গণতন্ত্র মঞ্চের হুঁশিয়ারি : সমাবেশে বাধা দিলে পরিণতি ভালো হবে না

আগের সংবাদ

পাহাড় কাটার হিড়িক, দুই ফসলি জমির টপ সয়েল যাচ্ছে ভাটায়

পরের সংবাদ

মফিদুল হক : জ্ঞানভিত্তিক প্রজন্ম গড়তে বইয়ে বরাদ্দ বাড়াতে হবে

প্রকাশিত: জুন ৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : বেসরকারি গ্রন্থাগারগুলোর বাস্তব অবস্থা, সক্ষমতা ও কার্যকারিতা যাচাইয়ের লক্ষ্যে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অনুদানে দেশের চারটি প্রশাসনিক বিভাগ ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের ৩৬টি জেলার ৯টি জোনে ১৪৪টি গ্রন্থাগারের পাঠক এবং গ্রন্থাগার কর্তৃপক্ষের ওপর জরিপ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগ।
গতকাল সোমবার সকালে রাজধানীর গুলিস্তানে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের আয়োজনে ‘গবেষণা কার্যক্রমের প্রতিবেদন প্রকাশ ও সুপারিশসমূহ উপস্থাপন’ শীর্ষক গবেষণাপত্রটি প্রকাশ করা হয়েছে। এ উপলক্ষে এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ও জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালনা বোর্ডের সদস্য মফিদুল হক। জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক কবি মিনার মনসুরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রতিবেদনের সুপারিশগুলো উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী মোস্তাক গাউসুল হক। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার সিটি এডিটর কানাই চক্রবর্তী, রাইজিং বিডিডটকম এর নির্বাহী সম্পাদক তাপস রায়, বিডিনিউটোয়েন্টিফোর ডটকমের সিনিয়র রিপোর্টার পাভেল রহমানসহ বিভিন্ন পাঠাগারের উদ্যোক্তা এবং পরিচালকরা।
দেশব্যাপী বেসরকারি গ্রন্থাগারগুলোর কার্যকারিতা ও সক্ষমতা যাচাইয়ের একটি বড় মাধ্যম গবেষণা এমন মন্তব্য করে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মফিদুল হক বলেন, বেসরকারি গ্রন্থাগারগুলো সমাজে নানা প্রতিকূলতাকে অগ্রাহ্য করে শুদ্ধ সংস্কৃতির বিকাশ এবং সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে যে ভূমিকা রেখে চলেছে এর স্বীকৃতি হচ্ছে- চার জেলায় পরিচালিত এ গবেষণা প্রতিবেদন। এই গবেষণার মধ্য দিয়ে বেসরকারি গ্রন্থাগারগুলোর প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে একটা সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে। পাঠাগারের নানা দৈন্যতা, ঘাটতি এবং সীমাবদ্ধতার মধ্যেও পর্যায়ক্রমে, মাঝারি এবং দীর্ঘমেয়াদে গবেষণার সুপারিশগুলোর আলোকে বাস্তবায়ন
করা যেতে পারে এর কার্যক্রম।
পাঠাগার পরিচালনায় দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য লাইব্রেরিয়ানদের প্রশিক্ষণের সুপারিশ করে মফিদুল হক আরো বলেন, পাঠাগারকে সমৃদ্ধ করতে এই চ্যালেঞ্জটা গ্রন্থকেন্দ্র নিতে পারে। পাশাপাশি জনসম্পৃক্ততা বা পাঠক বৃদ্ধির লক্ষে গতিশীল নেতৃত্বের উপর জোর দিতে হবে।
ক্ষোভ প্রকাশ করে মফিদুল হক বলেন, একটি জ্ঞানভিত্তিক প্রজন্ম গড়ে তুলতে হলে গ্রন্থকেন্দ্রের পাঠাগার প্রকল্পের জন্য ৪ গুণ বরাদ্দ বাড়াতে হবে। দুর্ভাগ্যজনক হলো প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০ কোটি টাকার বই কিনেছে। যে বই কিনেছে তা চিন্তাও করা যায় না যে এইসব বই কী করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তারা দিচ্ছে। এর পেছনে যারা জড়িত রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট

লোকজন। এটা দুঃখজনক। শ্রেণি কক্ষের বাইরে অভিজ্ঞতালব্ধ শিক্ষার উপর জোর দেয়া যেতে পারে এমন মন্তব্যও করেন এই সমাজ চিন্তক।
নানা কারণে মানুষ বই থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে উল্লেখ করে মিনার মনসুর বলেন, যে বাংলাদেশে মেট্রোরেল, কর্নফুলী টানেল কিংবা পদ্মা সেতু হতে পারে সেই দেশে বইয়ের জন্য বরাদ্দ ২৫ কোটি টাকা হওয়া উচিত। অথচ বইয়ের জন্য মাত্র দুটি কোটি ৪০ লাখ টাকা! বই এবং সংস্কৃতির ক্ষেত্রে আমরা বড়ই এতিম। একটি জ্ঞাননির্ভর প্রজন্ম গড়ে তুলতে বইয়ের জন্য বাজেট বাড়ানো এবং বইয়ের দিকে সরকারের মনোযোগ দিতে হবে।
তিনি বলেন, আজকের দিনে কেবল বইয়ের দিকে নজর দিয়ে কোনো পাঠাগার চালানো যাবে না। পাঠককে বইয়ের কাছাকাছি আনতে হলে পাঠাগারগুলোকে ‘সাংস্কৃতিক হাব’ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। মূল্যবোধের অবক্ষয়, অপসংস্কৃতির বিস্তার, তরুণদের বিপথগামিতা- সমাজে বিরাজমান নানাবিধ সমস্যার মধ্যে সম্ভাবনার দীপশিখা হয়ে জ্বলে আছে বেসরকারি গ্রন্থাগারগুলো এমন মন্তব্য করে ৬টি সুপারিশ পেশ করেন কাজী মোস্তাক গাউসুল হক।
তিনি বলেন, নানা প্রতিকূলতাকে অগ্রাহ্য করে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, শুদ্ধ সংস্কৃতির বিকাশ আর সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির নানা প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে তারা। দীর্ঘদিন ধরে এসব গ্রন্থাগারের কর্মকাণ্ড চলমান থাকলেও তাদের কার্যক্রম পর্যালোচনা ও সমাজে তাদের প্রভাব পরিমাপের কোনো সমন্বিত উদ্যোগ এর আগে গৃহীত হয়নি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়