গ্রিন ভয়েস : প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধের দাবিতে সাইকেল র‌্যালি

আগের সংবাদ

বাজেটে কেউ খুশি নয় : সাধারণ মানুষের ওপর করের বোঝা বেড়েছে, পূরণ হয়নি ব্যবসায়ীদের বেশিরভাগ দাবি

পরের সংবাদ

কূটনীতিকদের তৎপরতায় বিএনপি নেতাদের উচ্ছ¡াস

প্রকাশিত: জুন ৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রুমানা জামান : গত কয়েকদিন ধরেই কূটনৈতিক পাড়ায় বিএনপির দৌড়ঝাঁপ ও নানা বৈঠক ঘিরে আলোচনা চলছে রাজনীতির মাঠে। বৈঠকের ভেতরের আলোচনা নিয়ে দলটির নেতারা প্রকাশ্যে কিছু না বললেও বৈঠক শেষে হাসিমুখে রেবিয়ে যাওয়া দেখলে বোঝা যায়, তারা বেশ স্বস্তিতে আছেন। কূটনৈতিক বৈঠক প্রশ্নে বিএনপির নেতাদের বক্তব্য- আগামী নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে তারা জানতে চান, বুঝতে চান। তারা বাংলাদেশে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকারের পরিবর্তন দেখতে চান। বিদেশিদের এমন তৎপরতা ইতিবাচক। বিএনপির দাবি- ক্ষমতাসীনরা নানামুখী চাপে আছে। এর মধ্যে কূটনৈতিক চাপও রয়েছে। গণতন্ত্র ও নির্বাচন প্রশ্নে এ চাপ আরো বাড়াতে চায় দলটি। এজন্য কূটনৈতিক মহলে তাদের দৌড়ঝাঁপ বেড়েছে। বিএনপির নেতারা অবশ্য বলছেন, ‘নির্বাচনকালীন সংকট’ সমাধানে কূটনৈতিক মহলের ভূমিকা রাখার যেমন সুযোগ আছে। তেমনি ১০ দফা দাবি আদায়ে আন্দোলনের পাশাপাশি বিদেশি বন্ধুরাষ্ট্রের সহায়তা প্রয়োজন। তাইতো দৌড়ঝাঁপ নয়; আলোচনার মাধ্যমে তাদের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করা হচ্ছে। একই সঙ্গে বিদেশি প্রতিনিধিরাও ক্ষমতায় গেলে বিএনপির অবস্থান কী হবে, তারা কী করতে চায়- এ বিষয়েও পরিষ্কার ধারণা নিচ্ছেন।
জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভোরের কাগজকে বলেন, বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের চোখ খুলে গেছে। বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে তারা ‘সিরিয়াসলি কনসার্ন’। এটা অবশ্যই ইতিবাচক। নিঃসন্দেহে গণতান্ত্রিক বিশ্ব চাইবে বাংলাদেশে স্বচ্ছ নির্বাচন হোক। নির্বাচন বিষয়ে এবার তাদের অভিমত একেবারেই স্পষ্ট। তিনি বলেন, ২০১৪ নির্বাচনকে ঘিরে জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত তারানকোর সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি সবার জানা আছে। আওয়ামী লীগ মধ্যবর্তী নির্বাচনের কথা দিয়েও তখন বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। আর বিএনপি আন্তর্জাতিক বিশ্বের ওপর নয়; জনগণের শক্তিতে বিশ্বাস করে। এক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক বিশ্বের ভূমিকা যদি কাজ করে, সেটা আমাদের জন্য ইতিবাচক হবে।
গত ১৬ মার্চ থেকে ৬ জুন পর্যন্ত ঢাকায় নিযুক্ত জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ভারত, জাপানসহ বেশ কয়েকটি দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক কমিটির সদস্যরা। ওই বৈঠকগুলোতে কেন এই সরকারের অধীনে বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যেতে চায় না- তা ব্যাখ্যা করেছে দলটি। এর পক্ষে দলীয় সরকারের অধীনে বিগত দুটি নির্বাচন কেমন হয়েছে এবং এর মধ্য দিয়ে কীভাবে নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে- লিখিত ও অলিখিত ফরম্যাটে তা তুলে ধরেন নেতারা। বিএনপি যে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না, সেটিও স্পষ্ট করেছেন তারা।
কূটনৈতিক নেতাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে চলেন এমন এক নেতা ভোরের কাগজকে বলেন, এসব বৈঠকে এখন মূল বিষয় থাকে আগামী নির্বাচন। চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আগামী নির্বাচনসহ সার্বিক পরিস্থিতি নিয়েও বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরা জানতে চান। নির্বাচন নিয়ে বিএনপির পরিকল্পনাও তারা বুঝতে চান। এক্ষেত্রে বিএনপির পক্ষ থেকে সব সময়ই আগের নির্বাচনী পরিবেশ তুলে ধরে বলা হয় নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না।
কূটনীতিকদের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক প্রসঙ্গে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির প্রধান আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ভোরের কাগজকে বলেন, দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা সরকারের দখলে চলে গেছে এটা সরাসরি বিদেশি প্রতিনিধিরাও বলছে। আগামী নির্বাচনের পরিবেশ পরিস্থিতি তারা পর্যবেক্ষণ করছে। তিনি বলেন, কীভাবে আগামী নির্বাচনটা হতে যাচ্ছে, কীভাবে এটাকে নিরপেক্ষ অংশগ্রহণমূলক করা যায়। সেই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আলোচনাটা হচ্ছে। এক্ষেত্রে এই সরকারের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না- সেটা আমরা খোলাখুলিভাবে বলছি।
বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক কমিটির এক সদস্য বলেন, র‌্যাব এবং এর সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তাকে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল, ফের এলো ভিসানীতি। আগামীতে আরো বড় কিছু আসবে- এমন সম্ভবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না। তার মতে, নতুন করে ভীসানীতি দেয়ায় সরকার চাপে আছে। এটা বুঝেই নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের যে দাবি তা বাস্তবায়নে সরকারের ওপর আরো চাপ তৈরি করতে বিএনপির কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। সূত্র জানায়, বিএনপির একজন স্থায়ী কমিটির সদস্য গত ২০ দিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করে সেখানকার ‘পলিসি মেকারদের’ সঙ্গে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনের পরিস্থিতি কী হবে তা নিয়ে সিরিজ বৈঠক করছেন।
গতকাল মঙ্গলবার ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে ২ ঘণ্টাব্যাপী একান্ত বৈঠক করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পিটার হাসের আমন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে গিয়ে এ বৈঠক করেন তিনি। সূত্র জানায়, বৈঠকে বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে, সে ব্যাপারে বিএনপির অবস্থান ও প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েছিলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। এ সময় মির্জা ফখরুল দলের অবস্থান তুলে ধরে বলেছেন, সরকার যেহেতু নির্বাচনী প্রক্রিয়াসহ গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করেছে, সে প্রেক্ষাপটে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি দিয়েছে সেটা ইতিবাচক। এর আগে গত ১৬ এপ্রিল বিএনপির মহাসচিব যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়