গ্রিন ভয়েস : প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধের দাবিতে সাইকেল র‌্যালি

আগের সংবাদ

বাজেটে কেউ খুশি নয় : সাধারণ মানুষের ওপর করের বোঝা বেড়েছে, পূরণ হয়নি ব্যবসায়ীদের বেশিরভাগ দাবি

পরের সংবাদ

শিষ্টাচারের সীমারেখা নিয়ে প্রশ্ন : নির্বাচন ও রাজনীতি নিয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সিরিজ বৈঠক > তৎপর জাপনি রাষ্ট্রদূতও

প্রকাশিত: জুন ৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য : ভোটের আর বেশি দেরি নেই। মাসছয়েক পরই বাংলাদেশে ভোট। যখনই ভোট আসে তখন বাংলাদেশের ভেতরেও স্বার্থান্বেষীগোষ্ঠী সক্রিয় হয়ে ওঠে। এবারো ভোটের আগে তৎপর তারা। গত কদিন ধরেই বাংলাদেশের রাজনীতি ও আসন্ন ভোট নিয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সিরিজ বৈঠক করে যাচ্ছেন। গত তিন দিনের মধ্যে তিনি জাতীয় পার্টি, বিএনপি ও সরকারের মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সবশেষ গতকাল মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেছেন পিটার ডি হাস। এই বৈঠকগুলো রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে হয়েছে।
সরকার বলছে, রাষ্ট্রদূতরা যদি তাদের কাজের বাইরে গিয়ে সীমারেখা অতিক্রম করে তাহলে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস জাতীয় পার্টির সঙ্গে এক বৈঠকে জিজ্ঞেস করছেন, আপনারা কি আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করবেন- নাকি আলাদা নির্বাচন করবেন। জাপানের রাষ্ট্রদূত বিএনপির সঙ্গে বৈঠকে বলেছেন, যদি ক্ষমতা বদলায় তাহলে বাংলাদেশে কি বিনিয়োগের পরিবেশ থাকবে? বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে দুজন রাষ্ট্রদূত কথা বলেন, তখন প্রশ্ন ওঠে এটা কতটা কূটনৈতিক শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে?
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, সাধারণত ভোট এলেই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের নাকগলানো শুরু হয়। ২০১৩ সালে শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন মার্কিন প্রশাসনের প্রতিনিধিরা। সেই সময় ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত ছিলেন ড্যান মোজিনা। সেদিন বৈঠকে মার্কিন প্রতিনিধিদলের সামনেই শেখ হাসিনা

রসিকতার ছলে বলেছিলেন, ‘ড্যান মোজিনা রাষ্ট্রদূত শুধু নন; আপনাকে আমরা বিএনপি দলের ওয়ার্কিং গ্রুপের সদস্য বলে মনে করি’। সংশ্লিষ্টদের মতে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর প্রথমবারের মতো বিদেশি কূটনীতিকরা বাংলাদেশের রাজনীতিতে নাক গলাতে শুরু করেন। সরকারের কী করা উচিত, কীভাবে করা উচিত- এসব নির্দেশনা আসতে থাকে বিদেশ থেকে। সময়ের পরিক্রমায় কিছু পরিবর্তন হলেও স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও তা বন্ধ হয়নি। একাদশ সাধারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে কিছু রাষ্ট্রদূতের ‘অতি-উৎসাহী ও অতি-সক্রিয় কর্মকাণ্ড’ ছিল লক্ষণীয়। এবার তারা দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়েও হস্তক্ষেপ করতে শুরু করেছেন। বিদেশি কূটনীতিকরা কীভাবে এবং কেন আন্তর্জাতিকভাবে নির্ধারিত শিষ্টাচার অনুসরণ না করে একটি স্বাধীন, সার্বভৌম দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাচ্ছেন- এ নিয়ে ভাবার সময় এসেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
জানতে চাইলে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন চৌধুরীর মতে, ‘এটা পুরনো ইস্যু। তারা বলেন, আমরা শুনি। সবশেষ ভোটে গাজীপুরে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। তবু জাতীয় পার্টিকে নিয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের এমন প্রশ্ন ভাবনার জন্ম দেয়। এ ধরনের হস্তক্ষেপ কিন্তু কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
