তারেক-জোবায়দার বিরুদ্ধে আরো দুজনের সাক্ষ্য

আগের সংবাদ

সিগন্যালের ভুলেই দুর্ঘটনা : শোকে কাতর পুরো ভারত > তিন ট্রেনের সংঘর্ষে নিহত বেড়ে ২৮৮, আহত সহস্রাধিক

পরের সংবাদ

শিক্ষার্থীদের ভূমিকা, ভিসা এবং অযাচিত প্রশ্ন

প্রকাশিত: জুন ৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বিদেশি শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার একটা সুযোগ করে দিয়েছে যুক্তরাজ্য। আর সেজন্যই যুক্তরাজ্যে বিদেশি ছাত্রছাত্রীরা আসছে। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিদেশি শিক্ষার্থীরা এ সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে। বিশেষত বাংলাদেশ-পাকিস্তান কিংবা ভারত থেকে আসা শিক্ষার্থীদের এখন যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহরেই দেখা যায়। যদিও নাইজেরিয়ার শিক্ষার্থীদের ব্রিটেনে আসার সংখ্যাটাই শীর্ষে। আর এ নিয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে সরকার। কারণ শিক্ষার জন্য শুধু শিক্ষার্থীরাই আসছে না, আসছে তাদের পরিবারও। এমনিতেই ব্রিটেনের সরকার অভিবাসন ঠেকাতে বিপাকে আছে। ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি দেশটিতে অভিবাসীর সংখ্যা বছরে এক লাখে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রæতি দিয়েছিল। কিন্তু এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণে বারবার ব্যর্থ হওয়ার পর ২০১৯ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে এ অবস্থান থেকে সরে আসে দলটি। কোনোভাবেই যেন অভিবাসী ঠেকাতে পারছে না দেশটি।
দেশটির রাজনীতির এমনকি ভোটের মাঠে অভিবাসী ইস্যুটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত থাকাকালীন যুক্তরাজ্যে লাখ লাখ মানুষ এসেছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে। আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যান্য দেশের বিভিন্ন জটিল কালাকানুন এখানে না থাকায় ইইউভুক্ত দেশগুলোর নাগরিকরা এখানে এসে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন ব্রিটেনের নাগরিকদের মতোই। এতে অধিকাংশ ব্রিটিশ নাগরিকের একটা বদ্ধমূল ধারণা ছিল যে, ইইউভুক্ত দেশগুলোর কারণেই জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা (এনএইচএস) কিংবা আবাসন এবং শিক্ষাব্যবস্থায় একটা বিরাট ধাক্কা লেগেছে। সত্যি কথা হলো এ কারণেই জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থনের মধ্য দিয়ে ইইউ থেকে বেরিয়ে আসে যুক্তরাজ্য। সেজন্য ইউরোপ থেকে লোক আসার জোয়ার এখন থেমে গেছে।
কিন্তু বিদেশি ছাত্রছাত্রী আসায় সরকারের খুব একটা হারানোর কিছু নেই। ছাত্রছাত্রীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফি দিয়েই আসে। যতদিন তারা এখানে শিক্ষার্থী হয়ে থাকে, ততদিন তারা স্বনির্ভর হয়েই অবস্থান করে। অর্থাৎ ইইউ থেকে আসা নাগরিকদের মতো এই শিক্ষার্থীরা ব্রিটেনের অর্থনীতিতে কোনো নেতিবাচক প্রভাব রাখে না বলেই আমাদের বিশ্বাস। একটা উদাহরণ দেয়া যেতে পারে- আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা সামগ্রিকভাবে যুক্তরাজ্যের বিশাল