ঢাকা সেনানিবাসে এনআইডি বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন

আগের সংবাদ

যশোর বোর্ডের হিসাব থেকে আড়াই কোটি টাকা উত্তোলন : জালিয়াতির অভিযোগ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে

পরের সংবাদ

শখের মাল্টা চাষ এখন আয়ের প্রধান উৎস

প্রকাশিত: অক্টোবর ৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সালেহ এলাহী কুটি, মৌলভীবাজার থেকে : কমলা আনারসের জন্য সুখ্যাতি রয়েছে মৌলভীবাজারে। রয়েছে নিজস্ব জাত ও বৈশিষ্ট্য। ছোট-বড় টিলাবেষ্টিত এলাকায় সাইট্রাস জাতীয় এসব ফসলের উৎপাদনের হার অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় বেশি। অপার সম্ভাবনাময় কমলা-মাল্টা-আনারস ও লেবু জাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে পতিত জমি ও পাহাড় টিলায় ফল বাগান স্থাপনে স্থানীয় কৃষি উদ্যোক্তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করছে স্থানীয় কৃষি অফিস।
গাঢ় সবুজ রঙের বারী-১ মাল্টা চাষে সফলতা পেয়েছেন অনেকেই। কিন্তু আমাদের দেশে মাল্টা চাষ তার ওপর সফলতা সে অনেকটা ব্যতিক্রমী। সময় যতটা গড়াচ্ছে মাল্টা চাষের প্রতি কৃষকদের আগ্রহও তত বাড়ছে। আর মাল্টা চাষে অল্প সময়ের মধ্যেই সফলতা পাচ্ছেন চাষিরা।
এক সময়ের শখের মাল্টা এখন মৌলভীবাজারে বাণিজ্যিকভাবে মাল্টা চাষ আয়ের প্রধান উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে। মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ১০৩ হেক্টর জমিতে ৫১৪টি ছোট বড় মাল্টা বাগানে ৬৭০ টন উৎপাদন হয়েছে। কৃষক পর্যায়ে ১২০ টাকা কেজি হিসেবে যার মূল্য ৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
শুরুর দিকে আবাদি জমির পরিমাণ কম থাকলেও ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে মাল্টার চাষ। ২০২০ সালে ৭৯ হেক্টর জমিতে ৩৩৯টি বাগান ছিল। চলতি বছরে বৃদ্ধি পেয়েছে ১৭৫টি বাগান। একদিকে যেমন বাড়তে থাকে বাগানের সংখ্যা অন্যদিকে বাড়ে কর্মসংস্থান। ফলে মাল্টা চাষ যেমন পেয়েছে জনপ্রিয়তা, তেমনি লাভবান হচ্ছে চাষিরা।
বড়লেখা উপজেলার গোলসা গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় মো. জাকির হোসেন মাল্টা বিক্রিতে ব্যস্ত সময় পার করছে। তিনি জানান ২০১৫ সালে সৌদি আরব থেকে দেশে এসে ২০ শতক জমিতে মিশ্র বাগানে মাল্টা, কমলা, জাম্বুরা, লিচু, আম, ডালিম ও মিষ্টি আমড়া চাষ শুরু করেন। মিশ্র বাগানের মাত্র ২টা মাল্টা গাছ থেকে প্রথমবার ৪০ কেজি মাল্টা সংগ্রহ করেন। এর পরের বছর একই গাছ থেকে ২০০ কেজি মাল্টা উৎপাদন হয়। এতে মাল্টা চাষে আগ্রহ বেড়ে যায়। ২০১৭ সালে কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় ৪০ শতক জায়গায় ১২০টি ভাল মানের ছাড়া রোপণ করি যতেœর সঙ্গে ছাড়াগুলো আস্তে আস্তে বড় হতে শুরু করে।
ইতোমধ্যে বাগানজুড়ে মাল্টা গাছে ফল এসেছে। গত বছরের তুলনায় এই বছর আমার মাল্টা বাগানে ফলন বেশ ভালো হয়েছে। এলাকার অনেক মানুষ বাগান থেকে মাল্টা ফল কিনে নিচ্ছে ১২০-১৩৫ টাকায়। এছাড়া বাগানের মাল্টা ফল বিভিন্ন বাজারের পাইকাররা এসে ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছে। এতে আমি খুব আনন্দিত। জাকির হোসেন আরো জানান, মাল্টা গাছে মাঝে মধ্যে ছত্রাকের আক্রমণ হয়। কৃষি অফিসের পরামর্শে ওষুধ ব্যবহার করে তা দমন করা সম্ভব হয়েছে। বাগানে সঠিকভাবে পরিচর্যা ও ফলন ভালো হলে অর্থনৈতিকভাবে অনেক লাভবান হতে পারব। এ বছর প্রায় তিন হাজার কেজি মাল্টা বিক্রি করতে পারবেন বলে তিনি আশাবাদী।
