মেজাজ হারালেন টম হ্যাঙ্কস

আগের সংবাদ

টাইগারদের অনুশীলন শুরু আজ : হাথুরুসিংহে আসছেন ৩ জুন

পরের সংবাদ

আলোকিত মানুষ সরওয়ারদি চৌধুরী

প্রকাশিত: মে ২৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মে ২৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

দীর্ঘদিন নানা জটিল রোগে ভোগে অবশেষে গত ২২ মে রাত ৮টার দিকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিরবিদায় নিলেন ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির সাবেক এমডি, স্পন্সর ডিরেক্টর ও চাটগাঁর বাণীর সাবেক উপদেষ্টা এ কে এম সরওয়ারদি চৌধুরী (৭৩)। তিনি স্ত্রী রাশেদা বেগম, মেয়ে তানিয়া ইসলাম, সুমাইয়া নুসরাত, ছেলে এ কে এম শরফুদ্দিন চৌধুরী সজিব, এ কে এম জিয়াউদ্দিন চৌধুরীসহ অসংখ্য আত্মীয়স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। গত ২৩ মে বাদ মাগরিব উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টরের বাসভবন-সংলগ্ন মসজিদে তার প্রথম জানাজা এবং দ্বিতীয় ও শেষ জানাজা অনুষ্ঠিত হয় ২৪ মে বাদ আসর সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাটের গ্রামের বাড়িতে। জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়।
সরওয়ারদি চৌধুরী ১৯৫০ সালের ১৬ মার্চ সীতাকুণ্ড উপজেলার উত্তর সলিমপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। শিক্ষাজীবন শেষ করে তিনি স্বাধীনতাউত্তর বাংলাদেশে তৎকালীন ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডে জুনিয়র অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তী সময়ে সাধারণ বিমা করপোরেশনে ডেপুটি ম্যানেজার থাকাকালে বাংলাদেশ বিমা একাডেমি কর্তৃক আয়োজিত এডভান্স ইন্স্যুরেন্স কোর্স সম্পন্ন করেন। ১৯৮৮ সালের ১ জানুয়ারি তিনি ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডে জেনারেল ম্যানেজার পদে যোগদান করেন। এ কোম্পানির সার্বিক দায়িত্ব অত্যন্ত সততা ও দক্ষতার সঙ্গে পালনের ফলে ১৯৯১ সালে সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট, ১৯৯৪ সালে উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ১৯৯৬ সালে তিনি এ কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন।
সরওয়ারদি চৌধুরী মানবীয় গুণাবলি ও আকর্ষণীয় চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ছিলেন। এ মানুষটি আগাগোড়াই ছিলেন একজন সজ্জন ভদ্রলোক। অমায়িক ব্যবহার, মানুষের আপদে-বিপদে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া, সমাজসেবামূলক ও জনহিতকর নানা কাজে নিবিড় সম্পৃক্ততা, চট্টগ্রামসহ রাজধানীর ব্যাংক বিমা, বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক পরিমণ্ডল, সুশীল সমাজসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে একজন সর্বজনশ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে নিজের জায়গা করে নিয়েছিলেন। দানবীর সরওয়ারদি চৌধুরী ছিলেন একজন সাদামনের আলোকিত মানুষ। সরওয়ারদি চৌধুরী রাজনীতির মাঠ থেকে উঠে আসা একজন সফল বিমাবিদ। রাজনীতির চেয়ে বিমাশিল্পে তিনি সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিজের জায়গা করে নিতে পেরেছেন। যে ইস্টার্ন কোম্পানিতে সরওয়ারদি চৌধুরীর কর্মজীবন শুরু হয়, সেই কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার ছিলেন তারই বড় ভাই একাত্তরের রণাঙ্গনে শহীদ এ কে শামসুদ্দিন। গরিব-দুঃখী, মেহনতি মানুষের অকৃত্রিম বন্ধু ছিলেন তিনি। তার শরণাপন্ন হয়ে কত মানুষ যে কতভাবে উপকৃত হয়েছে, তার কোনো হিসাব নেই। আকর্ষণীয় আচার-আচরণ ও মধুর ব্যবহার দিয়ে তিনি সহজেই মানুষের মন জয় করতে পারতেন। উষ্ণ আতিথেয়তায় অতিথিকে সর্বোচ্চ সন্তুষ্টি প্রদানের ক্ষেত্রে তার খ্যাতি সর্বজনবিদিত। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ না করলেও স্বাধীনতা সংগ্রামে রয়েছে তার গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা। সীতাকুণ্ড নির্বাচনী এলাকা থেকে এমপি পদে নির্বাচন করতে কয়েকবার মনোনয়নও চেয়েছিলেন তিনি; কিন্তু রাজনীতির নিষ্ঠুর খেলায় তিনি হেরে যান।
সরওয়ারদি চৌধুরী ব্যক্তিগতভাবে সীতাকুণ্ড ছাড়াও দেশের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন। তিনি নেচার কনজারভেশন কমিটির সহ-সভাপতি, কবি সরোজিনি নাইডু স্মৃতি পরিষদের কোষাধ্যক্ষ, উত্তরা ফোরাম-ঢাকা’র সভাপতি, সীতাকুণ্ড মাতৃভূমি সামাজিক সংগঠনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক, চট্টগ্রাম সরকারি বাণিজ্য কলেজ অ্যালামনাই এসোসিয়েশন-ঢাকার আহ্বায়ক, সীতাকুণ্ড সমিতি-ঢাকার সভাপতি, সীতাকুণ্ড সমিতি-চট্টগ্রামের পৃষ্ঠপোষক সদস্যসহ বহু সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। উল্লেখ্য, সমাজসেবা ও বিমাশিল্পে বিশেষ অবদানের জন্য চাটগাঁর বাণী পত্রিকা তাকে ২০১৮ সালে সম্মাননা স্মারকে ভূষিত করে।

মোহাম্মদ ইউসুফ : প্রধান সম্পাদক, সাপ্তাহিক চাটগাঁর বাণী ও চাটগাঁরবাণীডটকম।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়