তারেক-জোবায়দার বিরুদ্ধে আরো দুজনের সাক্ষ্য

আগের সংবাদ

সিগন্যালের ভুলেই দুর্ঘটনা : শোকে কাতর পুরো ভারত > তিন ট্রেনের সংঘর্ষে নিহত বেড়ে ২৮৮, আহত সহস্রাধিক

পরের সংবাদ

গাজীপুর নির্বাচন ও কতিপয় পর্যবেক্ষণ

প্রকাশিত: জুন ৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

গত ২৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন অতি শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। অনেকে তাকে শান্তিপূর্ণ বলাতে দ্বিধান্বিত না হলেও বদভ্যাসবশত তাকে গ্রহণযোগ্য বলতে নারাজ। এই নির্বাচনকে নিয়ে সুজন সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের একটি উক্তি। তার অপর উক্তিটি হচ্ছে জাহাঙ্গীরের প্রার্থিতা বাতিল নিয়ে। তিনি এটাকে নির্বাচন কমিশনের অন্যায় আচরণ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি কি লক্ষ্য করেননি, নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্তটি মহামান্য হাইকোর্টও গ্রহণ করেছেন। এ নিয়ে সুজন সম্পাদক যদি আদালত অবমাননা না করে থাকেন তাহলে নির্বাচন কমিশন মার্কিন ভিসা নীতিবিরোধী কাজ করেছেন।
নির্বাচনের ফলাফল সবার জানা। জায়েদা খাতুনের মতো একজন স্বশিক্ষিত ও রাজনীতি নির্লিপ্ত ষাটোর্ধ্ব মহিলার জয়লাভ অনেককে অবাক করলেও তার বিজয় অনিবার্য ছিল। কেননা নির্বাচনটা হয়েছে অধিসর খবধমঁব ট.ঝ ৎবংঃ ড়ভ ঃযব ড়িৎষফ-এর মধ্যে। শব্দাংশটি অতিরঞ্জিত নিঃসন্দেহে। কিন্তু এই শব্দাংশের সঙ্গে আমরা অভ্যস্ত সেই ১৯৭৫ সালের পর থেকে। সামান্য ব্যতিক্রম ছাড়া আমরা দেখে আসছি একদিকে আওয়ামী লীগ আর তার বিপরীতে শক্ত অবস্থান নিয়ে দাঁড়িয়ে গেছে বাম-ডান, মধ্যম, রাজাকার, আলবদর, আলশামস, পাকিস্তানপন্থি মৌলবাদী, যুক্তরাষ্ট্রের ভক্ত-অনুরক্ত। তাদের একটাই ইরাদা- আওয়ামী লীগ ঠেকাতে হবে। তারা সফলও হয়েছে কিন্তু চূড়ান্ত বিশ্লেষণে দেখা গেছে আওয়ামী লীগকে কেউ ঠেকাতে পারেনি। এ ব্যাপারে যদি একটা মাঠ জরিপ করা যেত তাহলে এ সত্যি উদঘাটিত হতো। আর আওয়ামী লীগের যে অংশ অপর অংশকে প্রতিনিয়ত প্রতিহত করে আসছে তারা দলে হাইব্রিড, কাক বা কোকিল বলে পরিচিতি পেলেও তাদের প্রতিহত বা উচ্ছেদের ব্যবস্থা কখনো নেয়া সম্ভব হয়নি। এসব হাইব্রিডের সমার্থক বা পৃষ্ঠপোষকরা দলের অভ্যন্তরে রয়েছে এবং অবস্থানগত কারণে শক্তিমানরাই হাইব্রিডদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে আসছে। গাজীপুর নির্বাচনে এমন কিছু ঘটেছে কিনা, যা উদঘাটনের দায়িত্ব পেয়েছেন পরাজিত প্রার্থী আজমত উল্লা খান। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তাকে সে দায়িত্ব দিয়েছেন। আজমত উল্লা গাজীপুরের পৌরসভা নির্বাচনের পরাজিত প্রার্থী ও সিটি আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে সেই পরামর্শ পেয়েই ৩১ মে থেকে ৭ জুন পর্যন্ত সময়ে পৌরসভাভুক্ত সব ওয়ার্ডের সব স্তরের নেতাকর্মীকে নিয়ে বসার উদ্যোগ নিয়েছেন। এই প্রেক্ষিতে কিছুটা বিলম্ব হলেও নির্বাচনের ফলাফলের তাত্ত্বিক কারণগুলো অনুমিতি হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
