিং ব্যবহার করা যাবে না। তবে ওই এলাকা থেকে বের হওয়ার জন্য এসব ক্রসিং ব্যবহার করা যাবে।
এছাড়া ২১টি পয়েন্টে ডাইভারশন চলবে। সেগুলো হলো- ফিনিক্স ক্রসিং, শান্তা ক্রসিং, বটতলা ক্রসিং, জিএমজি মোড়, পুরাতন আড়ং ক্রসিং, নিকেতন ক্রসিং, পুলিশ প্লাজা ক্রসিং, মসজিদ গ্যাপ, মায়াগঞ্জ ক্রসিং, বনানী চেয়ারম্যান বাড়ি মোড়, বনানী ১১ নম্বর রোড, শ্যুটিং ক্লাব ক্রসিং, ইউনাইটেড হাসপাতাল গ্যাপ, বনানী ২৩ নম্বর রোড, ঢাকা গেইট, মানারাত ক্রসিং, নতুন বাজার ক্রসিং, জাতিসংঘ গোল চত্বর, গুদারাঘাট গ্যাপ, বাড্ডা লিংক রোড ও কালাচাঁদপুর গ্যাপ।
আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার লক্ষ্যে যানবাহন চলাচলের উপযুক্ত ব্যবস্থা বাস্তবায়নকালে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ নগরবাসীর সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করছে।
গতকাল সন্ধ্যার পর থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে যানচলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়। রাজধানীর
শাহবাগসহ যেসব জায়গায় তরুণ-তরুণী কিংবা নানা বয়সি মানুষ জমায়েত হওয়ার চেষ্টা করে, সেসব জায়গায় বাড়ানো হয় গোয়েন্দা নজরদারি। পোশাকি পুলিশও দায়িত্ব পালন করে। থানা এলাকায় টহল বাড়ানো হয়। এছাড়া ২৪ ঘণ্টার জন্য রাজধানীর বিভিন্ন বার বন্ধ রাখা হয়। কেউ যেন মদ পান করে দ্রুতগতিতে গাড়ি চালানোর সুযোগ না পায়, সে অনুযায়ী পুলিশ কার্যকর ব্যবস্থা নেয়।
বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘বাধ্যবাধকতা দেয়া হয় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখার জন্য। অনেক সময় আমাদের দেশের যে সংস্কৃতি, তার সঙ্গে মেলে না, এমন কাজকর্মের কারণে নানা ধরনের প্রশ্ন তৈরি হয়। তখন দায় আসে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করেনি বলেই এমন হয়েছে। সে কারণেই পদক্ষেপগুলো নেয়া হয় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে। আমাদের দেশে কিছু উচ্ছৃঙ্খল তরুণ-তরুণী রাস্তার ওপর বিভিন্ন ধরনের উত্তাপ তৈরি করে। এছাড়া অতীতে যেসব ঘটনা ঘটেছে, তাকে দৃষ্টান্ত হিসেবে নিয়েই কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। এদিকে জঙ্গিদের হুমকি তো আছেই। কারণ তারা উৎসবকে কেন্দ্র করে তাদের কার্যক্রম করার চেষ্টা করে। সেজন্যই এসব পদক্ষেপ যৌক্তিক বলে আমি মনে করি।’
ডিএমপির সাবেক কমিশনার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান মিঞা বলেন, ‘কড়াকড়ি করা হয়ে থাকে থার্টি ফার্স্টের নামে একদল উচ্ছৃঙ্খল তরুণ-তরুণী বিভিন্ন রাস্তায় বিভিন্ন ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপ ও অঙ্গভঙ্গি করে। উন্মুক্ত জায়গায় এমন কিছু করা যায় না, যা জনগণের নিরাপত্তা বিঘিœত করে, সামাজিক বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়, সামাজিক প্রেক্ষাপটকে আঘাত করে এবং কারো মূল্যবোধে আঘাত করে। বাংলাদেশি সংস্কৃতি, সামাজিক ও ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত করবে, এমন কোনো কাজ করা যাবে না। কেউ যদি চার দেয়ালের মধ্যে বাসায় বা হোটেল-রেস্তোরাঁয় এ রাত উদযাপন করে, সেখানে কোনো বাধা নেই।’