বাজেটে ৪১ দশমিক ৯ বিলিয়ন পাউন্ডের অবদান রেখেছে, যা ২০১৮-১৯ সালে ৩১ দশমিক ৩ বিলিয়ন পাউন্ড থেকে ৩৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। যুক্তরাজ্যের শুধু শেফিল্ড শহরেই বিদেশি শিক্ষার্থীরা ব্রিটেনের অর্থনীতিতে ২৭৩ মিলিয়ন পাউন্ড অবদান রেখেছে। যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতে বিদেশি শিক্ষার্থীদের এ অবদান তৃতীয় বৃহত্তম প্রভাব হিসেবে উল্লেখ করে ১৬ মে এক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। উপরন্তু শিক্ষার্থীরা খণ্ডকালীন কাজ জুটিয়ে নেয়, যাতে দেখা যায় বিভিন্ন সেক্টরে কর্মী সংকট নিরসনে এরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অথচ স্টুডেন্ট ভিসাকে বাংলাদেশের কতিপয় মানুষ এমন হিসেবে উল্লেখ করছেন যে, এরা ব্রিটেনের জন্য বোঝা হয়ে গেছে। কিন্তু ব্যাপারটা শিক্ষার্থীদের নিয়ে নয়, যে বিষয়টি এখন ব্যাপকভাবে আলোচনায় এসেছিল, তা হচ্ছে একজন শিক্ষার্থী যুক্তরাজ্যের ভিসা পাওয়ার পর তার পরিবার অর্থাৎ স্বামী-স্ত্রী এমনকি সন্তান-সন্ততিও নিয়ে আসতে পারেন- আর এখানেই সমস্যা দেখা দিয়েছে। অর্থাৎ বিতর্কটা গড়িয়ে পড়েছিল সংসদ পর্যন্ত।
এমনিতেই অভিবাসন কমাতে এ সরকার ছিল বদ্ধপরিকর এবং তারা ঘোষণাও দিয়েছিল, অভিবাসীদের সংখ্যা তারা নামিয়ে আনবে। কিন্তু দেখা গেছে, শিক্ষার্থীরা যুক্তরাজ্যের নির্ধারিত করে দেয়া যোগ্যতা কাজে লাগিয়ে যুক্তরাজ্যে আসছে এবং সঙ্গে নিয়ে আসছে তাদের পরিবার (স্বামী কিংবা স্ত্রী)। আর এতে করে পরিসংখ্যানে অভিবাসীদের সংখ্যা দিনে দিনে বাড়ছেই। এই জায়গাটাতেই লাগাম টানতে চাইছে ব্রিটিশ সরকার। কারণ শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগ হয়তো তাদের পরিবার নিয়ে আসেন, কিন্তু দেখা গেছে এদের একটা বড় অংশ এখানেও ব্রিটেনের এই সিস্টেমকে অপব্যবহার করছেন। কারণ এদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ স্বামী-স্ত্রী হিসেবে দেখিয়ে শুধু বিমানবন্দর পাড়ি দিচ্ছেন, অর্থাৎ কন্ট্রাক্ট ম্যারেজ করছেন এবং পরে শিক্ষার্থীর সঙ্গে আসা স্বজন ব্রিটেনে অবৈধ হিসেবে অবস্থান করছেন।
বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা প্রদানের পাশাপাশি তাদের পরিবারের ভিসা প্রদানও একই হারে অর্থাৎ নজিরবিহীন বেড়ে যাওয়ায় ধারণা করা হচ্ছে, বৈধ অভিবাসীর সংখ্যা চলতি বছর উল্লেখ করার মতো (৭ লাখে) পৌঁছেছে। সরকারি হিসাবে যুক্তরাজ্যে ২০২২ সালে অধ্যয়নরত বিদেশি শিক্ষার্থীর পরিবারের সদস্যদের ১ লাখ ৩৫ হাজার ৭৮৮টি ভিসা দিয়েছিল, যা ২০১৯ সালের চেয়ে প্রায় ৯ গুণ বেশি।
সেজন্যই যুক্তরাজ্য সরকার কড়াকড়ি আনতে চাইছে শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে। ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্রেভারম্যান এর আগে বলেছিলেন, শিক্ষার্থীর পরিবারের সদস্যদের ভিসা দেয়া এভাবে বেড়ে যাওয়াটা নজিরবিহীন। এ নিয়ে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, অভিবাসীর সংখ্যা কমাতে তাদের (শিক্ষার্থীদের পরিবারের সদস্যরা) ভিসা দেয়ায় লাগাম টানার এখনই সময়। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বলেছেন, অভিবাসন নিয়ে নতুন এই নীতি অভিবাসী কমাতে সাহায্য করবে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটের তথ্য অনুযায়ী আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে কার্যকর হতে যাওয়া এই সিদ্ধান্ত (স্পাউস ভিসা না দেয়া) সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক মন্ত্রিসভায়ও অবহিত করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই নিষেধাজ্ঞা ‘অভিবাসীর সংখ্যায় বড় ধরনের পার্থক্য তৈরি করবে’। গত সপ্তাহে ঋষি সুনাক বলেছিলেন, অভিবাসীর সংখ্যা কমিয়ে আনতে অনেক পদক্ষেপের বিষয় বিবেচনা করছেন মন্ত্রীরা। প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলার পরে এমন নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা এলো।
অভিবাসন নিয়ে নতুন ঘোষণার ফলে যুক্তরাজ্যে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্বামী/স্ত্রী/সঙ্গী ও সন্তানরা দেশটিতে বসবাসের জন্য আবেদন করতে পারবেন না। তবে যারা গবেষণা (পিএইচডি) করছেন, তাদের ক্ষেত্রে এ নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য নয়।
সপ্তাহ দুয়েক আগে এ বিষয়ক ঘোষণা আসার পর থেকেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে, বিশেষত বাংলাদেশের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে ভুল বার্তা দেয়া শুরু হয়েছিল। যাতে করে শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকরাও উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছিলেন। বিশেষত ব্রিটেন কিংবা সিলেটকেন্দ্রিক দু-একটা ইউটিউবে (গণমাধ্যম হিসেবে যেগুলোকে চালানো হচ্ছে) এরকম বিভ্রান্তি ছড়িয়ে দিয়েছে। ব্যাপারটা এমনভাবে প্রচার করা হচ্ছে, যাতে মনে হয়েছিল যেন ঘোষণার পর থেকেই ব্রিটেনের শিক্ষার্থীদের ভিসা দেয়া বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। অথচ বিষয়টা সম্পূর্ণ ভিন্ন। শুধু পরিবার আনতে তারা কড়াকড়ি আরোপ করছে, তাও আগামী জানুয়ারি থেকে। সুতরাং প্রকৃত শিক্ষার্থীদের এতে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। যে কেউ ব্রিটিশ কাউন্সিলের দ্বারা এপ্রোভ নির্ধারিত কোর্স এবং প্রয়োজনীয় স্কোর সম্পন্ন করে আগের মতোই ব্রিটেনে আসার পথ খোলা রয়েছে যথানিয়মেই।
কয়েক বছর পরপর যুক্তরাজ্য সরকার তার প্রয়োজনেই বিভিন্নভাবে ছাড় দেয়। শিক্ষার্থীদের ভিসা দেয়াটা কোনো নতুন ব্যাপার নয়, একসময় ঢালাওভাবে দিয়েছিল, এবারে অন্তত ছাত্রছাত্রীরা আসছে এবং নির্ধারিত নিয়মের আওতায়ই আসছে। শুধু যুক্তরাজ্যই বলি কেন, পৃথিবীর সব উন্নত দেশগুলোই এরকম সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে তাদের প্রয়োজনেই। প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে নিয়মগুলোর তো ব্যত্যয় ঘটবেই। অভিবাসন নিয়ে কথা ওঠা তো এই দেশগুলোর আন্তর্জাতিক রাজনীতির আরেক কৌশল। আমাদের এ নিয়ে ব্যঙ্গ করার কি-ই আছে। না-কি ভিউইং বাড়ানোর জন্য হট কেক বানানোই প্রয়োজন?

ফারুক যোশী : কলাম লেখক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়