মেজাজ হারালেন টম হ্যাঙ্কস

আগের সংবাদ

টাইগারদের অনুশীলন শুরু আজ : হাথুরুসিংহে আসছেন ৩ জুন

পরের সংবাদ

সিপিডি : মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজন মুদ্রা ও রাজস্ব নীতির সমন্বয়

প্রকাশিত: মে ২৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মে ২৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : আসন্ন বাজেটে সরকারের সামনে ৪টি চ্যালেঞ্জ রয়েছে- প্রথমত আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, বহিঃখাতের ভারসাম্য, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে মুদ্রানীতি এবং রাজস্বনীতির মধ্যে সমন্বয় ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের পরামর্শ দিয়েছে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। এছাড়া শ্রমবাজার হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যে সবচেয়ে বেশি জনবল গেলেও এখন যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্স বেশি আসছে। রেমিট্যান্সের এ অর্থ আগে পাচার হয়েছিল বলে সিপিডির ধারণা করছে।
গতকাল শনিবার ঢাকায় সংস্থাটির নিজ কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশ অর্থনীতি ২০২২-২৩ : তৃতীয় অন্তর্বর্তীকালীন পর্যালোচনা’ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ পরামর্শ তুলে ধরা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, সংস্থাটির সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, সিনিয়র গবেষণা পরিচালক মো. তৌফিকুল ইসলাম খান, গবেষণা পরিচালক মো. মুনতাসির কামাল প্রমুখ। সিপিডির লিখিত পর্যালোচনা উপস্থাপন করেন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেন, বর্তমানে মূল্যস্ফীতির চাপ সাধারণ মানুষকে ভোগাচ্ছে। অভ্যন্তরীণ মূল্যস্ফীতির জন্য বৈশ্বিক পর্যায়ে পণ্যমূল্য বেড়ে যাওয়া যেমন দায়ী, পাশাপাশি আমাদের কিছু দুর্বল আর্থিক নীতি সেটাকে আরো উসকে দিয়েছে। তিনি মনে করেন, রাজস্ব আহরণ কম থাকায় সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা ঋণ নিয়েছে, যা পরোক্ষভাবে পণ্যের মূল্য বাড়াচ্ছে। এছাড়া টাকা ও মার্কিন ডলারের বিনিময় হার পণ্যমূল্য বাড়াতে সহায়তা করছে।
ফাহমিদা খাতুন আরো মনে করেন, মূল্যস্ফীতির মূল কারণ চিহ্নিত করার প্রয়োজন। সে অনুযায়ী নীতি-পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য আর্থিক নীতি ও মুদ্রানীতির মধ্যে সমন্বয় ঘটাতে হবে। একই সঙ্গে নিজেদের জাতীয় স্বার্থে সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ করাটা জরুরি। তিনি রাজস্ব আয় বাড়াতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) নতুন উৎস খোঁজার তাগিদ দেন। এবারের বাজেটে ভর্তুকির যেন পুনর্বিন্যাস করা হয়। ভর্তুকিটা যেন স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি ও সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিকে মূল অগ্রাধিকার দিয়ে বণ্টন করা হয়।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন ব্যাংকের ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে বিদ্যমান আইন প্রয়োগের পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, অবৈধভাবে অর্জিত টাকা যারা বিদেশে পাচার করছেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক আইন প্রয়োগের সুযোগ রয়েছে। সরকার সেই জায়গায় যেন শিথিলতা না দেখায়। আগামী অর্থবছরের বাজেটে আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্য যেসব পদক্ষেপ নেয়া হবে সেগুলো যেন চলমান বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে নেয়া হয়, সেই সুপারিশ করেন তিনি। ফাহমিদা খাতুন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে পাচার হওয়া অর্থ রেমিট্যান্স আকারে আসছে। তারা রেমিট্যান্সে দেয়া আড়াই শতাংশ প্রণোদনাও নিচ্ছে। এই প্রণোদনা নিতে তারা যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্স আনছে।
এদিকে বৈধ পথে রেমিট্যান্স উৎসাহিত করতে কয়েক বছর ধরেই প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। এখন কেউ ১০০ টাকা রেমিট্যান্স পাঠালে তা দেশে যিনি নেন, তিনি পান ১০২ টাকা ৫০ পয়সা। এই সুযোগ অর্থ পাচারকারীরা নিচ্ছে বলে অনেকের সন্দেহ। রেমিট্যান্স কোথা থেকে আসছে তা এখনই দেখা দরকার বলে মনে করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক। এদিকে নীতি-নির্ধারকদের দৃষ্টি দেয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনাতে আলাদা আইন কিন্তু রয়েছে।
২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ২১ লাখ মানুষ দেশের বাইরে গেছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে তথ্য দেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান। এর মধ্যে ১১ লাখের বেশি সৌদি আরবে গেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, কিন্তু সৌদি আরব থেকে রেমিট্যান্স কমছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাড়ছে। এ বিষয়ে খুব ভালোভাবে গবেষণা ও অনুসন্ধান হওয়া দরকার। আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুরোধ করব, এর কারণ বের করতে। পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করার উদ্যোগ নিতে পরামর্শ দেন মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, পাচার হওয়া অর্থের মধ্যে মাত্র একটি ঘটনায় ২০ কোটি টাকা দেশে ফেরত আনা গেছে। কয়েকটি দেশের সঙ্গে মাত্র তথ্য আদান-প্রদানের জন্য সমঝোতা চুক্তি করেছে বিএফআইইউ, যা মন্দের ভালো।
অর্থ পাচার বিষয়ে কাজ করে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিলেজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। সংস্থাটির পক্ষে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগের প্রধান হিসেবে কাজ করেন অ্যাটর্নি জেনারেল। এ বিষয়ে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সংস্থাগুলো সরকারের অধীনে থাকলে তো তারা স্বাধীন হয়ে কাজ করতে পারে না। তাদের সর্বোচ্চ সক্ষমতা ব্যবহার করা যায় না। এখানে সংস্কার দরকার। একটি আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ২০২০ সালে দেশে স্বর্ণ এসেছিল ৫ টন। ২০২২ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৫৪ টন, যা আমাদের বার্ষিক চাহিদা ২০ টনের বেশি। এ স্বর্ণ দেশ থেকে পাচারের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে বলে তার ধারণা।
তিনি বলেন, রেমিট্যান্স এখন স্বর্ণ আকারেও আসছে। এই পরিমাণ রেমিট্যান্স ব্যাংকে এলে রিজার্ভ বাড়ত। হুন্ডি-হাওলা বন্ধ করা গেলে রেমিট্যান্স বেড়ে তা সংকটে থাকা রিজার্ভকে সহয়তা করবে বলে মন্তব্য করেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়