রাজনীতিবিদ রাশেদ খান মেনন ভোরের কাগজকে বলেন, ভোট এলেই বিদেশি কূটনীতিকদের এমন তৎপরতা আমাদের রাজনীতির দুর্বলতা। আমাদের নেতারা সব সময় তাদের দিকেই তাকিয়ে থাকেন। নালিশ জানানোর কারণে তারা আরো উৎসাহী হয়ে ওঠে। অথচ উন্নত দেশে এমনটি করা কখনোই সম্ভব নয়। তার মতে, কূটনীতিকরা ভিসানীতি নিয়ে থাকুক, আমরা আমাদের নির্বাচন নিয়ে থাকি।
জানা গেছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত জুলাই মাসে ঢাকায় অবস্থিত সব বিদেশি দূতাবাস, জাতিসংঘের কার্যালয় এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাকে একটি চিঠি পাঠিয়েছিল; যাতে কূটনৈতিক সম্পর্কের ১৯৬১ সালের ভিয়েনা কনভেনশন এবং কনস্যুলার সম্পর্কের ১৯৬৩ সালের নীতিমালা মেনে চলার আহ্বান জানানো হয়। পাশাপাশি ঢাকায় কর্মরত কূটনীতিকদের অবশ্যই জানা উচিত তাদের আচরণ ভিয়েনা কনভেনশন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। তারা কী করতে পারে এবং কী করতে পারে না তা স্পষ্টভাবে সেখানে বলা আছে। ভারতে দায়িত্ব পালন করা বিদেশি কূটনীতিকরা কনভেনশনের বাইরে যান না। রাষ্ট্রদূতরা দেশগুলোর পারস্পরিক সম্পর্কের উন্নয়নে কথা বলবেন, কাজ করবেন এবং সহায়তা করবেন। এটি সর্বোত্তমভাবে কূটনৈতিক শিষ্টাচার। এর বাইরে যাওয়ার উপায় নেই তাদের। একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে নিয়োগকৃত বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের অবশ্যই তার পররাষ্ট্র দপ্তরকে জানাতে হবে তারা কোথায় যাবেন, কার সঙ্গে কথা বলবেন বা কাকে আমন্ত্রণ জানাবেন। কিন্তু কখনো কখনো তা মানা হয় না। আবার, ঢাকায় অবস্থানরত কিছু দেশের কূটনীতিকরা এ দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয়ে স¤প্রতি যে ধরনের মন্তব্য করছেন তা আন্তর্জাতিক শিষ্টাচারের পরিপন্থি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তারা মনে করেন, এ দেশের রাজনৈতিক দল ও রাজনীতিবিদদের মধ্যে যারা অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের জন্য বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের আমন্ত্রণ জানান, তাদেরও মনে রাখতে হবে- রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান পারস্পরিক আলোচনা ও নিয়মতান্ত্রিক পন্থায়ই হয়। দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশিদের কাছে অভিযোগ করার কোনো গণতান্ত্রিক সমাধান নেই। মূলত তাদের অভিযোগের কারণেই বিদেশিরা দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের সুযোগ পাচ্ছে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল গত রাতে একটি টেলিভিশন আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন, রাজনীতি সমাজবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। যার কারণে বিদেশিদের কথা আলোচনা করতে হচ্ছে। বিদেশি রাষ্ট্রদূত এমন প্রশ্ন তোলার সাহস কোথা থেকে পেল? আমি মনে করি, রাজনৈতিক দলের যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে- ক্ষমতায় যাওয়া এবং ক্ষমতায় থাকা হচ্ছে তাদের মূল লক্ষ্য।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম গত সোমবার বলেছেন, বিদেশি রাষ্ট্রদূতরা যদি তাদের কাজের সীমারেখা অতিক্রম করেন, তাহলে সরকার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। জাপানের রাষ্ট্রদূত ইয়ামা কিমিনোরির বিএনপির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের শামিল কিনা- প্রশ্নের জবাবে শাহরিয়ার আলম বলেন, আমার বিস্তারিত (জাপানের রাষ্ট্রদূতের দুই বৈঠক সম্পর্কে) জানা নেই। ছয় মাস আগে অবশ্যই একটা পর্ব গেছে। যদি কোনো দেশের রাষ্ট্রদূত আবার সে ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত হন, যেটা আমরা মনে করি যে তাদের কাজের সীমারেখা অতিক্রম করছে, তাহলে আমরা অবশ্যই তা বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশের কোনো কোনো রাজনীতিবিদ বিদেশি কূটনীতিকদের প্রতি অদ্ভুত এক মানসিকতা পোষণ করেন। বিদেশি কূটনীতিকদের দেখলে তাদের উৎসাহ কয়েকগুণ বেড়ে যায়। কিছু হলে এসব বিদেশিদের ডেকে অভিযোগ করা হয়। তারা জনগণের কাছে, দেশের ভোটারদের কাছে অভিযোগ করার মতো খুব বেশি কিছু করেন না। তারা বিদেশি কূটনীতিকদের কাছে অভিযোগ জানাতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। যা হওয়া উচিত নয়।
একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অধ্যাপক বলেন, আমাদের সাংবাদিকদের দায়িত্বও কম নয়। বিদেশি কূটনীতিকদের দেখলে সাংবাদিকরা বিভ্রান্ত হন। তাদের মুখ থেকে কিছু শোনার জন্য তিনি ব্যাকুল হয়ে ওঠেন। ‘বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন কেমন হবে বলে আপনি মনে করেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ আছে কি, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ কী’- এ জাতীয় প্রশ্ন করে বসেন। এটি আমাদের দেশের সাংবাদিকতা পেশার একটি বড় দুর্বলতা। কাকে সম্মান করতে হবে, কী জিজ্ঞাসা করতে হবে, কীভাবে সঠিক প্রশ্ন করতে হবে এবং উত্তর পেতে হবে তা অনেকেই জানেন না। বিশ্বের আর কোনো দেশে বিদেশি কূটনীতিকদের সাংবাদিকরা এতটা গুরুত্ব দেন না। এর জন্য আমাদের রাজনীতিবিদরাই প্রধানত দায়ী। তারাই বিদেশি কূটনীতিকদের রাজনীতি ও অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কথা বলার সুযোগ দিয়েছেন।
অনেকের মতে, নির্বাচন এলে বিদেশি রাষ্ট্রদূতরা নিজেরাই সক্রিয় হয়ে ওঠে; আবার বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের সক্রিয় করে। বিদেশি কূটনীতিকদের উন্মুক্ত তৎপরতা এখনো চলছে, ভবিষ্যতেও চলতে পারে। ক্ষমতায় থাকা দলের নেতারা কূটনীতিকদের খুব বেশি দৌড়াদৌড়ি পছন্দ করেন না। কিন্তু বিরোধী দলে থাকলে তারা বিদেশি কূটনীতিকদের হস্তক্ষেপে উৎসাহিত করেন। রাজনৈতিক দলগুলোর পারস্পরিক অবিশ্বাস নিয়ে নানা মন্তব্য করেন বিদেশি কূটনীতিকরা। স¤প্রতি বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। যা অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অযাচিত হস্তক্ষেপ। তবে বাস্তবে দেশের রাজনৈতিক দুর্বলতা কূটনীতিকদের তৎপরতা বাড়ানোর সুযোগ দেয়। রাজনীতিবিদদের সঙ্গে দেখা করার সময় তারা কী আলোচনা করেন তার বিস্তারিত জানা যায়নি। তাদের সঙ্গে বৈঠককারী দলগুলোও বিস্তারিত জানায় না।
জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভোটের আগে কূটনীতিকদের দৌড়ঝাঁপ নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত প্রথমেই জানতে চান, ভোট নিয়ে বিএনপির পরিকল্পনা কী। তবে হঠাৎ এমন বৈঠকের বিষয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য পাওযা যায়নি। কোনো নেতা কথা বলতে রাজি হননি। প্রসঙ্গত, গত ১৬ এপ্রিলও মির্জা ফখরুলসহ কয়েকজন বিএনপি নেতা গুলশানে রাষ্ট্রদূতের আমন্ত্রণে তার বাসায় গিয়েছিলেন। সেই বৈঠকের বিষয়েও দলটির পক্ষ থেকে কিছু জানানো হয়নি। ৪ জুন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইয়ামা কিমিনোরি। গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকের পর আমির খসরু মাহমুদ জানান- জাপানি রাষ্ট্রদূত বিএনপি নেতাদের কাছে জানতে চান, ‘সরকার পরিবর্তন হলে বাংলাদেশে বিনিয়োগের পরিবেশ থাকবে কিনা’। জাপানি দূতের এমন বক্তব্য ‘ইঙ্গিতপূর্ণ এবং শিষ্টাচারের চরম লঙ্ঘন’ বলে মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা।