আমাদের প্রথম অনুমিতি হচ্ছে, এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ আওয়ামী লীগবিরোধী শক্তি মাঠে নেমেছিল এবং তারা সফল হয়েছে, যদিও ধারণা ছিল যে বিএনপির অঘোষিত প্রার্থী বিএনপির সব ভোট পাবে। ফলে জায়েদা খাতুনের পরাজয় নিশ্চিত হয়ে যাবে। জায়েদা এবং আজমতের ভোটের ব্যবধান মাত্র ১৬,১৭৯। ২০১৪ সালের নির্বাচনে জাহাঙ্গীর যখন নির্বাচিত হন, তখন তার সঙ্গে ৫০ জন সমমনা কাউন্সিলর নির্বাচিত হলেও এবারে নির্বাচিত হয়েছেন ৪৭ জন। এর সঙ্গে বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় বিএনপির নির্বাচিত ব্যক্তিটিকে পকেটের প্রার্থী মনে করলে সংখ্যাটা হবে ৪৮ জন এবং সংরক্ষিত মহিলা আসনের কাউন্সিলর ১৯ জনের মধ্যে ১৮ জনই আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত হয়েছে। পরাস্ত প্রার্থী থেকে আওয়ামী লীগের প্রতিটি বিজয়ী প্রার্থীর পার্থক্য কমপক্ষে ৩০০। এটাকে ভিত্তি করে ৬৬ জনের অতিরিক্ত ভোট হচ্ছে ১৯,৮০০ ভোট। ফলে ১৬,১৭৯ ভোটের ব্যবধানে আজমতের পরাজিত হওয়ার কোনো কারণ ছিল না। এই ৬৬ জন হয় নিজেদের নিয়ে এতটা ব্যস্ত ছিল যে তারা মেয়র প্রার্থী সম্পর্কে একেবারেই ভাবেনি; নয় তারা মেয়র প্রার্থীর মতো মাত্রাতিরিক্ত বিশ্বাসী ছিলেন। আজমত উল্লা হয়তো ভাবেননি যে সজ্জন ও পোড় খাওয়া মানুষ উন্নয়নের জোয়ার বইয়ে দেয়া আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল প্রার্থী হয়ে একজন সাধারণ মহিলার কাছে পরাজিত হতে পারেন। নগর নির্বাচনী এলাকার তিনজন এমপির মধ্যে এক বা একাধিক কিংবা তাদের অনুসারীরা ষড়যন্ত্র করে নিজেদের প্রার্থীকে হারিয়ে দিয়েছে কিনা তা তলিয়ে দেখতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। ৭ জুনের পর তা হয়তো জানা যাবে এবং তখনি বলা যাবে আজমত উল্লা কেন পরাজিত হলেন। আজমতের অবস্থান টঙ্গীতে সুদৃঢ় যেখানে পৌরসভার ৫৭ ওয়ার্ডের মধ্যে ১৫টি ওয়ার্ড অবস্থিত। ১৫ ওয়ার্ডে তিনি জায়েদা থেকে এগিয়ে ছিলেন। অন্য জায়গায় তাকে এগিয়ে নেয়ার লোকের অভাব ছিল বলে ধারণা করা যায়। পরাজয়ের অন্য কারণ হচ্ছে মহিলা ও তরুণ ভোটারদের থেকে প্রায় আজমতের মনস্তাত্ত্বিক দূরত্ব। জাহাঙ্গীরের গার্মেন্টস শিল্পের মালিকানা এবং তরুণদের চাহিদা মেটাবার প্রবণতা ও সক্ষমতা, সে দূরত্বকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। জাহাঙ্গীরের উন্নয়ন প্রয়াসকে ভোটাররা ইতিবাচকভাবে দেখলেও আওয়ামী লীগের সামগ্রিক উন্নয়নের কথা ভোটারদের গেলাতে তারা ছিল নিষ্ফল। জাহাঙ্গীর মেয়র থাকাবস্থায় রাস্তা প্রশস্তকরণ প্রকল্প মানুষ সানন্দে গ্রহণ করেছে। বিনা ক্ষতিপূরণে জমির অধিগ্রহণ উদ্ভূত সঞ্চিত অর্থ কীভাবে ব্যয়িত হয়েছে এ প্রশ্ন কম ভোটারই তুলেছে, বরং প্রশ্ন তুলেছে আজমতের কথিত বল প্রয়োগ ও নির্বাচন কমিশনের পক্ষপাতিত্বকে। কেউ কেউ বলেন, বিএনপি নির্বাচন করলে আওয়ামী লীগের আরো দুরবস্থা হতো। এটা কোনো গ্রহণযোগ্য উক্তি না। এ কথা নির্দ্বিধায় বলা সম্ভব যে বিএনপি নির্বাচনে অফিসিয়াল প্রার্থী দিলে আজমতের যত ভোট পাওয়ার কথা ছিল ঠিক তত বা তার কাছাকাছি ভোট তিনি পেতেন। জায়েদার অতিরিক্ত ভোটগুলো এসেছে বিএনপির কাছ থেকে এবং আওয়ামী লীগের বেইমানির কারণে। মহিলারা হয়তো মহিলা প্রার্থীকে তাদের ভোট অধিক দিয়েছেন। বিএনপির মহিলা ভোটও কম নয়। তাদের ভোট তাদের কাছে চলে গেলে আজমতের নির্বাচিত হওয়ার পথে কোনো বাধা ছিল না।

অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী : শিক্ষাবিদ ও মুক্তিযোদ্ধা
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়