করমণ্ডল এক্সপ্রেস : চেন্নাইগামী ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত শতাধিক, বাংলাদেশি যাত্রী থাকার আশঙ্কা

আগের সংবাদ

দেয়াল

পরের সংবাদ

হঠাৎ ওজন বাড়তির ১০ কারণ

প্রকাশিত: জুন ৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

প্রতিদিন আপনার ওজনে সামান্য ওঠানামা বেশ স্বাভাবিক। প্রাপ্তবয়স্কদের গড় ওজন কয়েক দিনের মধ্যে ৫০০ গ্রাম থেকে ১ কিলো কম বা বেশি হতে পারে। উচ্চ সোডিয়াম গ্রহণ, ডিহাইড্রেশন বা আপনার ঘুমের সময়সূচির মতো বিভিন্ন কারণে এটি হতে পারে। কিন্তু আপনি যখন এক সপ্তাহ বা এক মাসের মতো স্বল্প সময়ের মধ্যে আপনার ওজনে অনেকটা পরিবর্তন দেখতে পান তখন এর অর্থ অন্যরকম হতে পারে। যাদের ওজনের কাঁটা ক্রমাগত ঊর্ধ্বমুখী, তাদের জন্য ভয়ের কারণটাও বেশি। কারণ জানেন তো, বাড়তি ওজনের হাত ধরেই চলে আসে নানা ধরনের অসুখ। সবার ওজন যেহুতু একইভাবে বাড়ে না তাই যদি আপনার ওজনে হঠাৎ পরিবর্তন দেখতে পান, সেক্ষেত্রে মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে কেন এমন হচ্ছে? হেলথ এন্ড নিউট্রিশন, রেস্টলেস ও মেডিস্কেপ অবলম্বনে তৈরি এই ফিচার থেকে জেনে নিন বিস্তারিত।

ডা. আশরাফুন্নাহার চৈতী

মানসিক চাপ
প্রয়োজনের তাগিদে নানা ধরনের চাপ সামলেই আমাদের এগিয়ে যেতে হয়। তাই স্ট্রেস আসা স্বাভাবিক। আর এ কারণেই অনেক সময় ওজন বেড়ে যেতে পারে। মনে রাখবেন, বাড়তি স্ট্রেসের ফলে হরমোনে সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই মানসিক চাপ বাড়লে ওজনও অতিরিক্ত বেড়ে যাবার সম্ভবনা থাকে।

অতিরিক্ত আলসেমি
কাজের বেশি চাপ বা অতিরিক্ত মানসিক চাপ যেমন খারাপ তেমনি বাড়তি আলসেমির প্রভাবও শরীরের ওপর পড়ে। পরিমিত খাবার এবং নিয়মিত শরীরচর্চা করেও ওজন কমানো কঠিন, যদি দিনের বেশি সময় কাটে আলসেমি করে। তাই দিনের নির্দিষ্ট সময় ব্যায়াম করলেও বাকি সময়টা কোনো না কোনো কাজ করে নিজেকে ব্যস্ত রাখলে উপকার মিলে।
পিরিয়ডে অনিয়ম
পিরিয়ডের সময়টাতে নিজের প্রতি যতœশীল হোন। কারণ, নারীর ক্ষেত্রে ওজন বৃদ্ধির আরেকটি কারণ হতে পারে ঋতুস্রাবের অনিয়ম। পিরিয়ডের সময় কাছাকাছি এলেও কিছুটা ওজন বেড়ে যেতে পারে। আবার এই সময়ে সতর্কতার অভাবে শরীরে পানির ঘাটতিও দেখা দিতে পারে। অনেক ধরনের পরিবর্তনই হতে পারে।

খাবার গ্রহনে দীর্ঘ বিরতি
ওজন কমানোর মূল মন্ত্র হচ্ছে, অল্প পরিমাণ খেতে হবে, কম ক্যালরিযুক্ত খাবার, বারবার। দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকলে আমাদের ক্ষুধার মাত্রা অনেক বেড়ে যায়। খাওয়ার সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা তখন অনেক বেশি কঠিন হয়ে পড়ে। তাই ওজন কমাতে হলে প্রথমেই অতিরিক্ত ক্যালরিযুক্ত খাবার যেমন, তেলে ভাজা খাবার, মিষ্টি জাতীয় খাবার এবং মাটির নিচে যেসব সবজি হয়, খাদ্যতালিকা থেকে সেগুলো বাদ দিতে হবে। শরীরে পুষ্টির চাহিদা পূরণে সবুজ শাকসবজি, কম তেলে রান্না খাবার এবং জটিল কার্বোহাইড্রেট আছে, এমন খাদ্যকে তালিকায় আনতে হবে। এরপর আসবে পরিমাণ কমানো অর্থাৎ কতটুকু খেতে হবে।