এদিকে জাকির হোসেনের মাল্টা চাষের খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়ায় কৃষকদের মাঝে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। অনেক চাষিই মাল্টার বাগান দেখতে ভিড় করছে এবং চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা নিচ্ছেন। আগামীতে মাল্টা চাষের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় একাধিক চাষি। এছাড়া জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে বিভিন্ন পেশার লোকজন মাল্টা বাগান পরিদর্শনে যাচ্ছেন এবং বেকার যুবক ও আগ্রহী কৃষকরা ভিড় জমাচ্ছেন তার বাগানে। নতুন বাগান তৈরির আগ্রহ দেখিয়েছেন।
সুরীকান্দি এলাকার ছৈদুর রহমান বলেন, খবর শোনার পর আমি বাগানটি পরিদর্শনে এসেছি। মাল্টা খেয়েছি। স্বাদ খুব ভালো। একজন সৌদি ফেরত সাহস নিয়ে এত বড় বাগান গড়ে তুলেছে, দেখে খুব মুগ্ধ হয়েছি। পতিত জায়গাতে মাল্টা বাগান করা আগ্রহ প্রকাশ করেন তিনি।
গোলসা গ্রামের নজরুল ইসলাম, এনো মিয়া, আকবর আলী বলেন, জাকির হোসেনের মাল্টা চাষে সফলতা দেখে তারা ইতোমধ্যে উন্নত জাতের মাল্টার চারা রোপণ করেছেন। আগামী বছরে ফলন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী তারা।
এ ব্যাপারে বড়লেখা উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা দেবল সরকার ভোরের কাগজকে বলেন, আমাদের তত্ত্বাবধায়নে জাকির হোসেন মাল্টার চাষ করেছেন। শুরু থেকে আমরা সার্বিক সহযোগিতা করে যাচ্ছি। পুরোপুরি উৎপাদন শুরু হয়েছে উপজেলার চাহিদার পাশাপাশি জেলার চাহিদার কিছুটা হলেও পূরণ করতে সক্ষম হবে। তাছাড়া আশপাশের এলাকার চাষিরা মাল্টা চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কাজী লুৎফুল বারী বলেন, মাল্টা চাষে জাকির হোসেন সফল। তাই তার মতো যদি কেউ বাগান করতে চান, তাদের টেকনিক্যালি সাপোর্ট দেয়া হবে। লেবু জাতীয় ফসল উৎপাদন সম্প্রসারণ প্রকল্প থেকে প্রণোদনা দিয়ে সহযোগিতা করা হবে। জেলার পাহাড় টিলা বেষ্টিত পতিত জমি মাল্টা চাষে বিশেষ উপযোগী তাই জেলায় মাল্টা চাষ সম্প্রসারণ করে আমদানি কমানোর অব্যাহত চেষ্টা করছে কৃষি বিভাগ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সিলেট অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক দিলীপ কুমার অধিকারী ভোরের কাগজকে বলেন, বারি মাল্টা দেশে উদ্ভাবিত একপ্রকার সাইট্রাস জাতীয় ফল। মানবদেহের জন্য প্রতিদিন ৫০ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি প্রয়োজন, মাল্টা ফল খেলে এটা পূরণ করে।
করোনার কারণে ভিটামিন সি জাতীয় ফলের চাহিদা বেশি থাকায় এবং বিদেশ থেকে আমদানি করা মাল্টার চেয়ে দামে কম ও বেশি সুস্বাদু হওয়াতে ক্রেতাদের কাছে এর চাহিদা রয়েছে বেশ। পাহাড়ি ঢালু জমিতে মাল্টা চাষ ভালো হয়। তাই পাহাড়ি অনাবাদি ও পতিত ভূমিকে আবাদযোগ্য করে গড়ে তুলতে পারলে স্থানীয়ভাবে পুষ্টির অভাব পূরণের পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবেও সমৃদ্ধ হওয়া সম্ভব। শুধু প্রয়োজন পরিশ্রম ও সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে চাষাবাদ করা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়