তারেক-জোবায়দার বিরুদ্ধে আরো দুজনের সাক্ষ্য

আগের সংবাদ

সিগন্যালের ভুলেই দুর্ঘটনা : শোকে কাতর পুরো ভারত > তিন ট্রেনের সংঘর্ষে নিহত বেড়ে ২৮৮, আহত সহস্রাধিক

পরের সংবাদ

গাইবান্ধায় ব্যস্ততম চারলেন সড়কে বসছে ৩৩ কেভি বৈদ্যুতিক খুঁটি : যান চলাচল ব্যাহত, জনদুর্ভোগ বেড়েছে

প্রকাশিত: জুন ৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

গাইবান্ধা প্রতিনিধি : গাইবান্ধা শহরের ব্যস্ততম নির্মাণাধীন চারলেন সড়কের অধিগ্রহণকৃত জায়গায় জোরপূর্বক ৩৩ কেভির উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন লাইনের খুঁটি বসানো হচ্ছে। ফলে নির্মাণাধীন চারলেন সড়কে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। পাশাপাশি দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়েছে। বেড়েছে মানুষের দুর্ভোগ। এ ঘটনায় শহরের বিভিন্ন মহলে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ। গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক মো. অলিউর রহমান বলেন, সড়কের ভেতর বিদ্যুৎ বিভাগ এভাবে খুঁটি বসাতে পারেন না। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে গাইবান্ধা সড়ক ও জনপদ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
গাইবান্ধা সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গাইবান্ধা জেলা শহরে আড়াই কিলোমিটার চারলেন সড়ক নির্মাণের কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়। পূর্বদিকে বড় মসজিদ মোড় থেকে পশ্চিমে পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সামনে পর্যন্ত সড়ক নির্মাণের কাজ চলমান। ২০১৮ সালের ৮ নভেম্বর চারলেন সড়ক নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করা হয়। চারলেন সড়ক নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ১১৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে সড়ক নির্মাণে ৬ কোটি ও জমি অধিগ্রহণের জন্য ১১১ কোটি টাকা।
সূত্রটি জানায়, ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমএম বিল্ডার্স এই কাজের দায়িত্ব পায়। ২০২১ সালের ৩০ জুনের মধ্যে চারলেন সড়ক নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা ছিল। কিছু স্থানে জমি অধিগ্রহণে মামলা হাইকোর্টে বিচারাধীন থাকায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে জায়গা বুঝিয়ে দেয়া সম্ভব হয়নি। যে কারণে সওজের বেঁধে দেয়া সময়ে চারলেন সড়কের আংশিক কাজ করে চলে যায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
সূত্রটি আরো জানায়, সড়কের দুপাশে অধিগ্রহণ করা জায়গার যেসব স্থানে মামলা জটিলতা নেই সেখান থেকে স্থাপনা সরিয়ে নেয়া হয়। সড়ক বিভাগের পক্ষ থেকে বৈদ্যুতিক খুঁটি অধিগ্রহণকৃত জায়গার ড্রেনের বাইরে স্থানান্তর বা সরানোর জন্য গাইবান্ধা বিদ্যুৎ বিভাগকে ২০১৭ সালে ৮৩ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়। তারপরও বিদ্যুৎ বিভাগ সড়ক থেকে পুরাতন খুঁটিগুলো স্থানান্তর করতে গড়িমসি করে। ফলে ফোরলেন কাজের গতি কমে যায়। অনেক লেখালেখি ও সওজ বিভাগের কয়েক দফা তাগাদার পর আংশিক খুঁটি সরানো হলেও অধিকাংশ খুঁটি এখনো সরানো হয়নি।
এদিকে গাইবান্ধা জেলা শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে পলাশবাড়ী উপজেলা শহরে বিদ্যুতের সাব-স্টেশন। এখান থেকে জমির ভেতর দিয়ে নির্মিত ৩৩ কেভি লাইনের মাধ্যমে জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ হচ্ছিল। এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে গাইবান্ধা শহরের বিসিক শিল্পনগরী সংলগ্ন বিদ্যুতের সাব-স্টেশন নির্মাণের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এখান থেকে শহরের মাস্টারপাড়ায় ৩৩ কেভি সঞ্চালন লাইন মিলিত হবে। কয়েকদিন ধরে বিদ্যুৎ বিভাগ আগের খুঁটি না সরিয়ে সওজ বিভাগের অধিগ্রহণ করা ফোরলেন সড়কের ভেতর দিয়ে নতুন করে ১১ মিটার লম্বা খুঁটি বসানোর কাজ করছে। ফোরলেন সড়কের দুপাশের ড্রেনের বাইরে খুঁটি বসানোর নির্দেশনা থাকলেও তা করা হচ্ছে না। মূল সড়কে খুঁটি স্থাপনের ফলে নির্মাণাধীন চারলেন সড়কে যানবাহন চলাচল ও ড্রেনের ওপর দিয়ে পথচারী চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। পাশাপাশি দুর্ঘটনার ঝুঁকি ও মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে।
সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, শহরের বড় মসজিদ মোড় থেকে পশ্চিমে পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সামনে পর্যন্ত সড়কের ভেতরে পুনরায় বড় বড় খুঁটি বসানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে অন্তত ৩০টি খুঁটি বসানো হয়েছে। তার টানানো হয়েছে কিছু অংশে। গাইবান্ধা শহরের ফকিরপাড়া এলাকার ব্যবসায়ী জুয়েল মিয়া বলেন, সড়কের মধ্যে খুঁটি স্থাপনের  কারণে দুপাশের ব্যবসায়ীরা ঝুঁকির মধ্যে পড়েছেন। সার্বক্ষণিকভাবে আমাদের সতর্ক থাকতে হচ্ছে। পলাশপাড়া এলাকার বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন বলেন, সড়কের ভেতর খুঁটি স্থাপনের কারণে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। লাইনটি চালু হলে ফুটপাত দিয়ে চলাচল করা যাবে না। শহরের কেন্দ্রীয় বাসটার্মিনালে শ্রমিক নেতা মো. বাদশা মিয়া বলেন, বিদ্যুৎ বিভাগ সড়কে জোরপূর্বক অপরিকল্পিভাবে খুঁটি বসানোর কারণে যানবাহন চলাচল ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। খুঁটির জায়গায় যানবাহন পারাপার করতে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
গাইবান্ধা নাগরিক পরিষদের আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম বলেন, সড়কের দুপাশে আগে যেসব স্থানে বৈদ্যুতিক খুঁটি ছিল সেখানে না বসিয়ে সড়কের মধ্যে খুঁটি স্থাপন করা হচ্ছে। সড়ক প্রশস্ত করতে ১১১ কোটি টাকা ব্যয় করা হলো। সেই সড়কের ভেতর পুনরায় খুঁটি স্থাপনের কারণে সড়ক সংকুচিত হচ্ছে। বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ বিসিক এলাকা থেকে সোজা দক্ষিণ দিকে মাত্র ৫-৬টি খুঁটি বসিয়ে আগের ৩৩ কেভি সঞ্চালন লাইনে সংযোগ দিতে পারে। এতে শহরের ভেতর দিয়ে বিদ্যৎ বিভাগের শতাধিক খুঁটি বসাতে হবে না। এতে শহরে সড়ক সংকুচিত হওয়ার বা বাসাবাড়ি-ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কোনো সমস্যা হবে না।
গাইবান্ধা সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফিরোজ আখতার বলেন, চারলেন সড়ক থেকে পুরাতন বৈদ্যুতিক খুঁটি সরানোর জন্য বিদ্যুৎ বিভাগকে বারবার তাগাদা দেয়া হচ্ছে। তারা পুরাতন খুঁটি সম্পূর্ণ অপসারণ বা স্থানান্তর এখনো শেষ করে নাই। তার ওপর কয়েকদিন ধরে সড়কের ভেতর আবার নতুন করে খুঁটি বসাচ্ছে। তিনি বলেন, সওজ বিভাগের পক্ষ থেকে তাদের ফোরলেন সড়কের ভেতরে বৈদ্যুতিক খুঁটি না বসানোর জন্য বলা হলেও তারা তা মানছে না। এ বিষয়ে জনগণের নানা প্রশ্ন ও কৈফিয়ত দিতে সড়ক বিভাগ বিব্রতকর অবস্থায় পড়ছে।
নির্মাণাধীন ফোরলেন সড়কের ভেতর খুঁটি স্থাপনের জন্য কোনো অনুমতি নেয়া হয়েছে কি না- এমন প্রশ্ন করা হলে গাইবান্ধা বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ-১ এর (নেসকো লিমিটেড) নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ চন্দ্র দাস বলেন, বিদ্যুৎ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত মোতাবেক খুঁটি বসানো হচ্ছে। এক্ষেত্রে সড়ক বিভাগের অনুমতি নেয়া হয়নি। তবে সড়ক বিভাগ ও জনগণের সমস্যা হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে নির্মাণাধীন সাব-স্টেশন থেকে বিকল্প ব্যবস্থায় বিসিক শিল্পনগরীর দক্ষিণ পাশে আগের ৩৩ কেভি লাইনে সংযোগ দেয়া যেতে পারে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়