জাহাঙ্গীরের প্রক্সি জায়েদার জয় : মোট ৪৮০টি কেন্দ্রের ফলাফলে জায়েদা খাতুন ২,৩৮,৯৩৪ ও আজমত উল্লা ২,২২,৭৩৭ ভোট

আগের সংবাদ

নতুন শঙ্কায় পোশাক খাত : যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বাজারে ক্রয়াদেশ কমছে > বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অনেক কারখানা

পরের সংবাদ

প্রথম পরিকল্পনা কমিশন : অতঃপর

প্রকাশিত: মে ২৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মে ২৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

প্রথম পরিকল্পনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম লিখছেন : ১৯৭৪-এর দ্বিতীয় কোয়ার্টারে বঙ্গবন্ধু এ কে এম আহসানকে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য নিয়োগ করলেন। তিনি পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসের প্রথম দিককার একজন সদস্য, আমার চেয়ে কয়েক বছরের বড়। পাকিস্তানের শেষ দিনগুলোতে তিনি পাকিস্তান সরকারের কৃষি সচিব ছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধুরও অত্যন্ত সুপরিচিত ছিলেন। এটাই প্রত্যাশিত ছিল যে সিভিল সার্ভেন্ট হিসেবে সিনিয়র হওয়ায় নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের প্রশ্নে তিনি অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কার্যকর যোগাযোগ রক্ষা করতে পারবেন। তিনি যখন কমিশনে যোগ দিলেন, এটাই ছিল তার কর্মজীবনের শীর্ষ অবস্থান এবং তাকে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় সদস্য পদে বসানো হয়, সেকালে যে কোনো সিভিল সার্ভেন্টের জন্য এটা অপ্রত্যাশিত ঘটনা।
পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের একজন হিসেবে তার সক্ষমতা নিয়ে বঙ্গবন্ধু অনেক নিশ্চিত ছিলেন। স্বাধীনতার পর তারা পাকিস্তান থেকে না ফেরা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু আফসোস করছিলেন এবং তিনি আশা করছিলেন তাদের প্রত্যাবাসনের পর নতুন দেশ শাসনের চ্যালেঞ্জগুলো সাফল্যের সঙ্গে মোকাবিলা করা সম্ভব হবে। আমার মনে হয় তার এই ধারণার একটি কারণ রয়েছে। স্বাধীনতার আগে যে অল্পসংখ্যক সিভিল সার্ভেন্টের সঙ্গে পরিচিত ছিলেন- তাদের প্রায় সবাই পাকিস্তানি, তারা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানে দায়িত্ব পালন করছেন। পূর্ব পাকিস্তানের জ্যেষ্ঠতম সিভিল সার্ভেন্টদের বর্ণাঢ্য শিক্ষা সাফল্যের রেকর্ড ছিল এবং প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অত্যন্ত ভালো ফল লাভ করেন। এ কে এম আহসান তাদের একজন। সুখ্যাতির কারণে তিনি তাদের কাউকে কাউকে চিনতেন, আর শামসুর রহমান ছিলেন তার বন্ধু। তিনি তাকে সোভিয়েত ইউনিয়নের বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রদূত নিয়োগ করেন। তবে তিনি তাদের প্রকৃত কর্মদক্ষতা প্রশাসনে ও নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে কেমন তিনি তা যথাযথ অবহিত ছিলেন না। তাছাড়া