মানবতাবিরোধী অপরাধ : মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি খান রোকনুজ্জামান গ্রেপ্তার

আগের সংবাদ

ঝুঁকি প্রবল, প্রস্তুতি কম > বড় ভূমিকম্পের আশঙ্কা > মৃত্যুকূপ হবে রাজধানী > দুর্যোগ মোকাবিলায় সক্ষমতা নিয়ে সংশয়

পরের সংবাদ

‘নতুন বাংলাদেশের’ স্বপ্ন দেখাচ্ছে ৩০ চর

প্রকাশিত: অক্টোবর ৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

নোয়াখালী প্রতিনিধি : নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়া এখন আর সাগরঘেঁষা শেষ জনপদ নয়। বরং এর চারপাশে গত কয়েক বছরে মেঘনা নদীতে জেগে উঠেছে আরো ছোট-বড় প্রায় ৩০টি চর। নতুন করে জেগে ওঠা এসব চর নিয়ে মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে আশার আলো। বিশিষ্টজনদের মতে চরগুলোকে উৎপাদনমুখী করে গড়ে তুলতে পারলে একদিকে যেমন দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে তেমনি ভূমির সঠিক ব্যবস্থাপনায় তৈরি হতে পারে নতুন এক বাংলাদেশ। জানা গেছে, নোয়াখালীর মূল ভূখণ্ড থেকে চেয়ারম্যানঘাট হয়ে উত্তাল মেঘনায় ২১ কিলোমিটার নৌপথ পাড়ি দিয়ে যেতে হয় দক্ষিণের হাতিয়ায়। একসময় দক্ষিণ দিকে এ হাতিয়াই ছিল জেলার শেষ সীমানা। কিন্তু বর্তমানে এ হাতিয়াই শেষ নয়, বরং হাতিয়া থেকে বঙ্গোপসাগরের দিকে যেতে যেতে চোখে পড়বে অগণিত নতুন ভূমি। যার কয়েকটিতে গড়ে উঠেছে মানুষের বসতি। নীল²ী, সাগরদি, হরণি, চানন্দী, সুখচর ও নলচিরা ইউনিয়ন নিয়ে হাতিয়া উপজেলা প্রতিষ্ঠা হয়। ১৮৯০ সালের দিকে খরস্রোতা নদীর ভাঙনে বিলীন হয়েছিল নীল²ী, সাগরদি, হরণি, চানন্দী ও সুখচর এবং নলচিরার বেশির ভাগ অংশসহ বহু জনপদ। তবে যে পরিমাণ ভূমি বিলীন হয়েছিল পরবর্তী সময়ে তার চেয়েও কয়েকগুণ বেশি ভূমি ফিরিয়ে দিয়েছে মেঘনা। বর্তমানে মেঘনার চারপাশে প্রায় ৩০টি চর জেগে উঠেছে। এসব চরে হাজার হাজার একর জমি এখন দৃশ্যমান। বন বিভাগের তথ্য মতে, নতুন করে জেগে ওঠা চরগুলোর মধ্যে চরঘাসিয়ার আয়তন ৫,০০১, ঢালচর ৪,০০০, চরআতউর ৫,৬৮৩, চর মোহাম্মদ আলী ১,১৭১, দমারচর ৬,৩৬০, চর আয়েশা ৫,২১৩, চরগাঙ্গুরিয়া ১০,০০২, চর নুরল ইসলাম ১০,০০৩, চর প্রিয়া ২,৯৯৯, চর ওছখালি ৭,০০২, চর ইউনুস ৩,৭০০, নতুন চর ইউনুস ৭০০, চরকমলা ১৩,৩৩৯, চর ওসমান ৫,৫০০, চরমুয়িদ ৩,৩০০, চর কবিরা ২,০০০, চরকালাম ৮,৭৮৫, খাজার চর ৪,৫০০, চর রৌশন ৪,৫০০ এবং চর জোহান ৫,৭০০ একর। এর মধ্যে প্রায় সবগুলো চরের ৪৫,০০০ একর জমি উদ্যানের আওতায় আনা হয়েছে। স্থানীয়দের তথ্যমতে, ইতোমধ্যে বসতি গড়ে উঠেছে চরঘাসিয়া, ঢালচর, চরআতউরসহ কয়েকটি চরে। চর মোহাম্মদ আলী, দমারচর, চরজোনাক, চরগাঙ্গুরিয়া, চর নুরুল ইসলাম, চর প্রিয়া ও চরওছখালিসহ কয়েকটি চরে ধান চাষের পাশাপাশি রয়েছে গরু, মহিষ ও ভেড়ার বাতান। প্রাকৃতিক দুর্যোগে চরগুলো কয়েক ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেলে নৌকা ও গাছে অবস্থান নিয়ে মানুষ রক্ষা পেলেও প্রাণহানি হয় নিরীহ পশুগুলোর। জোয়ারে প্লাবিত হওয়ায় একাধিকবার ধান চাষ দিলেও ফলন মিলে একবার। এরপরও প্রতি বছর লাখ লাখ টাকার কৃষিপণ্য উৎপাদন হয় এ বিচ্ছিন্ন চরগুলোতে। তবে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে চরগুলোকে কৃষির আওতায় আনা হলে দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বলে জানান স্থানীয়রা।
তিন যুগ ধরে হাতিয়ার অনেক পরিবর্তন দেখা হাতিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) মো. তোফায়েল হোসেন বলেন, হাতিয়ার চারপাশে প্রাকৃতিকভাবে যেভাবে ভূমি জেগে উঠছে আগামী ১৫-২০ বছর পর চরগুলো একটির সঙ্গে আরেকটি যুক্ত হয়ে এ অঞ্চলে প্রায় অর্ধেকের মতো বাংলাদেশ আমরা দৃশ্যমান দেখতে পাব। সরকারিভাবে যদি এ চরগুলো বাঁধ দিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হয় তাহলে কৃষি, শিল্প কারখানাসহ এসব চরে অনেক কিছু করা সম্ভব হবে। এছাড়া নদীভাঙা ও ভূমিহীন মানুষগুলোকে পুনর্বাসন করা যাবে এসব চরে। চরগুলোকে উৎপাদনমুখী করে গড়ে তুলতে পারলে দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদী তিনি। হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (সদ্য সাবেক) মো. কায়সার খসরু বলেন, জেগে ওঠা চরগুলোর সার্বিক উন্নয়নে ইতোমধ্যে সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প থেকে কাজ শুরু করা হয়েছে। ক্রমান্বয়ে এসব চরের মানুষগুলোকে সরকারি সব সুযোগ-সুবিধার আওতায় আনা হবে। নোয়াখালী-৬ (হাতিয়া) আসনের সংসদ সদস্য আয়েশা ফেরদাউস বলেন, হাতিয়ার চারপাশে জেগে ওঠা নতুন চরগুলোতে ধান, বাদাম, সবজিসহ বিভিন্ন ধরনের কৃষিপণ্য উৎপাদন হচ্ছে। চরে পালন করা গরু ও মহিষের দুধ দিয়ে মূল্যবান দধি তৈরি হচ্ছে। সিডিএসসি এসব চরে কাজ শুরু করেছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ সরকারি সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়