প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
এন রায় রাজা : বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে না ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। কেন এমন সিদ্ধান্ত- এ নিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। গত বুধবার ইইউ সদর দপ্তর থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও নির্বাচন কমিশনে পাঠানো এক চিঠিতে পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে না বলে জানায় ইইউ। এর কারণ হিসেবে ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য বাজেট অনুমোদন না করার কথা জানিয়েছে তারা। তবে কেউ কেউ এর ভিন্ন ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। এ বিষয়ে ইউরোপীয় কমিশনের পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তাবিষয়ক মুখপাত্র নাবিলা মাসরালি জানিয়েছেন, বাংলাদেশের নির্বাচনে এখন তাদের পর্যবেক্ষণ মিশন পাঠালে উদ্দেশ্য পূরণ হবে না। বাজেট স্বল্পতা এই সিদ্ধান্তের কারণ কি না, সে সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে নাবিলা মাসরালি বলেন, ইইউর অনুসন্ধানী দল ও স্বাধীন বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম এ বিষয়ে বলেন, ঢাকায় নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে গত বুধবার যে চিঠি দিয়েছেন, তাতে পর্যবেক্ষক দল না পাঠানোর অন্যতম একটি কারণ হিসেবে ইইউর নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত বাজেট স্বল্পতার কথা উল্লেখ রয়েছে। ইসি সচিব বলেন, তাদের (ইইউ) প্রতিবেদনে লিখেছে- ইতোমধ্যে ইইউ সদর দপ্তর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে যে পূর্ণাঙ্গ একটি মিশন নির্বাচন পর্যবেক্ষণে পাঠানোর আর্থিক বিষয় ছিল, বাজেট স্বল্পতার কারণে তা আপাতত নামঞ্জুর হয়েছে। আপাতত পূর্ণ টিম না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে বিগত ৬ থেকে ২২ জুলাই বাংলাদেশ সফর করে তাতে সহযোগিতার জন্য ইসিকে তারা ধন্যবাদ জানিয়েছেন এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে তাদের সব সময় যোগাযোগ থাকবে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করেছেন চার্লস হোয়াইটলি ।
এ বিষয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনালেল (অব.) ড. সাখাওয়াত হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, তাদের
চিঠিতে কোথাও লেখা নেই বাজেট স্বপল্পতা। যেটা লেখা আছে তা হলো তাদের এ বিষয়ে বাজেট প্রভিশন করেনি। তারা বলেছে, আমাদের আগাম যারা এসেছিল, তারা বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে দেখেছে এখানে এখনো সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া সম্ভব নয়। তাই তারা নির্বচনী পর্যবেক্ষক পাঠাতে অর্থ বরাদ্দ করার প্রয়োজন বোধ করছে না। তারা হয়তো এদেশে যে দু’চারজন আছে তাদের মাঠে পাঠাবে। তিনি বলেন, তাদের তো ২৭টা দেশের একটি সংস্থা, না এলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের নির্বাচন নিয়ে একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। আমরা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বোঝাতে পারছিন না- এই সেটআপে আমরা একটা ভালো নির্বাচন করতে পারব। এমনিতে আমাদের বিগত দুটো জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক আছে। তাই এবারে সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে বিশ্বের বহু দেশ তাকিয়ে আছে। ইইউএর যে টিমটা জুলাইয়ে এসেছিল, তারা যা দেখে গেছেন তাতে তারা মনে করেছে এবারো একই পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে, একই লোকজন তো প্রশাসনে বসে আছে। ইইউ অনেক পুরাতন পর্যবেক্ষক দল। অর্থের অভাব যদি হতো তা হলে তারা মালদ্বীপে কীভাবে বসে আছে? এখানে আমাদের সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে অনেক দেশ নজর রাখবে। তাবে এই ২৭টি দেশ এককভাবে সিদ্ধান্ত নেয় না, যৌথভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এদিকে আমেরিকান প্রাক পর্যবেক্ষক দল আসছে, তারা দেখবে বুঝবে- তারপর কি সিদ্ধান্ত নেয় তা তারাই জানে।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার (অব.) শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ইইউ না এলে আমাদের নির্বাচনে কোনো সমস্যা হবে বা ক্ষতি হবে এমনটি আমি মনে করি না। তারা এলে নির্বাচনে একটু ফ্লেভার বাড়ে আর কি। তিনি বলেন, ইইউ নির্বাচনী পর্যবেক্ষক না আসার কারণ হিসেবে আর্থিক কারণ বলেনি। যদিও বলেছে বাজেট ইস্যু হয়নি। তাদের চিঠির মধ্যে বলা হয়েছে, জুলাইয়ে যে টিম পাঠিয়েছিল তাদের দেয়া রিপোর্ট এবং বাজেট ইস্যু এ দুটো মিলে তারা মনে করছে পূর্ণ পর্যবেক্ষক দল পাঠানোর প্রয়োজন নেই।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এ প্রসঙ্গে বলেন, ইইউ প্রতিনিধি দলের আসা বা না আসায় বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে ও নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতার ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব পড়বে না। অতীতের নির্বাচনগুলো তাই বলে।
শেয়ার করুন
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।