পূর্ব পাকিস্তানের তরুণ প্রজন্মের সিভিল সার্ভেন্টদের সম্পর্কে তিনি তেমন অবহিত ছিলেন না। শুরুর দিনগুলোতে বিদেশিরা বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় কয়েকটি দেশের প্রতিনিধি যাদের দক্ষিণ এশিয়ার ব্রিটিশ উত্তরাধিকারসূত্রে সিভিল সার্ভিসের মতো প্রশাসনিক কাঠামো নেই। আমাকে জিজ্ঞেস করতেন সিভিল সার্ভিসে আমরা দেশের ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, উকিল, শিক্ষকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ কেন সরকারের প্রশাসনে যোগদান করেন না। তাদের নিজেদের দেশের প্রশাসন এ ধরনের পেশাজীবীদের নিয়ে সাফল্যের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে।
প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের ১৯৭২ সালে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল। কিন্তু তা কাজ করেনি অংশত মূলত আমলাতান্ত্রিক অসহযোগিতার কারণে, তারা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে শেকর গেড়ে বসেছিলেন। অল্প সময় পর বাইরে থেকে যারা নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছিলেন, তারা চলে যান। ১৯৭৩-এর শেষ নাগাদ বাংলাদেশের সিভিল সার্ভেন্টদের সঙ্গে কাজ করে তাদের সম্পন্ধে বঙ্গবন্ধুর ধারণা বদলে যায়। তিনি আমলাতান্ত্রিক অদক্ষতা, দীর্ঘসূত্রতা এবং লাল ফিতার মোকাবিলা করেন। একটি ঘটনা মনে পড়ছে, পরিকল্পনা কমিশন-সংক্রান্ত বিষয়ে আমি তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলাম। আমি দেখলাম তিনি স্পষ্টতই বিরক্ত ও হতাশ। তিনি ভীষণ ক্ষুব্ধ ক’দিন আগে একটি বিষয়ে তিনি যে নির্দেশনা দিয়েছিলেন তা প্রতিপালিত হয়নি, এমনকি দক্ষ সিভিল সার্ভেন্ট হিসেবে যারা তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করছেন তারাও বিষয়টির কোনো ফলোআপ করেননি।
আমি তার কক্ষে বসেছিলাম, তিনিই তার স্টাফদের একজন যিনি সাবেক সিএসপি, তাকে ডাকলেন এবং তার নির্দেশ প্রতিপালিত না হওয়ার কারণ দ্রুত জানার জন্য বললেন। এই অফিসার যখন ফিরে যাচ্ছিলেন তিনি অবাক কণ্ঠে আমাকে বললেন, এই অফিসাররা হাফপ্যান্ট পরা হাতে ব্যাটন থাকা ইংরেজি বলা পাকিস্তানি স্মার্ট ক্যাপ্টেনদের মান্য করেন, কিন্তু যে রাজনীতিবিদগণ কুঁচকানো পাজামা-কুর্তা পরেন, সাধারণ বাংলা ভাষায় কথা বলেন, কখনো পান চিবান, তারা এই অফিসারদের আনুগত্যের দাবি করতে পারেন না। যদি এই ক্যাপ্টেনরা ক্ষমতা নিয়ে নেয় তাদের ওপর ছড়ি ঘোরায়, তারা তাতেই খুশি।
আমি প্রায়ই স্মরণ করি কেমন প্রফেটিক- ভবিষ্যদ্বাণী। তিনি এ কথা বলার দুই বছর যেতে না যেতেই ১৯৭৫-এ তার কথা তেমন সত্যে পরিণত হলো। তৎকালীন পাকিস্তানসহ সব সামরিক সরকার এই সিভিল সার্ভেন্টদের মাধ্যমেই দেশ শাসন করে থাকে।
