তারেক-জোবায়দার বিরুদ্ধে আরো দুজনের সাক্ষ্য

আগের সংবাদ

সিগন্যালের ভুলেই দুর্ঘটনা : শোকে কাতর পুরো ভারত > তিন ট্রেনের সংঘর্ষে নিহত বেড়ে ২৮৮, আহত সহস্রাধিক

পরের সংবাদ

লোক ঠকানোই যে দম্পতির পেশা

প্রকাশিত: জুন ৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ইমরান রহমান : মানুষের চাহিদা বুঝে প্রতারণার ফাঁদ পাতেন এস এম রাশেদ রহমান ও শামীমা ইয়াসমিন নীলা দম্পতি। ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে লোভনীয় চাকরির ব্যবস্থা করা, ঝামেলা ছাড়াই গাড়ি আমদানি করা, ব্যাংক থেকে বড় লোন পাইয়ে দেয়া যেন কোনো ব্যাপারই না তাদের কাছে। চাহিদা অনুযায়ী টাকা দিলেই মিলবে সবকিছু। তাদের ফাঁদে পা দিয়ে লাখ লাখ টাকা খুইয়ে নিঃস্ব হয়েছেন অনেকেই। কেউ কেউ বছরের পর বছর এই দম্পতির পেছনে ঘুরে শুধু চোখের জলই ফেলে যাচ্ছেন। অভাবে পড়ে অনেকের সংসার ভেঙে গেছে। তবুও থামছে না এই দম্পতির প্রতারণা। ৫৩ লাখ টাকা প্রতারণার মামলায় গত বছর র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হলেও জামিনে বেরিয়ে আবারো শুরু করেছেন একই কাজ। ভুক্তভোগীদের অনেকে মামলা দায়ের করলে দুটি মামলায় সাজা হলেও এক অদৃশ্য ছায়ায় অধরা থেকে যাচ্ছেন তারা। এসব অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে গতকাল বুধবার বেশ কয়েকবার রাশেদ ও নীলার ব্যক্তিগত মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও প্রতিবার তাদের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, রাশেদ রহমানের স্ত্রী নীলার এক আত্মীয় বিচারাঙ্গনে কর্মরত থাকায় তারই ছত্রছায়ায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন তারা। হাতিয়ে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকা। শুধু তাই নয়, টাকা আদায়ে কেউ চাপ প্রয়োগ করলে পুলিশের বিভিন্ন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ভয় দেখানো হয়। কেউ যদি হুমকিতে ভয় না পান, তাহলে বিভিন্ন কর্মকর্তার পরিচয়ে ফোনে হুমকি ধামকি দিতেই থাকেন তারা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই দম্পতি ২০১৪ সাল থেকে ইতালি, কানাডা, রোমানিয়া, পর্তুগাল, জার্মান ও মাল্টাসহ অনেক দেশে চাকরি দেয়ার কথা বলে ভুয়া কাগজপত্র (ভিসা, কার্ড, টিকেট) সরবরাহ করে মানুষ ঠকিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া শ্যালক আশিকুর রহমানের (মধুমতি ব্যাংকের প্রধান শাখা গুলশানে কর্মরত) সহযোগিতায় বড় অঙ্কের ব্যাংক লোন পাওয়ার ফাঁদ পাতেন রাশেদ। তার আশ্বাসে লাখ লাখ টাকা খুইয়েছে অনেক পরিবার। গাড়ি আমদানির নামেও লাখ লাখ টাকা হাতিয়েছেন এই দম্পত্তি। তাদের এই গাড়ি আমদানির ফাঁদে পড়ে ২৫ লাখ টাকা খুইয়েছেন সরকারি এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও। ব্যাংক লোনের ফাঁদে কুষ্টিয়ার মিরপুরের কাজিম আলী ১০ লাখ, একই এলাকার মনোয়ার হোসেন আড়াই লাখ ও শারমিন আক্তার সাড়ে ৮ লাখ টাকা, ব্যাংকে চাকরি বাবদ চুয়াডাঙ্গার টিপু সুলতান সাড়ে ৮ লাখ টাকা খুইয়েছেন। এছাড়া রোমানিয়া যাওয়ার ফাঁদে ফরিদ আহমেদ, সাইফুল ইসলাম ও আতিকুর রহমান ১৮ লাখ টাকা, কানাডা যাওয়ার ফাঁদে পড়ে খোরশেদ আলম ও সোলাইমান নামে ২ জন ৪ লাখ টাকা খুইয়েছেন। এই চক্রের খপ্পরে পড়া কেরানীগঞ্জের বাসিন্দা রিফাত আরা রিমু ভোরের কাগজকে বলেন, স্বামীর এক বন্ধুর মাধ্যমে রাশেদ রহমানের

