বিরোধীদের এক করতে তৎপর বিএনপি

আগের সংবাদ

পরিবহন খাতের সর্বনাশ : অবরোধ-হরতালে ৩৭০টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, সব মিলিয়ে ক্ষতি সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা

পরের সংবাদ

এফবিসিসিআইয়ের সেমিনার : বৈশ্বিক বাণিজ্য বাড়াতে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের তাগিদ

প্রকাশিত: নভেম্বর ২০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : বন্দরে উন্নত ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির না থাকায় পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে একজন ব্যবসায়ীকে একই পণ্য বারবার পরীক্ষা করতে হচ্ছে। এর ফলে সময় ও খরচ উভয়ই বেড়ে যাচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে ভোক্তা পর্যন্ত। তাই আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বাড়াতে ঝুঁঁকি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি উন্নয়নের তাগিদ দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইতে আয়োজিত আন্তর্জাতিক বাণিজ্যবিষয়ক এক সেমিনারে গতকাল রবিবার বক্তারা এসব কথা বলেন। ‘ইস্যু অব ক্রস- বর্ডার ট্রেড: ইমপর্টেন্স অব রিস্ক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ইন সাপ্লাই চেইন অফ এগ্রো প্রোডাক্টস’ শীর্ষক সেমিনার এফবিসিসিআইর সঙ্গে যৌথভাবে আয়োজন করে ইউএসডিএ (ইউনাইটেড স্টেট ডিপার্টমেন্ট অব এগ্রিকালচার) ফান্ডেড বাংলাদেশ ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন (বিটিএফ) প্রকল্প। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. মুহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক।
সেমিনারে কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক বলেন, খাদ্যশস্যে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। কৃষিকে সাব-সিস্টেম থেকে বাণিজ্যিকীকরণ করতে কৃষি মন্ত্রণালয় সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। কৃষিখাতের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে আমরা আধুনিক ও লাভজনক কৃষি উৎপাদনের দিকে মনোনিবেশ করেছি। বিগত বছরগুলোতে কৃষিখাতের উন্নয়নের বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরে কৃষিমন্ত্রী ড. মুহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কৃষিখাতের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী অবকাঠামো দিয়েছেন, দেশও উন্নত হবে। কিন্তু একদল আছে যারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে যাচ্ছে। দেশের স্থিতিশীলতা রক্ষায় ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা দরকার। কৃষিমন্ত্রী আরো বলেন, বন্দর থেকে পণ্য খালাসের জটিলতা কমাতে রাজধানীর পূর্বাচলে কৃষি মন্ত্রণালয়ের জন্য জায়গা বরাদ্দ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী, যেখানে পণ্য টেস্টিং করে সরাসরি কার্গোতে পাঠানো হবে। ফলে ব্যবসায়ীদের সময় ও অর্থ অপচয়, দুটিই কমে আসবে। খুব শিগগিরই এর কাজ শুরু হবে বলেও জানান কৃষিমন্ত্রী।
কৃষি মন্ত্রী বলেন, কৃষি সব সময় আমাদের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের জিডিপির ৬০ শতাংশ আসে কৃষি থেকে। বর্তমানে দেশের প্রায় ৩৭ শতাংশ মানুষ কৃষি কাজের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করেন। সরকার স্বনির্ভর হওয়ার চেষ্টা করে। এজন্য কৃষিকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়। এজন্য আমরা আধুনিক কৃষ্টি ব্যবস্থাপনা দিকে মনোযোগ দিয়েছে।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ভারত, চীনে রাশিয়ার চাইতেও আমাদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বেশি যে কারণে কৃষি জমির পরিমাণ কমছে। আধুনিক কৃষি ব্যবস্থাপনা জন্য আমরা পূর্বাচলে ২ একর জায়গায় ৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে একটি অত্যাধুনিক কৃষি ল্যাব তৈরির কাজ করছি। ইতোমধ্যে প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া দেশে উৎপাদিত কৃষ্টি পণ্য যাতে দ্রুত রপ্তানি করা যায় সেজন্য কয়েকটি পণ্যবাহী কার্গো ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
