বিদায় নিল ২০২২ সাল। বিদায় বছরে প্রাপ্তির ঝুলিতে সবচেয়ে বড় অর্জন পদ্মা সেতু ও মেট্রোরেল। দেশের সড়ক যোগাযোগের নতুন দিগন্ত বাঙালির বহু আকাক্সিক্ষত পদ্মা সেতু। যার দ্বার খুলেছে এ বছরের ২৫ জুন। এই সেতু নির্মাণের মধ্য দিয়ে সম্পূর্ণ দেশীয় অর্থায়নে বড় অবকাঠামো নির্মাণে সক্ষমতা দেখিয়েছে বাংলাদেশ। এ সেতু দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মোট ২১টি জেলাকে সড়কপথে সরাসরি সংযুক্ত করেছে। কংক্রিট আর ইস্পাতের কাঠামোয় পদ্মা নদীর দুই প্রান্তের সামাজিক ও অর্থনৈতিক যোগাযোগের সেতুবন্ধও তৈরি হয়েছে। সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের মঞ্চে সাবিনা খাতুন, সানজিদা ইসলাম, রুপনা চাকমাদের হাত ধরে প্রথম কোনো বড় শিরোপা নিজেদের করে নিতে পেরেছে বাংলাদেশের নারী ফুটবল দল। যা নারীদের জন্য এবং সমসাময়িক বাংলাদেশের ফুটবলের জন্যই সবচেয়ে বড় সাফল্যের ঘটনা। বাংলাদেশ ক্রিকেটে ছিল ব্যাপক উত্থান-পতন। টেস্ট এবং টি-টোয়েন্টিতে ভালো না হলেও ওয়ানডে ফরম্যাটে টাইগাররা এ বছর প্রমাণ করেছে নিজেদের শক্তিমত্তার সবটুকু। দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ওদের মাঠে হারানোর পর ভারতের মতো পরাশক্তিকে ২০২২ সালে সিরিজ হারিয়েছে বাংলাদেশ। ২০২২ সালেও ছিল বিভিন্ন রোগের প্রকোপ। করোনা ২০২২ সালে দুর্বল হয়ে পড়ায় নিজের শক্তি দেখাতে পারেনি। তবে করোনা স্তিমিত হলেও বছরটিতে দাপট দেখিয়েছে ডায়রিয়া আর চোখ রাঙিয়েছে ডেঙ্গু। হাসপাতালজুড়ে ছিল ডায়রিয়া রোগীতে ভরা। করোনার ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, স্যাংশনের কারণে ২০২২ সালের শুরুতেই সারা বিশ্ব নানামুখী সংকটের মাঝে পড়েছে। বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিতে ধস নামে। এর সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, জ্বালানি তেল এবং গ্যাস সংকটের কথা। শুধু এই দুটি জিনিসকে কেন্দ্র করে খাদ্য, বাসস্থান, পরিবহন ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম এত পরিমাণ বেড়েছে, যা গত কয়েক দশকেও বিশ্ববাসী দেখেনি। সার্বিকভাবে কয়েকটি কারণে দেশের অর্থনীতি চাপে ছিল। এর মধ্যে আছে ধারাবাহিকভাবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমতে থাকা, নজিরবিহীনভাবে ডলারের বিনিময় মূল্য বাড়তে থাকা, পণ্য সরবরাহে বিঘœ, ব্যাংকিং খাতে সুশাসনের অভাব, কর বনাম মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাত কমতে থাকা, নিত্যপণ্যের আকাশচুম্বী দাম ও অর্থ পাচার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা। এছাড়া বিশ্বজুড়ে কত ঘটনা, কত হাসি-কান্না, বিষাদ ও উত্তেজনা- সবকিছুকে ছাপিয়ে স্বপ্ন আর দিনবদলের অপরিমেয় প্রত্যাশার রক্তিম আলোয় উদ্ভাসিত ইংরেজি ক্যালেন্ডারের নতুন দিন আজ। নতুন বছর নতুন কল্যাণময়ে শুরু হোক আমাদের পথচলা। বিগত বছরের ব্যর্থতা কাটিয়ে ওঠা আর সাফল্যকে সংহত করার প্রত্যয় নিয়ে আমরা বরণ করছি নতুন বছরকে। আমরা চাই, উন্নয়ন-অগ্রগতির ধারা অব্যাহত থাকুক। নতুন বছর বাংলাদেশের জন্য হয়ে এসেছে অমিত সম্ভাবনার বছর। অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলছে দেশ। এ বছরই পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল, বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) ব্যবহার করতে পারবে মানুষ। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের আশাও দেখাচ্ছে নতুন বছরটি। ২০২৩ সালের প্রতিটি দিন হোক সুন্দর ও কল্যাণময়।