রাজধানীর ওয়ারীতে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে শ্রমিকের মৃত্যু

আগের সংবাদ

মুখে স্বস্তির ভাব, মনে উদ্বেগ : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে আলোচনার ঝড়

পরের সংবাদ

একক প্রার্থী চায় আ.লীগ কৌশলে মাঠে বিএনপি

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

শুকদেব নাথ তপন, ফেনী থেকে : আসন্ন জাতীয় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে ফেনীর ৩টি সংসদীয় আসনে উত্তাপ ততই বাড়ছে। হাটে-মাঠে একমাত্র আলোচনা- কে হচ্ছেন কোন দলের প্রার্থী। ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার পক্ষে বিভিন্ন বয়সের ভোটারদের আগ্রহের কোনো কমতি নেই। কে হবেন তার এলাকার প্রতিনিধি? এই নিয়ে ভোটারদের মধ্যে চলছে বিশ্লেষণ। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা এই আসনে জোটের নয়, দলীয় প্রার্থী চান। সেভাবেই তারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অন্যদিকে নীরব বিএনপি কৌশলে ভোটের মাঠ দখলের চেষ্টা করছে।
ফেনী-১ : ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার দুটি পৌরসভা ও চৌদ্দটি ইউনিয়ন নিয়ে ফেনী-১ আসনকে এক সময় বিএনপির দুর্গ বলা হতো। বর্তমানে এই আসনে শক্ত অবস্থানে রয়েছে আওয়ামী লীগ। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সবকটি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরাই নির্বাচিত হয়েছেন। তবে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের সমীকরণ কী, তা দেখার অপেক্ষায় সবাই। দীর্ঘ সময় ধরে জোটের জাসদ প্রার্থী শিরিন আখতার এমপি নির্বাচিত হলেও, এবার আর জোটের নয়, দলের প্রার্থী চায় আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, সংসদ সদস্য না থাকায় ক্ষমতায় থেকেও তারা বঞ্চিত হয়েছেন। তাই দলের প্রার্থীর বিকল্প নেই। জাসদ বলছে- জোটের মধ্যে কোনো বিভেদ নাই। অন্যদিকে বিএনপিতে এখনো দেখা যায়নি