তিনি বলেন, আগামীতে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় হবে ৬ হাজার ডলার। এ লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে। উন্নয়নের গতি অব্যাহত রাখাতে সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা দরকার বলেও জানান কৃষিমন্ত্রী। সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে যারা গাড়িতে আগুন দেয় তারা ধর্মান্ধ জঙ্গী।
এর আগে সভাপতির বক্তব্যে এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, বিগত বছরে কৃষিতে বিপ্লব সাধিত হয়েছে। আন্তঃবাণিজ্য সমস্যা কমাতে সরকার কাজ করছে। আন্তঃবাণিজ্য সহজ করতে সরকারে সঙ্গে শিগগির আলোচনা করব আমরা। তিনি বলেন, টেকসই খাদ্য ব্যবস্থাপনাই আমাদের মূল লক্ষ্য। আমরা যখন উন্নত দেশে উন্নীত হব, টেকসই খাদ্য ব্যবস্থাপনা দরকার হবে আমাদের। আর এজন্য নীতিমালা প্রণয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আরো বলেন, ২০০৮ সালের ৭০ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি এখন প্রায় অর্ধ ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। কৃষিভিত্তিক শিল্পের বিকাশ ক্রমশ বৃদ্ধির মাধ্যমে জিডিপিতে শিল্পের অবদান বাড়ছে এ খাতে আমাদের অর্জনও অনেক। বাংলাদেশ এখন ২২টি কৃষিপণ্য উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ ১০ এ রয়েছে। ফলে এ খাতে সর্বাধিক মূল্য সংযোজনের সুযোগ আছে। তৈরি পোশাক শিল্পের পরেই প্রধানমন্ত্রী প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্যের ওপর গুরুত্ব দেয়ার পাশাপাশি প্রণোদনারও সুযোগ বৃদ্ধি করছেন এ খাতে।
দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠান প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আহসান খান চৌধুরী বলেন, দেশের রপ্তানিকে উচ্চতর জায়গায় পৌঁছে দিতে দুটি শব্দ মনে রাখতে হবে। প্রথমটি হলো চেঞ্জ বা পরিবর্তন। দ্বিতীয়টি হলো ডেভেলপ বা উন্নয়ন। এই দুটি শব্দ বিজনেসকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আহসান খান চৌধুরী বলেন, দেশ থেকে আমেরিকায় এক্সপোর্ট করা সহজ।
কিন্তু আমেরিকা থেকে দেশে ইমপোর্ট করা বেশ কঠিন। আমাদের দেশের কোম্পানিগুলোর সঙ্গে অন্যান্য দেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানের কোলাবরেশন নেই, যা থাকা জরুরি। এছাড়া কোম্পানিগুলোর যদি ইউএস ড্রাগের নিবন্ধন থাকে তাহলে এক্সপোর্ট করা বেশি সহজ হবে।
সেমিনারে যৌথভাবে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. মোহাম্মদ আবু ইউসুফ এবং ইউএসডিএ ফান্ডেড বাংলাদেশ ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন প্রজেক্টের (বিটিএফ) সিনিয়র টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজর এ এ এম আমিনুল এহসান খান। ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় আন্তঃবাণিজ্য চুক্তির গুরুত্ব তুলে ধরেন তারা। এ এ এম আমিনুল এহসান খান তার প্রবন্ধে উল্লেখ্য করেন আমদানিকৃত এগ্রো-পণ্যের ক্ষেত্রে ঝুঁকি পরিমাণ প্রায় ৬২ শতাংশ। প্রতি কন্টিনার পণ্য আমদানির করতে খরচ ৫ লাখ ৬৫ হাজার টাকা থেকে ল্যাব পরীক্ষা জন্য লাগে প্রায় আড়াই হাজার টাকা। ৮/৯দিন অতিরিক্ত পোর্ট চার্জ ১ লাখসহ মোট সাড়ে ৩ লাখ পর্যন্ত খবর পড়ে।
সেমিনারে সমাপনী বক্তব্য রাখেন এফবিসিসিআইর সিনিয়র সহসভাপতি মো. আমিন হেলালী। ব্যবসায়ীরা শান্তি ও স্থিতিশীলতার পক্ষেই রয়েছে বলে জানান তিনি। ইউএসডিএ ফান্ডেড বাংলাদেশ ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন প্রজেক্টের (বিটিএফ) প্রকল্প পরিচালক মাইকেল জে পার, এফবিসিসিআইর পরিচালকরা, প্যানেল উপদেষ্টারাসহ বিভিন্ন চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়