সঙ্গে আমাদের পরিচয় হয়। আমরা জানতে পারি, রাশেদ একটি দূতাবাসে চাকরি করেন এবং দীর্ঘদিন ধরে ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে লোক পাঠান। পরে আমার চাচা মফিজ আহমেদ ও চাচার এক বন্ধুকে ইতালি পাঠানোর জন্য কথাবার্তা হয়। ইতালিতে চাচার এক বন্ধু চাকরির ব্যবস্থা করতে চাওয়ায় আমরা রাশেদের সঙ্গে শুধু বৈধভাবে তাকে ইতালি পৌঁছে দেয়ার চুক্তি করি। এতে রাশেদ রাজি হয়ে জানায়, রোমানিয়া হয়ে আমার চাচা ও চাচার বন্ধুকে ইতালি পৌঁছে দেয়া হবে। এরই ধারাহিকতায় ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে পাসপোর্ট, ভিসা লাগানো ও ডলার এন্ডোর্স করানোর বাহানায় ১৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়।
এর মধ্যে সে ইতালির ৩ মাসের ভিসা পেয়েছে বলে ভুয়া কাগজ দেখায়। এমনকি ইতালির গ্রিনকার্ডও বের করে আনে আমার চাচার নামে। ইতালি পৌঁছানোর আগেই গ্রিনকার্ড দেখে আমাদের সন্দেহ হয়। পরে আমরা ভিসাসহ অন্যান্য কাগজপত্র যাচাই করে দেখি সবই ভুয়া। পরে টাকা ফেরত চাইলে বেঁকে বসেন রাশেদ। দিতে থাকেন বিভিন্ন হুমকি। একপর্যায়ে ব্যাংকের চেক দিলেও সেই একাউন্টে কোনো টাকা ছিল না। পরে তার বিরুদ্ধে আমি আদালতে মামলা দায়ের করি- যা চলমান রয়েছে। রিফাত আরা রিমু বলেন, আমার চাচা ইটভাটার ব্যবসায় লস খেয়ে কষ্টে দিনযাপন করছেন। একমাত্র বাড়ি বিক্রি করে ৯ লাখ টাকা আমার হাতে তুলে দিয়েছিলেন। আমিও সরল বিশ্বাসে রাশেদকে টাকা দিয়েছিলাম। ফলে চাচা সব টাকা আমার কাছে ফেরত চাইছেন। এই অবস্থায় কোনো সমাধান খুঁজে পাচ্ছি না। কোথায় পাব এত টাকা। আর কেউ যাতে এমন প্রতারণার শিকার না হয়, সেজন্য রাশেদ ও তার সহযোগীদের বিচার চাই।
রাশেদ-নীলা দম্পতির মাধ্যমে রোমানিয়া যেতে চেয়েছিলেন আলম সরকার নামে গাজীপুরের এক লোক। তাকে রোমানিয়া পাঠানোর প্রলোভনে ভারত পাচার করা হয়। সেই ব্যক্তি নিজের বাড়ি বিক্রি করে আত্মীয়স্বজনের মাধ্যমে পাচারচক্রের দাবিকৃত মুক্তিপণ দিয়ে ৩ মাস পর দেশে ফিরে আসেন। এরপর ওই দম্পতির মান্ডা এলাকার বাসায় গিয়ে তা ফাঁকা দেখতে পান। তার মতো আর কেউ যাতে প্রতারণায় না পড়ে, সেজন্য এই দম্পতির বিচার দাবি করেছেন আলম সরকারও।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়