সংশ্লিষ্টদের মতে, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ। এর একটি নির্বাচিত সরকার আছে। এর শাসনব্যবস্থায় রয়েছে ধারাবাহিক দিকনির্দেশনা। বাংলাদেশে নির্বাচন কীভাবে হবে, কারা মনিটর করবে- তা এ দেশের জনগণ ঠিক করবে। বিদেশি প্রতিনিধিদের হস্তক্ষেপ কেন? প্রধান দুই রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসার জন্য বিদেশিদের আশীর্বাদ নিতে চায় বলেই হয়তো এমনটা হয়েছে। রাষ্ট্রদূতদের তাদের সঙ্গে দেখা হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। রাষ্ট্রদূতরা তাদের দেশের স্বার্থে সবার সঙ্গে কথা বলেন। কিন্তু কোনো অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্য করা তাদের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে না। মাত্র বছরখানেক আগে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র কূটনৈতিক সম্পর্কের অর্ধশতবর্ষ উদযাপন করেছে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে বহুপক্ষীয় গণতন্ত্র বিকাশ করতে চায়। কিন্তু কথা আর কাজ এক নয়। তা থাকলে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি আগ্রাসন, সৌদি আরব বা অন্যান্য উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে তাদের অবস্থান ভিন্ন হতো। সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় প্রতিদিনই বিদেশি কূটনীতিকরা যুক্ত হচ্ছেন। সব কূটনীতিক এখনো নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করছেন। নির্বাচন জাতীয় স্বার্থের বিষয়। এটা ভয়ানক, বিদেশি কূটনীতিকরা আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যায় হস্তক্ষেপ করেছে।
এমন পরিস্থিতির মধ্যে গত রবিবার জাতীয় পার্টির সঙ্গে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বৈঠক করেছেন। বৈঠকে দেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে দেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি ঘোষণার পর এর প্রতিক্রিয়া কী, এটি কীভাবে আরো কার্যকর করা যায় এসব বিষয়ে আলোচনা হয়। এছাড়া দুই পক্ষের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বিষয়েও দীর্ঘ সময় কথা হয়। ওই বৈঠকে মার্কিন দূত জানতে চান, আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টি জোটগতভাবে অংশ নেবে কিনা। প্রশ্ন উঠেছে- পিটার হাসের এমন প্রশ্ন সঙ্গত কিনা? তিনি কি কোনো মহলকে সুবিধা পাইয়ে দিতেই নির্বাচনী রাজনীতিতে স্পর্শকাতর এমন তথ্য সংগ্রহ করতে চান?
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলের উপনেতা জি এম কাদের অবশ্য বলেছেন, মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক ভালো। তিনি (রাষ্ট্রদূত) জানতে চেয়েছেন, আমি যেসব বক্তব্য দিচ্ছি এবং লেখালেখি করছি, তাতে আমার কোনো সমস্যা বা ঝামেলা হচ্ছে কিনা। এছাড়া ভিসানীতি কেমন হয়েছে, এটি আরো কীভাবে কার্যকর করা যায়, এ ব্যাপারে কোনো পরামর্শ আছে কিনা, এসব নিয়ে কথাবার্তা হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও আইনমন্ত্রীর সঙ্গে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বৈঠক : প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। গতকাল মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সরকারি অফিসে ওই বৈঠক হয়। এ বৈঠকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ছাড়াও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন। ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন দূতাবাস থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও বৈঠকের কথা নিশ্চিত করেন। বৈঠকে আলোচনার বিষয় সম্পর্কে আইনমন্ত্রী বলেন, শ্রম আইন নিয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কথা হয়েছে। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু বক্তব্য ছিল। সেসব বিষয় নিয়েই রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের সরকারের বক্তব্য জানতে চেয়েছেন। এই আলোচনা অব্যাহত থাকবে বলেও উল্লেখ করেন আইনমন্ত্রী।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়