আমি পরিকল্পনা কমিশন ত্যাগ করার আগে এ কে এম আহসান কয়েক মাস আমার সঙ্গে কাজ করেছেন। পেশাজীবীদের সঙ্গে কাজ করতে সিভিল সার্ভেন্টরা যেমন অসন্তোষ ও উত্তেজনা প্রকাশ করে থাকেন, তিনি এমন কিছু প্রকাশ করেননি। দৃশ্যত রাজনৈতিকভাবে নিয়োগপ্রাপ্তদের বেলায় পদ সোপানের প্রতি সমীহ তাদের কর্তৃত্ব মেনে নিতে তার কোনো সমস্যা ছিল না। আমি বাংলাদেশে সরকারি সফরে আগত ইকাফ-এর (পরবর্তী সময় এসকাপ) নির্বাহী সচিবের সম্মানে একটি ডিনার দিলে এ কে এম আহসানও তাতে উপস্থিত ছিলেন। প্রসঙ্গে নতুন স্বাধীন দেশে সিভিল সার্ভিসের ভূমিকা কী হবে তা আলোচিত হয়।
আহসান ব্যাখ্যা করলেন, তিনি যতটা বোঝেন সিভিল সার্ভিসের কাজ হচ্ছে রাজবেশ্যার ভূমিকা পালন করা, রাজনীতিবিদদের দরবারে তাদের খেয়াল-খুশি যথাযথভাবে পালন করা। আহসানের দিক থেকে এটা অত্যন্ত শক্ত একটি বিবৃতি, বিদেশি অতিথিসহ আমরা সবাই তার কথা শুনে বিস্মিত হলাম।
যাকগে, বঙ্গবন্ধু সেভাবে তাকে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য নিয়োগ করলেন তাকে অভূতপূর্ব বলতে হবে। এ কে এম আহসানের নিয়োগ নিয়ে আমার সঙ্গে কোনো আলোচনাই করেননি। প্রশাসনিক হোক কি নীতি সংশ্লিষ্ট হোক, অতীতে এ ধরনে কোনো ঘটনা ঘটেনি। তিনি আমার সঙ্গে এই নিয়োগ নিয়ে কথা বলতে পারতেন। তিনি যা করেছেন আমি বিস্মিত হয়েছি। তিনি কেন তাকে নিয়োগ দিতে বাধ্য হলেন আমি বুঝতে পারিনি। তার সচিবালয়ে অনেক অপপরামর্শদাতার কেউ তাকে বলে থাকতে পারেন, যেহেতু তিনি সুপ্রিম বস ডেপুটি চেয়ারম্যানের সঙ্গে তার আলোচনার দরকার নেই। অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের বেলাতেও তিনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর সঙ্গে কোনো আলাপ না করে সে মন্ত্রণালয়ের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। তবে আমার বেলায় তিনি কিছুটা ব্যতিক্রম করে ব্যক্তিগতভাবে আমাকে জানালেন। এক সকালে কোনো এজেন্ডা, কোনো পূর্ব নোটিশ ছাড়া আমাকে জানানো হলো। পৌঁছার পর তিনি আমাকে তার সিদ্ধান্ত জানালেন, তিনি আরো যোগ করছেন আহসান তাকে বলেছেন যে, আমিও তাকে চিনি এবং আমার প্রতি তিনি গভীর শ্রদ্ধাশীল। আমার তরুণ বয়স থেকেই আমি এ কে এম আহসানকে চিনি। বঙ্গবন্ধু আরো বললেন, আমার প্রতি তার অগাধ শ্রদ্ধা। আমার শৈশবকাল থেকেই আমি এ কে এম আহসানকে চিনতাম। বঙ্গবন্ধু আরো বললেন, পরিকল্পনা কমিশনে কুড়িগ্রামের দায়িত্ব তাকে দেয়া হবে। এটা ছিল আরো অপ্রত্যাশিত, পরিকল্পনা কমিশনের অভ্যন্তরীণ সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সম্পূর্ণভাবে আমার ওপর ন্যস্ত। পরিকল্পনা কমিশনের কোনো বিষয়ে তিনি ইতিপূর্বে এমন কখনো করেননি। আমি বঙ্গবন্ধুকে অনুরোধ করলাম সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব বণ্টনের এই কাজটি সরকারি কাজে বিদেশ সফরে থাকা কমিশন সদস্য মোশাররফ হোসেনের দেশে প্রত্যাবর্তন পর্যন্ত স্থগিত রাখুন। তিনি ফিরে এলে আমি তার এ কে এম আহসানের মধ্যে দায়িত্ব বণ্টনের বিষয়টি আগে তাকে জানিয়ে দিলে ভালো হয়। এটাই সৌজন্যমূলক এবং আমরা আগেও এভাবেই মোকাবিলা করেছি। আমি আরো বিস্মিত হলাম তিনি রাজি হলেন না। তিনি চাইলেন, এ কে এম আহসানের সদস্য নিয়োগ প্রজ্ঞাপনের সঙ্গে দায়িত্ব বণ্টনের বিষয়ও লিখিত থাকুক। আমি বললাম, তাতে মোশাররফ হোসেন ভেঙে পড়তে পারেন, প্রকৃতপক্ষে অপমানিত বোধ করতে পারেন যে তার অনুপস্থিতিতে তার ভবিষ্যৎ নিয়ে এমন একটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