ভোটের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া। তবে নির্বাচনে গেলে দল যাকেই মনোনয়ন দেবে, তাকেই জয়ী করতে একাট্টা তারা। গোপনে মাঠ গোছাতে সক্রিয় জামায়াতে ইসলাম। নিজেদের প্রার্থীও ঠিক করে রেখেছে দলটি। এছাড়া রাস্তা-ঘাটে, মাঠে ও হাট-বাজারে দেখা গেছে বেশকিছু স্বতন্ত্র প্রার্থীর পোস্টার। ভারত সীমান্তবর্তী এ আসনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া চারবার নির্বাচিত হয়ে দুইবার আসন ছেড়ে দেয়ায়, তার ছোট ভাই সাইদ ইস্কান্দার উপনির্বাচনে নির্বাচিত হন। গত ১১টি সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি দুবার তাদের দখল নিতে পারলেও, মুক্তিযুদ্ধপরবর্তী ১৯৭৩ সালের পর এ আসনটি আওয়ামী লীগের হাতছাড়া হয়ে যায়। একবারও দলটির কেউই নির্বাচিত হতে পারেননি। গত দুটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ছেড়ে দেয়ায় এ আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছেন মহাজোটের প্রার্থী। তবে আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা চায় দলের প্রাথী, জোটের নয়। খালেদা জিয়ার পৈতৃক ভিটার এ আসনটি স্থায়ীভাবে শেখ হাসিনাকে উপহার দিতে চায় আওয়ামী লীগ। নেতাকর্মীরা বলেন, একবার আসনটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নির্বাচিত হলে, আর কেউই ভোটে জিততে পারবে না এখানে।
এ আসনে ভোটের মাঠে প্রার্থী হিসেবে আছেন বর্তমান এমপি জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ-ইনু) সাধারণ সম্পাদক শিরিন আক্তার, ছাগলনাইয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান মেসবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেল, বিশিষ্ট সমাজ সেবক জালাল উদ্দিন চৌধুরী পাপ্পু, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মিজানুর রহমান মজুমদার, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাবেক নেতা ইসমাইল চৌধুরী স¤্রাট, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শেখ আবদুল্লা।
বিএনপি দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে বিএনপি নির্বাচনে যাবে কিনা, এ নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যেই ফেনী-১ আসনে তাকে ঘিরেই নির্বাচনী ছক আঁকছেন নেতাকর্মীরা। এ আসন থেকে খালেদা জিয়া পর পর চারবার এমপি নির্বাচিত হন। তবে ২০০১ সালের উপনির্বাচনে এ আসনটি তিনি ছোট ভাই প্রয়াত সাঈদ এস্কান্দারকে ছেড়ে দেন। শেষ পর্যন্ত খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ না নিতে পারলে তার পুত্রবধূ-আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান প্রার্থী হতে পারেন। এছাড়া জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু, ছাগলনাইয়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নুর আহম্মদ মজুমদার, পরশুরাম উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবু তালেব প্রার্থী হতে পারেন।
জাতীয় পার্টির দলীয় মনোনয়নের জন্য চেষ্টা করছেন মহিলা পার্টি ঢাকা মহানগরের সাধারন সম্পাদক সংরক্ষিত আসনের বর্তমান এমপি নাজমা আক্তার এবং জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি রাশেদ চৌধুরী সভাপতি। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন ব্যারিস্টার নিজাম উদ্দীন।
ফেনী- ২ : সদর উপজেলার ১২ ইউনিয়ন ও ফেনী পৌরসভা নিয়ে গঠিত ফেনী-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর তালিকায় আছেন দলটির জেলার সাধারণ সম্পাদক বর্তমান এমপি নিজাম উদ্দিন হাজারী, সাংবাদিক নেতা ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী. ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি ও জ¦ালানি মন্ত্রণালয়ের সদস্য সাইফুউদ্দিন নাসির ভুয়া এবং জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শাহীদ রেজা শিমুল।
নির্বাচনে অংশ নিলে এই আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন নিয়ে প্রতিযোগিতা হবে। সাবেক এমপি খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উপদেষ্টা অধ্যাপক জয়নাল আবেদিন ছাড়াও মনোনয়নের চেষ্টা করবেন সংরক্ষিত আসনের সাবেক এমপি ও ফেনী জেলা কমিটির সদস্য রেহেনা আক্তার রানু, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও জেলা বিএনপির বর্তমান আহ্বায়ক শেখ ফরিদ বাহার এবং জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি বর্তমানে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক গাজী হাবিব উল্যা মানিক।
এই আসনে জাতীয় পাটিরও একাধিক প্রার্থী রয়েছে। সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় আছেন জেলা জার্তীয় পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার নজরুল ইসলাম, জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দিন, ছাত্রসমাজের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মো. ইকবাল হোসেন। ফেনী-২ আসনে জামাতে ইসলামের একক প্রার্থী দলটির সুরা কমিটির সদস্য অধ্যাপক লিয়াকত আলী।
ফেনী-৩ : সোনাগাজী ও দাগনভূয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনের বর্তমান এমপি জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা লে. জেনারেল মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী। তবে আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে আসনটি ছাড়তে নারাজ স্থানীয় আওয়ামী লীগ। এই আসনে দলটির হাফ ডজন প্রার্থী রয়েছে। দলীয় মনোনয়ন লাভের চেষ্টা করছেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যন জহির উদ্দিন মাহমুদ লিপ্টন, সাবেক এমপি হাজী রহিম উল্যা. দাগনভূয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সভাপতি দিদারুল কবির রতন, ঢাকা উত্তর যুবলীগের সাবেক সভাপতি মো. আবুল বাসার, জেলা আওয়ামী লীগের সহসাভাপতি আকরাম হোসেন হুমায়ুন এবং সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও পৌর মেয়র রফিকুল ইসলাম খোকন।
নির্বাচনে অংশ নিলে এই আসনে বিএনপির প্রার্থী তালিকার শীর্ষে রয়েছেন দলটির উপদেষ্টা কমিটির সদস্য আবদুল আওয়াল মিন্টু। এছাড়া কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক দপ্তর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনী, দাগনভূয়া উপজেলা বিএনপি সাবেক সভাপতি আকবর হোসেন, সাবেক সেনা কর্মকর্তা আবদুল আওয়াল মিন্টুর ছোটভাই বিগ্রেডিয়ার নাসির উদ্দীন চৌধুরী দলীয় মনোনয়ন লাভের চেষ্টা করবেন।
অন্যদিকে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি ফখরু উদ্দিন মানিক, সাংবাদিক নেতা এম আবদুল্ল্যা এবং সাংবাদিক নেতা স্বপন মাহমুদ নিজ নিজ দলের পক্ষে নির্বাচনে অংশ নেয়ার চিন্তা করছেন।
নির্বাচনী প্রস্তুতির বিষয়ে ফেনী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ ফরিদ বাহার ভোরের কাগজকে বলেন, সরকার উন্নয়নের নামে দেশে লুটপাট চালিয়েছে। দেশের মানুষ দেখেছে, এই সরকার কীভাবে মানুষের ওপর অত্যাচার নির্যাতন চালিয়েছে। কীভাবে দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে মানুষের জীবনকে অসহনীয় করে তুলেছে। এমন অপশাসন দেখেও এই সরকারকে এবং এই দলের প্রার্থীকে ভোট দেয়ার প্রশ্নই আসে না। ভোট হলে মানুষ তাদের প্রত্যাখ্যান করবে। ফেনীর তিনটি আসনই বিএনপির ঘাঁটি। সুষ্ঠুও নিরপেক্ষ ভোট হলে এখানে বিএনপির প্রার্থীই বিপুল ভোটে নির্বাচিত হবে।
এ বিষয়ে ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট হাফেজ আহম্মদ বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে সারাদেশের সঙ্গে ফেনীরও ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। নারী ক্ষমতায়নে এখানে ব্যাপক সফলতা রয়েছে। জনগণ উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ফেনীর ৩টি আসনে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি বানাবে। জোট নয়, আওয়ামী লীগ এককভাবে নির্বাচন করলেও জনগণ নৌকার প্রার্থীকেই বিপুল ভোটে নির্বাচিত করবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়