গণতন্ত্র মঞ্চের হুঁশিয়ারি : সমাবেশে বাধা দিলে পরিণতি ভালো হবে না

আগের সংবাদ

পাহাড় কাটার হিড়িক, দুই ফসলি জমির টপ সয়েল যাচ্ছে ভাটায়

পরের সংবাদ

সংকটকালেও মে মাসে এলসি বেড়েছে : বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন

প্রকাশিত: জুন ৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : সংকটের মধ্যেও চলতি অর্থবছরের এপ্রিলের তুলনায় মে মাসে আমদানি এলসি ওপেনিং ও সেটেলমেন্ট দুটোই বেড়েছে। আগামীতে আমদানির চাহিদা আরো বাড়লেও ডলারের প্রবাহ নিয়ে শঙ্কায় ব্যাংকাররা। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে- চলতি মে মাসে নতুন এলসি ওপেনিং হয়েছে ৫ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার যা আগের মাস এপ্রিলের তুলনায় ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন বা ২৫ শতাংশ বেশি। একইসঙ্গে এলসি সেটেলমেন্ট মে মাসে হয়েছে ৪ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলার যা আগের মাসের তুলনায় বেড়েছে ১০ শতাংশ।
জানা গেছে- গত এপ্রিল মাসে ব্যাংক অনেক ধরনের কনজ্যুমার প্রডাক্টের এলসি ও ছোট ছোট অনেক ব্যবসায়ীদের এলসি খোলা কমিয়ে দিয়েছে। কারণ ওই মাসে কিছু ব্যাংক অধিক দামে রেমিট্যান্স কেনায় বাংলাদেশ ব্যাংক সতর্ক করেছে। যার প্রভাব পড়েছে ব্যাংকগুলোর ডলারের প্রবাহতে। সাধারণত মে, জুন মাসে এলসি ওপেনিং বাড়ে। সামনে কোরবানির ঈদ রয়েছে। এছাড়া অতিরিক্ত দামে ডলার কেনা ব্যাংকগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংকের শর্তসাপেক্ষে শাস্তি শিথিল করায় মে মাসে এলসি ওপেনিং বেড়েছে।
যদিও এপ্রিলের এলসি ওপেনিং ৩২ মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম ছিল। এছাড়া এলসি নিষ্পত্তি ছিল ২১ মাসের মধ্যে সর্বনি¤œ। এপ্রিলে এলসি ওপেনিং ও সেটেলমেন্ট হয়েছে যথাক্রমে ৪ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ও ৪ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলার।
চলতি অর্থবছরের (জুলাই-এপ্রিল পর্যন্ত) সময়ে মোট ৫৬ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলারের এলসি খোলা হয়েছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় এ পরিমাণ প্রায় ২৭ শতাংশ কম। সেইসঙ্গে অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে এলসি সেটেলমেন্ট করা হয়েছে ৬২ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলারের, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৮ শতাংশ কম।
এ ব্যাপারে আমদানিকারকরা জানিয়েছেন, এলসি মার্জিন রাখাসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সব শর্ত মানলেও ব্যাংকগুলো চাহিদামতো এলসি খুলছে না। এক ব্যাংক থেকে আরেক ব্যাংকে ঘুরতে হচ্ছে এলসি খোলার জন্য। এসব কারণে উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন মতে- কম্পিউটার বা মোটরসাইকেলের মতো ইন্ডাস্ট্রিয়াল মেশিনারির এলসি খোলা কমেছে ৪৬ শতাংশ। টেক্সটাইল ফেব্রিক ও কেমিক্যালের মতো ইন্ডাস্ট্রিয়াল ‘র’ ম্যাটেরিয়ালের এলসি খোলা কমেছে ৩২ শতাংশ। সিমেন্ট, স্ক্র্যাপ ভেসেলের মতো মধ্যবর্তী পণ্যের এলসি খোলা কমেছে ৩১ শতাংশ, চাল ও গমের মতো ভোগ্যপণ্যের এলসি খোলা কমেছে ১৮ শতাংশ।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে- এলসি খোলার বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোন ধরনের বাধা নেই। তবে ৩ মিলিয়ন ডলারের বেশি এলসিগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে রিপোর্ট করা হয়। ব্যবসায়ীদের কখনো আমদানি বাড়ে, আবার কখনো আমদানি কমে। সামনে ঈদের সময়ে আরো এলসির পরিমাণ বাড়বে। ব্যাংকগুলোর ডলার প্রবাহও স্বাভাবিক রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি বেসরকারি ব্যাংকের এমডি বলেন, মুডিস রেটিং স¤প্রতি আমাদের ব্যাংকসহ একাধিক ব্যাংককে নেগেটিভ আউটলুক দিয়েছে, এতে আমাদের ইম্পোর্ট কস্ট বেড়ে যাবে। আমাদের অনেক পেমেন্ট ডেফার্ড করে করে সময় বাড়াচ্ছি, এগুলো পরিশোধ করা ব্যাংকের জন্য চ্যালেঞ্জিং হবে। রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ের প্রবাহ তেমন বাড়ছে না। এছাড়া বিদেশি উৎস থেকে যে লোন পাওয়া যেতো এ নেগেটিভ রেটিংয়ের কারণে তাতে অনেকটা প্রভাব পড়বে যা ব্যাংকগুলোর জন্য সমস্যা হবে।
তিনি বলেন- বাংলাদেশ ব্যাংকের এখন যে কোনো উপায়ে বিলাসী পণ্য আমদানি বন্ধ করতে হবে এবং হুন্ডির ব্যবহার কমাতে হবে। এক্সচেঞ্জ রেট বাড়িয়ে হুন্ডি কমানো যাবে না কারণ দেশে ডলারের রেট বাড়ালে বিদেশে থাকা হুন্ডি কারবারিরা রেট বাড়িয়ে দেবে। কারণ তারা অবৈধ অর্থ দিয়ে ডলার কেনে।
বাংলাদেশ ব্যাংক চলতি অর্থবছরের (জুলাই-এপ্রিল পর্যন্ত) দশ মাসে প্রায় ১২ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে ব্যাংকগুলোর কাছে। ৩১ মে শেষে দেশের রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৯ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৪২ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার। সে হিসেবে এক বছরে রিজার্ভ কমেছে ১২ দশমিক ২৮ বিলিয়ন ডলার।
অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ক্যাপিটাল মেশিনারিজ ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল ‘র’ ম্যাটেরিয়ালের আমদানি কম হলে দেশের উৎপাদন খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সক্ষমতা অনুযায়ী উৎপাদন করতে না পারলে বাকি খাতগুলো যেমন- পরিবহন, বিপণন থেকে শুরু করে কনজিউমার লেভেল পর্যন্ত এর প্রভাব পড়ে।
এছাড়া সরকারের রাজস্ব আয়ও কমে। কারণ- ইমপোর্ট ডিউটি, ট্যাক্স, ভ্যাট থেকে সরকারের আয় কমে যায়। সেইসঙ্গে বিনিয়োগও বাধাগ্রস্ত হয়। সবকিছু মিলে আবার ইনফ্লেশনকে ট্রিগার করে, যেটি পণ্যের সাপ্লাই কমে যাওয়ার কারণে হয়। এ ইনফ্লেশন কিন্ত বাইরে থেকে আমদানি করা নয়, নিজেদেরই তৈরি করা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়