বিরাজমান পরিস্থিতিতে আমি তার সিদ্ধান্তে অসম্মতি জানাতে পারতাম। কিন্তু এ ধরনের প্রতিক্রিয়া প্রকাশ আমার জন্য অপ্রাসঙ্গিক, কারণ এভাবে একজন সদস্য নিয়োগ আমার কাছে কোনো প্রভাব বিস্তার করার কথা নয়। অধিকন্তু যেভাবেই হোক ১৯৭৪-এর শেষে বা ১৯৭৫-এর প্রথমে নিঃশব্দে কমিশন ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত তো আমি নিয়েই রেখেছি। কাজেই এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা অর্থহীন। আমি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সেইন্ট অ্যান্থনিস কলেজে ১৯৭৪-৭৫ সেশনে একটি ফেলোশিপ আগেই গ্রহণ করে রেখেছি, সেই সঙ্গে অক্সফোর্ড কুইন এলিজাবেথ হাউসে ভিজিটরও হবো।
মোশাররফ হোসেন ফিরে এলেন এবং যেমন প্রত্যাশিত ছিল, তাই ঘটল। তিনি কর্মক্ষেত্রে ফিরে এলেন না। তিনি পদত্যাগ করলেন এবং প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎকার প্রার্থনা করলেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের একটি বিবরণ তিনি আমাকে দিলেন। মানবিক সম্পর্কে মোশাররফ হোসেন অত্যন্ত দক্ষ। তিনি তার অনুকরণীয় শৈলীতে বঙ্গবন্ধুকে ১৯৭৩ সালের মধ্য ভাগে কমিশন সদস্যদের সঙ্গে তার বৈঠকের কথা স্মরণ করিয়ে বলেছেন, তখন তিনিসহ কমিশনের সব সদস্য শিক্ষকতার পেশায় ফিরে যেতে চেয়েছিলেন। এখন তিনি চাচ্ছিলেন বঙ্গবন্ধুকে অনুরোধ করবেন ১৯৭৪-এর কোনো এক সময় যেন যথার্থ একজনকে তার স্থলাভিষিক্ত হওয়ার মতো, তার দায়িত্ব গ্রহণ করার সঙ্গে একজনকে পাওয়া গেছে, তার বেরিয়ে যাওয়ার এটাই উপযুক্ত সময়। আর বঙ্গবন্ধু যখনই চাইবেন অনানুষ্ঠানিকভাবে যে কোনো সময় কাজ করার জন্য তিনি প্রস্তুত থাকবেন।
কয়েক মাস পর রেহমান সোবহান কোনো রকম হইচই না করে নিঃশব্দে পরিকল্পনা কমিশন থেকে বেরিয়ে গেলেন। আমার ধারণা সদস্যরা কেন চলে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধু তা স্পষ্টই বুঝেছেন- সদস্যরা এখন আর আগের মতো কার্যকর না। সে সময়কার নাটকীয় রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক পরিবর্তন নিয়ে বঙ্গবন্ধু ব্যস্ত। সম্ভবত তিনি ভেবেছিলেন নতুন রাজনৈতিক কাঠামো প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর অর্থনৈতিক নীতিমালার প্রাতিষ্ঠানিক দিকগুলোর সমাধান করবেন। রাজনৈতিক পরিবর্তন যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে আমি দোহাই তৈরি করলাম, আমি অসুস্থ, ক্লান্তি, পীড়ন ও অবসাদে ভুগছি, চিকিৎসার জন্য আমার বিদেশ যাওয়া প্রয়োজন। মোহাম্মদ ইব্রাহিম, সুখ্যাত চিকিৎসক আমাদের পারিবারিক বন্ধু ছিলেন। একবার আমার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে অফিসে এলেন। তিনি পরে জিয়াউর রহমান সরকারের উপদেষ্টা হয়েছিলেন। তিনি বললেন, আমার ছুটিতে যাওয়া ও বিশ্রাম নেয়া দরকার। তিনি প্রধানমন্ত্রীরও পরিচিতি ছিলেন।
