রাজধানীর ওয়ারীতে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে শ্রমিকের মৃত্যু

আগের সংবাদ

মুখে স্বস্তির ভাব, মনে উদ্বেগ : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে আলোচনার ঝড়

পরের সংবাদ

আদৌ সংরক্ষণ হবে প্রীতিলতার স্মৃতিধন্য ইউরোপিয়ান ক্লাব?

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সমরেশ বৈদ্য, চট্টগ্রাম থেকে : চট্টগ্রামে পাহাড়তলীতে বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের নামে যাদুঘর প্রতিষ্ঠার সরকারি সিদ্ধান্ত হয়ে আছে। নানা সময়েই বিভিন্ন সরকারি কর্তা ব্যক্তিরা ঘোষণা দিয়েছেন- এই তো হয়ে যাবে, হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তা আর হচ্ছে না। কোথায় যে প্রতিবন্ধকতা তা আর কেউ বলছেন না। একসময়কার রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগের কার্যালয়টিকে প্রীতিলতা স্মৃতি যাদুঘর করার জন্য রেলপথ মন্ত্রণালয়বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ফজলে করিম চৌধুরী গত আগস্টে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির এক বৈঠকে জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, এটিকে ‘প্রীতিলতা স্মৃতি যাদুঘর’ এবং সিআরবিতে পাহাড়ের ওপর মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত রেলওয়ের বাংলোটিকে ‘মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি যাদুঘর’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হবে। ঘোষণা এসেছিল অনেক আগেই। কিন্তু অজ্ঞাত ও রহস্যজনক কারণে তা আর বাস্তবায়িত হচ্ছে না। তবে যতটুকু জানা গেছে এ সংক্রান্ত সরকারি গেজেটই হয়নি।
তবে রেলওয়েসহ বিভিন্ন সূত্রে যতটুকু জানা গেছে, রেলবিভাগ এই অফিসটি যাদুঘর করার জন্য ছেড়ে দিয়েছে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় সেটি বাস্তবায়ন করবে। কিন্তু আবার যদি পুরাকীর্তি হিসেবে সংরক্ষণের বিষয় আসে তাহলে তা প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের বিষয় রয়েছে। ১৯৩২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর বীরকন্যা প্রীতিলতার নেতৃত্বে ইংরেজদের ওপর হামলা করার সময় ইংরেজদের সঙ্গে সংঘটিত যুদ্ধে পুরুষবেশী যোদ্ধা প্রীতলতা ওয়াদ্দেদার গুলিবিদ্ধ হয়ে মারাত্মকভাবে আহত হন। কিন্তু ধরা পড়ে গেলে তিনি তার সহযোদ্ধা বিপ্লবীদের ব্যাপারে তথ্য ফাঁস করে দিতে পারেন এ আশঙ্কায় তিনি সে রাতেই পটাসিয়াম সায়ানাইড পানে আত্মাহুতি দেন। তৎকালীন সেই ইউরোপীয়ান ক্লাব পরবর্তী সময় রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
রেলওয়ে এখন আর ওই ভবনটিকে ব্যবহার না করায় অযতœ অবহেলায় তা নষ্ট হয়ে যেতে বসেছে। কিছুদিন আগে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে ‘বীরকন্যা প্রীতিলতা’ নামে একটি প্রামাণ্য চলচ্চিত্র নির্মাণের সময় ব্রিটিশ আমলে ইংরেজিতে যে ‘ইউরোপীয়ান ক্লাব’ লেখা ছিল সেভাবে ভবনটির সামনে ইউরোপীয়ান ক্লাব লেখা হয়েছিল। কিন্তু সেই লেখার কয়েকটি বর্ণ এরই মধ্যে খসে পড়েছে। আর ভবনটির ভেতরে যেসব আসবাবপত্র ছিল সেগুলোও অযতেœ-অবহেলায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বলতে গেলে এটি একটি পরিত্যক্ত ভবনে পরিণত হয়েছে। চট্টগ্রামের বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, যুব ও ছাত্র সংগঠনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১২ সালে প্রীতিলতার একটি আবক্ষ ভাস্কর্য স্থাপন করেন তৎকালীন সিটি মেয়র এম মঞ্জুর আলম এই ইউরোপীয়ান ক্লাবের কাছে।
এরপর ২০১৮ সালে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি চট্টগ্রাম সফরের সময় এই ঐতিহাসিক স্থানটিও পরিদর্শন করেন ও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রীতিলতার স্মৃতির প্রতি। এর পরই সেখানে ‘বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার স্মৃতি যাদুঘর’ এর নামফলকও স্থাপন করা হয়। কিন্তু সেই নামফলক স্থাপন ও ঘোষণা পর্যন্তই।
তবে সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো, ভারতীয় কোনো প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ, মন্ত্রী, এমপি বা খ্যাতনামা সাংস্কৃতিক-সামাজিক ও গণমাধ্যমের ব্যক্তিবর্গ চট্টগ্রাম যুববিদ্রোহের সঙ্গে জড়িত বিপ্লবীদের স্মৃতিচিহ্ন বা স্থাপনা পরিদর্শনে এলে আমাদের দেশের কর্তা ব্যক্তিদের টনক নড়ে। তখন বলা হয়- এসব স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অত্যন্ত আন্তরিক, ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবীদের চেতনার পথ ধরেই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা এসেছে। তাই এগুলো সংরক্ষণসহ

নতুন প্রজন্ম, পর্যটক ও ইতিহাস-ঐতিহ্যপ্রেমীদের জন্য যাদুঘরসহ অনেক কিছুই করা হবে। কিন্তু সে পর্যন্তই। এরপর আর কোনো কাজ হয় না।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক-প্রাবন্ধিক হোসাইন কবির বলেন, আমাদের মধ্যে ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণের আগ্রহের প্রচণ্ড অভাব রয়েছে। অথচ আমাদের যেসব বীরত্বগাথা রয়েছে সেসব ইতিহাস-ঐতিহ্য সংরক্ষণ না করলে আমরা একটি অকৃতজ্ঞ-অশিক্ষিত জাতিতে পরিণত হবো। তাই অনতিবিলম্বে শুধু বীরকন্যা প্রীতিলতা স্মৃতি যাদুঘর প্রতিষ্ঠা নয়, আরো যেসব বিপ্লবী রয়েছেন তাদের স্মৃতিও সংরক্ষণ করা জরুরি। চট্টগ্রাম বিপ্লব ও বিপ্লবী স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের সদস্য ও সাংবাদিক মিঠুন চৌধুরী ক্ষেভের সঙ্গে বলেন, ‘শুধু ঘোষণাই আসে, বাস্তবায়ন আর হয় না। প্রজন্মের পর প্রজন্ম চলে যাচ্ছে। সঠিক ইতিহাস জানার সুযোগ তারা পাচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে স্মৃতি বিজড়িত ইউরোপিয়ান ক্লাব হয়ত আর সংরক্ষণ করাই সম্ভব হবে না।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়