কাগজ ডেস্ক : জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত পৃথিবীর প্রায় সব দেশই ঘুরে দেখেছেন মার্কিন নাগরিক র্যান্ডি উইলিয়ামস। আর একটি মাত্র দেশ ঘোরা বাকি থাকতে তিনি ভাবনায় পড়ে যান, এরপর তিনি কোথায় যাবেন! তার দেশ ঘোরার নেশা কীভাবে কাটাবেন। এই চিন্তা থেকেই তিনি নতুন একটি দেশ তৈরি করার পরিকল্পনা করতে থাকেন। শেষমেশ ক্যালিফোর্নিয়ায় মরুভূমির মধ্যে ১১ দশমিক শূন্য ৭ একর খালি জমি কিনে সেই ভূখণ্ডকে নতুন দেশ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন পেশায় রেডিও ব্রডকাস্টার উইলিয়ামস। নিজের রেডিও অনুষ্ঠানের নামে ওই দেশের নাম দিয়েছেন ‘স্লোজামাস্তান’। স্লোজামাস্তান প্রজাতন্ত্রের রাজধানীর নাম দিয়েছেন দুবলান্ডিয়া। আর স্লোজামাস্তানের ‘সুলতান’ উইলিয়ামস নিজে।
২০২১ সালের ১ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ২৬ মিনিটে স্লোজামাস্তানের সুলতান উইলিয়ামস আনুষ্ঠানিকভাবে স্লোজামাস্তানের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। স্লোজামাস্তান প্রজাতন্ত্রে পাঁচ শতাধিক নিবন্ধিত নাগরিক আছেন বলে দাবি করেছেন সুলতান উইলিয়ামস।
আনুষ্ঠানিক ঘোষণার দুই বছর পর সুলতান উইলিয়ামস তার দেশে নাগরিকদের স্যান্ডেল পরা নিষিদ্ধ করাসহ বেশ কিছু উদ্ভট আইন চালু করেছেন। এই প্রজাতন্ত্রের নিজস্ব পাসপোর্ট ও পতাকাও আছে। ‘ডুবল’ নামে নিজস্ব মুদ্রা চালু করেছেন তিনি। এছাড়া রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে নিজস্ব জাতীয় সংগীত বাজানোর প্রথাও চালু করেছেন তিনি।
সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ চৌকি তৈরি করা ছাড়াও তার মন্ত্রীর কার্যালয়ের ওপর স্লোজামাস্তানের রঙিন পতাকা উড়িয়েছেন।
উইলিয়ামস বিশ্বভ্রমণের সময় বিভিন্ন দেশের ভেতর এমন স্বঘোষিত ‘মাইক্রোনেশন’ দেখেছেন। এসব দেখার পর তিনি নিজেই একটি দেশ বানাতে অনুপ্রাণিত হন।
স্লোজামাস্তানের সরকারব্যবস্থা নিয়ে উইলিয়ামস বলেন, ‘প্রজাতন্ত্র হলেও বেশির ভাগ সময় আমরা একনায়কতান্ত্রিকভাবে দেশ পরিচালনা করি। সামনে আমরা বিশেষ ভোট ও গণভোটের আয়োজন করব। স¤প্রতি আমি দেশের জাতীয় ফল, খেলা ও পশুর নাম কী হওয়া উচিত, তা নিয়ে নাগরিকদের ভোট দেয়ার অনুমতি দিয়েছি।’
কোনো প্রজাতন্ত্রে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে স্বৈরাচারী সুলতান থাকা দ্বা›িদ্বক মনে হলেও এই দেশে এটাই রীতি। উইলিয়ামস বিশ্বের অনেক অদ্ভুত জায়গা ভ্রমণ করেছেন। সেসব জায়গাতেও একই নিয়ম দেখেছেন। তিনি উত্তর কোরিয়া গণপ্রজাতন্ত্রের মতো দেশেও এসব দ্বা›িদ্বক বিষয়গুলো লক্ষ্য করেছেন।
স্লোজামাস্তান দেশের একটি ওয়েবসাইটও আছে। এই ওয়েবসাইটেই নাগরিকত্ব ও মন্ত্রিসভার পদের জন্য আবেদন করতে হয়। এই নিয়ম জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কারণ, ইতোমধ্যে ওয়েবসাইটে কয়েক হাজার আবেদন জমা পড়েছে।
স্লোজামাস্তানের সুলতান উইলিয়ামস বলেছেন, অন্যান্য দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি স্লোজামাস্তানের পাসপোর্ট দিয়ে এ পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড, ভানুয়াতু ও যুক্তরাষ্ট্রসহ ১৬টি দেশ ভ্রমণ করেছেন।
উইলিয়ামস স্পষ্ট করে বলেন, একটি সার্বভৌম জাতি-রাষ্ট্র হওয়ার জন্য ১৯৩৩ সালে মন্টেভিডিও কনভেশনে যেসব মানদণ্ড পূরণের কথা বলা হয়েছে, কৌশলগতভাবে স্লোজামাস্তান তার সবই পূরণ করেছে। মন্টেভিডিও কনভেশনে দেশের যে সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে, এখন পর্যন্ত সেটিই সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞা।
মন্টেভিডিও কনভেনশনে বলা হয়েছে, দেশ হলে তার স্থায়ী জনসংখ্যা, নির্দিষ্ট ভূখণ্ড, সরকার ও অন্য রাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের সক্ষমতা থাকতে হবে। উইলিয়ামস দাবি করেন, স্লোজামাস্তান এসব শর্ত পূরণ করেছে।