আমি তাকে অনুরোধ করলাম আমার বিশ্রামের প্রয়োজনীতা ও ছুটির কথা বঙ্গবন্ধুকে জানাতে অনুরোধ করলাম। আমি সবাইকেই জানিয়ে ছিলাম আমি অবসাদ ও ক্লান্তিতে ভুগছি। আমার তখন অক্সফোর্ডের ফেলোশিপে সরকারের কোনো আর্থিক সহায়তার প্রয়োজন নেই। আমি বিদেশে যাওয়ার জন্য ছুটি প্রদানের অনুরোধ জানালাম। আমার শরীর খারাপের গল্পটি অতিরঞ্জিত। তেমন বিশেষ কিছু হয়নি। আমার অজুহাত বঙ্গবন্ধু বুঝেছেন কিনা জানি না। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তার সঙ্গে যে যোগাযোগ তাতে এটা স্পষ্ট আমার অজুহাত তিনি বুঝেছিলেন। সাময়িক বিশ্রাম ও বিনোদনই অবসাদ কাটিয়ে ওঠার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু বঙ্গবন্ধু আমাকে ১৯৭৫-এর জানুয়ারি থেকে এক বছরের ছুটি মঞ্জুর করলেন। আমার ধারণা বাকশালের অধীনে যখন নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। নতুন অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সৃষ্টির জন্য আমার এবং অন্যদের প্রয়োজন হবে। ১৯ মার্চ ১৯৭৫ বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে একটি চিঠি পেয়েছি, তিনি তাড়াতাড়ি এসে দায়িত্ব গ্রহণের অনুরোধ করেছেন। অক্সফোর্ডে থাকাকালীন ১৯৭৫-এর মে মাসে আমি ঢাকা গিয়ে আমার পরিবার যুক্তরাজ্যে নিয়ে আসি। আমি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করি। আমাকে ফিরে এসে মন্ত্রী হিসেবে যোগ দিতে বললেন, তিনি আশ্বস্ত করলেন আমার কর্তৃত্ব হবে অবাধ।… আমি বললাম অক্সফোর্ডের অ্যাসাইনমেন্ট এবং আমার অবসাদজনিত চিকিৎসা শেষ না করে আমার পক্ষে ফিরে আসা সম্ভব নয়। কিন্তু ১৯৭৫-এর আগস্টের মধ্যেই বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে সবচেয়ে লজ্জাজনক ও বৃহত্তম ট্র্যাজেডি দেশের ওপর নেমে এলো।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপটে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটল। পরবর্তী বছরগুলোতে বাংলাদেশের কোথাও কাজ করার জন্য আমি আর ফিরে আসিনি।
পাদটীকা : অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক নুরুল ইসলাম অনেক সত্য ভাষণের আড়ালে ‘অধ্যাপকদের পরিকল্পনা কমিশনের’ অন্তর্গত দুর্বলতার ইতিবৃত্ত তুলে ধরেছেন। প্রথম পরিকল্পনা কমিশন সদ্যস্বাধীন দেশের আর্থিক দিক নির্দেশনার প্রধান প্রতিষ্ঠানই ছিল। সাধারণভাবে আমলাদেরই দোষারোপ করা হয়ে থাকে- তারা বহিরাগতদের চাননি। নুরুল ইসলামের লেখায় এটাই উঠে এসেছে আমলাবিরোধিতা যেমন সত্য রাজনীতিবিদরা তাদের চাননি। অকার্যকর পরিকল্পনা কমিশন বঙ্গবন্ধুও চাননি। কাজেই এ মৃত্যু ছিল অবধারিত।

ড. এম এ মোমেন : সাবেক সরকারি চাকুরে, নন-ফিকশন ও কলাম লেখক।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়