হঠাৎ ভাতে না
অনেকেই মনে করেন, ভাত ওজন বাড়ায়। এটি একদমই সত্যি নয়। এই পদ্ধতিতে ওজন কিছুটা কমলেও খুব দ্রুত আবার তা পূরণ হয়ে যায়। তাই শরীরে ওজন এবং উচ্চতা অনুযায়ী প্রত্যেকের খাদ্যতালিকায় পরিমাণমতো ভাত অথবা রুটি রাখা উচিত।
এছাড়া সাধারণ কার্বোহাইড্রেটের পরিবর্তে জটিল কার্বোহাইড্রেট খাওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া খাবারে আমিষের পরিমাণ বাড়াতে হবে। কোনোভাবেই কার্বোহাইড্রেট সম্পূর্ণ বন্ধ করা যাবে না। তবে পরিমাণ কিছুটা সীমিত করতে হবে।

ফ্লুইড ইনটেক
সুস্বাস্থ্যের জন্য কেবল ফ্লুইড জাতীয় খাবার খান? এদিকে আবার পানি কম পান করেন? এগুলোও হতে পারে আপনার ওজন বেড়ে যাওয়ার কারণ। যখন আমাদের পেশী থেকে পানি শোষিত হতে শুরু করে, তখন শরীরে পানির ঘাটতি দেখা দেয়। সেখান থেকে হয় কোষ্ঠকাঠিন্য ও হজমের সমস্যা। শরীরের সবকিছু ঠিক রাখার জন্য খেতে হবে সব ধরনের পুষ্টিকর খাবার। কোনো একটি খাবার খুব বেশি, কোনোটি কম হলে শরীর ভারসাম্যহীন হতে পারে। শরীরের ঘাটতি পূরণের জন্য খেতে হবে সুষম খাবার।

তাড়াহুড়া করে খাবার গ্রহন
ব্যস্ততার অযুহাতে অনেকে খাবারটাও অতি দ্রুত খায়। কিন্তু গবেষকরা বলছেন, তাড়াহুড়া করে খাবার খেলে ওজন বাড়ে। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা তাড়াহুড়া করে খায় তাদের মধ্যে মোটা হওয়ার প্রবণতা বেশি। দ্রুত খাবার খেলে পেট ভরে গেলেও মস্তিষ্ক শরীরকে সংকেত দিতে পারে না। একারণে ওজন কমাতে হলে খাবার ভালো করে চিবিয়ে ধীরে ধীরে খেতে হবে।

অনিয়মিত ব্যায়াম
অত্যন্ত নিয়ন্ত্রিত খাবার খেলেও তার পাশাপাশি ব্যায়ামও করতে হবে। না হলে শরীরের ওজন কমার পরিবর্তে উল্টো বেড়ে যাবে। খাবারে যা-ই থাকুক, অতিরিক্ত ক্যালরি খরচ করতে প্রতিদিন অবশ্যই ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা ব্যায়াম করতে হবে। নিজের পছন্দের অন্য কোনো ব্যায়ামও বেছে নিতে পারেন। তবে ব্যায়াম করতে হবে শরীরের ধরন বুঝে।

দুর্বল হজমশক্তি
নিয়ম করে পরিমিত খাবার গ্রহন এবং ব্যায়াম করাও পরও ওজন বাড়ার কারণ হতে পারে দুর্বল হজমশক্তি। হজমশক্তি দুর্বল থাকলে খাবার হজম হতে সমস্যা হয় এবং ধীরগতিতে খাবার হজম হয় অথবা বেশিরভাগ খাবার হজম হয় না। ধীরগতিতে খাবার হজম হওয়া এবং খাবার ভাল মতো হজম না হলে পুরোটাই দেহে মেদ হিসেবে জমা হয়। তাই হজমশক্তি বৃদ্ধি করতে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
ভুল ওষুধ গ্রহন
ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই হুটহাট ব্যথা বা জ্বরের জন্য অনেকেই নানা জেনেটিক ঔষধ খেয়ে ফেলেন। শরীরের ক্ষতি হতে পারে এতে। বিশেষ করে দেহের ওজন খুব দ্রুত বৃদ্ধির মতো ঘটনাও ঘটতে পারে। অনেক নারীই হরমোনের ব্যাল্যান্সের জন্য পিল খান, ব্যথা নাশক ঔষধ খান যার সব কটিতেই দেহের ক্ষতি হয় এবং ওজন বাড়ে।
তাই ডাক্তারের পরামর্শে আপনার শরীরের অন্য উপযোগী ঔষধ খাবেন। অন্যদিকে, আন্ডারঅ্যাক্টিভ থাইরয়েড বা হাইপোথাইরয়েডিজম আপনার ওজন বাড়ার অন্যতম কারণ হতে পারে। ঘাড়ের সামনের প্রজাপতি আকৃতির গ্রন্থি যখন পর্যাপ্ত থাইরয়েড হরমোন উৎপাদন করতে ব্যর্থ হয়, তখন আপনি সমস্ত সময় দুর্বল, ক্লান্ত, ঠান্ডা অনুভব করতে শুরু করেন, এমনকী ওজনও বেড়ে যেতে পারে।

(এমপিএইচ, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ)

মডেল : বিদ্যা সিনহা মিম

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়